একটি দূষিত গ্রহের মধ্যে এক পশলা বিশুদ্ধ ‘self sustainable’ গ্রহ। যেখানে কোনো মানুষের তৈরী বৈষম্য নেই।
কিংবা ধরুন বাড়ির বৈঠকখানায় গাছ লাগিয়েছেন, বিনা জলে ও যত্নে গাছেরা দিব্বি বড় হয়ে উঠছে।
ব্যাপারটা কেমন হয়?
নিঃসন্দেহে দারুন।
আমাদের অনেকের বাড়িতেই তো অ্যাকোয়ারিয়াম (Aquarium) দেখেছেন।
Aquarium মানে Aqua মানে জলের ঘর। ঠিক তেমনি আজ একটা নতুন শব্দ জানুন; terrarium। Terra মানে মানে শুষ্ক ভূমি বা ভূপৃষ্ঠ। মানে, আপনার বাড়িতে একটা কাঁচের ঘর আর তাতে একখণ্ড ভূপৃষ্ঠ।
আপনি ভাববেন এতে আর দেখার মতো কি আছে? একটুকরো মাটি কাঁচের বয়ামের মধ্যে রাখা থাকলে তাতে আশ্চর্য্যের কি?
যদি বলি পুরোটাই আশ্চর্য্যের?
যদি বলি এটি শুধু মাটি নয় একটা Ecosystem?
যে ecosystem নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে Technically অনন্তকাল ধরে?
Terrarium কে সংজ্ঞায়িত করলে বলতে হয় “একটি উদ্ভিদের কাঁচঘর যেটিকে প্রয়োজনমতো খোলা বন্ধ করা যায় পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।” এর দুটি শ্রেণী আছে. 1. উন্মুক্ত (open) ও 1. বদ্ধ (closed)। এখানে আমরা কথা বলবো ওই বদ্ধ ঘরের কোণে একটি জগৎ । টেরারিয়াম (Terrarium)এর ব্যাপারে।
বদ্ধ terrarium: একটা সীল করা কাঁচের বোতল বা বাল্ব বা ক্যাবিনেটের মধ্যে বানানো যেতে পারে এই terrarium।
কিভাবে বানানো যেতে পারে এই অদ্ভুত terrarium? আসুন দেখে নেওয়া যাক –
তাহলে মোটামুটি বললে বলা যায় যে আমরা মাটি, পাথর, ভেজা কাঠ দিয়ে তৈরী এক আর্দ্র পরিবেশ সৃষ্টি করা হল। এবার, এখানে লাগানো যেতে পারে আর্দ্র অঞ্চলে বেড়ে ওঠা পর্ণমোচী গুল্ম, যা ন্যূনতম রসদ ব্যবহার করে বেড়ে উঠতে পারে, যেমন মস, ফার্ন, অর্কিড ও বিভিন্ন পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ।
[আরো পড়ুন – সম্রাট অশোকের প্রেক্ষাপটে রচিত ঐতিহাসিক কল্পগল্প]
বদ্ধ terrarium কে Closed ecological system বলা যেতে পারে, যা বাইরের দুনিয়ার থেকে কেবলমাত্র আলো ও তাপ ছাড়া আর কোনো রসদ সংগ্রহ করে না। পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভরচক্রগুলি (জলচক্র, CO2 চক্র, অক্সিজেন চক্র ও নাইট্রোজেন চক্র) নিজের থেকেই বদ্ধ সিস্টেমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনো উদ্ভিদকে বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে, মহাকাশে খাদ্য নিয়ে যেতে, বাড়ি সাজাতে terrariumএর জুড়ি মেলা ভার।
এরা কিভাবে কাজ করে?
এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে আশ্চর্যয়ের। প্রথমে terrarium বানানোর সময় মাটিকে সীল করার শুরুতেই যথেষ্ট আর্দ্রতা দিয়ে দেওয়া হয়। সেই জল টেনে এরা প্রস্বেদন করে ও পাতায় তৈরী জল ঘনীভূত হয়ে মাটিকে আবার সিক্ত করে। এভাবে জলচক্র নিয়ন্ত্রিত হয়।
আলোর সাহায্যে photosynthesis পদ্ধতিতে অক্সিজেন তৈরী করে শ্বসন ক্রিয়া চালু রাখে, আর শ্বসনে উৎপন্ন কার্বন দেয় অক্সাইড আবার ওই photosynthesis-এই ব্যবহৃত হয়। এভাবে biomass নিয়ন্ত্রিত হয় আবার O2-CO2 চক্রও চালু থাকে। পাতা মাটিতে পড়ে পচে গিয়ে সার হয় এবং নতুন চারাগাছ থেকে নতুন গুল্ম জন্মায়। এভাবে অনন্তকাল ধরে তার মধ্যে জন্ম মৃত্যু চক্র চলতে থাকে। এককথায় বলতে গেলে এটা একটি মিনি পৃথিবী।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখানে কীট বা সরীসৃপ/উভচর প্রাণীও রাখা হয়। প্রকৃতি নিজের নিয়মে সেখানে তাদেরও জন্ম, বৃদ্ধি ইত্যাদি ব্যালান্স করে থাকে। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে খাদ্য সরবরাহ করতেও হয়। তবে সেটি মুক্ত terrarium হিসেবে পরিগণিত হয়। বদ্ধ terrariumএ মাঝে মাঝে জল সরবরাহ করা হতে পারে যদি গুল্মের বৃদ্ধির হার অতিরিক্ত হয়। এখনো অবধি পাওয়া সবথেকে প্রাচীন terrarium টি 40 বছরে একবার খোলা হয়েছে। নিচে তার ভিডিও রইলো।
এই ব্যাপারটি থেকে একটি জিনিস আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি আমাদের এই পৃথিবীর প্রকৃতি নিজের সাম্য বজায় রাখার কাজ করে আপন খেয়ালে।
কিন্তু আমরা মানুষেরা কিভাবে এর মধ্যে নিজেদের অপগুণগুলিকে মিশিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে সাম্য বিঘ্নিত করে চলেছি।
আমাদের যতটা রসদ প্রয়োজন, তার থেকে অতিরিক্ত সংগ্রহ করছি, যা তারা সেই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে পারছে না। এইভাবেই আমরা আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছি। গ্রীনল্যান্ডের কুকুরদের হাটু ডোবা জলে স্লেজ গাড়ি টানার দৃশ্যই হোক বা সাইবেরিয়াতে নরিলস্ক শহরে মেরুভাল্লুকের খাবার সংগ্রহে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য, এটাই তার প্রমাণ।
মনে রাখবেন এই পৃথিবী আমার – আপনার, তাই একে ভালো রাখার দায়িত্বও আমার ও আপনার।
এই প্রবন্ধটি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা