ইতিহাস – দশম শ্রেণি – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (পর্ব – ২)
গত পর্বে আমরা ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা সভা সমিতির যুগ সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিকেরা যতই সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলতে চান, ভারতবাসীর মধ্যে প্রকৃত ঐক্যের বোধ তখনও গড়ে ওঠেনি। সকলে হয়ত ব্রিটিশ সরকারকে তাদের প্রধান শত্রু মনে করত, কিন্তু তাই বলে এই নয় যে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রচন্ড ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল। ধর্ম-জাতি-ভাষা ইত্যাদির নিরিখে নানান ভেদাভেদ তখনও জাতীয় ঐক্যের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
সভা সমিতির যুগ সম্পর্কিত আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে↓
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত এক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হয় যারা ‘জাতি’ সম্পর্কে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। এর সাথে কালক্রমে যুক্ত হয় ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোয় অংশীদারিত্বের আকাঙ্ক্ষা। এই দুইয়ের সমন্বয়েই বিংশ শতকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের জন্ম হয়, যার পুরোভাগে ছিল এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়।
মূলতঃ জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগেই স্বাধীনতার এই আন্দোলন সংঘটিত হলেও মনে রাখা প্রয়োজন যে, জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কিন্তু বিভিন্ন সভাসমিতি স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংঘবদ্ধ হচ্ছিল। বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি, ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন, হিন্দুমেলা, পুনা সার্বজনীক সভা, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারতসভা এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সঙ্গত কারণেই ঐতিহাসিক অনিল শীল ঊনবিংশ শতকের এই কালান্তরকে ‘Age of Association’ বা সভাসমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন।
বৈশিষ্ট্য
ঊনবিংশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা এই সভাসমিতিগুলির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল-
১) জাতীয়তাবোধ ছিল এদের মূল চালিকাশক্তি।
২) এরা ভারতের বিভিন্ন বর্গের জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিস্তার করতে চেয়েছিল।
৩) মূলতঃ পাশ্চাত্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্যোগেই এই সভাসমিতিগুলি গড়ে উঠেছিল।
৪) বাংলায় ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রসার সর্বাগ্রে হওয়ায় এই ধরণের সভাসমিতি প্রথম এখানেই গড়ে উঠতে দেখা যায়।
৫) তোমরা দেখেছো, ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ধর্মীয় উন্মাদনা মানুষকে সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে এই আন্দোলনগুলোর পরিসর ছিল সীমিত। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ের সভাসমিতিগুলির দাবিদাওয়া অনেকাংশেই ছিল ধর্ম-জাতি-বর্ণ নিরপেক্ষ এবং ভারতীয় জনগণের এক গরিষ্ঠ অংশের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।
৬) এই সভাসমিতিগুলির মধ্যে অনেকেরই সর্বভারতীয় স্তরে প্রভাব বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা ছিল।
৭) কৃষক ও দরিদ্র মানুষের দাবিদাওয়া নিয়েও এই সভাসমিতিগুলি সোচ্চার হয়েছিল। তবে মুখ্যত ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সিগুলির রাজধানীতে গঠিত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ভারতের এক বিরাট অংশের মানুষের কতটা আত্মিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
এবার তাহলে কিছু উল্লেখযোগ্য সভাসমিতিগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নেওয়া যাক!
ক) বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুর, টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে এই সভা স্থাপিত হয়েছিল। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা ডিসেম্বর গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে এই সভার প্রথম অধিবেশন নিষ্পন্ন হয়। এই সভার উদ্ভব ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার বিস্তারের প্রমাণ। যোগেশচন্দ্র বাগল, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখ এই সভাকে বাংলা তথা ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলেছেন। তবে এই সভার একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এর সদস্যদের অনেকেরই ভূসম্পত্তি জনিত স্বার্থ ছিল এবং তা সভার কার্যকলাপের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সরকার নিষ্কর জমির ওপর কর বসালে এই সভা প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করে।
খ) জমিদার সভা
কারো কারো মতে, বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা নয়, ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত জমিদার সভাই ছিল ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সমিতি। তাদের যুক্তি হল, জমিদার সভা পূর্বতন বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার চেয়ে বেশিদিন টিকেছিল।
রামকমল সেনের প্রস্তাবানুসারে ভবানীচরণ মিত্র, প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও রাধাকান্ত দেব মিলিত হয়ে জমিদার সভার পত্তন করেন। রাধাকান্ত দেব সভাপতির ভূমিকা গ্রহণ করেন।
জমিদারদের স্বার্থরক্ষাই যে এই সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তা তো নাম দেখেই বুঝতে পারছ। এই সভার সদস্যপদ গ্রহণের অন্যতম শর্তই ছিল ভূসম্পত্তির অধিকারী হওয়া। তবে জমিদার মাত্রেই অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থে কাজ করবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ডে ‘enclosure movement’ গড়ে তোলার পিছনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল একশ্রেণীর প্রগতিশীল জমিদার।
আন্দোলনকারীরা মনে করত যে তারা খাস জমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবাদ করার অধিকার পেলে আখেরে সরকারী কোষাগারেরই লাভ হবে। এই আন্দোলন ওই দেশে রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে ধারনা আমূল বদলে দিয়েছিল। ব্যক্তির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতির উপর ভিত্তি করে সেখানে এক আধুনিক উদারবাদী রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তবে ভারতবর্ষে জমিদার শ্রেণীর এই ঐক্য ছিল ঔপনিবেশিক প্রেক্ষিতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঔপনিবেশিক নিগড় থেকে দেশীয় সমাজকে মুক্ত করা যখন সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল তখন সংকীর্ণ শ্রেণীস্বার্থের প্রতি আনুগত্যের জন্য জমিদার সভা উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে সদর্থক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়।
তবে জমিদার সভার মধ্যে নিজেদের একটি সর্বভারতীয় সমিতি হিসেবে তুলে ধরার বাসনা ছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা পরবর্তীকালে সমিতির নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘Land Holder’s Society’। জমিদার শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা এই সভার ঘোষিত উদ্দেশ্য হলেও সকল জাতি, ধর্ম বা বর্ণের ভূম্যধিকারীরাই কিন্তু সদস্যপদের দাবিদার ছিলেন। তাই সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ এই দেশে ঐক্যের সুর বন্ধনে এই সভার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল একথা বলাই যায়। আধুনিক ভারতের উপযুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণে জমিদার সভার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।
গ) হিন্দুমেলা
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষলগ্ন থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঔপনিবেশিক শক্তির জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির সৃষ্টি করছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর অবশ্য এতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। বাংলায় জাতীয়তাবাদের বিকাশে নবগোপাল মিত্রের ‘চৈত্রমেলা’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে এরই নাম বদলে হয় ‘হিন্দুমেলা’। রাজনারায়ণ বসু ও নবগোপাল মিত্রের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মেলা প্রসারলাভ করে। এঁরা কেউই আবেদন নিবেদনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যুবকশ্রেণীর মধ্যে আত্মশক্তি ও শারীরিক সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো।
সর্বোপরি বাঙালিয়ানার প্রতি তাঁদের এক অদ্ভুত দুর্বলতা ছিল। রাজনারায়ণ বসু ইচ্ছাকৃতভাবে জনসভায় ইংরেজি না বলে বাংলায় বক্তব্য রাখতেন। বঙ্গভঙ্গ পরবর্তী স্বদেশী আন্দোলনের অনেক বৈশিষ্ট্যই হিন্দুমেলার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ, হিন্দুমেলা তার সময়ের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিল। স্বদেশী আন্দোলনের গঠনমূলক দিকগুলি যেমন দেশজ দ্রব্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি প্রভৃতি হিন্দুমেলারও লক্ষ্য ছিল। রাজনারায়ণ বসু নিজে দেশীয় চিকিৎসাপ্রণালীতে আস্থা রাখতেন।
হিন্দুমেলা নাম দেখে এইটা ভেবো না যে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এই মেলা পরিচালিত হত। বরং জার্মানি, ইতালির ঐক্য আন্দোলন ও অটোমান জাতীয়তাবাদ ছিল নবগোপাল মিত্রের আদর্শ। আসলে তাঁর কাছে জাতির মুক্তি ও স্বনির্ভরশীলতা ছিল একে ওপরের পরিপূরক। তাই দেশীয় সমাজে যে সকল দ্রব্যাদি ব্যবহারের চল ছিল তা তিনি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
মেলার উদ্দেশ্যগুলি প্রচার করার জন্য নবগোপাল মিত্র ‘জাতীয় পত্রিকা’ নামে একটি পত্রিকা চালু করেন। তবে এই সমিতির বিরুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা হল যে, এর প্রতিষ্ঠাতারা ‘বাঙালী হিন্দু’ পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠতেই পারেননি। মুসলিম সম্প্রদায়ও যে দেশীয় সমাজেরই অংশ তা তাঁরা বুঝতেই চাননি। এতদসত্ত্বেও এটা বলাই যায় যে হিন্দুমেলার কার্যপদ্ধতি পরবর্তীকালের স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনকে প্রেরণা যুগিয়েছিল।
ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন
সভাসমিতির যুগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে প্রথম ভারতসভার মধ্যেই সর্বভারতীয় সমিতির লক্ষণগুলি ফুটে উঠেছিল। তাই ভারতসভা নিয়ে একটু বিশদে আলোচনা প্রয়োজন।
১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে ভারতসভার পথচলা শুরু। আই. সি. এস থেকে সদ্য কর্মচ্যুত সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা।
আনন্দমোহন বসু ছিলেন উদ্যোক্তাবর্গের মধ্যে অন্যতম। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী উল্লেখযোগ্য।
i) ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশ্য
বাগ্মী হিসেবে সুবিদিত সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ও বাংলার বাইরে নানা স্থানে ভ্রমণ করে ভারতসভার হয়ে প্রচারকাজ চালান। এই সভার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সর্বভারতীয় স্তরের দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে সংঘবদ্ধ করা।
ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের কার্যাবলী
কতকগুলি দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতসভা রীতিমত জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। প্রথমেই বলতে হয় আই.সি.এস বা ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভারতীয়দের বিরূদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরোধিতার কথা। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মহারানির ঘোষণাপত্রে ভারতীয়দের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারী চাকরিতে সুযোগের কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে ভারতীয়রা ছিল বঞ্চিত। নানা কারণে ভারতীয়দের পক্ষে এই চাকরি পাওয়া ছিল দুষ্কর।
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে এই চাকরির জন্য ভারতীয়দের বয়সসীমা ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করা হয়।
অন্যদিকে সেইসময়ে এই পরীক্ষা দিতে সুদূর বিলেতে পারি দিতে হত। আসলে যাতে অধিকাংশ ভারতীয় এই পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকে এবং যারা দিতে চায় তারাও যাতে কোনোভাবেই এই পরীক্ষার যোগ্যতামানে পৌঁছাতে না পারে, তা নিশ্চিত করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। ভারতসভা এই বিষয়টির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইংল্যান্ড ও ভারতে যুগপৎ পরীক্ষার বন্দোবস্তের দাবি তোলে। ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষে এই পরীক্ষায় ভারতীয়দের সাফল্য মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আই.সি.এস পরীক্ষা ছিল ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোয় প্রবেশের চাবিকাঠি। ঔপনিবেশিক শাসনের স্বার্থেই ভারতের প্রশাসনিক কাঠামো ইংরেজদের কুক্ষিগত করে রাখা প্রয়োজন ছিল।
লর্ড লিটনের আমলে পাস হওয়া অস্ত্র আইন ও দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনের বিরূদ্ধেও ভারতসভা আন্দোলন চালায়। অস্ত্র আইন বাতিল না হলেও এই আন্দোলনের পরোক্ষ প্রভাবে সংবাদপত্র আইনটি লর্ড রিপনের আমলে প্রত্যাহৃত হয়।
ইলবার্ট বিল আন্দোলন সম্পর্কে তো কিছুটা তোমাদের আগেই বলেছি। এই আন্দোলনেও ভারতসভার বড় অবদান ছিল। আগে ভারতীয় বিচারকেরা ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারত না।
বড়লাট রিপনের পরামর্শে তাঁর আইনসচিব ইলবার্ট বিচারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ও ভারতীয় বিচারকদের মধ্যে এই বৈষম্য দূরীকরণের জন্য একটি বিল পাস করেন।
এই বিলের আইনে পরিণত হওয়া আটকানোর জন্য ইউরোপীয়রা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত করে। এর প্রত্যুত্তরে ভারতসভার মত সংগঠন পাল্টা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন পাল্টা আন্দোলনের ফলস্বরূপ বিলের কিছু ধারা সংশোধিত হলেও অবশেষে বিলটি পাস হয়।
আই.সি.এস পরীক্ষায় বসার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরূদ্ধে ভারতসভার প্রতিবাদের মধ্যেই ভারতীয়দের দ্বারা ভারতের শাসনের আকাঙ্ক্ষা নিহিত ছিল। পরবর্তীকালে এই ধরনের দাবিদাওয়াগুলিকে আরো সুগ্রন্থিত আকারে ঔপনিবেশিক সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের আবির্ভাব হয়।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → সাহিত্য ও চিত্রশিল্পে জাতীয়তাবোধের বিচার ও বিশ্লেষণ
লেখক পরিচিতি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এম ফিল পাঠরত রাতুল বিশ্বাস। ইতিহাসচর্চার পাশাপাশি লেখা-লিখিতেও সমান উৎসাহী রাতুল।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_hist_4b