history-of-pi
Histroy of Science (বিজ্ঞানের ইতিহাস)

‘পাই’-এর ইতিহাস



ছোট বা বড়, ‘পাই’-কে আমরা সবাই চিনি।

পড়াশোনার কোন না কোন ধাপে আমরা সবাই এই ‘পাই’ এর সাথে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছি। সাধারণত ‘পাই বা pi বা π’ বলতে আমরা বুঝি 3.14 বা \frac{22}{7}। যারা পড়াশোনার সাথে যুক্ত আছি তারা পরিমিতিতে প্রায়শই এই রাশিমালার ব্যবহার করে থাকি। গণিতের একটি অন্যতম ধ্রুবক হল এই ‘পাই’।

এর সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে বৃত্তের পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাত হল ‘পাই’।

খুব সহজ ব্যাপার তাই তো? ব্যাপারটা কিন্তু খুব সহজ মনে হলেও খুব একটা সহজ নয়। এই ‘পাই’কে ভালো ভাবে খুঁজে পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন না জানি কত লক্ষ লক্ষ গাণিতবিদ।

কেন? এ আর এমন কি ব্যাপার!

আমরা যারা একটু অঙ্ক করি, তারা আমরা সবাই জানি বৃত্তের ব্যাসার্ধ ‘r’ হলে পরিধি হবে ‘2πr’ এবং ব্যাস হবে 2r।

pi

সুতরাং বলা যায়,

formula-of-pi

খুব সহজ তাই তো?

কিন্তু এই ‘পাই’ এর মান কত হবে? আসল সমস্যার সুত্রপাত এই মান খোঁজা থেকেই। এখানে একটা ব্যাপার জেনে রাখা ভালো, যে বৃত্তটি যেকোনো ব্যাসার্ধের-ই হোকনা কেন, তার পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাত সর্বদা ‘পাই’ হবে।

jump-magazine-subscription

এটা কিন্তু হাতে কলমে করে দেখা যেতে পারে।

ধরা যাক দুটি ভিন্ন (যাদের পরিধি আলাদা আলাদা হবে) বৃত্ত আঁকা হল, স্কেলের সাহায্যে তাদের ব্যাসের মান নেওয়া হল। এবার যদি দুটি বৃত্তের পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাত করা যায় তাহলে দেখা যাবে দুজনের মান একই আসছে।

‘পাই’ এর মান গণনা

প্রাচীনকালের সব কটি সভ্যতা, যেমন ব্যাবিলনীয়, মিসরীয়, গ্রীক, চৈনিক, ভারতীয় সবাই এই ‘পাই’ কে নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলেন। তবে সবার প্রথমে ‘পাই’ এর গণনার খুব কাছাকাছি পৌছেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্রীক গণিতবিদ আর্কিমিডিস। তিনি গণনার সুবিধার্থে ‘পাই’-এর যে আণুমানিক মান দিয়েছিলেন তা 3\frac{1}{7} এবং 3\frac{10}{71} এর মধ্যবর্তী একটি সংখ্যা এবং সংখ্যাটির আণুমানিক মান হল 3.1418।


বিজ্ঞাপন



পরবর্তী ক্ষেত্রে চীন, ভারত, আরব, বিভিন্ন স্থানের গণিতবিদরা তাদের গণনার মাধ্যমে দশমিকের পরবর্তী নতুন অঙ্কগুলি আবিষ্কার করেন। ভারতবর্ষে সম্ভবত ‘পাই’ গণনার কাছাকাছি পৌছেছিলেন ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট। তিনি পৃথিবীর প্রায় নির্ভুল পরিধি গননা করেছিলেন বলে মানা হয়; তবে এই তথ্য নিয়ে বিতর্ক আছে।

1706 সালে ‘পাই’ চিহ্ন প্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ গণিতবিদ উইলিয়াম জোন্স (William Jones) এবং পরবর্তী সময়ে ‘পাই’ চিহ্নকে জনপ্রিয় করেন গণিতবিদ লিওহার্ড ইউলার (Leonhard Euller)। এখানে এক ভারতীয় গণিতবিদের কথা না উল্লেখ করলেই নয়, তিনি হলেন রামানুজান। কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে, ভারতীয় গণিতের ‘বিস্ময় পুরুষ’ রামানুজন পাই গনণাকে প্রায় সঠিক ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন।

একবিংশে শতাব্দীতে কম্পিউটার ব্যবহার করে এই গণনা অনেকটাই সহজ হয়েছে। কম্পিউটারের দ্বারা ‘π’-এর মান দশমিকের পর 31, 415, 926, 535, 897 স্থান পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে।


[আরো পড়ুন – বিজ্ঞানের ইতিহাস | প্রবন্ধ]

গণিতের বিভিন্ন ভাগে ‘পাই’ এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বৃত্তাংশে বা বক্ররেখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ থেকে শুরু করে উপবৃত্তের ক্ষেত্রফল ইত্যাদিতে ‘পাই’ এর ব্যবহার করি আমরা । শুধু গণিত-ই নয় Physics এবং Engineering-এও বিভিন্ন ফরমুলা বা পেন্ডুলামের পিরিওডিক গতিপথ ইত্যাদিতে ও ‘π’ এর ব্যবহার অপরিসীম।

আরো একটা মজার কথা বলা যাক, প্রতি বছর মার্চ মাসের 14 তারিখটিকে ‘পাই-ডে’ হিসাবে পালন করা হয়, কারণ ঐ দিনের তারিখটা যে 3 (মার্চ), 14 (মাসের 14 তারিখ) অর্থাৎ পাই এর মানের সমান (3.14)!

তথ্যসূত্র- https://www.britannica.com/ | en.wikipedia.org

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।

Aditi Sarkar
রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ফলিত গণিতের (MSc in Applied Mathematics) প্রাক্তন ছাত্রী অদিতি সরকারের গণিতের সাথে সম্পর্ক চিরকালীন। পড়াশোনার পাশাপাশি গান শুনতে ও ছবি আঁকতে ভালোবাসেন অদিতি।

2 Replies to “‘পাই’-এর ইতিহাস

Comments are closed.