ভৌতবিজ্ঞান – দশম শ্রেনি – অধ্যায়: পর্যায় সারণি (প্রথম পর্ব)
পুরাকালে ভারতে ও গ্রীসে দার্শনিক চিন্তাভাবনার উত্থান ঘটেছিলো। মানুষের নিজের অস্তিত্বের সম্বন্ধে, নিজের উৎসের সম্বন্ধে কৌতূহল বা প্রশ্নের উত্থান সেই দার্শনিক আলোচনার মধ্য দিয়েই। আমরা কি দিয়ে তৈরী, আশেপাশে যে বর্ণ, গন্ধ অনুভব করছি, তা কেন এমন হলো; কোথা থেকে এলো; এসব প্রশ্ন বরাবরই মানুষকে উৎসুক করে রেখেছে।
বিশেষ জ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষ ধীরে ধীরে আজ অনেকটাই তার সন্ধান করে ফেলেছে। কিভাবে তা হল, এর কিছুটা অংশ “মঞ্চে নাচেন পঞ্চভূত” নামক প্রবন্ধে আমরা উল্লেখ করেছি। এখন চলছে আরো গভীরে যাওয়ার পালা। চলো, ইতিহাসের হাত ধরে সেই গভীরে যাওয়ার আনন্দ অনুভব করি।
পর্যায় সারণির গোড়ার কথা
“মঞ্চে নাচেন পঞ্চভূত” লেখাটিতে উল্লেখ করা ছিল যে মানুষ প্রথমে আগুন, হাওয়া, জল, মাটিকেই পৃথিবীর মূল উপাদান হিসেবে চিনেছিল। পরবর্তীকালে দেখা গেলো যে এগুলি মৌল নয়, বরং শক্তি এবং গ্যাসীয়, তরল ও কঠিন পদার্থের প্রতিভূ।
অষ্টাদশ শতকের শেষার্দ্ধে ফরাসী রাষ্ট্রতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী বৈজ্ঞানিক আন্তোয়ান ল্যাভয়সিয়ার বায়ুকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনে ভাগ করে দেখান যে বায়ু একটি মৌল নয়, মিশ্রণ। জলকে অ্যাসিড মিশিয়ে বিদ্যুৎ পাঠালে জল ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরী হয়ে যায়। মানুষের মনে হতে থাকে “দেখা যাক আর কি কি মৌল প্রকৃতিতে বর্তমান।” ক্রমে 1809 আসতে আসতে 36টি মৌল খুঁজে পাওয়া গেল।
ডালটন সর্বপ্রথম এই মৌলগুলির চিহ্ন বানান, পরে বার্জেলিয়াস সেটিকে সংশোধন করে ল্যাটিন ও ইংলিশ নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে ল্যাটিন হরফে চিহ্ন চালু করেন।
ডোবেরেইনারের ত্রয়ীর সূত্র :
কিন্তু এইসব মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম বিশৃঙ্খল ভাবে নথিভুক্ত করা হতো। বৈজ্ঞানিকদের কাজের ক্ষেত্রে সেই তথ্য পরীক্ষা করে ব্যবহার করা দুষ্কর ছিল। কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা একাধিক মৌলর মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন।
[আরো পড়ুন – অধ্যায় আলো | লেন্সের ধারণা]
1829 সালে জোহান ডোবেরেইনার এই মিলগুলিকে লক্ষ্য করে প্রথম পর্যায় সারণি বানাবার প্রয়াস করেন। তিনি তাসের মতো কার্ড তৈরি করলেন, তাতে তিনটি করে মৌল রাখলেন। এমন ভাবে রাখলেন যে প্রথম মৌল ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের গড় তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের সাথে সমান হবে। এগুলোকে বলা হলো ট্রায়াড বা ত্রয়ী।
যেমন (লিথিয়াম) Li এর পারমাণবিক ভর 7, (পটাশিয়াম) K এর পারমাণবিক ভর 39। 7 ও 39 এর গড় 46/2 = 23। (সোডিয়াম) Na-র পারমাণবিক ভর 23। আশ্চর্য্যজনকভাবে Li, Na ও K; তিনটি মৌলই ক্ষার তৈরী করতে সক্ষম।
ঠিক তেমনই (ক্লোরিন) Cl এর পারমাণবিক ভর 35, (আয়োডিন) I এর পারমাণবিক ভর 127। 127 ও 35 এর গড় 162/2 = 81। (ব্রোমিন) Br-র পারমাণবিক ভর 80, যা 81-র কাছাকাছি। তিনটি মৌলই H-এর সাথে যুক্ত হয়ে হাইড্রাসিড তৈরী করে।
ট্রায়াড বা ত্রয়ীর নাম | প্রথম মৌল | দ্বিতীয় মৌল | তৃতীয় মৌল |
ক্ষার জাতীয় | লিথিয়াম (Li, 6.94) | সোডিয়াম (Na, 23) | পটাশিয়াম (K, 39) |
অ্যাসিড জাতীয় | সালফার (S, 32) | সেলেনিয়াম (Se, 80) | টেলুরিয়াম (Te, 130) |
লবণ জাতীয় | ক্লোরিন (Cl, 35) | ব্রোমিন (Br, 80) | আয়োডিন (I, 127) |
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
কিন্তু এই হিসাব সব মৌলের সাথে খাটে না।
যেমন, (হাইড্রোজেন) H এর পারমাণবিক ভর 1, (সোডিয়াম) Na এর পারমাণবিক ভর 23। 1 ও 23 এর গড় 24/2 = 12। Li-র পারমাণবিক ভর 7। আবার (ফ্লুরিন) F এর পারমাণবিক ভর 19, Br এর পারমাণবিক ভর 80। 19 ও 80 এর গড় 99/2 = 49.5। Cl-র পারমাণবিক ভর 35.5।
সুতরাং, ডোবেরেইনারের ট্রায়াড-কে পরবর্তী সময়ে বাতিল করা হয়।
নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্র:
নিউল্যান্ড সংগীতপ্রেমী মানুষ ছিলেন, 7 সংখ্যাটি ছিল তাঁর খুব মনমতো। তিনি খুব বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলেন যে প্রকৃতির সব ক্ষেত্রে 7 সংখ্যাটি বিদ্যমান। 7 টি স্বর, বর্ণ, দিন। তিনি আরো দেখলেন, ডোবেরেইনারের ত্রয়ীগুলিকে পাশাপাশি রাখলে এখানেও 7 টি মৌল পরে পরে মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়। তিনি এটি লক্ষ্য করে অষ্টক সূত্র তৈরী করলেন।
“পারমাণবিক ভরের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তার পরবর্তী অষ্টম মৌলে পুনরাবৃত্ত হয়।”
পরবর্তী পর্ব → মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান |
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_PSc-8.1A