আগের সংখ্যায় ছিল তিনটি এমন আবিষ্কারের গল্প, যা দুর্ঘটনাচক্রে আবিষ্কার হয়েছিল।
[আরো পড়ুন – তিনটি আবিষ্কার যা সম্ভব হয়েছিল হঠাৎ ঘটা কিছু ঘটনার জন্যে]
এই সংখ্যায় আমরা ফিরে দেখবো এমন কিছু আবিষ্কার যার মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্য, কিন্তু আমরা আজ তাকে অন্য কাজে ব্যবহার করছি।
চেন শ (Chain Saw) : আমাদের দেশে খুব একটা দেখা না গেলেও অনেক সিনেমা বা ডিসকভারি চ্যানেলে এই যন্ত্রটিকে আপনারা দেখে থাকবেন। এর নাম চেন শ, গাছ কাটার অত্যাধুনিক যন্ত্র। আগে এটিকে হাতে চালানো হতো, এখন মোটর লাগিয়ে খুব দ্রুত কাঠ কাটা হয়। তবে এর আবিষ্কার কিন্তু এই কাজের জন্য হয়নি।
১৮৩০ সালে জার্মান অর্থোপেডিক ডক্টর বার্নার্ড হাইন রুগীদের হাড় কাটার জন্য এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। তখন যন্ত্রটি আরো ছোট ও হস্তচালিত ছিল। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার ব্যাপক হতে শুরু হয়, কারণ এটি খুব দ্রুত ভারী ও শক্ত বস্তুকে কাটতে পারতো।
[এই বিভাগ থেকে পড়ুন – বঙ্গদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী; সত্যেন্দ্র নাথ বসু]
ফ্রিসবি (frisbee): ছোটবেলায় মাঠে ফ্রিসবি কে না খেলেছে? বায়ুর চাপের ওপর ভিত্তি করে ওড়া এই ফ্রিসবি, বুশম্যানদের তৈরী বুমেরাং এর আধুনিক সংস্করণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়, ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে উইলিয়াম রাসেল ফ্রিসবি ছিলেন কানেকটিকাটের এক বেকারি কোম্পানির মালিক। তার কোম্পানিতে তৈরী হতো ফ্রিসবি পাই। তার মৃত্যুর পরেও তার কোম্পানি ব্যাপক ব্যবসা করতে থাকে। ১৯৫৬ সালে তার দৈনিক উৎপাদন ছিল ৮০০০০। এই পাই যে প্লেটে বিক্রি হতো তার ওপর চাপানো থাকতো ফ্রিসবি কথাটি।
[আরো পড়ুন – রেডিও থেকে মোবাইল ফোন; বিনোদনের ভোলবদল!]
ইয়েল ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের কাছে এই প্লেট টি ভীষণ আকর্ষণীয় লেগেছিলো। তাদের মধ্যে কেউ কখনো সেই ডিস্কটিকে হাওয়ায় ছুঁড়ে মারতেই সেটি খুব সুন্দর ভাবে ভাসতে থাকে। তখন এটি টিন দিয়ে তৈরী হতো। তাই যার দিকে যেত তাকে সাবধান করার জন্য চেঁচিয়ে বলতে হতো “ফ্রিসবি”। ধীরে ধীরে এই ডিস্কে পরিবর্তন আসে, সেফটির কারণে টিনের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়, এবং পরে বিশ্ব উড়ন্ত ডিস্ক সংগঠনও তৈরী হয় এই খেলাটির জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে।
বাবল র্যাপ (Bubble wrap): বাবল র্যাপ ফাটাতে কে কে ভালোবাসেন? আমি তো খুব মজা পাই। বিভিন্ন অনলাইন সংস্থার থেকে জিনিস কিনলে বা ফ্রিজ টিভি ইলেক্ট্রনিক বাড়িতে এলে তাকে সাবধানে মুড়ে আনতে যে পোশাক পরানো হয় সেটি এই বাবল র্যাপ। কিন্তু এই কাজের জন্য এর আবিষ্কার হয়নি। ১৯৫৭ সালে মার্ক চ্যাভেননেস ও আলফ্রেড ফিল্ডিং বাথরুমের পর্দাকে জুড়ে এটির আবিষ্কার করেন 3D ওয়ালপেপার হিসেবে। কিন্তু এর টেঁকসই না হওয়ায় তাদের আবিষ্কার ফলপ্রসূ হয়নি। পরে তারা এটিকে গ্রিনহাউস ইন্সুলেটর হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
১৯৮০ সালে আই বি এম কোম্পানি এই বস্তুটিকে ব্যবহার করে তাদের কম্পিউটার মডেল ১৪০১ এর প্যাকেজিং ডেলিভারির কাজে। খুব দ্রুত বিভিন্ন কোম্পানি এই আইডিয়াটি ধার নেয় এবং এই শতাব্দীর শুরুতে এটি বাড়ি – বাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। আজ বিশ্বজুড়ে বার্ষিক প্রায় সাড়ে চারশো মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে এই বস্তুটি।
লিস্টারিন: দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের সমস্যা? লিস্টারিন দিয়ে কুলকুচি করুন। কিন্তু মনে রাখবেন, এর আবিষ্কার হয়েছিল গনোরিয়া নামক রোগের নিরাময়ের জন্য।
১৮৮৮ সালে এর আবিষ্কার হয় সার্জিকাল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে। দ্রুত শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করতে এর ব্যবহার হতো. কিন্তু এর মৃদু ক্ষমতা এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে. তখন এটিকে শরীরের ওপর প্রয়োগ করা হতে থাকে গনোরিয়ার চিকিৎসায়। তাতেও এর সাইড এফেক্ট সমস্যা সৃষ্টি করে। অ্যান্টিসেপটিকের তীব্রতা বাড়িয়ে এটিকে মেঝে পরিষ্কারক হিসেবেও বিক্রির চেষ্টা চালানো হয়. তবে ১৯২০ তে যখন এটিকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের প্রতিকার হিসেবে পুনরায় বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করা হয়, অতি দ্রুত এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট: কালজয়ী বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আসলে কিন্তু একটি সার, গাছের মুখ্য বৃদ্ধি উপাদান হিসেবে তিনটি মৌলের নাম করা হয়; নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম (NPK), অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নাইট্রোজেনের সরবরাহকারী। ইউরিয়ার থেকে বেশি স্থায়ী ও পরিবহনে সুবিধার জন্য এর প্রয়োগ পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক। কিন্তু মানুষের চোখ অন্য দিকে। এর মধ্যে লুকিয়ে বসে আছে দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু যেগুলি যৌগ অবস্থায় সুস্থিত নয়, সুতরাং বানাও বোমা।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সাথে আরো কিছু বিস্ফোরক ও তেল মিশিয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরক আবিষ্কার করা হয়েছিল পাহাড়ে রাস্তা তৈরী বা খনি খননের কাজে। ধীরে ধীরে এই আবিষ্কার যুদ্ধক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আপনি কি এমন কিছু আবিষ্কারের গল্প জানেন, যেগুলি আবিষ্কার হয়েছিল অন্য কাজের কথা ভেবে আর আজ আমরা ব্যবহার করছি অন্য কোন কাজে?
নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানান আমাদের।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা