ভূগোল – দশম শ্রেণি – আঞ্চলিক ভূগোল (দ্বিতীয় পর্ব)
আগের পর্বে আমরা ভারতের অবস্থান ও তার প্রশাসনিক বিভাগ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা ভারতের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ভূপ্রকৃতি কাকে বলে?
আমরা আমাদের চারপাশে তাকালেই প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ বৈচিত্র্য দেখতে পাই। কোথাও বা উঁচু পর্বতমালা, কোথায় মাইলের পর মাইল বালি দিয়ে ঘেরা মরুভূমি, কোথায় উঁচু টিলা আবার কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সমভূমি। প্রকৃতির এই রূপের বৈচিত্র্যকেই এককথায় বলা যায় ভূপ্রকৃতি।
ভারতবর্ষকে কেন উপমহাদেশ বলা হয়?
ভারতবর্ষে এমন একটি দেশ, যে দেশে সব ধরণের ভূ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দেখা যায় এবং যার সাথে যে-কোনো মহাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যর তুলনা করা যায়। মহাদেশের সাথে তুলনীয় বলে ভারতবর্ষকে পৃথিবীর অন্যতম উপমহাদেশ বলা হয়।
1951 সালের জনগণনা আয়োগের তথ্য অনুসারে ভারতের মূল ভূখণ্ডের 10.7% এলাকা পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত, 18.6% অংশ পাহাড়, 27.7% অংশ মালভূমি এবং অবশিষ্ট 43% সমভূমির অন্তর্গত।
এই সুবিশাল দেশটিকে ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় নিম্নে তা আলোচিত হল।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ সমূহ
ভারতের ভূপ্রকৃতিকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
পৃথিবীর উচ্চতম এই পর্বতটি সমগ্র উত্তর ভারতের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রাচীরের ন্যায় দণ্ডায়মান। উত্তর পশ্চিমে পামির গ্রন্থি থেকে ভারতের উত্তর পূর্বে নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় 2400 কিমি এর বিস্তার এবং এটির প্রস্থ প্রায় 200 থেকে 500 কিমি। এই পর্বতের এই রূপ বিপুল বিস্তৃতির জন্যই সমগ্র অঞ্চলটিকে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলও বলা হয়।
হিমালয় মূলত নবীন ভঙ্গিল পর্বত। পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (8848 মিটার) এখানেই অবস্থিত।
জেনে রাখো, মাউন্ট এভারেস্টের পূর্বের নাম ছিল Peak XV
2. উত্তরের সমভূমি অঞ্চল
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলটিকে বাদ দিলে সমগ্র উত্তর ভারতে যা অবশিষ্ট থাকে তাই হল উত্তরের সমভূমি অঞ্চল। আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমাংশ থেকে পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভাগের পার্বত্য অঞ্চল বাদে) পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই সমভূমি অঞ্চল মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত।
i) রাজস্থানের মরু অঞ্চল
ii) উত্তর ভারতের নদী গঠিত সমভূমি।
এই দুটি ভাগের মধ্যে এক বৈপরীত্য বিরাজমান। উভয়ই সমভূমি হওয়া সত্ত্বেও প্রথমটি শুখা অনুর্বর। এবং দ্বিতীয়টি সুজলা, সুফলা ও উর্বর।
নদী গঠিত সমভূমি অঞ্চলটি মূলত গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পলি সঞ্চয়ে গড়ে উঠেছে।
3. উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্যের প্রায় পুরো অঞ্চলটি জুড়ে উপদ্বীপীয় মালভূমি বিস্তৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও এর বিস্তার পূর্বের বেশ কিছু রাজ্যে দেখা যায় (যেমন ছত্তিশগড়, বিহারে লক্ষ্যণীয়)।
বলা যায় ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভূখণ্ডটি এই দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল। ভারতের বেশিরভাগ খনিজ সম্পদই এই অঞ্চলে রয়েছে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
4. উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
ভারতের তিন দিক জল দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এক সুবিস্তৃত উপকূল অঞ্চল লক্ষ্য করা যায়। দৈর্ঘ্যের বিচারে গুজরাট উপকূল দীর্ঘতম।
ভারতের উপকূল অঞ্চলগুলিতে বহু বন্দর গড়ে উঠেছে, যা প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।
5. দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ
ভারতের পূর্বে বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিমে আরব সাগরে লাক্ষাদ্বীপ রয়েছে।
আয়তনের বিচারে বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল লাক্ষাদ্বীপ।
দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত| পরবর্তী পর্ব – উত্তরভারতের পার্বত্য অঞ্চল
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-Geo-5-a-2