শ্রেণি – দশম | বিষয়: গণিত । অধ্যায়: একচলবিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণ (তৃতীয় পর্ব)
আগের দুটি পর্বে আমরা দ্বিঘাত সমীকরণের ধারণা ও সেগুলি সমাধানের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এই পর্বে আমরা, কয়েকটি বিশেষ ধরণের দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান খোজার চেষ্টা করবো।
প্রথম ধরণ (Type One)
কিছু কিছু সমাধানের ক্ষেত্রে বৃহত্তর রাশিকে একঘাত বিশিষ্ট কোনো চলরাশি ধরে নেওয়া হলে সমীকরণ সমাধানে সুবিধা হয়।
ধরি,
সুতরাং সমীকরণটি থেকে পাই,
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
হয়,
⇒
সমীকরণে P এর মান বসিয়ে পাই,
⇒
⇒
⇒
অথবা,
⇒
⇒
সমীকরণে P এর মান বসিয়ে পাই,
⇒
⇒
⇒
দ্বিতীয় ধরণ (Type Two)
কিছু কিছু অঙ্কের ক্ষেত্রে দেখা যায় সরলীকরন সাধারন নিয়মে করতে গেলে অনেকটা সময় চলে যায়। তার জন্যে কিছু tricks অর্থাৎ সেইরূপ অঙ্ক চিনেই সহজভাবে সরল করার কিছু পদ্ধতি জানা প্রয়োজন।
, – (a + b)
ডান পক্ষে তিনটি রাশি একসাথে যোগ না করে কে বাম পক্ষে এনে সরল করে পাই-
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
হয়,
⇒
অথবা,
⇒
আরো একটি উদাহরণ কষে দেখা যাক।
, x ≠ 0, 1, 2, 3, 4
প্রথমে লসাগু করে এবং তার পরে সরল করে এই সমাধান যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাই, এই সকল সমাধানের ক্ষেত্রে একটি সহজ উপায় নিচে বর্ণনা করা হল।
লক্ষ্য করে দেখি; কে অন্যভাবে প্রকাশ করা যায় কিনা।
অর্থাৎ যার হরে ছোট মান আছে তার থেকে অপরকে বিয়োগ করা যায়।
সুতরাং, উপরোক্ত প্রশ্ন থেকে আমরা পাই –
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
হয়,
⇒
অথবা,
⇒
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় ধরণ (Type two)
এই ধরণের অঙ্কে আমরা এবার ভাষার অঙ্ক থেকে সমীকরণ গঠন করে সমাধান করার পদ্ধতি দেখবো।
প্রথম উদাহরণঃ একটি ত্রিভুজের ভূমি তার উচ্চতার দ্বিগুণ অপেক্ষা 18m বেশি। ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল 360 বর্গমিটার হলে, তার উচ্চতা নির্ণয় কর।
মাথায় রাখতে হবে যে, প্রশ্নে যার মান নির্ণয় করতে দেওয়া হবে তাকেই চলরাশি ধরে নিতে হবে (যেমন, x বা t ইত্যাদি)।
ধরি, ত্রিভুজের উচ্চতা x মিটার।
প্রশ্নানুসারে ভূমি, উচ্চতার দ্বিগুণ অপেক্ষা 18 মিটার বেশি অর্থাৎ ভূমি = (2x + 18) মিটার।
আমরা জানি, ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হল ½ × ভূমি × উচ্চতা।
সুতরাং,
⇒
⇒
এই সমীকরণে শ্রীধর আচার্যের সূত্র প্রয়োগ করে পাই –
x =
=
=
=
ধনাত্মক চিহ্ন ব্যাবহার করে পাইঃ
x =
=
=
এবং, ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যাবহার করে পাইঃ
x =
=
=
যেহেতু, উচ্চতা ঋণাত্মক হতে পারে না, তাই ত্রিভুজটির উচ্চতা 15 মিটার।
[আরো পড়ুন – শ্রীধর আচার্যের সূত্র ও তার প্রয়োগ]
দ্বিতীয় উদাহরণঃ দুটি স্থানের দূরত্ব 200 কিমি ; একস্থান হতে অপর স্থানে মোটর গাড়িতে যেতে যে সময় লাগে, জিপ গাড়িতে যেতে তার চেয়ে 2 ঘণ্টা সময় কম লাগে। মোটর গাড়ি অপেক্ষা জিপ গাড়ীর গতিবেগ ঘণ্টায় 5 কিমি বেশি হলে, মোটর গাড়ির গতিবেগ হিসাব কর।
ধরা যাক মোটর গাড়ির গতিবেগ x কিমি/ঘন্টা।
প্রশ্নানুসারে জিপগাড়ির গতিবেগ (x + 5) কিমি / ঘণ্টা।
আমরা জানি, সময় = দূরত্ব / গতিবেগ, এক্ষেত্রে দূরত্ব 200 কিমি।
200 কিমি যেতে মোটর গাড়ির সময় লাগে ঘণ্টা।
200 কিমি যেতে জিপগাড়ির সময় লাগে ঘণ্টা।
প্রশ্নানুসারে, মোটর গাড়ি জিপগাড়ি অপেক্ষা 2 ঘণ্টা বেশি সময় নেয়, অর্থাৎ –
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
এক্ষেত্রে দুটি মান হতে পারে, হয় x = 25 অথবা x = – 5। প্রশ্নানুযায়ী গতিবেগ ধনাত্মক। সুতরাং মোটরগাড়ির গতিবেগ 20 কিমি / ঘণ্টা।
অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন
তৃতীয় উদাহরণঃ পর্ণা ও পীযুষ কোন একটি কাজ 4 দিনে সম্পন্ন করে। আলাদাভাবে একা কাজ করলে পর্ণার যে সময় লাগবে, পীযূষের তার চেয়ে 6 দিন বেশি সময় লাগবে । পর্ণা একাকী কতদিনে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে হিসাব কর।
ধরি, সমগ্র কাজের পরিমাণ 1 এবং পর্ণা সমগ্র কাজ শেষ করে x দিনে। সুতরাং পীযূষ সমগ্র কাজ শেষ করে (x + 6) দিনে।
পর্ণা x দিনে করে 1 অংশ কাজ
সুতরাং, পর্ণা 1 দিনে করে 1/x অংশ কাজ
অনুরূপভাবে,
পীযুষ 1 দিনে করে অংশ কাজ করে।
দুজনে একত্রিত ভাবে 1 দিনে কাজ করে অংশ কাজ।
সুতরাং, সমগ্র 1 অংশ কাজ তারা করে দিনে।
প্রশ্নানুসারে,
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
⇒
এক্ষেত্রে দুটি মান হতে পারে, হয় x = -4 অথবা x = – 6 ।
আমরা জানি, দিন সংখ্যা কোনভাবেই ঋণাত্মক হতে পারে না, তাই আমরা বলতে পারি যে পর্ণা একাকী 6 দিনে কাজটি সম্পন্ন করবে।
আমরা আশা করছি, দ্বিঘাত সমীকরণের তিনটি পর্ব থেকে তোমাদের দ্বিঘাত সমীকরণ এবং তার প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। দ্বিঘাত সমীকরণের অঙ্কে মাধ্যমিকে ফুল মার্কস পাওয়া কিন্তু এমনকিছু কঠিন কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন ভালোভাবে প্রশ্নগুলি বোঝা ও সেগুলি সঠিকভাবে অভ্যাস করা।