bhoutorashir-prokarved-updated
WB-Class-9

ভৌতরাশির প্রকারভেদ

ভৌতবিজ্ঞাননবম শ্রেণি – পরিমাপ ও একক (দ্বিতীয় পর্ব)

আমাদের এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই সর্বদা কিছু না কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে।

আমরাও এই পরিবর্তনেরই একটি অংশ।

এই পরিবর্তন কতটা হচ্ছে, কেনই বা হচ্ছে, মহাবিশ্ব কোন কোন কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত করে চলেছে আমাদের চোখের সামনে বা অন্তরালে, বুঝতে গেলে পরিমাপের সাহায্য নিতে হবে। আমরা কোনো কিছুর কারণ সম্বন্ধে প্রথমে অনুমান করি, তারপর পরীক্ষা করে তার ফলাফল সংগ্রহ করে দেখি তা বাস্তবের সাথে মিললো কিনা; সবশেষে সেইখান থেকে অনুমানকে যাচাই করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাই। এই পরীক্ষা সেই পরিবর্তন পর্য্যবেক্ষণেরই নামান্তরমাত্র। এই পরীক্ষাকে পর্যবেক্ষণ বা আরেককথায় পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য সাহায্য নিতে হয় ভৌতরাশির। আর এই পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলা হয়।

উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক তিনটি ঘটনার কথা।

তুমি আগের বছর যতটা লম্বা ছিলে এ বছর তার থেকে বেশি লম্বা হয়েছো। সকাল বেলা উঠে তুমি আগে এক গ্লাস জল খেতে এখন দু গ্লাস করে খাচ্ছ। বুঝতে পারছো এইখানে কি কি পরিবর্তনের উল্লেখ করা হয়েছে? যা তোমার উত্তর হবে সেগুলোই হল ভৌত রাশি।

স্পষ্টতই, উপরের উদাহরণে দৈর্ঘ্য ও আয়তনের পরিবর্তন উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোই সেই ভৌত রাশি। এরকম অজস্র রাশিমালা রয়েছে যেগুলির পরিবর্তন আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করে চলেছি।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

এই ভৌতরাশির সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় –

পরিমাপযোগ্য যেকোনো প্রাকৃতিক বিষয় যা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলছে তাহাই ভৌতরাশি।

একে দুভাবে ভাগ করা যেতে পারে।

a) রাশিটির গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে
b) পরিমাপগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে।

গঠনগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে রাশি দুই প্রকার। ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি। পরিমাপে রাশির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, মান ও অভিমুখ।

ভেক্টর রাশি

যে পরিমাপযোগ্য রাশির মান ও অভিমুখ উভয়ই আছে। তাদের ভেক্টর রাশি বলা হয়।
যেমন – সরণ, বেগ, ওজন ইত্যাদি।

স্কেলার রাশি:

যে পরিমাপযোগ্য রাশির মান আছে অভিমুখ নেই। তাদের স্কেলার রাশি বলা হয়। যেমন – দৈর্ঘ্য, আয়তন, সময়, দ্রুতি ইত্যাদি।

স্কেলার রাশি এবং ভেক্টর রাশির পার্থক্য

scalar_and_vector


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

পরিমাপগত ভাবেও রাশি দুই প্রকার।

একটি মৌলিক রাশি এবং অপরটি লব্ধরাশি। খুব স্বল্প সংখ্যক রাশিকে সংজ্ঞায়িত করে বাকি রাশিগুলিকে সেই রাশিগুলির সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হয়। স্বল্পসংখ্যক রাশিগুলি হল মৌলিক রাশি এবং তাদের দ্বারা নির্ধারিত রাশিমালা হলো লব্ধরাশি। আমরা বিস্তারিতভাবে ব্যাপারটা বুঝে নেব।

মৌলিক রাশি:

SI বা International System of Units 7টি রাশির একককে 7টি ভৌত ঘটনার সাথে তুলনা করে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই কারণে এই 7টি রাশি কোনো অন্য রাশির উপর নির্ভর করে না, বরং ওই ধ্রুবকের উপর নির্ভর করে যার সাথে তুলনা করে রাশিটির একক সংজ্ঞায়িত। তাই এদেরকে মৌলিক রাশি বলে।

যেমন আলোর দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্বকে দৈর্ঘ্যের একক হিসাবে ধরা হয়েছে। এই দৈর্ঘ্য তাই একটি মৌলিক একক। আবার একটি নির্দিষ্ট মৌলের নির্দিষ্ট পরিমাণ পরমাণুর ভাঙ্গনের সময়কে একক সময় ধরা হয়েছে। তাই সময়ও একটি মৌলিক রাশি।

এইভাবে প্রাপ্ত 7টি মৌলিক রাশি হলো দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, পদার্থের পরিমাণ,
আলোর তীব্রতা, তড়িৎ প্রবাহমাত্রা এবং তাপমাত্রা।

লব্ধ রাশি:

এই সাতটি রাশির মধ্যে আভ্যন্তরীন সম্পর্ক স্থাপন করে যেইসব রাশিমালা, তাদেরকে লব্ধ রাশি বলে। এই সাতটি রাশির গুণ ভাগ বা ঘাতের ফলে লব্ধরাশি পাওয়া যায়। এদেরকে মৌলিক রাশিমালার সমবায় বলা যেতে পারে।

যেমন সময় ও দৈর্ঘ্যের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করে বেগ, সুতরাং বেগ একটি লব্ধ রাশি। আবার আয়তন সেই দৈর্ঘ্যেরই তৃতীয় ঘাত। বল, ভর ও দৈর্ঘ্যের গুণফলের সাথে সময়ের বর্গের অনুপাত। সুতরাং বল-ও একটি লব্ধ রাশি। এটিতে গুণ, ভাগ এবং ঘাত তিনটি পদ্ধতিরই প্রয়োগ রয়েছে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → কার্য ও ক্ষমতা

<


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-PS-1b