bigganadda-2
Article (প্রবন্ধ)

বিজ্ঞানাড্ডা – পর্ব ২



পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। লকডাউনের জেরে ঘরে বন্দি ঝন্টু আর রিন্টু।

রিন্টুর কিন্তু ভারী মজা। ঝন্টুদিকে সারাদিন বাড়িতেই পাওয়া যাচ্ছে আর চলেছে দেদার বিজ্ঞান আড্ডা। এমনই এক দুপুরে খাবারের মেনুতে পাওয়া গেল ভাত, ডালের সঙ্গে ঝন্টু – রিন্টুর গাছে ফলা বেগুন ভাজা। রিন্টু আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল “ওয়াও! দারুণ টেস্ট! এতো গাছের বেগুন”।

ঝন্টু হেসে বলল “বেগুন গাছের হবে না তো কি কারখানায় তৈরি হবে?” রিন্টু বলল “না! তা নয়! আসলে এ হল আমাদের বাড়ির গাছের জৈব সারে সমৃদ্ধ ও কীটনাশকবিহীন বেগুন”।


[আরো পড়ুন – বিজ্ঞানাড্ডা প্রথম পর্ব]

রিন্টু হঠাৎ প্রশ্ন করে, “আচ্ছা ঝন্টুদি, বি.টি. বেগুনটা কি?”

ঝন্টু বলে, “বাজার থেকে যখন বেগুন কেনা হয় তখন প্রায়শই দেখা যায় বেগুনে ফুটো রয়েছে।

damaged-brinjal
ক্ষতিগ্রস্ত বেগুন

বেগুন গাছের কান্ডে বা ফলে ফুটো করে এক ধরণের পোকা, যারা প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষায় লেপিডপটেরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এরা ফসলের প্রচুর ক্ষতি করে। এদিকে মাটিতে বাস করে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যার নাম ব্যাসিলাস থুরিনজেনেসিস (Bacillus thuringiensis), এরা এক ধরণের প্রোটিনের ক্রিস্টাল তৈরি করে যার নাম ডেলটা এন্ডোটক্সিনএকে ক্রাই (Cry protein) প্রোটিনও বলা হয়।

Bacillus_thuringiensis
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপের তলায় ব্যাসিলাস থুরিনজেনেসিস

এই ক্রাই প্রোটিনকে যদি কোনভাবে কীটপতঙ্গ খাবারের সাথে খেয়ে ফেলে তাহলেই তাদের সমূহ বিপদ। আমাদের মতো পোকামাকড়ের পাচকরস অম্লধর্মী বা অ্যাসিডিক নয়, বরং তা অত্যন্ত ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন। এই রস সহজেই ক্রিস্টাল প্রোটিনকে দ্রবীভূত করতে পারে। তারপর আসরে নামে পোকারই অন্ত্রে (gut) তৈরী প্রোটিয়েজ জাতীয় উৎসেচক (enzyme) যা এই ক্রিস্টাল থেকে টক্সিনকে কেটে বার করে নিয়ে আসে। তারপর এই টক্সিন পোকার পরিপাক নালীকেই ফুটো করে দিয়ে এদের মৃত্যু ডেকে আনে”।

রিন্টু বলে “ও বাবা ! প্রোটিয়েজ এনজাইমটাতো ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’। কিন্তু একটা জিনিস এখনো বুঝলাম না যে এর সঙ্গে বেগুনের কি সম্পর্ক”।

ঝন্টু বলে, “হ্যাঁ! সে কথাতেই আসছি। এই যে ব্যাসিলাস থুরিনজেনেসিস –এর তৈরী ক্রিস্টাল প্রোটিন, তা সেই 1920 সাল থেকে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এখনো ডাইপেল, থুরিসাইড ইত্যাদি নামে এই কীটনাশক পাওয়া যায়, যা গাছে স্প্রে করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে অনেক সমস্যা। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত স্প্রে করতে হবে, আবার তার মধ্যে বৃষ্টি হলে তো পুরোটাই মাটি। তাই বিজ্ঞানীরা এক বুদ্ধি বার করলেন। আচ্ছা! ব্যাকটেরিয়ার যে জিন থেকে এই ক্রাই প্রোটিন তৈরী হয় সেই জিন যদি গাছের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কেমন হবে?

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বেগুনের জিনের সাথে মিশ্রণ ঘটল Bacillus thuringensis বা Bt-র জিনের। আর তৈরী হল Bt বেগুন। এই বেগুনের মধ্যেই তৈরী হয় ক্রাই প্রোটিন। ফলে বাইরে থেকে কীটনাশক দেবার প্রয়োজনই হয় না। পোকা যখনই বেগুন গাছের কোনো অংশ খায়, অমনি আক্রান্ত হয় ক্রাই প্রোটিনে, আর সাথে সাথে মৃত্যু”।

JUMP whats-app subscrition

“আর মানুষ?” রিন্টুর প্রশ্ন ধেয়ে আসে।

“মগজাস্ত্র কি বলছে? ঝন্টুর পাল্টা প্রশ্ন। তারপর নিজেই দিয়ে দেয় উত্তর “আমাদের পাচকরস অ্যাসিডিক। তাতে ক্রাই প্রোটিন দ্রবীভূত হয় না আর আমরাও আক্রান্ত হই না। তবে এতো গেল থিওরিটিক্যাল ব্যাপার। বহুদিন ধরে এই বেগুন খেলে মানুষের দেহে তার কোনো  দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে কিনা তা বিতর্কের বিষয়ে। আর এই বিতর্কের জন্যই এখনো বিটি বেগুন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না।”

এবার মায়ের পালা।

মা বললেন, অনেক তো পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনা তোরা করলি। এবার আমি তোদের পরিবেশের ওপর একটা খবর দিই। টেবিলের উপরে রাখা মাটির পাত্রের উপর ছাপা একটা চিহ্নের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে মা বললেন, ‘এই ISI Mark কি তোরা চিনিস?’

Ecomark

ঝন্টু মিটি-মিটি হাসলেও, রন্টু কিন্তু মাথা চুলকাতে শুরু করলো। ও বললো, এটা তো আগে খেয়াল করিনি।

এবার মা বললেন, এটা হল ভারত সরকার থেকে অনুমোদিত ECOMARK। অর্থাৎ যে সকল ব্যবহার্য জিনিস (সাবান, ডিটারজেন্ট, শিশুখাদ্য, তেল প্রভৃতি) পরিবেশ বান্ধব, তাতে এই ইকোমার্ক ব্যবহার করা হয়। এই লেবেলে থাকা মাটির পাত্রের ছবি হল পৃথিবীর প্রতীক। এটি মানুষের অন্তরের নিরন্তর সৃষ্টি ও সুন্দরকে সংরক্ষণ করার ইচ্ছার প্রতীক। এর নিরেট ও সুন্দর কাঠামো অন্তর্নিহিত শক্তি ও ভঙ্গুরত্বের প্রকাশ যা ইকোসিস্টেমকে বোঝায়। এখানে মাটির পাত্র দেখানো হয়েছে, কারণ মাটি নবীকরণযোগ্য এবং এটি পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না।


আরো পড়ুন


‘এটা কি করলি রে’, ঠাকুমার আর্তনাদে সবাই চমকে তাকায়।

রিন্টু খাবার সময়, দইয়ের বাটির যেখান সেখান থেকে দই খাবলে নিয়েছে। তাই ঠাকুমার পাতা সাধের দই জল হয়ে গেছে। সেই দুঃখেই ঠাকুমা মনমরা। ঝন্টুর দিকে ধেয়ে আসে রিন্টুর প্রশ্নবাণ- ‘কেন এমন হল?’

maxresdefault
‘জল হয়ে যাওয়া দই’

ঝন্টু বলে, দুধের Lactobacillus ব্যাকটিরিয়াগুলি দুধকে Coagulate করিয়ে বা জমিয়ে দিয়ে দইতে পরিণত করে। দই কাটলে কাটা জায়গায় আশেপাশের ব্যাকটিরিয়া Biological Shock – এ মারা যায়, যার ফলে দইয়ে জল কেটে যায়। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে দই কাটলে একসঙ্গে অনেক ব্যাকটিরিয়া মরে যায়। তাই বেশিরভাগ দইটাই জল হয়ে যায়।

বিস্মিত রিন্টু ভাবে, এই পৃথিবীতে সর্বদা কত আশ্চর্য ঘটনাই ঘটে যা আমরা বুঝতেই পারি না। খেয়ে নিয়ে ঝন্টুদির কাছ থেকে করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে নতুন কিছু জানতে হবে, এই ভেবে ও তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করায় মন দেয়।

এই লেখাটি মনোগ্রাহী হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।

lekha-pora-shona-facebook-group