গণিতের জ্যামিতির অন্যতম শাখা হল ত্রিকোণমিতি। ‘ত্রিকোণমিতি’ শুনলেই মাথায় আসে sin, cos, tan এবং তাদের বিভিন্ন কোণের পরিপ্রেক্ষিতে মান সমূহ।
ত্রিকোণমিতি বলতে কোণ, ত্রিভুজ ও বিভিন্ন ত্রিকোণমিতির function সম্পর্কিত পড়াশোনাকেই বোঝায়।
Greek শব্দ trigonon (triangle) ও metria (measure), অর্থাৎ ‘trigonametry’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ত্রিভুজের পরিমাপ। ‘trigonometry’ – শব্দটি সপ্তদশ শতকে (17 century) প্রথম ব্যবহৃত হয় কিন্তু এর উৎপত্তি 3000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মিশরীয় পিরামিড ও ব্যাবিলনীয় Astronomy থেকে।
অনুমান করা হয় মিশরীয়দের কোণের ব্যপারের কোন ধারণা ছিল না এবং ওরা ত্রিভুজাকৃতির পিরামিড তৈরি করেছিল কোণের পরিমাপ ছাড়াই।
গ্রীক জ্যোতিবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ Hipparchus of Nicaea (190 BCE – 120 BCE) ছিলেন ‘ত্রিকোণমিতি’ এর জনক। তিনি সর্বপ্রথম ত্রিকোণমিতির টেবিল লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
আরো পরে, গ্রীক স্কলার Alexandria এর মতে (335 CE – 405 CE) ‘table of chord’ অর্থাৎ বৃত্তচাপের ছক যা তিনি ত্রিকোণমিতির ছকের প্রাথমিক তথ্য 12টি বইতে প্রকাশ করেন। এরপর সম্ভবত আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পরে ত্রিকোণমিতির ধারণা ভারতবর্ষে আসে।
ভারতীয় গণিতবিদরা ছিলেন (476CE – 550CE) sine ও cosine এর আবিষ্কর্তা। প্রধানত গুপ্তযুগে আর্যভট্টের হাত ধরে ত্রিকোণমিতির ব্যপক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।
তার কাজের মধ্যে sine function এর ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত তিনিই সর্বপ্রথম sine function ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর ব্যবহৃত জ্যা শব্দ থেকেই sine শব্দটির উৎপত্তি হয়।
মনে রাখতে হবে, এই সময়ে ত্রিকোণমিতি মূলত ব্যবহার করা হত জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গণনার কাজে। পরবর্তী সময়ে ভাস্করা (Bhaskara I), ব্রম্ভগুপ্ত, মাধবা-র কাজের মধ্যেও আমরা ত্রিকোণমিতির ব্যবহার দেখতে পাই।
মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত পার্শি গণিতজ্ঞ al- Khwarizmi (c 780) তার কাজে ত্রিকোণমিতির ব্যপক ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, সম্ভবত তৎকালীন মুসলিম গণিতজ্ঞরাই প্রথম ত্রিকোণমিতির ধারানা স্থাপত্যের মধ্যে নিয়ে আসেন, মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য গুলি ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই জ্যামিতির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যাবে।
এরপর মধ্যপ্রাচ্য থেকেই আবার ত্রিকোণমিতি ইউরোপ ফিরে আসে এবং রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ে তার আধুনিক রুপ পায়।
[আরো পড়ুন – শূন্যের ইতিহাস]
ত্রিকোণমিতির ছক
আগেই বলেছি, গ্রীক জ্যোতির্বিদ Hipparchus (127 খ্রীস্টপূর্বাব্দে) প্রথম ত্রিকোণমিতি function এর ছকটি প্রস্তুত করেন। তিনি বৃত্তের বৃত্তচাপের ধারণার সাহায্যে এই ছকটি তৈরি করে। এই গননাতে তিনি প্রতিক্ষেত্রে 7°30 করে গণনাটি করেন।
এরপর টলেমি (145 খ্রীস্টাব্দে) এই ছকের আরো সঠিক রূপ স্কলার কাছে নিয়ে আসেন এবং আরো সূক্ষ গণনার সাহায্য নেন তিনি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের সুবিধার্থে ইসলাম সমাজের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও ত্রিকোণমিতির দুটি function এর ছক প্রস্তুতে উঠে পড়ে লাগেন।
আরো পরে স্পেন থেকে ল্যাটিন ইউরোপেও এই ত্রিকোণমিতির ছকের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে।
Regiomontanus (1436-76) নামক জার্মান গণিতবিদ ও জ্যোতিবিজ্ঞানী প্রথম ছকটি প্রস্তুত করেন দশমিক মানের সাহায্যে প্রকাশ করা তথ্য থেকে জানা যায় বিভিন্ন ত্রিকোণমিতির function গুলির মধ্যে সম্পর্ক।
পরবর্তী সময়ে ফরাসী গণিতবিদ Albert Girard (1695 – 1632) প্রথম গণনার কাজে ‘sin’. ‘cos’ ও ‘tan’ functions গুলির সংক্ষিপ্ত নাম ব্যবহার করেছিলেন।
আরো পরে, আঠেরোশো শতকে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ লিওনহার্ড ইউলার (Leonhard Euler) তার জগৎখ্যাত ইউলার্স ফর্মুলার মাধ্যমে ত্রিকোণমিতিক functions দের মধ্যেকার সম্পর্ক স্থাপন করেন।
ত্রিকোণমিতির আদর্শ কোণের মান
ত্রিকোণমিতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিশ্চয়ই বোঝা গেল।
কিন্তু তার সাথে আরো একটা বিষয় বোঝা গেল কি যে আজকের আধুনিক সময়ে আমরা ত্রিকোণমিতির যে পরিচয় পাই তা কিন্তু আজকের সৃষ্টি নয়?
দশম / একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণির বইয়ে মাত্র কয়েকটি পাতায় লিখিত ‘সিদ্ধান্তে’ পৌঁছতে আমাদের হাজার হাজার বছর সাধনা করতে হয়েছিল।
বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগের অন্যান্য লেখাগুলি পড়ুন।
তথ্য সহয়তা –
- https://en.wikipedia.org/wiki/Jy%C4%81,_koti-jy%C4%81_and_utkrama-jy%C4%81
- https://sites.math.rutgers.edu/~cherlin/History/Papers2000/hunt.html
- http://exhibits.usu.edu/exhibits/show/turner/trig/trighist
- https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_trigonometry
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা