টিপু আজ খুব খুশি।
স্কুলে থেকে প্রায় লাফাতে লাফাতে বেরোচ্ছে সে। আর আনন্দ হবে নাই বা কেন। সে যে লটারি পেয়েছে, টাকার অঙ্কটা এতটাই বেশি যে শূন্য গুনে অঙ্কটা বলতে হচ্ছে।
টিপু জাস্ট ভাবতে পারছে না যে মাত্র 14 বছর বয়সেই সে 100 কোটি টাকার মালিক হতে চলেছে।
কি লাভ আর পড়াশোনা করে? এবার থেকে সে পায়ের উপর পা তুলে থাকবে আর নানান দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবে। আর কোনও চিন্তা নেই। তবে এত কিছুর মধ্যেও তার একটু হলেও মনটা খারাপ। তাদের ক্লাসের শুভ্রনীলও নাকি লটারি পেয়েছে। টিপু শুনেছে টাকার অঙ্কটা তার থেকেও কম। কিন্তু তার খ্যাতিতে ভাগ তো বসালো শুভ্রনীল।
যাই হোক, এখন আসল কাজটাই তো বাকি, লটারি কোম্পানি থেকে বলেছে ওদের একটা ব্যাঙ্ক অ্যাক্যাউন্ট চাই। ওটা দিলেই কোটি কোটি টাকা আসবে টিপুর পকেটে। এবার সমস্যা হল, বাবাকে বললে বাবা বিশ্বাস করবে না আর দাদাকে বললে হয়তো একটা ইঞ্জিনিয়ারিঙের মোটা বই টিপুকে তাক করে ছুঁড়ে মারবে। তা হলে অ্যাক্যাউন্টটা পাবে কোথা থেকে!
হঠাৎ করে টিপুর মাথায় আসে একটা নাম – দিনুদা।
ঠিক তাই দিনুদাতো অনলাইনে খালি বই-পত্র কেনে, তার মানে ওর নিশ্চয় ব্যাঙ্ক অ্যাক্যাউন্ট আছে। ব্যাস সমাধান হয়ে গেল, বাড়ি ফিরেই ফোন করবে দিনুদাকে।
বাড়ি ফিরে টিপু দেখে দাদা ওর ঘরে একটা মোটা বই খুলে কি যেন খুব মন দিয়ে পড়ছে। ওদের কলেজে কি যেন একটা প্রজেক্ট চলছে তাই কয়েকদিন বাড়ি থেকেই কাজ করছে দাদা, তার মানে দিনুদাও নিশ্চয়ই বাড়িতেই আছে।
কোনরকমে ফ্রেস হয়েই, সাবধানে কর্ডলেসটা নিয়ে নিজের পড়ার ঘরে আসে। ফোন করে দিনুদাকে। একটু রিং করার পরেই ফোন ধরে দিনুদা। ওপাশের ‘হ্যালো’ শুনে টিপু বলে।
টিপু – একটা দারুণ ব্যাপার হয়েছে গো দিনুদা। আমি এখন বিশাল বড়লোক, আর কয়েকদিনের মধ্যেই টাকা চলে আসবে।
[আরো পড়ুন – দিনুদার কেরামতি; বিদেশি ভাষার পাঠশালা ]
দিনুদা একটু অবাক হয়ে বলে – মানে, তুই কি আজকাল লটারির টিকিট কাটছিস নাকি? কাকিমার সাথে কথা বলতে হবে তো, তোকে নির্ঘাত বেশি হাতখরছ দেওয়া হচ্ছে।
টিপু – আরে না গো। সেইদিন ওয়েবসাইটে একটা ম্যাসেজ দেখি। ওখানে খুব সহজ একটা উত্তর দিতে বলা হয়েছিল। আমি দিয়ে উত্তর দিয়ে আমার সব ডিটেলস পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তাই ওরা আমাকে 100 কোটি টাকা দেবে।
দিনুদা – হুম, বুঝলাম। তা কি করতে হবে তার জন্য?
টিপু – কিচ্ছু নয়, ওরা একটা লিঙ্ক পাঠিয়েছে। ওখানে গিয়ে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর আর সব ডিটেলস দিলেই ওরা ডলারে সব টাকা পাঠিয়ে দেবে। আমার তো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, আর বাবা বা দাদাকে বললে আমাকে ‘ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা’ করে দিতে পারে। এখন তুমিই ভরসা দাদা। তোমার ব্যাঙ্ক ডিটেলসগুলো দেবে?
দিনুদা –তোর দাদা তোকে মাঝেমাঝে ছাগল বলে ডাকে, তাই না? এখন বুঝতে পারছি ঠিক করে। ওটাই তোর আসল নাম।
টিপু – অ্যাঁ! কেন, কি করলাম আমি।
দিনুদা – ওরে বিনা পরিশ্রমে কেউ কাউকে একটা পয়সা দেয় না, আর তোকে কেউ 100 কোটি টাকা দেবে তুই ভাবলি কি করে?
[আরো পড়ুন – দিনুদার কেরামতি; হটাৎ মাউস বিগড়ে গেলে টিপু কি করবে]
টিপু – তবে যে মেইল করে জানালো। টাকা দেবে না?
দিনুদা – ইন্টারনেটে যা যা লেখা হয় বা করা হয়, তা সব সময়ে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয় না। বর্তমানে ঠিক এই রকম একটি সমস্যা বেশ কিছুদিন ধরে সারা পৃথিবীকে বিরক্ত করছে। এর পোশাকি নাম র্যানস্যামওয়্যার। ম্যালওয়্যার কাকে বলে জানা আছে তো?
টিপু – ঐ তো ভাইরাসের মত কি যেন একটা।
দিনুদা – ঠিক ভাইরাস নয়। কম্পিউটার ভাইরাসের প্রধান কাজ হল কম্পিউটারের কাজ কর্ম বিকল করে দেওয়া আর এটা ছড়িয়ে পড়ার জন্য, ইন্টারনেটের ব্যবহার দরকারি নয়। কিন্তু ম্যালওয়্যার আরো নানা রকম ক্ষতি করতে পারে। যেমন তথ্য চুরি করা, কম্পিউটারের কার্য-ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া, আর এই ম্যালওয়্যার মূলত আসে ইন্টারনেট থেকে। র্যানস্যামওয়্যার হল এক ধরনের ম্যালওয়্যার। র্যানস্যাম কথাটির অর্থ হল মুক্তিপণ।
তা এই র্যানস্যামওয়্যার কি করে জানিস?
যে কম্পিউটারে এটা অ্যাটাক করে, সেই কম্পিউটারের সব তথ্যকে লক্ করে দেয় আর তারপরে একটা টাকা দাবী করে, যা দিলে তবেই ঐ তথ্য ফিরে পাওয়া যাবে। মুশকিলের ব্যাপার হল, মুক্তিপণের টাকা দিলেই যে তথ্য ফিরে পাওয়া যাবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। ধর তুই টাকা দিয়ে দিলি তাও তথ্য ফিরে পেলি না, এই রকম প্রচুর উদাহরণ আছে।
টিপু – ওরে-বাবা এতো সাংঘাতিক ব্যাপার। আমার কাছে যেটা এসেছে, এটা কি তাহলে র্যানস্যামওয়্যার?
দিনুদা – সেটা তো না জেনে বলা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে ঐ ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য ঠিক নয়। আর না জেনে কোন অজানা ওয়েবসাইটকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস দেওয়াও ঠিক নয়। এর জন্য পৃথিবীতে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।
টিপু – সেটা কেমন ভাবে?
[আরো পড়ুন – দিনুদার সাহায্যে টিপু কিভাবে ডিজিটাল অ্যালবাম বানালো]
দিনুদা – শুধু ব্যাক্তিগত কাজে নয়, আজকাল কম্পিউটার প্রায় প্রতিটা কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর সব তথ্য আজকাল ক্লাউড কিংবা সার্ভারে সেভ করা হয়ে থাকে। এবার ধর, কোন একটা অফিসে 100 জন কম্পিউটার ব্যবহার করেন। আর সেই 100 টা কম্পিউটার একটাই সার্ভারের সাথে যুক্ত। এবার তোর মত একজন আতি-উৎসাহী ব্যাক্তি না বুঝে র্যানস্যামওয়্যার বা ম্যালওয়্যার লিঙ্কে ক্লিক করলো, ব্যাস সেই র্যানস্যামওয়্যার সেই অফিসের সব কটা কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ল এবং সার্ভারে যত তথ্য আছে সবগুলো লক্ বা নষ্ট করে ফেললো। ফলে সেই কোম্পানিকে বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হল।
টিপু – সত্যিই না জেনে আমি কি বিপদ ডেকে আনছিলাম আজ। কিন্তু এর থেকে কি বাঁচার কোন রাস্তা নেই।
দিনুদা – আছে, কিন্তু পুরোপুরি নয়। কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে অ্যান্টিভাইরাস অবশ্যই থাকতে হবে। তাতে রিস্ক অনেকটাই কমে, কিন্তু বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিরা ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছে, ঠিক তেমন ভাবেই অসৎ লোকেরাও তাদের ম্যালওয়্যার গুলোকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে চলেছে। তাই প্রতিদিন নতুন নতুন শক্তিশালী ম্যালওয়্যার আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। তবে একটা ব্যাপারে বিশেষভাবে সাবধান হতেই হবে, তা হল কোন অসুরক্ষিত ওয়েবসাইটে কোন তথ্য না দেওয়া বা ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিক না করা।
টিপু – আজ জোর বাঁচা বেঁচে গেছি। দাদার সাধের কম্পিউটারের কোন ক্ষতি হলে দাদা হয়তো আমার একটা কিডনি খুলে নিত। ধন্যবাদ দিনুদা।
টিপু, দিনুর ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কাল স্কুলে মুখ কিভাবে দেখাবে তাই ভাবতে থাকে।
পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখে, শুভ্রনীল বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে বসে আছে।
টিপু কারণ জানতে চাইলে শুভ্রনীল বলে ঐ লটারির চক্করে কাল র্যানসামওয়্যার ঢুকে ওর বাবার কম্পিউটার বিকল করে দিয়েছে। তাই কাল রাতে শুভ্রনীলের বাবার কাছে উত্তম-মধ্যম-অধম সব ধরনের ভালোবাসা খেতে বাধ্য হয়েছে।
মুখটা গম্ভীর করে শুভ্রনীলের দুঃখ শুনলেও মনে মনে একচোট হেসে নেয় সে আর বলে, সবার কাছে তো আর দিনুদা থাকে না!
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা