জীবনবিজ্ঞান – দশম শ্রেণি – বংশগতি (দ্বিতীয় পর্ব)
আমরা বংশগতি অধ্যায়ের প্রথম পর্বে বংশগতির ধারণা এবং বিভিন্ন পরিভাষা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বটি পড়ার আগে ‘বংশগতির ধারণা’ পর্বটি পড়া না থাকলে এই লিঙ্ক ব্যবহার করে পড়ে নেওয়া যেতে পারে।
গ্রেগর যোহান মেন্ডেল
জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীবে বৈশিষ্ট্য সঞ্চারণের কথা প্রথম বলেন গ্রেগর যোহান মেন্ডেল । অস্ট্রিয়ায় ২০শে জুলাই ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন গ্রেগর যোহান মেন্ডেল। পেশায় মেন্ডেল ছিলেন একজন যাজক। তিনি ১৮৫৬-১৮৬৩ সালের মধ্যে মটর গাছের উপর তাঁর বংশগতির পরীক্ষাগুলো করেছিলেন। বর্তমানে উল্লেখিত জিনকে মেন্ডেল ‘ফ্যাক্টর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর গবেষণাই বর্তমান জেনেটিক্সের ভিত্তি তাই তাঁকে ‘Father of Genetics’ বলা হয়।
মেন্ডেল মটর গাছকে তাঁর পরীক্ষার জন্য বেছে ছিলেন কেন?
মেন্ডেল মটর গাছের ( Scientific name of pea plant- Pisum sativum) উপর তাঁর পরীক্ষাগুলি করেছিলেন। মেন্ডেল মটর গাছকে তাঁর গবেষণার জন্য বেছে নেওয়ার পিছনে অনেকগুলি কারণ ছিল- সে গুলি হল –
১) মটরগাছের জীবনকাল– মটরগাছের জীবনকাল এক বছর হওয়ায় তিনি কয়েকজনু ধরে বিভিন্ন সংকরায়ন পরীক্ষার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
২) মটরগাছের বিভিন্ন প্রকার বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের সমাহার – মটর গাছে বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্য যুক্ত একাধিক চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাই মেন্ডেল বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্য যুক্ত একাধিক চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যেমন- উচ্চতা (বিপরীত বৈশিষ্ট্য লম্বা ও বেঁটে), মটর গাছের ফুলের বর্ণ (বিপরীত বৈশিষ্ট্য বেগুনী রঙ ও সাদা রঙ) ইত্যাদি।
৩) মটর গাছ বিশুদ্ধ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ছিল– মটর গাছ উভলিঙ্গ হওয়ায় পর পর কয়েক জনু ধরে বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
৪) মটর গাছের গঠনগত বৈশিষ্ট্য – মটর গাছের পুং-কেশর যথেষ্ট বড় ও সুস্পষ্ট হওয়ায়, পুং কেশর সহজেই অপসারিত (emasculation) করে ইচ্ছে মতো বৈশিষ্ট্য যুক্ত ফুল থেকে পরাগ রেণু নিয়ে ঐ ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থাপন করে, পরর্বতী জনুতে পরিবর্তন সহজেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছিল।
৫) মটরগাছ পালন করার জন্য স্বল্প জায়গা প্রয়োজন – মটর গাছ চাষের জন্য অল্প জায়গার প্রয়োজন, তাই মেন্ডেল চার্চ প্রাঙ্গনেই মটর গাছ নিয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন।
মেন্ডেলের পরীক্ষার সাফল্যের কারণ কি?
1.মেন্ডেল তার সংকরায়ণ পরীক্ষার সময় একজোড়া কিংবা দু-জোড়া বিপরীত ধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়েছিলেন।
2.তিনি অন্তত তিনটি বংশানুক্রম পর্যন্ত পরীক্ষা করে ফলাফল লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যার ফলে অনুপাতের ভিত্তিতে সূত্র নির্ধারণ করা সহজ হয়েছিল।
3.তিনি প্রাথমিক ভাবে যে সকল উদ্ভিদগুলিকে নির্বাচন করেছিলেন, সেগুলি সব বিশুদ্ধ ছিল।
JUMP ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলির বিনামূল্যে WhatsApp আপডেট পান।?
