poisson-ratio-in-bengali
Class-11

পয়সোঁ অনুপাত

পদার্থবিদ্যা একাদশ শ্রেণি – পদার্থের স্থিতিস্থাপক ধর্ম (অধ্যায়- পদার্থের ধর্মসমূহ)


পয়সোঁ অনুপাত

পার্শ্বীয় বিকৃতি এবং অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকে পয়সোঁ অনুপাত বলা হয়।

পয়সোঁ অনুপাত (σ) = (পার্শ্বীয় বিকৃতি )/(অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি)

কোনো বস্তুর উপর টান প্রয়োগ করলে বস্তুটির দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে বস্তুটির প্রস্থ বা ব্যাস কিছুটা কমে যায় অর্থাৎ এটা বলা যায় যে, বাহ্যিক বলের প্রভাবে কোনো বস্তুর একদিকে যখন প্রসারণ ঘটে, তখন তার লম্বদিকে বস্তুটির সংকোচন হয়।

বিপরীতক্রমে এটাও বলা যায় যে বাইরে থেকে বল প্রয়োগ কোনো বস্তুর একদিকে সংকোচন ঘটলে তার লম্বদিকে প্রসারণ ঘটে। যেমন, 1নং চিত্রে এটা লক্ষ্য করা যায় যে ABCD বস্তুটির উপর AB এবং CD তলের উপর বল প্রয়োগ করে বস্তুটির X অক্ষ বরাবর সংকোচন ঘটে, X অক্ষের লম্বদিক অর্থাৎ Y অক্ষ বরাবর বস্তুটির প্রসারণ লক্ষ্য করা যায়। সংক্ষেপে বলা যায়, বস্তুটির অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি ও পার্শ্বীয় বিকৃতি উভয়ই একই সাথে ঘটে থাকে।

বিজ্ঞানী পয়সোঁই প্রথম এই অনুপাতের ধারণা দেন। পার্শ্বীয় বিকৃতির পরিমাণ বেশি না হলে এটি অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির সমানুপাতিক হয়।

পার্শ্বীয় বিকৃতি

বাহ্যিক বলের প্রভাবে লম্বদিকে বস্তুর যে বিকৃতি ঘটে তাকে পার্শ্বীয় বিকৃতি বলা হয়।
অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি: বাহ্যিক বলের ক্রিয়ার যদি কোনো বস্তুর মূলত দৈর্ঘ্যের হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, তবে বস্তুর বিকৃতিকে অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি বলা হয়।
ধরা যাক, একটি তারের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য L, প্রাথমিক ব্যাস D। বাহ্যিক বলের প্রভাবে তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l এবং ব্যাস হ্রাস d,
∴ পার্শ্বীয় বিকৃতি = -\frac{d}{D}
ঋণাত্মক চিহ্নের কারণ হল, দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে তারের ব্যাস হ্রাস পায়।

অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি = \frac{l}{L}
∴ পয়সোঁর অনুপাত (σ) = \frac{-\frac{d}{D}}{\frac{l}{L}} = -\frac{d}{D}. \frac{L}{l}

পয়সোঁর অনুপাত সম্পর্কিত কিছু তথ্য

→ এটি কেবল বস্তুর উপাদানের উপর নির্ভর করে।
→ দুটি বিকৃতির অনুপাত বলে এটি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। এর কোনো মাত্রা বা একক নেই।
→ এই অনুপাত কেবলমাত্র কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য। তরল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে পয়সোঁর অনুপাত অর্থহীন।
→ পয়সোঁর অনুপাত একটি স্থিতিস্থাপক ধ্রুবক, কোনো স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক নয়। স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক হল পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত।

পয়সোঁ অনুপাতের সীমাস্থ মান

পয়সোঁ অনুপাতের সর্বোচ্চ মান +\frac{1}{2} বা 0.5 এবং সর্বনিম্ন মান -1। পয়সোঁ অনুপাতের মান ঋণাত্মক হওয়া সম্ভব নয় কারণ পয়সোঁ অনুপাতের ঋণাত্মক হতে গেলে বস্তুর অনুদৈর্ঘ্য প্রসারণের সাথে সাথে পার্শ্বীয় প্রসারণ ঘটতে হবে। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে এরকম কোনো বস্তুর প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সমস্ত পদার্থের পয়সোঁ অনুপাতের মান ধনাত্মক হয়, এবং এর মান সর্বদা 0 থেকে \frac{1}{2} এর মধ্যেই থাকে।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

স্থিতিস্থাপক ধ্রুবক

ইয়ং গুণাঙ্ক (Y), আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক (K), দৃঢ়তা গুণাঙ্ক (n) এবং পয়সোঁ অনুপাত (σ)— এই রাশিগুলিকে স্থিতিস্থাপক ধ্রুবক বলা হয়।

স্থিতিস্থাপক ধ্রুবকগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নীচে দেওয়া হল।
Y = 3K (1 - 2\sigma) ..........(1)
Y = 2n (1 + \sigma) ............(2)
(1) নং এবং (2) নং সম্পর্ক থেকে পাই,
\sigma = \frac{3K - 2n}{6K + 2n}
যখন K >> n, 3K - 2n \simeq 3K; 6K + 2n \simeq 6K
\sigma \simeq \frac {3K}{6K} = \frac {1}{2}
আবার, K << n, 3K - 2n \simeq -2n; 6K + 2n \simeq 2n
\sigma \simeq \frac {-2n}{2n} = -1
সুতরাং, গাণিতিকভাবে এভাবে দেখানো যায়, -1 < \sigma < \frac {1}{2}
কিন্তু বাস্তবে 0 < \sigma < \frac {1}{2}

নীচে কয়েকটি পদার্থের পয়সোঁ অনুপাতের মান দেওয়া হল।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পয়সোঁ অনুপাতের মান 0.2 থেকে 0.4 এর মধ্যেই থাকে।

ইয়ং গুণাঙ্ক

স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন এবং অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাতকে ইয়ং গুণাঙ্ক বলা হয়।
ইয়ং গুণাঙ্ক (Y) = (অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন)/(অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি)


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

বাহ্যিক বলের ক্রিয়ায় যদি কোনো বস্তুর মূলত দৈর্ঘ্যের হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, বস্তুর বিকৃতিকে অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি বলা হয়। অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতির ক্ষেত্রে বস্তুর অভ্যন্তরে উদ্ভুত পীড়নকে অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন বলা হয়ে থাকে।

ধরি, L দৈর্ঘ্যের এবং A প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট একটি তারের প্রান্ত, দৃঢ় অবলম্বনের সাথে বাঁধা আছে। তারটির অপর প্রান্তে একটি ভর m ঝোলানো হল। এই m ভরের জন্য তারটির দৈর্ঘ্য বরাবর নীচের দিকে mg বলক্রিয়া করছে। mg বল তারটির মধ্যে অনুদৈর্ঘ্য পীড়নের সৃষ্টি করে যা তারের ‘l’ দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে।

অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি = (দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি)/(প্রাথমিক দৈর্ঘ্য) = \frac {l}{L}
অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন = (প্রযুক্ত বল )/(প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল) = \frac {mg}{A}
ইয়ং গুণাঙ্ক (Y) = (অনুদৈর্ঘ্য পীড়ন)/(অনুদৈর্ঘ্য বিকৃতি) = \frac {\frac {l}{L}}{\frac {mg}{A}}

ইয়ং গুণাঙ্কের একক

CGS পদ্ধতিতে → dyn/cm^2
FPS পদ্ধতিতে → poundal/ft^2
SI পদ্ধতিতে → N/m^2

ইয়ং গুণাঙ্ক সম্পর্কিত কিছু তথ্য

1) তার বা দণ্ডাকৃতি যে কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্যের তুলনায় অন্য মাত্রাগুলি (অর্থাৎ প্রস্থ এবং উচ্চতা) নগণ্য বলে ধরা হয়। এই ধরণের বস্তুর ক্ষেত্রেই দৈর্ঘ্য বরাবর অণুদৈর্ঘ্য বিকৃতি ঘটে থাকে।
2) এটি কেবলমাত্র কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে ইয়ং গুণাঙ্ক দ্বারা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা যায় না। কারণ এই পদার্থগুলি অণুদৈর্ঘ্য পীড়ন সহ্য করতে পারে না। সামান্য অণুদৈর্ঘ্য পীড়ন ক্রিয়াশীল হলেই এরা প্রবাহিত হতে থাকে।
3) পূর্ণ দৃঢ় বস্তুর ক্ষেত্রে অণুদৈর্ঘ্য পীড়ন অসীম হলেও অণুদৈর্ঘ্য বিকৃতি শূন্য হয়ে থাকে, তাই ইয়ং গুণাঙ্কের মান অসীম হয়।
4) পূর্ণ প্লাস্টিক বস্তুর ক্ষেত্রে বাহিক্য বল ক্রিয়া করলেও অণুদৈর্ঘ্য পীড়ন শূন্যই থাকে তাই এক্ষেত্রে ইয়ং গুণাঙ্কের মান শূন্য হয়।

রবার অপেক্ষা ইস্পাত অধিক স্থিতিস্থাপক- ব্যাখা

কোনো বস্তুর উপর বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করলে বস্তুর বিভিন্ন বিন্দুর মধ্যে আপেক্ষিক সরণ হয় বা সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায় বস্তুর বিকৃতি হয়। বস্তুর আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে বাঁধা দেওয়ার জন্য বস্তুটির ভিতরে একটি প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়।


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

তবে এই পরিবর্তনের পরিমাণ যদি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে, তবে প্রযুক্ত বল অপসারিত করলে বস্তুটি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সব পদার্থের মধ্যেই বাহিক্য বলের কারণে ঘটা পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাঁধা দেওয়ার প্রবণতা আছে। পদার্থের এই সাধারণ ধর্মকে স্থিতিস্থাপকতা বা স্থিতিস্থাপক ধর্ম বলা হয়ে থাকে।

সংজ্ঞার আকারে বলা যায় যে, বাহিক্য বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তনের চেষ্টা করলে, যে ধর্মের ফলে বস্তুটি এই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাঁধা দেয় এবং বাহিক্য বল অপসারিত হলে বস্তুটি তার পূর্বের আকার ও আয়তন ফিরে পায়, সেই ধর্মকেই স্থিতিস্থাপকতা বলা হয়।

বাহ্যিক বলের বিরুদ্ধে যে বস্তুর বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা বেশি পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় সেই বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা বেশি বা বলা যায় যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ দৈর্ঘ্য বা আয়তনের পরিবর্তন করতে হলে যে পদার্থে যত বেশি বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা অনুসারে তাকে তত বেশি স্থিতিস্থাপক বলা হয়।

আমরা, সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে রবারের দড়ি টানলে সহজেই সেটি বেড়ে যায়। আবার রবারের দড়ির ক্ষেত্রে যে বল প্রয়োগ করতে হয় তার থেকে অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয় ইস্পাতের দড়িকে বাড়াতে। যেহেতু সমান মাপের ইস্পাতের তার ও রবারের দড়ির মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিবর্তন ঘটাতে রবার অপেক্ষা ইস্পাতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়, তাই রবার অপেক্ষা ইস্পাত বেশি স্থিতিস্থাপক।

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

XI_P_7a