পদার্থবিদ্যা – একাদশ শ্রেণি – সৃতিবিজ্ঞান (Kinematics)
আগের পর্বে আমরা গতিশক্তি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা স্থিতিশক্তি সম্পর্কে জেনে নেব।
স্থিতিশক্তি কাকে বলে?
কোনো বস্তু তার বিশেষ অবস্থান বা আকৃতির জন্য কাজ করার যে ক্ষমতা অর্জন করে তাকে ঐ বস্তুর স্থিতিশক্তি বলা হয়।
কোনো বস্তুর প্রাথমিক বা স্বাভাবিক অবস্থাকে শূন্য অবস্থা বলা হয়।
এটাই আসলে “Standard” বলে ধরে নেওয়া হয়। এই অবস্থা বাদ দিয়ে বাকি সব অবস্থাকেই বিশেষ অবস্থা বলে ধরে নেওয়া হয়।
ঐ বিশেষ অবস্থা থেকে প্রমাণ অবস্থানে ফিরে আসতে যে কাজ করা হয়ে থাকে সেটাই বস্তুর স্থিতিশক্তির পরিমাপ।
যেমন, আমরা দম দেওয়া খেলনা গাড়ি দেখেছি। দম দিলে গাড়ির ভিতরে থাকা স্প্রিংটি সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায়, ছেড়ে দিলে প্যাঁচ খুলে গিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। স্প্রিংয়ের সাথে খেলনাগাড়ির চাকার সংযোগ এমনভাবে থাকে যে সংকুচিত স্প্রিংটি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে চাইলে চাকা ঘোরে,
খেলনা গাড়িটি সামনের দিকে এগোতে থাকে। স্প্রিংটি পুরোপুরি আগের অবস্থায় চলে এলে সেটা আর চাকাগুলিকে ঘোরাতে পারে না, ফলে গাড়িটিও থেমে যায়।
এই উদাহরণ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, স্বাভাবিক অবস্থা থেকে পরিবর্তিত করে স্প্রিংটিকে সংকুচিত করার ফলে স্প্রিংয়ের মধ্যে কার্য করবার কিছুটা শক্তি সঞ্চিত হয়।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
অবস্থান পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশক্তি
একটি বড় পাথর পৃথিবী পৃষ্ঠে রয়েছে। ধরলাম, এটাই পাথরটির প্রাথমিক অবস্থা। এবার পাথরটিকে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উপরে তুলতে গেলে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করে পাথরটিকে উপরে তুলতে হয়।
এই যে কার্য সম্পন্ন করা হল, এটি বস্তুর মধ্যে ঐ পরিবর্তিত স্থানে স্থিতিশক্তি হিসাবে সঞ্চিত হয়। বস্তু বা পাথরটি তার প্রাথমিক বা প্রমাণ অবস্থানে, এক্ষেত্রে পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসার সময় ঐ সঞ্চিত স্থিতিশক্তি ব্যয় করে কার্য করতে হয়।
কার্য করবার সময় পাথরটির স্থিতিশক্তি ক্রমশ কমতে থাকে, পাথরটি আবার তার প্রাথমিক অবস্থানে ফিরে এলে স্থিতিশক্তি শূন্য হয়ে যায়।
আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক।
জলের স্থিতিশক্তি ব্যয় করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর জলকে বাঁধ দিয়ে একটা উঁচু জায়গায় ধরে রাখা হয়, ফলে জলের মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হতে থাকে।
বাঁধ খোলার সময় জল উপর থেকে নীচে আসে অর্থাৎ নীচে পড়ার সময় জলের স্থিতিশক্তি, গতিশক্তিতে পরিণত হয়।
জলের গতিশক্তি ব্যয় করে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
আকৃতি পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশক্তি
একটি স্থিতিস্থাপক (elastic) বস্তুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে পারস্পারিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। আকৃতি পরিবর্তনের জন্য যে কার্য করা হয়, তা বস্তুটির মধ্যে স্থিতিশক্তি হিসাবে সঞ্চয় হয়।
বস্তুটি তার আগের আকৃতিতে ফিরে আসার সময় ঐ শক্তি ব্যয় করে কার্য করতে হয়। ফলত, স্থিতিশক্তি কমতে কমতে যখন বস্তুটি তার প্রাথমিক আকৃতিতে ফিরে আসে তখন আবার স্থিতিশক্তি শূন্যে পরিণত হয়।
আগেই দম দেওয়া খেলনার কথা বলেছি। যেটা আকৃতি পরিবর্তনের জন্য স্প্রিং–এ সঞ্চিত স্থিতিশক্তির উদাহরণ। দম দেওয়া ঘড়িও একই ভাবে চলে। ঘড়ির স্প্রিংটিতে দম দিয়ে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়, স্প্রিংটি স্বাভাবিক অবস্থায় এলে তার স্থিতিশক্তি থাকে না। তখন ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
তেমনি স্বাভাবিক অবস্থায় ধনুক থেকে তীর ছোঁড়া যায় না। ধনুকের ছিলা ধরে টানলে তার মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়, ফলে ধনুকটি কার্য করতে পারে, অর্থাৎ ধনুক থেকে তীর ছোঁড়া যায়।
সুতরাং, আমরা দেখলাম যে বস্তুর অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তন করতে হলে বস্তুর ওপর কার্য করতে হয়, সেই কৃতকার্যই পরিবর্তিত অবস্থায় বস্তুটিকে নিয়ে যাবার জন্য স্থিতিশক্তি হিসাবে সঞ্চিত হয়।
সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।