bashpivobon-sfuton
WB-Class-8

বাষ্পীভবন ও স্ফুটন

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – তাপ(তৃতীয় পর্ব)


আগের পর্বে আমরা জেনেছি পদার্থের অবস্থা পরিবর্তন (কঠিনীভবন) সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো ও বাষ্পীভবন ও স্ফুটন সম্পর্কে।

বাষ্পীভবন

কোন তরলের বায়বীয় অবস্থাকে ওই তরলের বাষ্প বা Vapour বলে। যে পদ্ধতিতে কোন তরল বাষ্পে পরিণত হয় তাকে বাষ্পীভবন বা Vaporisation বলা হয়।

বাষ্পীভবন তিনরকম উপায়ে হতে পারে— বাষ্পায়ন বা Evaporation, স্ফুটন বা Boiling এবং ঊর্ধ্বপাতন বা Sublimation।

বাষ্পায়ন (Evaporation)

ধীরে ধীরে তরল অবস্থা থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে বাষ্পায়ন বলা হয়। ভিজে কাপড় শুকনো হওয়া, গরমকালে নদী, পুকুর প্রভৃতি জলাশয়ের জল কমে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া বাষ্পায়নের কারণে ঘটে।

সূর্যের তাপে নদী, খাল, বিলের জলের বাষ্পীভবন ও তার থেকে বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়া

বাষ্পায়নের বৈশিষ্ট্য

• বাষ্পায়ন সর্বদা তরলের উপরিতল থেকে হয়।
• বাষ্পায়ন অতি ধীর গতি প্রক্রিয়া এবং এটি নিঃশব্দে হয়।
• যেকোন উষ্ণতায় বাষ্পায়ন হতে পারে।
• বাষ্পায়নে পরিপার্শ্ব থেকে তাপ শোষিত হয়, ফলে শীতলতা সৃষ্টি হয়।

বাষ্পায়নের হার পরিবর্তনের কারণ

a) বায়ুর শুষ্কতা

বায়ু যত শুষ্ক হবে, বাষ্পায়ন তত দ্রুত হবে। এই কারণে বর্ষা অপেক্ষা শীতকালে কাপড় দ্রুত শুষ্ক হয়।

b) পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা

তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বাষ্পায়নের হার দ্রুত হয়। এই কারণে গ্রীষ্মকালে জল দ্রুত শুকিয়ে যায়।

c) তরলের উপরতলের ক্ষেত্রফল

তরলের উপরতলের ক্ষেত্রফল যত বেশি হয় বাষ্পায়ন তত দ্রুত হয়।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

d) তরলের প্রকৃতি

তরল যত উদ্বায়ী হবে বাষ্পায়ন তত দ্রুত হবে।

e) বায়ুমণ্ডলের চাপ

বায়ুমণ্ডলের চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাষ্পায়নের হার হ্রাস পায়।

f) বায়ু চলাচল

তরলের উপর দিয়ে বায়ু চলাচল যত বেশি হয়, তত দ্রুত বাষ্পায়ন হয়।

এই বাষ্পায়নের কারণে ভিজা জামা পড়ে পাখার নীচে দাঁড়ালে ঠাণ্ডা অনুভব হয়। পাখার হাওয়ায় জামার জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, ও বাষ্পায়নের প্রয়োজনীয় লীনতাপ শরীর থেকে গ্রহণ করে। ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পায় ও ঠাণ্ডা বোধ হয়।

এই একই কারণে গরমের দিনে দেখা যায় যে কুকুর জিভ বার করে বসে থাকে। দেহের থেকে তাপ সংগ্রহ করে জিভের জল বাষ্পীভূত হয়, ফলে কুকুরের শরীর শীতল হয়।

স্ফুটন (Boiling)

খুব দ্রুত তরল অবস্থা থেকে বাষ্পে পরিণত হবার পদ্ধতিকে স্ফুটন বলা হয়। স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুরু হয়। যতক্ষণ সমস্ত তরল বাষ্পে পরিণত না হয়, ততক্ষণ এই তাপমাত্রা স্থির থাকে।