মেন্ডেল মটর গাছের যে যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করেন
ক্রম | চরিত্র | প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
১ | মটরগাছের ফুলের বর্ণ | বেগুনী | সাদা |
২ | মটরগাছের ফুলের অবস্থান | কাক্ষিক | শীর্ষস্থ |
৩ | মটরগাছের বীজের বর্ণ | হলুদ | সবুজ |
৪ | মটরগাছের বীজের আকার | মসৃন | কুঞ্চিত |
৫ | মটরগাছের উচ্চতা | লম্বা | বেঁটে |
৬ | পরিপক্ক ফলের বর্ণ | সবুজ | হলুদ |
৭ | পরিপক্ক ফলের আকৃতি | পরিপুষ্ট | খাঁজযুক্ত |
ছবির সাহায্যে বৈশিষ্ট্য গুলি আর একবার দেখে নেওয়া যাক –
আমরা মেন্ডেলের সূত্রে যাবার আগে, ইতর পরাগযোগ ও স্ব–পরাগযোগ সম্পর্কে আরো একবার জেনে নেব।
যখন একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন গাছের ফুলের মধ্যে পরাগ যোগ ঘটে তখন তাকে ইতর পরাগ যোগ বলে।
যখন একই গাছের দুটি ফুলের মধ্যে পরাগযোগ ঘটে তখন তাকে স্ব-পরাগযোগ বলে।
স্ব-পরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগ সম্পর্কে আমাদের আগে জানা থাকলেও, আমরা একটি নতুন বিষয় জানবো –
এমাসকুলেসনঃ মটর গাছের পুং কেশর বড় হওয়ায় একে সহজেই অপসারণ করা সম্ভব হয়। একে বলে এমাসকুলেসন। এরপর মেন্ডেল পছন্দ মতো বৈশিষ্ট্য যুক্ত গাছের পরাগ রেণু ঐ পুং কেশর অপসারিত গাছের গর্ভমুন্ডে স্থাপন করেন। এরপর ঐ অংশটি ঢেকে রাখা হয় (যাকে ব্যাগিং বলে) যাতে অন্য কোন পরাগ রেণু ঐ গর্ভমুন্ডে এসে না পড়ে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
মেন্ডেলের এক সংকর জনন
একটি চরিত্রের একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একই প্রজাতি ভুক্ত দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে তাকে এক সংকর জনন বলে।
মেন্ডেল চরিত্র হিসেবে মটর গাছের উচ্চতা নিয়েছিলেন, এর দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য হল লম্বা মটর গাছ ও বেঁটে মটর গাছ।
মেন্ডেল জনিতৃ জনুতে (paternal generation) বা P জনুতে বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ খর্বকায় বা বেঁটে মটর গাছের ইতর পরাগযোগ ঘটান।
যদি বিশুদ্ধ লম্বা মটর গাছের অ্যালিল TT এবং বিশুদ্ধ বেঁটে মটর গাছের অ্যালিল tt হয়, প্রথম অপত্য জনু বা First Filial Generation বা F1 জনুতে সব সংকর (Tt) লম্বা গাছ উৎপন্ন হয়।
প্রথম অপত্য জনুতে উৎপন্ন সংকর লম্বা গাছ গুলির মধ্যে স্ব পরাগ যোগ ঘটালে দ্বিতীয় অপত্য জনু বা Second Filial Generation বা F2 তে 3:1 অনুপাতে লম্বা ও বেঁটে মটর গাছ অর্থাৎ 75% লম্বা ও 25% বেঁটে মটর গাছ উৎপন্ন হয়।
দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় অপত্য জনুতে উৎপন্ন মটর গাছগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত 3:1 (3টি লম্বা ও 1টি বেঁটে) হলেও জিনোটাইপিক অনুপাত (যা জিন বিশ্লেষণে প্রাপ্ত) 1:2:1 অর্থাৎ 25% বিশুদ্ধ লম্বা(TT), 50% সংকর লম্বা (Tt) ও 25% বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর গাছ।
এক সংকর জনন থেকে প্রাপ্ত মেন্ডেলের পৃথকীভবনের সূত্রঃ
জীব দেহের প্রতিটি বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য যে পৃথক পৃথক ফ্যাক্টর দায়ী সংকর জীবে কখনো তা পরষ্পর মিশে যায় না। কিন্ত পৃথক পৃথক ভাবে তা পাশপাশি অবস্থান করে। পরবর্তী জনুতে গ্যামেট গঠন কালে সেই ফ্যাক্টরগুলি পৃথক হয়ে যায় এবং পরবর্তী জনুতে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। এটাই মেন্ডেলের প্রথম সূত্র বা পৃথকীভবনের সূত্র বা Law of segregation।
এই এক সংকর জনন থেকে আর একটি সূত্র পাই। সেটি হল-
প্রকটতার সূত্র: কোন চরিত্রের দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে প্রকট বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, একে প্রকটতার সূত্র বলে।
দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → দ্বিশঙ্কর জনন
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-LSc-3b