sundrobone-jolobayur-provab
প্রশ্ন-উত্তর

সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব


এই লেখাটি মূল আলোচনা নদীর মধ্য এবং নিম্নগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপ পর্বের অন্তর্গত। মূল আলোচনা এই লিঙ্ক থেকে পড়ুন – নদীর মধ্য এবং নিম্নগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপ


গঙ্গা পদ্মা ও মেঘনা হলো পৃথিবীর বৃহত্তম সক্রিয় ব-দ্বীপ অঞ্চল।

1989 সালে ভারতের সুন্দরবন অঞ্চল, ভারত সরকার দ্বারা Biosphere Reserve হিসেবে ঘোষণা হয়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলের ক্ষেত্রফল প্রায় 10000 বর্গ কিমি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে 4100 বর্গকিমি অবস্থিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই সুন্দরবন অঞ্চল আজ চরম বিপদের সম্মুখীন। প্রতিবছর এ প্রায় 3.14 মিমি হারে জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরবনের বহু দ্বীপের সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন লোহাচড়া, ঘোড়ামারা, নিউমুর সহ অনেক দ্বীপ আজ এই আশঙ্কার সম্মুখীন।

সুন্দরবন অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবগুলি হলো।

সমুদ্র জলতলের বৃদ্ধি

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ঘটিত কুমেরু হিমবাহের গলন সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এর ফলস্বরূপ সুন্দরবন অঞ্চলের সমুদ্রতলের বছরে প্রায় 3.3 মিমি করে বাড়ছে যা পৃথিবীর গড় জল তল বৃদ্ধির থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। 1930 সাল থেকে সুন্দরবনে প্রায় 250 বর্গ কিমি অঞ্চল সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে।

উপকূল অঞ্চলে ক্ষয়ের মাত্রা বৃদ্ধি

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও পরিমাণ দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র তরঙ্গের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ক্ষয় শক্তি ও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল সাইক্লোনের জোয়ারের ফলে বার বার উপকূল অঞ্চলে বন্যা হয়। ঢেউয়ের আঘাতে উপকূলে ক্ষয়ের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূল ক্ষয়ের এই ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে উপকূলবর্তী অনেক গ্রাম সমুদ্রের গ্রাসের ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ফলে বহু মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।

খাড়ির বিস্তৃতিকরন

সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধির কারণে নদীতে জোয়ার ভাটার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মোহনা অঞ্চলে খাড়ি গুলির মুখ আরো চওড়া হচ্ছে এবং সমুদ্রের লবণাক্ত জল উপকূলবর্তী চাষের জমিতে ঢুকে চাষের জমি অনুর্বর করে তুলছে।

ম্যানগ্রোভের বিনাশ

সুন্দরবন অঞ্চলের উপকূল অঞ্চল সারাবছর ডুবে থাকার ফলে উপকূলবর্তী উদ্ভিদ ব্যাপক হতে বিনাশ হচ্ছে। নতুন উদ্ভিদ না জন্মাতে পারায় বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।

উষ্ণতার বৃদ্ধি

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা উপকূলবর্তী উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এমনকি বিনাশ ডেকে আনছে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন সাইক্লোন, বন্যা ইত্যাদির তীব্রতা ও পরিমাণ দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপকূল অঞ্চলে বিপর্যয়, চাষের জমি ক্ষতি, দ্বীপের বিনাশ এবং প্রাণহানির সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুন্দরবনে ধীরে ধীরে থাবা বসাচ্ছে সমুদ্র [সৌজন্যে – TheThirdPole]

দ্বীপের বিনাশ

সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনের লোহাচড়া, ঘোড়ামারা ও নিউমুর দ্বীপগুলো খুব গভীর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে এই দ্বীপ গুলোর অবস্থা –

লোহাচড়া: হুগলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন সমুদ্র তলের উচ্চতা বৃদ্ধি, জোয়ার, সাইক্লোন ও প্লাবনের ফলে এই দ্বীপটি 1980 সালে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে যায়। কিন্তু 2009 সালে দ্বীপটি পুনরায় ভেসে ওঠে। বিভিন্ন উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে যে এই দ্বীপটি তীব্র উপকূল ক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে বছরের বেশিরভাগ সময় দ্বীপটি জলে নিমজ্জিত থাকে।

ঘোড়ামারা: কলকাতা থেকে প্রায় 150 কিমি দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি আজ বেশিরভাগ নিমজ্জিত। সঞ্চয় অপেক্ষা ক্ষয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই দ্বীপগুলির বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাথে বছর বছর প্রবল সাইক্লোন এর দাপট এই দ্বীপে অবস্থিত লক্ষ্মীনারায়ণপুর, খাসিমারা ইত্যাদি গ্রামগুলি সম্পূর্ণ জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।

নিউমুর: এই দ্বীপটি বাংলাদেশে অবস্থিত। এই দ্বীপটি শেখ মুজিব বা দক্ষিণ তালপট্টি নামেও পরিচিত। 1970 সালে ভোলা নামক সাইক্লোনের এর প্রভাবে দ্বীপটি ভেসে ওঠে কিন্তু আবার নিমজ্জিত হয়। কিন্তু প্রতি বছর বন্যার প্রভাবে দ্বীপটির ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়ার এর উচ্চতা কোনোদিন সমুদ্রতল থেকে উপরে উঠতে পারেনি। 1951 সালে যেখানে দ্বীপটির আয়তন ছিল 40.11 বর্গ কিমি সেখানে বর্তমানে দ্বীপের আয়তন 4.93 বর্গ কিমি। দ্বীপটি বর্তমানে জনহীন। তবে দ্বীপটিতে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকায় দ্বীপটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –