procholito-shokti-oprocholito-shokti
WB-Class-9

ভারতের শক্তি সম্পদের ধারণা

শ্রেণিঃ নবম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – ভারতের সম্পদ (চতুর্থ পর্ব)


সাধারণভাবে কাজ করার ক্ষমতাকেই শক্তি বলা হয়।

কোন সম্পদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যখন মানুষ তার বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে তখন তাকে শক্তি সম্পদ বলা হয়। এই শক্তি সম্পদের মাথাপিছু ব্যবহারের ভিত্তিতে মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

শক্তি সম্পদের উৎস অনুযায়ী একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রচলিত শক্তি এবং অপ্রচলিত শক্তি। 

আমরা এবার এই দুই শক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো।

প্রচলিত শক্তি সম্পদ

যে সকল উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হয় এবং যে সমস্ত উৎস গুলি দীর্ঘকাল ধরে শক্তি উৎপাদনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তাদের প্রচলিত শক্তি সম্পদ বলা হয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় কয়লা, খনিজ তেল ,প্রাকৃতিক গ্যাস ,ইউরেনিয়াম পরমাণু হলো শক্তি সম্পদের উদাহরণ।

পৃথিবীর মোট শক্তি সম্পদের 38% খনিজ তেল থেকে 23% কয়লা থেকে এবং 24% আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে।

ভারতের শক্তি সম্পদের ধারণা ↓

প্রচলিত শক্তির কিছু সুবিধা

  • বর্তমানে প্রচলিত শক্তি সম্পদ থেকে খুব সহজেই উন্নত প্রযুক্তি ছাড়াই সহজ সরল প্রক্রিয়ায় শক্তির উৎপাদন সম্ভব হয়।
  •  প্রচলিত শক্তি সম্পদের উৎপাদন ব্যয় কম।
  •  প্রচলিত শক্তি সম্পদের অধিকাংশ গচ্ছিত এবং বস্তুগত সম্পদ তাই একসাথে বিপুল পরিমাণে শক্তি উৎপাদন সম্ভব হয়।
  • কোন প্রচলিত শক্তি সম্পদের সঞ্চয়ের (একমাত্র জলবিদ্যুৎ ছাড়া) পরিমাণ কোন অঞ্চলে কম থাকলে তা অন্য অঞ্চল থেকে আমদানি করা যায়।
প্রচলিত শক্তি সম্পদ থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষিত হয়

প্রচলিত শক্তির কিছু অসুবিধা

  • প্রচলিত শক্তি সম্পদের উৎস গুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়। এই কারণে এই সম্পদের ভাণ্ডার দিনে দিনে ফুরিয়ে যাচ্ছে।
  • প্রচলিত শক্তি সম্পদ থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষিত হয়।
  • প্রচলিত শক্তি সম্পদের উৎস গুলি মূলত অবস্তুগত সম্পদ। ফলে এই সম্পদের বন্টন সর্বত্র সমান হয় না। কিছু নির্দিষ্ট স্থানে সম্পদ গুলো পাওয়া যায়।
  • প্রচলিত শক্তি সম্পদের আহরণ ব্যয় অনেক বেশি।

[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ

শক্তি উৎপাদনে যে সমস্ত সম্পদ কম পরিমাণে ব্যবহৃত হয় না যে সম্পদগুলো থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রচলন এখনো সেই ভাবে শুরু হয়নি তাদের অপ্রচলিত শক্তি বলা হয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় সূর্য ,বায়ুর তাপ, জোয়ার ভাটা, সমুদ্র তরঙ্গ প্রভৃতি হল অপ্রচলিত শক্তির উৎস।

অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের কিছু সুবিধা

  • উৎসগুলি অত্যন্ত সহজলভ্য (যেমন  আলো, জল, বাতাস ইত্যাদি)
  •  এগুলি স্থান সাপেক্ষ হয় না এবং পৃথিবীর সর্বত্রই পাওয়া যায়।
  • অপ্রচলিত শক্তির উৎস ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
  • অপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য তাই বারবার ব্যবহার করা সত্ত্বেও এর ভাণ্ডার শেষ হয় না।
অপ্রচলিত শক্তির উৎসের ভাণ্ডার অফুরন্ত

অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের কিছু অসুবিধা

  • অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি এবং কারিগরি বিদ্যা এখনো পর্যন্ত সহজলভ্য নয়।
  • অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদন ব্যয় বেশি
  • অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া যায় না। এই ঘাটতি পূরণের জন্য অন্য স্থান থেকে আমদানি করা যায় না। যেমন – সূর্যালোক ও বায়ুপ্রবাহ।
  • অপ্রচলিত শক্তি থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তার পরিমাণ খুবই সামান্য হয়।

শক্তির ব্যবহার

বর্তমান যুগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারব না। এই শক্তি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-

  • আলো জ্বালানো, পাখা, টিভি, ফ্রিজ, বাতানুকূল যন্ত্র ,রান্নার কাজে ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার প্রভৃতি বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার প্রয়োজন হয়।
  • টেলিফোন ,টেলিপ্রিন্টার, ফ্যাক্স, কম্পিউটার প্রভৃতি চালনায় প্রয়োজন হয়।
  • আধুনিক বিশ্বের বেশিরভাগ পরিবহন মাধ্যম বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত হয়ে যাচ্ছে।
  • শিক্ষা পরিষেবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিদ্যুৎ। স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালনায় বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
  • সিনেমা, থিয়েটার, বিনোদন মূলক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজন অপরিসীম।
  • হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও দোকানে বিদ্যুৎ ছাড়া কাজকর্ম চালানো অসম্ভব।

[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

2016 সালের 31 শে মার্চের তথ্য অনুযায়ী ভারতের কোন স্থানের কাজকর্মে 22.97%, শিল্পের কাজে 44.20%, কৃষি ক্ষেত্রে 18.17%, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে 8.05% এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে 4.97% বিদ্যুতের ব্যবহার করা হয়েছিল।

চতুর্থ পর্ব সমাপ্ত। আগামী পর্ব → ভারতে বিভিন্ন প্রকার শক্তির ব্যবহার

লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তনী শ্রেয়সী বিশ্বাস। পড়াশোনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি, ছবি আঁকা এবং বাগান পরিচর্যাতেও শ্রেয়সী সমান উৎসাহী।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –