স্কুলে চলছে গরমের ছুটি। আর বাইরে প্রচণ্ড গরম।
রবিবারের এক সকালবেলা দিনু এসেছে টিপুদের বাড়িতে, তবে টিপুর কাছে নয়; দিনু এসেছে টিপুর দাদা বিধানের সাথে আড্ডা মারতে।
এদিকে টিপু আছে তার পড়ার ঘরে। গরমের ছুটিতে পড়ার চাপ অনেকটাই কম। তাই সে এখন হোম-ওয়ার্কের সাথে সাথে নিয়ম করে গল্পের বই পড়ছে। এখন তার হাতে টেনিদা সমগ্র। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত টেনিদার কথা টিপু ছোটবেলা থেকে শুনে আসছে, কিন্তু আজ অবধি পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তার।
বলাই বাহুল্য, টেনিদা পড়তে টিপুর দারুণ লাগছে।
পটলডাঙ্গার স্বনামধন্য মানুষ ভজহরি মুখুজ্যে ওরফে দুঃসাহসী টেনিদা যেমনি পেটুক আর তেমনি গুলবাজ। প্যালা, হাবুল আর ক্যাবলাকে টেনিদা প্রায়ই নানান মজার গল্প শোনায়। যুদ্ধ করা থেকে পাহাড় চড়া, ক্রিকেট থেকে ফুটবল, টেনিদা সবকিছুতেই পণ্ডিত মানুষ। এমনকি ফরাসী ভাষাটাও শিখে ফেলেছে টেনিদা।
[আরো পড়ুন – হঠাৎ মাউস বিগড়ে গেলে টিপুর কি হবে?]
যাই হোক গল্পের টেনিদা যতই আকর্ষক হোক না কেন, দিনুদার টান টিপুর কাছে খুব একটা কম কিছু না। দিনুদা এসেছে তার বাড়িতে আর সে সেখানে না গিয়ে পড়ার ঘরে বসে থাকবে! এটা কি কখনো হতে পারে? মুশকিল হল, দাদাকে একটু সমঝে চলে টিপু। দিনুদার সাথে তার দারুণ ভালো ফিল্ড থাকলেও, ফিজিক্সের মোটা মোটা বই পড়া দাদার সাথে তার খুব একটা পটে না। আসলে দাদার সাথে দেখা হলেই দাদা খালি পড়ার কথা জানতে চায় যে।
যাই হোক, টিপু অনেক ভেবে ঠিক করলো দিনুদার সাথে একবার দেখা না করলেই নয়। গুটি গুটি পায়ে সে চলল দাদার ঘরের দিকে।
ঘরে ঢুকে সে দেখলো দিনুদা আর তার দাদা জমিয়ে গল্প করছে।
দিনুদা, টিপুকে দেখেই জিজ্ঞেস করল – কিহে টিপুরাম, কেমন আছো?
টিপু হেসে উত্তর দিল – দারুণ, একেবারে যাকে বলে ‘ডি লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস’!
দিনুদা – ওরে বাবা, টেনিদা পড়া হচ্ছে বুঝি?
টিপু হেসে ঘাড় নাড়ে।
ওর হয়ে দাদাই উত্তর দেয় – হ্যাঁ, ঠিক ধরেছিস। দুদিন ধরে টেনিদা গোগ্রাসে গিলছে। অথচ টিপু একদম বই পড়তে চায় না।
[আরো পড়ুন – বই পড়ার অভ্যাস কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারে?]
দিনুদা – তা বেশ, বুঝলি টিপু বইয়ের মতো বন্ধু আর কেউ নেই। আচ্ছা এই যে তুই যেটা বললি ওটা মানে কি বলতো?
টিপু – ওটা তো ফরাসী ভাষা, টেনিদা বলে।
দিনুদা – হ্যাঁ ঠিক। তবে ফরাসী কিনা সেটা সঠিক জানি না।
টিপু – আচ্ছা দিনুদা, তুমি কি কি ভাষা জানো।
দিনুদা – তুই যা জানিস তার থেকে একটা বেশি। আমি জার্মান ভাষা জানি। তোর দাদাও তো স্প্যানিশ ভাষা জানে।
টিপু – হ্যাঁ জানি তো। কিন্তু দাদা মোটেও শেখাতে চায় না যে। আমাকে দেখলেই খালি বলে যা এক্ষুনি গিয়ে পড়তে বোস।
দিনুদা হেসে বলে – বুঝলাম, কিন্তু দাদা শেখাচ্ছে না তো কি হয়েছে। নিজেই শিখে নিতে পারিস তো।
[আরো পড়ুন – কিভাবে দিনুদার সাহায্যে ডিজিটাল ফটো বানালো টিপু]
ঘাবড়ে গিয়ে টিপু বলে – অ্যাঁ, কেমন করে?
দিনুদা দাদার ফোন হাতে নিয়ে বলে এই ভাবে। দাদার ফোনটা Android ফোন, দিনুদা তার প্লে স্টোরে গিয়ে টাইপ করে Duolingo।
সঙ্গে সঙ্গে পাখির মুখ আঁকা একটা app চলে আসে স্ক্রিনে। সেটা ইন্সটল করে দিনুদা আর বলে-
এটা একটা দারুণ application, এই app টার মাধ্যমে বিশ্বের 85 টার বেশি ভাষা একদম বিনামূল্যে শিখে নিতে পারিস।
2009 থেকে শুরু হওয়া এই app টার বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা 300 মিলিয়ানেরও বেশি। বিশ্বের বহু দেশের মানুষেরা এটি ব্যবহার করেন। আর আমার এর মধ্যে যে ব্যাপারটা সবথেকে বেশি ভালো লাগে তা হল এদের শেখানোর পদ্ধতি। Artificial intelligence পদ্ধতি ব্যবহার করে এরা একটা অদ্ভুত learning management system তৈরি করেছে যা একজন নভিসকেও পণ্ডিত বানাতে পারে।
এবার দিনুদাই দেখিয়ে দিল কিভাবে ব্যবহার করা যাবে এই applicationটি।
টিপু শুরু করলো স্প্যানিশ দিয়ে। আর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ও প্রায় 30টা নতুন স্প্যানিশ শব্দ শিখে ফেলল।
কিন্তু টিপুর সমস্যা একটাই – এই ফোন যে দাদার। আর দাদা তাকে দাদার ফোনের ত্রিসিমানাতেও ঘেঁসতে দেয় না।
সমস্যার কথা জেনে হেসে দাদা বলল – ভালো কাজের জন্য মাঝে মাঝে আমার ফোন ব্যবহার করিস। কিন্তু যদি দেখি ভাষা শেখার নাম করে গেম খেলছিস তাহলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব।
তবে দিনুদা বলল চিন্তার কারণ নেই, এদের website ভার্সন ব্যবহার করতে পারিস কম্পিউটার থেকে। সেটাও খুবই ভালো।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে টিপুর। আর মনে মনে সে ভাবে কয়েকমাসের মধ্যেই একটা নতুন ভাষা শিখে দিনুদা আর দাদাকে চমকে দেবে। আজ থেকেই লেগে পড়তে হবে Dualingo নিয়ে!
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা