ভূগোল – নবম শ্রেণি – অধ্যায় গ্রহরূপে পৃথিবী
আমরা সকলেই ‘সৌরমন্ডলী’ নামটির সাথে পরিচিত।
এই সৌরমন্ডলীর পরিবারে রয়েছে, পরিবারের প্রধান সূর্য এবং আর পরিবারের অন্যান্য সদস্য অর্থাৎ গ্রহমন্ডলী এবং সেই সঙ্গে ধুমকেতু, গ্রহপুঞ্জ এবং আরও অনেকে।
এই গ্রহমন্ডলীর মধ্যে প্রধান এবং তৃতীয় গ্রহটি হল আমাদের বাসস্থান অর্থাৎ পৃথিবী। পৃথিবী হল এই সৌরমন্ডলীর একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এর গুরুত্ব অন্যান্য সমস্ত গ্রহের তুলনায় আলাদা।
এই গুরুত্বের জন্যই আদিম কাল থেকেই পৃথিবীর আকার ও আকৃতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বহু জিজ্ঞাসা ও কৌতূহল রয়েছে।
পৃথিবীর আকার ঠিক কেমন?
বহু পূর্বে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা থালার মতো। পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয় পৃথিবীর আকৃতি হল গোলাকার। এই অধ্যায়ে পৃথিবীর এই সব বিশেষত্ব নিয়েই আমরা আলোচনা করবো।
পৃথিবীর আকৃতির অনুসন্ধান
200 BC সালে একজন বিখ্যাত গ্রীক philosopher এরাটোথেনিস (Eratosthenes) প্রথম পৃথিবীর পরিধি পরিমাপের চেষ্টা করেছিলেন এবং সর্বপ্রথম তিনিই বলেছিলেন যে পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার। এর পরবর্তীকালে অ্যারিস্টটল (Aristotle) সহ আরও অনেকে এই আকৃতি নিয়ে বলেছিলেন ঠিকই কিন্তু প্রমাণের অভাবে সেই সময় পৃথিবীর আকৃতি সেই যুগে প্রমাণ করা যায়নি।
গ্রহরূপে পৃথিবী অধ্যায়ের আলোচনা
এরপর পৃথিবী বিখ্যাত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের (Christopher Columbus) পৃথিবী ভ্রমণের কথা জেনে মানুষের মধ্যে পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে পুনরায় আগ্রহ জন্মায়।
যদিও স্যার কলম্বাস তার অভিযানের সময় একজনও সহ যাত্রীকে তার পাশে পাননি। 1519 সালে আরেকজন বিখ্যাত নাবিক ম্যাগলন ফারদিনান্দ (Magellan Ferdinand) পুনরায় পৃথিবী ভ্রমণে যাত্রা করেন। যদিও তিনি সফল হননি তবুও তার এই প্রশ্ন বহু মানুষের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে এবং সেই সময় বিখ্যাত জ্যামিতিবিদ স্যার পিথাগোরাস পৃথিবীর গোলত্বের পুনরায় প্রমাণ দেন।
আমরা এই পৃথিবীর গোলত্বের কিছু প্রমাণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং কিছু সাধারণ চিন্তা থেকেই বুঝতে পারবো যে পৃথিবীর আকৃতি আসলে কেমন।
পৃথিবীর গোলত্বের প্রমাণসমূহ
1. বর্তমান যুগে প্রযুক্তি যথেষ্ট উন্নত, তাই আমরা পৃথিবী পৃষ্ঠে দাড়িয়েই অন্যান্য গ্রহসমূহ এবং সৌরজগতের অন্তর্গত বাকি সদস্যদের সহজেই দেখতে পাই। এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই হল গোলাকার ফলে আমরা সহজেই বলতে পারি যে পৃথিবীর আকৃতি অতি অবশ্যই গোলাকার।
পূর্বে এই ধারণা প্রথম তৈরি হয় সূর্যের (নক্ষত্র) এবং একমাত্র পৃথিবীর উপগ্রহ (চাঁদ) দেখে।
2. উপকূল থেকে জাহাজ পর্যবেক্ষণ (Lines of visibility increases with height):-
আমরা যদি সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আসা একটি জাহাজকে ভা লোভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখবো যে জাহাজটি আমাদের যত কাছে আসছে ততই আমাদের কাছে তার বিভিন্ন অংশগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে অর্থাৎ প্রথমে অনেক দূরে থাকা জাহাজের আমরা শুধুমাত্র মাস্তুলটাই দেখতে পাবো। যতই জাহাজটি আমাদের কাছে আসবে ততই আমরা তার বাকি অংশ অর্থাৎ মাস্তুলের পরবর্তী অংশগুলো (যেমন deck ও অন্যান্য ভাগগুলি) দেখতে পাবো।
যদি পৃথিবীপৃষ্ঠ সমতল হতো তাহলে আমরা কখনই এইভাবে জাহাজটিকে দেখতে পেতাম না। প্রথম থেকেই আমরা সম্পূর্ণ জাহাজটিকে দেখতে পেতাম ছোট অবস্থায় কাছে এলে সেটিকে বড় দেখতাম।
এই নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত পর্যবেক্ষণ রয়েছে, সেটি হল বেডফোর্ড লেভেল পরীক্ষা (Bedford level Experiment)।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
এই পর্যবেক্ষণটি হল একটি স্তরভিত্তিক পরীক্ষা । এই পর্যবেক্ষণটি করে ছিলেন স্যার Samuel Birley Rowbotham, তিনি 9.7 km দীর্ঘ Old Bedford River এর উপরে এই পর্যবেক্ষনটি প্রথম করেছিলেন।
তিনি তিনটি 20 mt. লম্বা কাঠের সরু স্তম্ভকে 2 km. দূরতে প্রতিস্থাপন করেছিলেন এবং একটি নির্দিষ্ট স্তম্ভই একটি মাত্র নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে প্রথম স্তম্ভটির পুরো, দ্বিতীয়টি কিছুটা ও তৃতীয়টির শুধুমাত্র মাথাটুকু দেখা গেছিল। পৃথিবী গোলাকার বলেই তা শুধুমাত্র সম্ভব।
3. এছাড়া বর্তমান যুগে উপগ্রহ (satellite) বা প্লেন থেকে তোলা বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা গোলত্বের প্রামাণ করতে পারি।
NASA দ্বারা নির্মিত চাঁদ এবং পৃথিবীর এই অসাধারণ ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
4. পৃথিবীতে দিন ও রাত্রি সংগঠিত হয় প্রতিনিয়ত কিন্তু তা পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে একসাথে সংগঠিত হয় না । যদি সত্যিই পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো হতো তাহলে এটা কখনই সম্ভব ছিল না।
পৃথিবীর আকৃতি
আমরা উপরোক্ত প্রমাণগুলি থেকে বুঝি যে পৃথিবীর আকৃতি আসলে কিছুটা কমলালেবুর মতো অর্থাৎ মধ্যবর্তী অংশ হল স্ফীত ও দুই মেরুর দিকে কিছুটা চ্যাপ্টা।
এই আকৃতিকে আমরা বলি অভিগত গোলাকার বা একে আমরা জিওড (geoid) বলতে পারি।
পৃথিবী হল এমন একটি গ্রহ যাতে শুধুমাত্র আমরা প্রাণের ও জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। এই প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাই বলে পৃথিবীর নতুন নামকরণও হয়েছে। একে আমরা বলি Unique planet of the Universe। সেইসঙ্গে জলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বলে পৃথিবীর আরেকটি নাম হল Watery planet।
এই জলের অস্তিত্ব আছে বলে আমরা যখন কোন উপগ্রহ থেকে এর ছবি তুলে সেটি নীল রঙের দেখায়। তাই এর আরেকটি নাম হল Blue planet।
পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হল কেন?
পৃথিবীতে তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে খুঁজে পাওয়া যায় প্রাণের অস্তিত্ব। এগুলো হল – (i) জল (ii) বায়ু এবং (iii) মাটি।
এই তিনটি স্তরই আমাদের জল/জলমণ্ডল/প্রাণীমন্ডলের জন্য অপরিহার্য।
এই তিনটি স্তরই আমাদের কর্মস্থান পৃথিবীতে রয়েছে। তাই এই তিনটির সমন্বয়ে প্রাণীমন্ডল গড়ে উঠেছে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
এছাড়া আরও কিছু বিষয় রয়েছে যার ফলে প্রাণের অস্তিত্ব তৈরি হয়েছে। এগুলি হল–
- সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব এমনই যে তাপমাত্রা আমাদের বসবাসের জন্য খুবই উপযুক্ত।
- বায়ুমন্ডলের মধ্যে একটি বিশেষ গ্যাস (ওজোন গ্যাস বা O3) বর্তমান। যা দুটি বিশেষ কাজে লাগে। (a) এটি সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর গ্যাসের (Ultraviolet) রশ্মিকে শোষন করে নেয় (b) এটি অনেক সময় উল্কাকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে (যদিও এটি প্রধানত আয়নোস্ফিয়ারে হয়)
- পৃথিবীর মধ্যে তিনভাগ জল এবং একভাগ স্থল। এই জল ও স্থল সম্পূর্ণ বিপরীত গোলার্ধে বিপরীতরূপে সাজানো রয়েছে। যা জল ও স্থলের ভারসাম্য বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
এবার একঝলকে পৃথিবীর সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যাক –
- পৃথিবীর ভর (kg) 5.976 x 1024
- নিরক্ষীয় ব্যাস (km) – 6378গড় ঘনত্ব (g/cm-3) – 5.52নিরক্ষীয় মাধ্যাকর্ষণ (m s-2) – 9.78
- Equatorial escape velocity (km s-1) – 11.2
- Orbital period (days) – 365.25
- আক্ষরিক ঘূর্ণন সময়কাল – 23.934 hr
- Obliquity – 23.45°
- Mean surface temp – 15°C
- Mean surface presume (bar) – 1
- Distance from sun – 149.60 x 106km
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-1-i
পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মতো অথ্যাৎ জিয়ড