শ্রেণি: দশম | বিষয়: ভৌতবিজ্ঞান । অধ্যায়: চলতড়িৎ(প্রথম পর্ব)
অধ্যায়ের শুরুতেই আমরা জানবো তড়িৎ প্রবাহ কাকে বলে?
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে যখন কোন পদার্থের মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়, তখন বলা হয় যে তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে।
এখন এই তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখে হিসাবে ধরা হয় ইলেকট্রন যে অভিমুখে প্রবাহিত হচ্ছে তার বিপরীত অভিমুখকে।
এবার মজার ব্যপার হল যে, সব পদার্থের মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহ ঘটে না। সাধারণ ভাবে ধাতব পদার্থ, আর গ্রাফাইট নামক অধাতব একটি পদার্থের মধ্যে দিয়েই ইলেকট্রন প্রবাহের মত ঘটনা ঘটে।
কিন্তু কেন এমন ঘটে?
আসলে ধাতব পদার্থগুলির ইলেকট্রন বিন্যাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে এদের শেষ কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 1, 2 বা 3টি যাদের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বলে তুলনামূলকভাবে কম। ধাতব পদার্থের শেষ কক্ষে থাকা এই ইলেকট্রন গুলিই বিভব প্রভেদের ফলে উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে ধাবিত হয়।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় তামার কথা। তামা একটি অত্যন্ত তড়িৎ পরিবাহী ধাতু। তামার ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংখ্যা 29 এবং সর্বশেষ কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 1।
বিভব কি?
বিভব বলতে বোঝায়,
কোন একক পরিমাণ ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে এক বিন্দু থেকে অন্য আরেক বিন্দুতে কোন প্রকার ত্বরণ ছাড়া সরাতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়।
সহজ ভাষায় বললে, তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে কোন আধানকে সরাতে প্রয়োজনীয় কৃতকার্য। এই বিভবকে আমরা ইংরাজিতে চিনি ‘voltage’ নামে।
এই বিভব বা কৃতকার্য তৈরি হয় তড়িৎচালক বলের থেকে। তড়িৎচালক বল বলতে বোঝায়, অন্য প্রকার কোন শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরণ। এই অন্য প্রকার শক্তি রাসায়নিক শক্তি (ভল্টিয় কোশ) যান্ত্রিক শক্তি (তাপ বিদ্যুৎ বা জল বিদ্যুৎ) ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে, যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে সরবরাহ করা হয় আমাদের ঘরে ঘরে।
সাধারণ ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহয়ের জন্য আমাদের গৃহস্থালীতে দেওয়া থাকে একটি ধনাত্মক (পজিটিভ) প্রান্ত ও একটি ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রান্ত।
এই ধনাত্মক প্রান্তটি ধনাত্মক বা পজিটিভ আধান পূর্ণ থাকে এবং ঋণাত্মক প্রান্তটি থাকে ইলেকট্রনে পূর্ণ। এই পজিটিভ ও নেগেটিভ প্রান্তকে পরিবাহী তার দিয়ে যুক্ত করাকে বলা হয় বর্তনী।
তবে একটি বর্তনীতে আরো অনেক কিছুই থাকতে পারে, যেমন সুইচ, আলো, পাখা, টিভি, পাম্প, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি। সুইচ ছাড়া এই সকল আনুষঙ্গকেই আমরা বলতে পারি রোধ বা লোড।
পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ পরিবহন কালে তড়িতের পরিমাণ ও ঐ পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা কিভবে সম্পর্কিত তা ব্যাখ্যা করেছিলেন বিজ্ঞানী ওহম।
ওহমের সূত্র (Ohm’s law)
উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোন পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ (V) ঐ পরিবাহীর প্রবাহমাত্রার (I) সঙ্গে সমানুপাতিক।
অর্থাৎ গাণিতিক ভাষায়
V ∝ I
বা, V =RI [এক্ষেত্রে R হল ধ্রুবক]
এই ধ্রুবক R কে বলা হয় পরিবাহীর রোধ।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
এখন রোধ কাকে বলে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে –
প্রবাহমাত্রা কি?
প্রবাহমাত্রা হল একক সময়ে প্রবাহিত আধানের পরিমাণ।
ধরা যাক কোন পরিবাহীর পজিটিভ থেকে নেগেটিভ প্রান্ত পর্যন্ত n সংখ্যক ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়েছে। এখন 1টি ইলেকট্রনের আধান ধরি ‘e’ সুতরাং ‘n’ সংখ্যক ইলেকট্রনের মোট আধান হবে n.e
সুতরাং একক সময়ে প্রবাহিত আধান বা প্রবাহমাত্রা (I) =
উপরোক্ত সমীকরণে n.e = Q ধরলে
I =
ওহমের সূত্র থেকে রোধের ব্যাখ্যা
ওহমের সূত্রের গাণিতিক রূপটি থেকে আমরা পাইঃ V =RI
বা, R =
অর্থাৎ, রোধের সংজ্ঞা হিসাবে বলা যেতে পারে –
কোন পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ ও উহার প্রবাহমাত্রার অনুপাতকেই বলে রোধ।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
এখন ওহমের সূত্রটি আরো একটু পর্যালোচনা করে দেখা যাক।
R =
এখন এক সম্পর্কে ‘V’ যদি ধ্রুবক হয় তবে
R ∝
অর্থাৎ, একই বিভব প্রভেদ বিশিষ্ট একাধিক পরিবাহীর রোধ যদি বিভিন্ন হয় তবে উচ্চ রোধ বিশিষ্ট পরিবাহীতে প্রবাহমাত্রা কম এবং নিম্ন রোধ বিশিষ্ট পরিবাহীতে প্রবাহমাত্রা বেশি হবে।
আবার, R = সম্পর্কটিতে যদি I, বা প্রবাহমাত্রা যদি ধ্রুবক হয় তবে R ∝ V অর্থাৎ
প্রবাহমাত্রা স্থির রেখে কোন পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ যদি বৃদ্ধি করা হয় তবে ঐ পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পাবে।
এখন রোধ, প্রবাহমাত্রা, বিভব প্রভেদ ইত্যাদি পরিমাপের একক গুলি আমাদের জানতে হবে। এই এককগুলি নিচের টেবিলে দেওয়া হল।
S. T. | C. G. S | |
প্রবাহমাত্রা
বিভব রোধ |
অ্যাম্পিয়ার (A)
ভোল্ট (V) ওহম (Ω) |
মিলি অ্যাম্পিয়ার (mA)
মিলি ভোল্ট (mV) মিলি ওহম (mΩ) |
তবে কোন পরিবাহীর রোধ কেবল ঐ পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ বা প্রবাহমাত্রার উপরেই নির্ভর করে না। পরিবাহীর দৈর্ঘ্য (l) প্রস্থচ্ছেদ (A) ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপরেও নির্ভর করে।
পরবর্তী পর্বে আমরা রোধের নিয়ামক এবং রোধাঙ্ক সম্পর্কে জানবো।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_PSc_Cholotorit-1