monche nache panchabhut copy
Article (প্রবন্ধ)

মঞ্চে নাচেন পঞ্চভূত – মৌলবাদের সূচনা ও আধুনিক বিজ্ঞান (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রথম পর্বে আমরা পড়েছি প্রাচীন গ্রীস ও চীনদেশের বৈজ্ঞানিকরা পৃথিবীর তথা এই মহাবিশ্বের উপাদান সম্পর্কে কি অনুমান করেছিলেন। এই পর্বে আমরা দেখবো আমাদের ভারতীয় বৈজ্ঞানিকরা এই ব্যাপারে কি ভেবেছিলেন এবং আধুনিক বিজ্ঞান এ সম্পর্কে কি বলে?

india

সুকুমার রায় লিখেছিলেন “মঞ্চে নাচেন পঞ্চভূত”। এই ভূত সেই বেদের কাল থেকে পঞ্চতত্ত্ব হিসেবে ভারতীয় আচার, ব্যাবহার রীতি ও নীতির অংশ হয়ে আছে। পঞ্চদেবতা হিসেবে আজও বিভিন্ন পূজা পাঠে এদের উদ্দেশে জল বা আহুতি দেওয়ার প্রচলন আছে।


[এই লেখার প্রথম পর্ব পড়ুন]


ভাবছেন, এদের সাথে রসায়ন বা জগত সৃষ্টির উপাদানের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে এরা হল, ক্ষিতি বা ভূমি বা পৃথিবী, অপ বা জল বা বরুণ, তেজ বা অগ্নি, মরুত বা বায়ু বা পবন ও ব্যোম বা আকাশ বা শূন্য। এক কথায় ক্ষিত্তপ্তেজঃমরুদব্যোম। আমাদের পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়র সাথে ও পাঁচটি চেতনার সাথে এই পাঁচটি মৌল অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আশ্চর্যজনকভাবে গ্রীকেদের পাঁচটি মৌল প্রায় মিলে যায় ভারতীয় পঞ্চতত্ত্বের সাথে।

panchabhuta-1
পঞ্চভূত
  • আকাশ বা শূন্য –  শব্দ, কান ও শ্রুতি
  • বায়ু – স্পর্শ ত্বক, শ্রুতি ও অনুভব
  • অগ্নি – আলো, চোখ, শ্রুতি, অনুভব ও দৃষ্টি
  • জল – স্বাদ   জ্বিহা, শ্রুতি, অনুভব, দৃষ্টি ও আস্বাদ
  • ভূমি বা মাটি –  গন্ধ,  নাক,  শ্রুতি, অনুভব, দৃষ্টি, আস্বাদ ও ঘ্রাণ

বৌদ্ধ দর্শনে আকাশের বা শূন্যের বদলে দুটি অতিরিক্ত মৌলকে সৃষ্টির আধার মানা হয়েছে। পালি ধর্মশাস্ত্রে বাকি চারটি মৌলকে স্থূলভূত বা primary element ধরা হয়েছে, আর নতুন দুটি মৌলকে সুক্ষ্মভূত বা perceptional element বলা হয়েছে। এই নতুন দুই মৌল আকাশ ও বিজ্ঞান ( অন্য মতে স্থানধাতু ও কালধাতু) হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।

বুদ্ধর শিক্ষা অনুসারে আমাদের শরীরের ত্বক, হাড়, নখ, দাঁত সব মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্ট। রক্ত, পিত্ত, ঘাম সকল জল;  শ্বাস ও গর্ভস্থ গ্যাস বায়ু ও আমাদের শরীরের তাপ, হজম সকলই অগ্নি ধাতু নির্মিত। তাই এগুলি স্থূল বা মূল ধাতু। আকাশ বা স্থান কোনও অবস্থানকে বোঝায় আর বিজ্ঞান চেতনা বা conscioussness কে প্রতিনিধিত্ব করে (কাল ধাতু এই চেতনারই পর্যবেক্ষণ সময়ের অনুভূতিকে বোঝায়)


[আরো পড়ুন – অন্য বোস, সত্যেন বোস]


আধুনিক বিজ্ঞান ও পঞ্চমৌল

নবজাগরণের কালে Joseph Priestley অক্সিজেন আবিষ্কার করে দেখিয়ে দেন যে গ্রীক মৌলগুলির বিজ্ঞান ভিত্তি অমূলক। Henry Cavendish বায়ুর মিশ্রণকে পৃথক করে দেখান যে বায়ুতে একাধিক গ্যাস বর্তমান, যাদের মধ্যে কেউ কেউ যৌগ। ধীরে ধীরে আরও মৌল আবিষ্কার হতে থাকে এবং আধুনিক বিজ্ঞানে রসায়নের ভূমিকা বাড়তে থাকে। এই পর্যায়কে প্রথম chemical revolution বলা হয়ে থাকে, যার জনক ছিলেন আন্তইন লাভইসিএর। কিন্তু এতে classical element-এর গুরুত্ব শেষ হয়ে যায় না।

এই মৌলগুলি প্রত্যেকেই আজও প্রাসঙ্গিক। যেমন –

মাটি বা Earth সকল কঠিন বা solid কে প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের চারিদিকে যা কঠিন সব প্রায় ভূমিজ। সে ধাতুই হোক বা কাঠ। লবণই হোক বা খাদ্য।

জল বা Water হল সমস্ত তরল বা Liquid। সকলের মধ্যেই জলের মত বহমান ধর্ম বর্তমান।

বায়ু বা Air এর মধ্যেই সকল গ্যাস (Gas) বিদ্যমান।

আগুণ বা Fire হল energy বা শক্তির উৎস। সকল শক্তিই তাপ শক্তি থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপ শক্তিতেই ফিরে যায়। সকল শক্তি তরঙ্গই আলোর তরঙ্গের নিয়ম মেনেই সঞ্চারিত হয়।

ব্যোম ব Space বা স্থান হল 3-Dimensional Universe 3-axis coordinate system কেই আমরা ব্যোম বলে ধরে নিতে পারি যেখানে মাটি, জল, বায়ু বা কোনও শক্তি অনুপস্থিত। ইহা সতত স্থিতিশীল।

আর সময় বা কাল বা Time হল সদা পরিবর্তনশীল একটি perception যা বাকি মৌলগুলির সৃষ্টি স্থিতি ক্ষয় ও বিনাশের দ্বারা সূচিত হয়।

classical element রসায়নের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এই ইতিহাস না জানলে, অগ্রগতির মুল সূত্র হারিয়ে যায়। আমাদের পূর্বপুরুষ কিভাবে কোন যুক্তিতে, পৃথিবীর বা বিশ্বের রূপ কল্পনা করেছিলেন, সেটা না বোঝা গেলে হয়ত আমরা নিজেরাও কখনো জগতের বাস্তবিক রূপের বিষয়ে চিন্তাশীল হতে পারতাম না। classical element আমাদের সেই ভিত্তিটা দিয়েছে, যার ওপর দাঁড়িয়ে আমরা নবচিন্তা বিকাশের বৃক্ষরোপণ করতে পারছি।

সমাপ্ত


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –