শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায়: চলতড়িৎ (দ্বিতীয় পর্ব)
আগের পর্বে আমরা জেনেছি, যে কোনো পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ ও উহার প্রবাহমাত্রার অনুপাতকেই বলে রোধ।
এর সাথে আরো জেনেছি পরিবাহীর রোধ কেবল ঐ পরিবাহীর উভয় প্রান্তের বিভব প্রভেদ বা প্রবাহমাত্রার উপরেই নির্ভর করে না। পরিবাহীর দৈর্ঘ্য (l) প্রস্থচ্ছেদ (A) ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপরেও নির্ভর করে।
এই অংশে আমরা রোধের নিয়ামক এবং রোধাঙ্ক সম্পর্কে জানবো।
রোধের নিয়ামকগুলি হল-
দৈর্ঘ্য (l) – কোনো পরিবাহীর রোধ উহার দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, অর্থাৎ দৈর্ঘ্য বাড়লে পরিবাহীর রোধ বাড়ে এবং দৈর্ঘ্য কমলে রোধ কমে।
সুতরাং একে গাণিতিক রূপ এই ভাবে প্রকাশ করা যায় – R ∝ l
প্রস্থচ্ছেদ (A) – কোনো পরিবাহীর রোধ উহার প্রস্থচ্ছেদের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতিক। অর্থাৎ প্রস্থচ্ছেদ বাড়লে রোধ কমে এবং প্রস্থচ্ছেদ কমলে রোধ বাড়ে। সুতরাং এর গাণিতিক রূপ ∝
এখন যৌগিক ভেদের সূত্রানুসারে দুটি সম্পর্ককে একত্রিত করে পাই –
∝
বা, = ρ [এক্ষেত্রে ρ একটি ধ্রুবক]
উপরোক্ত সম্পর্কে ধ্রুবক ρ (roh)-কে বলা হয় রোধাঙ্ক।
এখন যদি জানতে হয় রোধাঙ্ক কাকে বলে? তাহলে উপরের সম্পর্কটি একটু সাজিয়ে নিলেই তা জানা যাবে।
আমরা জানি, = ρ
বা, ρ =
এখন প্রস্থচ্ছেদ (A) এবং দৈর্ঘ্য (l) উভয়ের মান যদি একক হয় বা এক হয় তবে বলা যায়: ρ = R
সুতরাং বলা যেতে পারে, একক দৈর্ঘ্য এবং একক প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট কোনো পরিবাহীর রোধকেই ঐ পরিবাহী পদার্থের রোধাঙ্ক বলা হয়।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
ব্যাপারটা আরেকটু বিশদে বুঝতে গেলে একটা উদাহরণ দেওয়া দরকার।
ধরা যাক, বলা হল তামার রোধাঙ্ক ওহম সেমি বলতে কি বোঝ?
এক্ষেত্রে ধরা যাক AB হল ঐ তামার তার যার দৈর্ঘ্য AB = 1 সেমি, এবং এই তারটির প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল 1 সেমি2 সুতরাং আমরা বলতে পারি 1 সেমি দৈর্ঘ্য এবং 1 সেমি2 ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট তামার তারটির রোধ ওহম। যা হল তামার রোধাঙ্কের মান।
এখন রোধাঙ্ক সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা রোধাঙ্কের CGS এককটি জেনে ফেলেছি ইতিমধ্যেই। যেটা হল ওহম সেমি (Ω cm) সুতরাং S.I. এককটি হবে ওহম = মিটার (Ω m)। এই একক তৈরি হল কিভাবে তা জানতে গেলে রোধাঙ্কের মাত্রা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
রোধাঙ্কের মাত্রা বিশ্লেষণ
রোধাঙ্কের গানিতিক রূপটি আমরা ‘a’ চিহ্নিত সম্পর্কে উল্লেখ করেছি সেটা হল: ρ =
এখন ক্ষেত্রফল মাত্রা হল দৈর্ঘ্যের মাত্রা × দৈর্ঘ্যের মাত্রা = দৈর্ঘ্যের মাত্রা2
মনে রাখতে হবে রোধাঙ্কের C. G. S একক হলে উক্ত সম্পর্কের ডান দিকে রোধ ও দৈর্ঘ্য উভয়েই CGS একক। আর রোধাঙ্কের S.I এককের ক্ষেত্রে উভয়েই SI একক বসবে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
আরো একটি বিশেষ ব্যপার খেয়াল রাখা দরকার।
কোন পরিবাহীর পদার্থের প্রকৃতিই পরিবাহীর রোধের ভিন্নতার কারণ। যেমন – প্লাটিনাম, সোনা, রূপা, তামা, লোহা ইত্যাদি ধাতুগুলির রোধ ক্রম অনুসারে বাড়তে থাকে।
আবার ধাতব পরিবাহীর ক্ষেত্রে, রোধ – উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
আমরা লক্ষ্য করে থাকবো যে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালালেই তা গরম হয়ে যায়। যেমন বাল্ব জ্বালানোর পর সেই বাল্বের গায়ে হাত দিলে তা গরম বোধ হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ পরিবহনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানী জুল তার বিখ্যাত তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত সুত্রের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
আগামী পর্ব → বিজ্ঞানী জুলের সূত্রের বিস্তারিত আলোচনা।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_PSc_6-b