জীবন বিজ্ঞান – দশম শ্রেণি – পরিবেশ ও মানব জনসমষ্টি [Poribesh o Manob]
মানব জনসমষ্টি বা পপুলেশন (Population) কথাটি ল্যাটিন শব্দ ‘পপুলাস’ (Populus) থেকে এসেছে। নির্দিষ্ট কোনো ভৌগলিক অঞ্চলে বসবাসকারী একই প্রজাতিভুক্ত জীবগোষ্ঠীকে বলা হয় পপুলেশন।
ঘনত্ব (Density)
নির্দিষ্ট কোনো ভৌগলিক অঞ্চলের প্রতি একক ক্ষেত্র বা আয়তনে যে সংখ্যায় জীব উপস্থিত থাকে, তাকে ঘনত্ব বলে।
জন্মহার (Natality)
প্রতি একক সময়ে জননের মাধ্যমে নতুন অপত্য জীবের সৃষ্টি এবং তাদের পপুলেশনে যুক্ত হওয়ার ঘটনাকে জন্মহার বা Natality বলে
জন্মহারের সূত্র
N = nD/t [এখানে N= জন্মহার, nD= অপত্য জীবের মোট সংখ্যা, t= সময়]
মৃত্যুহার (Mortality)
প্রতি একক পপুলেশনে যে সংখ্যায় জীবের মৃত্যু ঘটে সেই হারকে ওই পপুলেশনের মৃত্যুহার বা Mortality বলে।
M = mD/t [এখানে M = মৃত্যুহার, mD = মৃতের মোট সংখ্যা, t = সময়]
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা
অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সৃষ্ট বেশ কয়েকটি সমস্যা
a) প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং তার হ্রাসপ্রাপ্তি
প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বনজ সম্পদ, জল সম্পদ, কৃষিক্ষেত্র ইত্যাদির পরিমাণ অফুরন্ত না হওয়ায় অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
b) অরণ্য ধ্বংস ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়
বাসস্থান, শিল্প কারখানা, কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতির প্রয়োজনে যথেচ্ছভাবে অরণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে বন্যপ্রাণীরা তাদের বাসস্থান ও খাদ্যসংস্থান হারাচ্ছে।
c) কৃষিজমির হ্রাস
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাসস্থানের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার ফলে কৃষিজমির ওপর আবাসন, কলকারখানা গড়ে উঠছে।
d) মিষ্টি জলের অভাব
পৃথিবীর সমগ্র জলের মাত্র 1% হল পানযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য জল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আবাসন নির্মাণের জন্য বহুক্ষেত্রে পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি ভরাট করা হয়। ফলে জল সংকট দেখা যাচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
e) বায়ুমন্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন
শিল্প, কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতি জায়গায় বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গ্রীন হাউস গ্যাসগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপন্ন হচ্ছে।
f) বায়ু ও জলদূষণ
অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ু এবং জল অধিক মাত্রায় দূষিত হচ্ছে।
দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান
পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য
পরিবেশ দূষিত হলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কুপ্রভাব ফেলে। যেমন বায়ুদূষণের ফলে হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি এবং জলদূষণের ফলে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়।
হাঁপানি বা অ্যাজমা
এটি একটি ফুসফুস ঘটিত রোগ। এই রোগে মানুষের স্বাস্থ্যের দীর্ঘকালীন অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং বায়ু চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
লক্ষণ
এই রোগে কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা, দমবন্ধ হয়ে আসা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
ব্রংকাইটিস
এটি একটি শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এই রোগে ফুসফুসের ব্রংকাস ও ব্রংকিওলগুলির প্রদাহ ঘটে। ব্রংকাইটিস দুই প্রকারের হয়, তীব্র এবং দীর্ঘকালীন ব্রংকাইটিস।
লক্ষণ
এই রোগের ফলে প্রবল কাশি, ও তার সাথে কফ নির্গমন, দমবন্ধ ভাব, নাক ও সাইনাস অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
ক্যান্সার
এই রোগে দেহের কলাকোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হতে শুরু হয় এবং মেটাস্ট্যাসিস প্রক্রিয়ায় সমগ্র দেহে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য কোশের ক্ষতিসাধন করে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোশগুলি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বেঁচে থেকে বিভাজিত হয়। ক্যান্সার সাধারণত বিভিন্ন জিন ঘটিত কারণে ঘটে থাকে। তবে পরিবেশের বেশ কিছু ক্ষতিকারক দূষকের উপস্থিতিও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। পরিবেশে উপস্থিত যে সমস্ত দূষক পদার্থ মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে তাদের কারসিনোজেন বলে।
লক্ষণ
ক্যান্সার যেহেতু বিভিন্ন কোশ বা অঙ্গে ঘটে, তাই তাদের লক্ষণ বিভিন্ন কোশ বা অঙ্গ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে ক্যান্সারের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হল বিভিন্ন গ্ল্যান্ড ও লসিকা গ্রন্থির স্ফীতি, শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি, গলায় ঘা এবং কখনো কখনো অত্যধিক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
সাধারণত বায়োপসি দ্বারা ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত কোশগুলির আকার ও আকৃতি সাধারণ কোশের থেকে ভিন্ন হয় এবং তারা অধিক সংখ্যায় উপস্থিত থাকে।
পরবর্তী পর্ব – জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X-Lsc-5c