cyuti-ba-songsro
Class-11

চ্যুতি বা সংস্র

ভূগোলএকাদশ শ্রেণি – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও ঊদ্ভুত ভূমিরূপ (দ্বিতীয় পর্ব)


চ্যুতি কাকে বলে?

ভূ আলোড়নের ফলে শিলায় সংকোচন ও পীড়ন ঘটে, এবং শিলায় ফাটল সৃষ্টি হয়,এর ফলে শিলার একটি অংশ অন্য অংশ থেকে এগিয়ে যাওয়াকে চ্যুতি বলে।

চ্যুতির গঠন নির্ধারক

চ্যুতির গঠন নির্ধারকগুলি হল- চ্যুতিতলের নতি, আয়াম , চ্যুতিতল,হেড,থ্রো, ঝুলন্ত প্রাচীর, পাদমূল প্রাচীর।

চ্যুতি সৃষ্টির কারন

ভূপৃষ্ঠের আলোড়নের প্রভাবে শিলাস্তরে সংনমন ও প্রসারণ বলের সৃষ্টি হয়। এই টান ও প্রসারণ বলের প্রভাবে শিলাস্তরে পীড়ণ জমতে থাকে।পীড়ণ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে শিলাস্তরে ফাটল তৈরি হয় এবং ঐ ফাটল বরাবর শিলাস্তর উলম্ব বা অনুভূমিক ভাবে দূরে সরে যায়। শিলাস্তরের এই স্থানচ্যুত হওয়ার ফলে চ্যুতি সৃষ্টি হয়।


একাদশ শ্রেনি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

প্রসারণের ফলে স্বাভাবিক চ্যুতির সৃষ্টি

প্রসারণ বলের প্রভাবে পাদমূল প্রাচীর উপরে উঠে যায় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর নীচে বসে যায় এর ফলে স্বাভাবিক চ্যুতির সৃষ্টি হয়।

সংনমনের ফলে বিপরীত চ্যুতির সৃষ্টি

সংনমন বলের প্রভাবে পাদমূল প্রাচীর নীচে বসে যায় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর উপরে উঠে যায় এর ফলে বিপরীত চ্যুতির সৃষ্টি হয়।

স্বাভাবিক চ্যুতি

অভিকর্ষ টানের ফলে যখন চ্যুতিতল বরাবর পাদমূল প্রাচীর উপরে উঠে যায় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর নীচে নেমে যায় এর ফলে যে চ্যুতি তৈরি হয় তাকে স্বাভাবিক বা অনুলোম চ্যুতি বলে।

স্বাভাবিক বা অনুলোম চ্যুতির বৈশিষ্ট্য

1) এটি অভিকর্ষ টানের ফলে সৃষ্টি হয়। তাই এই চ্যুতিকে অভিকর্ষজ চ্যুতিও বলা হয়।
2)এই চ্যুতিতে পাদমূল প্রাচীর উপরে উঠে যায় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর নীচে নেমে যায়।
3)এই চ্যুতি অতিরিক্ত টান থেকে সৃষ্ট হয়।
4)নতির পরিমাণ এই চ্যুতিতে বেশি হয়।

বিপরীত চ্যুতি

সংনমন বল অতিরিক্ত বেশি হওয়ায় চ্যুতিতল বরাবর ঝুলন্ত প্রাচীর উপরে উঠে যায় এবং পাদমূল প্রাচীর নীচে বসে যাওয়ার ফলে যে চ্যুতি সৃষ্টি হয় তাকে বিপরীত বা বিলোম চ্যুতি বলে।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

বিপরীত বা বিলোম চ্যুতির বৈশিষ্ট্য

1)এই চ্যুতিতে পাদমূল বসে যায় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর উপরে উঠে যায়।
2)এই চ্যুতি অতিরিক্ত সংনমন বলের প্রভাবে সৃষ্ট।
3)নতির পরিমান এই চ্যুতিতে কম হয়।

চ্যুতি দ্বারা গঠিত ভূমিরূপগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা

1. চ্যুতি ভৃগু

চ্যুতির ঊর্ধক্ষেপ ও অর্ধক্ষেপের মাঝে যে খাড়া দেওয়াল সৃষ্টি হয় তাকে বলে চ্যুতি ভৃগু। চ্যুতি ভৃগুর উচ্চতা এক মিটার থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

চ্যুতি ভৃগুর উদাহরণ

দামোদর নদ বরাবর এই জাতীয় ভূমিরূপ দেখা যায়।

2. চ্যুতিরেখা ভৃগু

চ্যুতিতে নরম ও কঠিন শিলা অবস্থান করে এরফলে এই দুই শিলা বিপরীতধর্মী কাজ করায় পুরাতন চ্যুতি ভৃগু কিছুটা ক্ষয় পায় আর নতুন চ্যুতি ভৃগু গড়ে ওঠে এই দুতিকে একত্রে বলা হয় চ্যুতিরেখা ভৃগু।

চ্যুতিরেখা ভৃগুকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

পুনর্ভবা চ্যুতিরেখা ভৃগু

ক্ষয়কার্যের অভিমুখে যদি ভৃগু অবস্থান করে তখন তাকে পুনর্ভবা চ্যুতি রেখা ভৃগু বলে।এই চ্যুতিরেখা ভৃগুতে সাধারনত কোনো দিকের বদল ঘটে না।

বিপরা চ্যুতিরেখাভৃগু

যে চ্যুতিরেখা ভৃগুতে বিপরীতধর্মী কার্যের ফলে চ্যুতির নীচের অংশ খাড়া হয় এবং ওপরের অংশ ক্ষয়ে গিয়ে বসে যায় তখন ভৃগুটির অবস্থানের পরিবর্তন হয় একে বিপরা চ্যুতিরেখা ভৃগু বলে। এই চ্যুতিরেখা ভৃগুতে নরম ও কঠিন শিলা অবস্থান করে।

বিমিশ্র চ্যুতিরেখাভৃগু

ক্ষয় ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে ভৃগু গড়ে ওঠে তাকে বিমিশ্র চ্যুতিরেখা ভৃগু বলে।

3. ক্লিপ

ন্যাপের একটি বাহু বহুদূর এগিয়ে গিয়ে অন্য শিলার ওপর টুপির ন্যায় অবস্থান করে, যা পর্বতশীর্ষ রূপে থেকে যায়, একে ক্লিপ বলে। যেমন- সিমলা ক্লিপের ওপর সিমলা শহর অবস্থিত।

4. স্তূপ পর্বত

দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ যখন উপরে উঠে গিয়ে পর্বতের ন্যায় অবস্থান করে তখন তাকে স্তূপ পর্বত বলে। যেমন-সাতপুরা পর্বত।

5. তির্যকচ্যুত স্তূপ পর্বত

একদিকে খাড়া ও একদিকে অল্প ঢাল নিয়ে গঠিত দুটি তির্যক চ্যুতির মাঝখানে গড়ে ওঠা স্তূপ পর্বতকে তির্যকচ্যুত স্তূপ পর্বত বলে।যেমন – ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত।

6. গ্রস্ত উপত্যকা

যখন দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ বসে যায় তখন তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে।

ছোট আকৃতির গ্রস্ত উপত্যকাকে গ্রাবেন বলে।

7. স্রংস উপত্যকা

প্রচন্ড পার্শ্বচাপে শিলাস্তর যখন বেঁকে উপরে উঠে যায় এবং এরপরেও শিলাস্তরের ওপর আরও পার্শ্বচাপ বৃদ্ধি পেলে শিলাস্তরে ফাটল তৈরি হয় এবং ঐ ফাটল বরাবর শিলাস্তর নীচে বসে গিয়ে স্রংস উপত্যকা গঠন করে। যেমন- আফ্রিকার গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি।


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

র‍্যাম্প

স্রংস উপত্যকা যখন দুটি বিপরীত চ্যুতির মাঝখানে সৃষ্টি হয় তখন তাকে র‍্যাম্প বলে। যেমন- দামোদর উপত্যকা।

উইন্ডো

চ্যুতি অঞ্চলে নদী ন্যাপের উপরের প্রাচীন শিলাস্তরকে ক্ষয় করে তার নীচের নবীন শিলাকে উন্মুক্ত করে দেয় এই উপত্যকার মতো নতুন ভূমিরূপকে উইন্ডো বলে। যেমন- তিস্তা নদীর দ্বারা উন্মুক্ত সিকিম উইন্ডো।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা ।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –