বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগ| বিবর্তনের জন্মবৃত্তান্ত
শ্রসবেরি, বিগল, গ্যালাপাগোস, প্রাকৃতিক নির্বাচন, বিবর্তন।…. এই শব্দগুলোকে জুড়লে কাকে পাওয়া যায়?
বুঝতে পারলেন না? কোনো ব্যাপার নয়, আপনার জন্য আরো কয়েকটি তথ্য।
আমাদের এই প্রবন্ধের হিরো জন্মেছিলেন 12ই ফেব্রুয়ারী, মানে গতকাল ছিল তার জন্মদিন। 1809 সালে শ্রসবেরি শহরে, পশ্চিম ইংল্যান্ডে অত্যন্ত প্রগতিশীল পরিবারে জন্মানো এই বালক ছিলেন এক বিস্ময় প্রতিভা। মাত্র আট বছর বয়সেই তাঁর ছিল প্রাকৃতিক ইতিহাসের ওপর অগাধ অনুগ্রাহীতা ও জন্মগত দখল।
আর তাই যখন তাকে স্কুল শেষে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলো, তাঁর সেটিতে মন টিকলো না। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাঁর মন ঘুরে গিয়ে দল বাঁধলেন প্লিনীয়ান সোসাইটি, প্রাকৃতিক ইতিহাসের চর্চার গ্রূপে । ক্রমে তিনি আয়ত্ত করলেন বোটানি, এনাটমি, জিওলোজি প্রভৃতি। শুধু তাই নয়, থিওলজি আর দর্শনেও তাঁর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
[প্রবন্ধ বিভাগ থেকে পড়ুন – ঐতিহাসিক কল্পগল্প; স্বপ্ন না সত্যি]
এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন কার কথা বলছি?
আজ্ঞে হ্যাঁ, ঊনবিংশ শতকের সেরা তিন বুদ্ধিজীবী যাদের দর্শন সমাজে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে, ইনি তাদের একজন। প্রথমজন মার্ক্স্, দ্বিতীয় ইনি ডারউইন আর তৃতীয় ফ্রয়েড। এই লেখাটি চার্লস ডারউইন কে নিয়ে।
প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করে, এইচ এম এস বিগল নামক জাহাজে চড়ে 1831 এর 27সে ডিসেম্বর প্লেমাউথ থেকে তিনি বেরোলেন পৃথিবীকে চক্কর মারতে। কেপ ভার্দে, ব্রাজিল, চিলি, গ্যালাপাগোস, অস্ট্রেলিয়া, মরিশাস আর উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে প্রায় পাঁচ বছর পরে ফিরলেন তিনি ইংল্যান্ডে।
আর সাথে আনলেন আমাদের জন্মরহস্যের চাবি। তার প্রধান আবিষ্কার ছাড়া, তিনি যে আর কি কি সংগ্রহ করেছিলেন তার লিস্ট করতে বসলে সারা বছর লেগে যাবে। তাঁর সবথেকে বড়ো গুণ ছিল তিনি কোনো তথ্যকেই অপ্রয়োজনীয় মনে করে বাতিল করতেন না।
[এই বিভাগ থেকে – তিনটি আবিষ্কারের কাহিনী যেগুলো আবিষ্কার তো হয়েছিল অ্যাক্সিডেন্টালি]
কিভাবে জন্ম নিলো বিবর্তনবাদ?
ডারউইনের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তাকে এক বিশাল অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছিল। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের ফিঞ্চ পাখিদের ঠোঁট (চঞ্চু) দ্বীপভেদে বিভিন্ন রকমের হচ্ছে।
তিনি সেগুলোর স্কেচ করেন এবং স্যাম্পলগুলি তৎকালীন বিখ্যাত পক্ষীবিশারদ জন গুল্ডের সামনে পেশ করেন। এই ঠোঁটের বিবিধতা দেখে ডারউইন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে পাখিদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রজন্মান্তরে তাদের ঠোঁটের বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তারা যে পোকা বা শস্যদানা খেত, দ্বীপপুঞ্জের প্রতিটা দ্বীপে সেটি একরকম হত না।
তাই প্রজন্মান্তরে সেই ঠোঁটের গড়ন অভিযোজিত হয়ে প্রায় 14 রকমের প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছিল। এই অভিযোজনই প্রত্যেকটি প্রজাতিকে প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিঁকে থাকার দক্ষতা দিয়েছিল। যে সব প্রজাতি এই অভিযোজনে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল, তাদের উদ্বর্তন আর সম্ভব হয়নি।
এরপর তিনি লিখলেন ‘On the Origin of Species’ আর মানুষের কাছে উদ্ভাসিত হল বিবর্তনের জন্মবৃত্তান্ত।
ডারউইনের তত্বের সবথেকে বড়ো বিতর্কিত দিক হলো এর প্রয়োগ।
সমাজতত্ত্বে প্রযুক্ত ডারউইনের তত্ত্বকে “ডারউইনিজম” বলে অভিহিত করা হয়। গত দুই শতাব্দী যাবৎ জাতিভেদকে দূর করতে এবং সেটিকেই উৎসাহ দিতে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সহযোগিতা উভয়কেই সমর্থন করতে, মানুষকে সামান্য ও অতিসামান্য প্রমাণ করতে, তাকে যন্ত্রস্বরূপ ব্যবহার করতে আবার তাকেই স্বাধীনতা প্রদান করতে, ধর্মকে প্রশ্রয় এবং বাধা দিতে ডারউইনিজমের প্রয়োগ হয়েছে।
আরো পড়ুন: প্রবন্ধ বিভাগ | বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগ | প্রযুক্তি বিভাগ
কিভাবে একই তত্ত্ব উভয় ক্ষেত্র রচনা করেছে তা ভাবলে অবাক হতে হয়। সর্বাপেক্ষা বড়ো ব্যাপার হলো ডারউইনের তত্ত্ব আরেকটি দার্শনিক তথা বাস্তব প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে, কোনো সিদ্ধান্তের বা কর্মের দায় কার? যে তত্ত্ব ঊপস্থাপনা করে তার, না যে তার প্রয়োগ করে তার?
আমাদের সমস্যাগুলির জন্য আমরা কি বিজ্ঞানী ও তার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে বা ধর্মকে দায়ী করতে পারি কি?
যদিও বা দেখা যায় যে ওই তত্ত্বের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভেদাভেদের বীজ। ওই তাত্ত্বিকের সেরকম উদ্দেশ্য না থাকলেও সময়ের তালে যখন তা কিছু সুবিধাবাদী মানুষের হাতে গিয়ে পড়ে তখন তার কি পরিণতি বা প্রয়োগ হয় সেটি ডারউইনের তত্ত্ব আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলো।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা