Biology – একাদশ শ্রেনি – উদ্ভিদদেহে সংগঠন
আমরা মূল প্রশ্ন আলোচনা করার আগে, পুস্পবিন্যাস সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেব।
পুষ্পবিন্যাস কাকে বলে?
মঞ্জরী দন্ড বা পুষ্পাধারের উপরে পুষ্পের সজ্জা বা বিন্যাস পদ্ধতিকেই বলা হয় পুষ্প বিন্যাস।
পুষ্পবিন্যাসের প্রকারভেদ
মঞ্জরীদন্ডে ফুলের সজ্জা পদ্ধতি অনুযায়ী পুষ্পবিন্যাসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-
A) অনিয়ত বা রেসিমোজ (Racemose) পুষ্পবিন্যাস
B) নিয়ত বা সাইমোজ (Cymose) পুষ্পবিন্যাস
C) বিশেষ পুষ্পবিন্যাস।
আমরা এবার অনিয়ত পুষ্পবিন্যাস সম্পর্কে জেনে নেব।
A) অনিয়ত বা রেসিমোজ (Racemose) পুষ্পবিন্যাস
যে প্রকার পুষ্পবিন্যাসে মঞ্জরী দন্ডের শীর্ষ অনির্দিষ্টভাবে বাড়তে থাকে এবং শীর্ষে কোনো ফুল থাকে না। ফুলগুলি নীচে থেকে উপরের দিকে অর্থাৎ অগ্রোন্মুখ (acropetally) ফুটতে থাকে, সেই প্রকার পুষ্পবিন্যাসকে অনিয়ত বা রেসিমোজ (Racemose) পুষ্পবিন্যাস বলে।
অনিয়ত বা রেসিমোজ (Racemose) শ্রেণীবিভাগ –
- অনিয়ত পুষ্পবিন্যাসকে আটভাগে ভাগ করা যায়-
- অনির্দিষ্ট বা রেসিম (Raceme)
- মঞ্জরী বা স্পাইক (Spike)
- সমভূম বা করিম্ব (Corymb)
- ছত্রমঞ্জরী বা আম্বেল (Umbel)
- ক্যাটকিন (Catkin)
- চমসামঞ্জরী বা স্প্যাডিক্স (Spadix)
- অণুমঞ্জরী বা স্পাইকলেট (Spikelet)
- শিরোমঞ্জরী বা ক্যাপিচ্যুলাম বা মুন্ডক (Capitulam or Head)
i) অনির্দিষ্ট বা রেসিম (Raceme) পুষ্পবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য –
অনির্দিষ্ট বা রেসিম পুষ্পবিন্যাসকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়-
a) অশাখ রেসিম
b) শাখান্বিত বা যৌগিক রেসিম বা প্যানিক্ল্ (Panicle)।
a) অশাখ রেসিমের বৈশিষ্ট্য-
ক. মঞ্জরী দন্ড দীর্ঘ এবং অশাখ হয়।
খ. ফুলগুলি অগ্রোন্মুখভাবে ফোটে।
গ. এটি একটি সবৃন্তক পুষ্প যুক্ত পুষ্পবিন্যাস
উদাহরণ- মুলা (Raphanus sativus) ইত্যাদি।
b) শাখান্বিত বা প্যানিক্ল্ (Panicle) পুষ্পবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য-
রেসিমের বৈশিষ্ট্যযুক্ত শাখান্বিত মঞ্জরী দন্ডকে যৌগিক রেসিম বা প্যানিক্ল্ (Panicle) বলে।
ক. এই প্রকার রেসিম অনিয়তভাবে বাড়তে থাকে।
খ. এই রেসিমে কয়েকটি শাখা উ ৎপন্ন হয়, প্রত্যেকটি শাখা একটি রেসিম।
উদাহরণ- আম (Mangifera indica), লিচু (Litchi chenensis) ইত্যাদি।
একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
ii) মঞ্জরী বা স্পাইক (Spike) পুষ্পবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য
ক. এই পুষ্পবিন্যাসটি দীর্ঘ মঞ্জরীদন্ড বিশিষ্ট এবং অশাখ হয়।
খ. ফুলগুলি অগ্রোন্মুখভাবে ফোটে।
গ. মঞ্জরীটি অবৃন্তক পুষ্প যুক্ত হয়।
ঘ. প্রত্যেকটি ফুলে মঞ্জরী পত্র থাকে।
উদাহরণ- আপাং (Aerva aspera), রজনীগন্ধা (Polianthes tuberosa) ইত্যাদি।
iii) সমভূম বা করিম্ব (Corymb) পুষ্পবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য
ক. এই প্রকার পুষ্পবিন্যাসে মঞ্জরীদন্ড রেসিমের থেকে ছোট হয়।
খ. পুষ্পবৃন্তগুলি উপর থেকে নীচের দিকে ক্রমশ ছোটো হয়।
গ. সমস্ত ফুলগুলি মঞ্জরী দণ্ডের শীর্ষে একই সমতলে অবস্থান করে।
ঘ. এই প্রকার পুষ্পবিন্যাসে ফুলগুলি অগ্রোন্মুখভাবে সাজানো থাকে।
উদাহরণ- কালকাসুন্দা (Cassia sophera), ক্যান্ডিটাফ্ট (Iberis amara) ইত্যাদি।
iv) ছত্রমঞ্জরী বা আম্বেল (Umbel)-এর বৈশিষ্ট্য
ক. মঞ্জরীদণ্ড ক্ষুদ্র এবং গোলাকৃতি হয়।
খ. মঞ্জরীদণ্ড কখনো কখনো খুবই ক্ষুদ্র হয়, যার ফলে মঞ্জরীদণ্ডকে বিন্দুর মতো লাগে।
গ. পুষ্পবৃন্তগুলো অভিকেন্দ্রীক অনুক্রমে সাজানো থাকে।
ঘ. মঞ্জরীপত্র নীচের দিকে গুচ্ছাকারে সাজানো থাকে।
ঙ. মঞ্জরীদণ্ড ক্ষুদ্র হওয়ায় ফুলগুলি মঞ্জরীদণ্ডের অগ্রবিন্দু থেকেই জন্মেছে বলে মনে হয়।
চ. পরিণত পুষ্পবিন্যাস খোলা ছত্রের মতো হয় বলে একে ছত্রমঞ্জরী বলা হয়।
উদাহরণ- থানকুনি (Centella asiatica), মৌরি (Foeniculum vulgare) ইত্যাদি।
v) ক্যাটকিন (Catkin)-এর বৈশিষ্ট্য
ক. এটি হল একলিঙ্গ ফুলসহ রূপান্তরিত মঞ্জরী।
খ. মঞ্জরী দন্ড সরু দুর্বল হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে না।
গ. মঞ্জরী দণ্ডটি নিম্নমুখী ঝুলে পড়ে।
উদাহরণ- মুক্তোঝুরি, তুঁতে Hazel (Corylus avellana), Silver birch (Betula pendula)
vi) চমসামঞ্জরী বা স্প্যাডিক্স (Spadix)-এর বৈশিষ্ট্য
ক. মঞ্জরীদণ্ডটি লম্বা এবং মোটা হয়।
খ. মঞ্জরীদণ্ডের শীর্ষে কোনো ফুল থাকে না। এই অংশকে অ্যাপেটিক্স বলে।
গ. অ্যাপেটিক্সের নীচে পুং পুষ্প, তার নীচে ক্লীব পুষ্প এবং তার নীচে স্ত্রী পুষ্প থাকে।
ঘ. সব পুষ্পগুলি অবৃন্তক ও একলিঙ্গ হয় এবং পুষ্পগুলি অগ্রোন্মুখভাবে ফোটে।
ঙ. ফুলগুলি চামসা দিয়ে সম্পূর্ণ বা আংশিক আবৃত থাকে।
উদাহরণ- কচু (Colocasia esculenta), সুপারি (Areca catechu) ইত্যাদি।
vii) অণুমঞ্জরী বা স্পাইকলেট (Spikelet)-এর বৈশিষ্ট্য
ক. ঘাস জাতীয় অণুমঞ্জরী নিয়ে গঠিত স্পাইলেট।
খ. এই রকম পুষ্পবিন্যাসের মধ্যে রেসিম, স্পাইলেট, প্যানিক্ল্ দেখতে পাওয়া যায়।
গ. ঘাস জাতীয় ফুলগুলি খুব ছোটো হওয়ায় বৃতি, দলমন্ডল থাকে না, তাই এই ফুলগুলিকে অণুমঞ্জরী বলা হয়।
ঘ. অণুমঞ্জরী, মঞ্জরী অক্ষের উপর স্পাইক বা যৌগিক রেসিমের মতো সজ্জিত থাকে।
ঙ. অণুমঞ্জরী সবৃন্তক বা অবৃন্তক হতে পারে।
চ. প্রত্যেকটা অণুমঞ্জরীতে তিনটে মঞ্জরী পত্র ও একটি মঞ্জরী পত্রিকা থাকে।
ছ. প্রথম ও দ্বিতীয় মঞ্জরী পত্র পুষ্প ধারণ করে না, এদের যথাক্রমে অপুষ্পক গ্লুম বলে।
তৃতীয় মঞ্জরী পত্র পুষ্প ধারণ করে, একে সপুষ্পক গ্লুম বা লেম্মা (Lemma) বলে।
জ. লেম্মার উপরে ও বিপরীত দিকে একটা ছোট মঞ্জরী পত্রিকা থাকে, একে বলা হয় পেলিয়া। এরপর থাকে দুটি লডিকিউল, গর্ভকেশর ও পুংকেশর।
উদাহরণ- ধান (Oryza sativa), গম (Triticum asetivum) ইত্যাদি।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
viii) শিরোমঞ্জরী বা ক্যাপিচ্যুলাম বা মুন্ডক (Capitulam or Head)-এর বৈশিষ্ট্য
ক. এই পুষ্প মঞ্জরীর বিভিন্ন অংশ হল-
পুষ্পধারা বা রেসিপ্টিক্যাল (Receptacle) – মঞ্জরীদণ্ডটি চ্যাপ্টা ও উত্তল হয়, একে পুষ্পধার বা রেসিপ্টিক্যাল বলে।
পুষ্পিকা বা ফ্লোরেটস (Florets)- পুষ্পধারের উপরে অসংখ্য অবৃন্তক ফুল থাকে, এদের পুষ্পিকা বা ফ্লোরেটস বলে।
খ. এই অবৃন্তক পুষ্পগুলি অভিকেন্দ্রিকভাবে সজ্জিত থাকে।
গ. ফ্লোরেটস দুপ্রকারের হয় –
a) বাইরের দিকে লম্বা পাতার মতো যে পুষ্পিকা থাকে, তাকে প্রান্ত পুষ্পিকা বা রে-ফ্লোরেটস (ray-florets) বলে।
b) কেন্দ্রে নলের মতো আকারে যে পুষ্পিকা থাকে, তাকে মধ্য পুষ্পিকা বা ডিস্ক-ফ্লোরেটস (disc-florets) বলে।
চ. পুষ্পধারের নীচে চক্রাকারে মঞ্জরীপত্র বিনস্ত থাকে, একে মঞ্জরীপত্রাবরণ বলে হয়।
উদাহরণ- সূর্যমুখী (Helianthus annuus), গাঁদা (Targetes patula) ইত্যাদি।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XI-Bio-4a