জলের স্ফুটন

স্ফুটনের বৈশিষ্ট্য

• স্ফুটন তরলের সমস্ত অংশ থেকে হয়।
• এটি অত্যন্ত দ্রুতগতি প্রক্রিয়া।
• প্রমাণ চাপে স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুরু হয়।
• স্ফুটনে তাপের উদ্ভব হয়।
• স্ফুটনে শব্দ সৃষ্টি হয়।

স্ফুটনের হার পরিবর্তনের কারণ

a) বায়ুর চাপ

বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পেলে স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। উঁচু পাহাড়ের উপর বায়ুর চাপ কম বলে সেখানে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় জল বাষ্পীভূত হয়।

b) অপদ্রব্যের উপস্থিতি

তরলে কোন পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে তার স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। যেমন জলের সাথে লবণ মিশ্রিত থাকলে তার স্ফুটনাঙ্ক 100˚C থেকে বেড়ে যায়।

c) তরলের প্রকৃতি

যে সব তরলের অণুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বেশি তাদের স্ফুটনাঙ্ক বেশি হয়।

স্ফুটনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় প্রেসার কুকার।

এটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এর মধ্যে বায়ুর চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, ফলে জলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। এর ফলে রান্না দ্রুত হয় ও জ্বালানির খরচ কম হয়।

ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation)

কঠিন পদার্থ থেকে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হবার পদ্ধতিকে ঊর্ধ্বপাতন বলা হয়। এক্ষেত্রে বস্তু তরলে পরিণত হয় না। ন্যাপথলিন, কর্পূর প্রভৃতি পদার্থের ঊর্ধ্বপাতন দেখা যায়।

ঘনীভবন (Condensation)

বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হবার প্রকিয়াকে ঘনীভবন বলা হয়। বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং এর ফলে মেঘ, কুয়াশা, শিশির প্রভৃতি সৃষ্টি হয়ে থাকে।

নীল আকাশে মেঘের উপস্থিতি

মেঘ

জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস নানা কারণে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। উচ্চতা বাড়ালে বায়ুর চাপ কমে যায় ও আয়তনে বেড়ে যায়। ফলে তা শীতল হয়ে যায়। তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নীচে গেলে বায়ুতে বর্তমান জলীয় বাষ্প বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে জলবিন্দু আকারে ভেসে থাকে। একে মেঘ বলে।

শিশির

কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তা দ্বারা পূর্ণ হলে সেই বায়ুকে সম্পৃক্ত (Saturated) বায়ু বলা হয়।

যে তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু তাতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, তাকে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বা Dew point বলে।

শীতের সকালে ঘাসে শিশিরের উপস্থিতি

সাধারণত দিনের বেলা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুও অসম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু রাতের বেলা ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ক্রমশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
এক সময় তা শিশিরাঙ্কতে পৌঁছায়, অর্থাৎ জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। এরপর তাপমাত্রা আর একটু কমলে কিছু বায়ুস্থ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা আকারে পাতা, ঘাস প্রভৃতির উপর জমা হয়, যাকে শিশির বলে।

শিশির সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ

সাধারণত শরৎকালের ভোরবেলা শিশির জমা হতে দেখা যায় শিশির সৃষ্টির জন্য অনুকূল অবস্থাগুলি হল:
• মেঘহীন পরিষ্কার আকাশ
• কম বায়ু চলাচল
• বাতাসে প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি
• তাপের ভাল বিকিরক ও কুপরিবাহী সান্নিধ্য

কুয়াশা (Fog)

শীতকালে ভোরবেলা কুয়াশা দেখা যায়। কোন কারণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে ওই বায়ুমণ্ডলে বর্তমান জলীয় বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, কয়লার সূক্ষ্ম গুঁড়ো প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ভাসতে থাকে। একে কুয়াশা (Fog) বা কুহেলিকা (Mist) বলে।

শহরাঞ্চল বা শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ সূক্ষ্ম ধূলিকণা বাতাসে মিশে থাকে। ফলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয়।

এই কুয়াশার সাথে কল–কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া মিশে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → তাপের পরিবহণ

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –