ভূগোল– নবম শ্রেণি – পশ্চিমবঙ্গ (ষষ্ঠ পর্ব)।
গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা সম্পর্কে এই পর্বে আমাদের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ↓
পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
যে সব উদ্ভিদ নিজে নিজেই মাটি ভেদ করে জন্মায় ও বেড়ে ওঠে তাদের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে।পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ প্রকৃতি, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাতের তারতম্য ও মাটির প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে উঠেছে।
সাধারনভাবে রাজ্যের বিভিন্ন স্বাভাবিক উদ্ভিদকে চারভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন- পার্বত্য অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ,
সমভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, সক্রিয় ব- দ্বীপ অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, মালভূমি অঞ্চলের বনভূমি।
পার্বত্য অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের যে স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায় তাকে পার্বত্য অঞ্চলের উদ্ভিদ বলে। এই অঞ্চলে উচ্চতার তারতম্যে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়।
• 1000 মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পর্ণমোচী জাতীয় শাল, শিমূল , কদম, কুসুম, খয়ের প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায়। শীতে পাতা ঝরে যায় বলে এদের পর্ণমোচী বলে।
• 1000-1500 মিটার উচ্চতায় চিরহরিৎ জাতীয় ওয়ালনাট, বার্চ, উইলো,অলডার, সিঙ্কোনা, পিপুল, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায়।
• 1500-3500 মিটার উচ্চতায় সরলবর্গীয় জাতীয় পাইন, ফার, দেবদারু, সিডার, ওক, দেওদার, রডোডেনড্রন প্রভৃতি জন্মায়।
• 3500 মিটারের অধিক উচ্চতায় আল্পীয় জাতীয় গুল্ম ও ঘাস জন্মায়।
সমভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের তারতম্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়।কোথাও পর্ণমোচী কোথাও চিরহরিৎ, আবার কোথাও পর্ণমোচী ও চিরহরিৎ মিশ্রিত উদ্ভিদ দেখা যায়।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]
তরাই -ডুয়ার্স অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য চিরহরিৎ উদ্ভিদের বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। শিশু, শাল , সেগুন , খয়ের , গামার , অর্জুন, বাঁশ, বেত প্রভৃতি এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ।
রাঢ় অঞ্চলে এবং সমভূমির অন্যান্য অংশে পর্ণমোচী ও চিরহরিৎ উদ্ভিদের পাশাপাশি অবস্থান দেখা যায়। আম, জাম, কাঁঠাল, বট, শিমূল অশ্বথ্থ, কদম, বেল, নিম, পলাশ, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ।
সক্রিয় ব- দ্বীপ অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
উত্তর চব্বিশ -পরগনা জেলার দক্ষিন অংশে সুন্দরবন সক্রিয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে জোয়ার -ভাটার প্রভাবে এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। এদের ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ বা বাদাবন বলে। সুন্দরবনকে ইউনেস্কো ১৯৮৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর অন্তর্ভুক্ত করে।
এরূপ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
১) জোয়ারের লবণাক্ত জলে এরূপ উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে।
২) জোয়ারের জলে ভূমিভাগ ডুবে থাকে বলে মাটিতে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকার জন্য উদ্ভিদের কান্ড থেকে বড়ো বড়ো শিকড় ঝুরির মতো মাটিতে নেমে আসে। এদের ঠেসমূল বলে।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]
৩) জোয়ারের জলে ডুবে থাকার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস জন্য উদ্ভিদের সূচালো শিকড় একাধিক স্থানে মাটি ভেদ করে উপরে উঠে । এদের শ্বাসমূল বলে।
৪) এই অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও কম অক্সিজেন যুক্ত হওয়ায় মাটিতে বীজ অঙ্কুরিত হতে পারে না বলে গাছেই বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে। এই পদ্ধতিকেই জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে।
এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলি হল – সুন্দরী, গরাণ, গেঁওয়া, কেওড়া, বানী, হোগলা, কেয়া, পশুর,গোলপাতা, প্রভৃতি।
মালভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলের পুরুলিয়া, বীরভূম , বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাত কম ও মাটি কাঁকড়ময় হওয়ার দরুন এই অঞ্চলে অগভীর অরন্যের সৃষ্টি হয়েছে । এই বনে শাল, শিমুল, পলাশ, মহুয়া, কুল, কেন্দ, বাবলা প্রভৃতি পর্ণমোচী বা পাতা ঝড়া বৃক্ষ জন্মায়। এই অঞ্চলের বনভূমিতে উদ্ভিদগুলির মধ্যে ঘনত্ব বেশ কম কিন্তু উদ্ভিদগুলি বেশ দীর্ঘ।
পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি
পশ্চিমবঙ্গের আয়তনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ বেশ কম। রাজ্যের মোট আয়তনের মাত্র ১৪ শতাংশ বনভূমি।প্রচুর জনসংখ্যা, কৃষিজমি ও রাস্তাঘাটের প্রসারের জন্য বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। রাজ্যের উল্লেখযোগ্য বনভূমিগুলি হল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনভূমি, জলদাপাড়া অভয়ারন্য, তরাই বনভূমি, হাসিমারা বনভূমি প্রভৃতি।
ষষ্ঠ পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-geo-8-f