nun-kobitar-bishode-alocona
Class-11

নুন কবিতার বিশদে আলোচনা

বাংলাএকাদশ শ্রেণি – নুন

এর আগে নুন কবিতার বিষয় সংক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা নুন কবিতাটি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করবো।

কথায় বলে – পেটে খেলে, তবে পিঠে সয়। আমরা নিত্যদিন যে কাজ করি, খাটা-খাটুনি করি, খাদ্য সংস্থানের আশায় দিনরাত ছুটে মরি, এ সবই সম্ভব হয় শক্তির জন্য আর সেই শক্তিই আমরা পাই খাবার থেকে।

এ তো খুবই জৈবিক সত্য।

খাবার না পেলে মানুষ কেন পৃথিবীর আদিতম নীল তিমিটিও মরে যেতো। তাই আমরা খাদ্যকে একটা প্রাথমিক চাহিদা হিসেবে ধরে নিয়েছি। খাবারটি চাই, তার সঙ্গে চাই মাথার উপর ছাদ আর পরনের কাপড়। ইংরেজিতে একে বলে ‘বেসিক নিড’।

কিন্তু প্রশ্ন হল, খাবার মিলবে কোথায়?

এই প্রকৃতিতেই। প্রকৃতিই শেষ কথা, সেই সৃষ্টি করেছে আর সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার খাবারও সেই জোগান দেবে। কিন্তু পাবো কীভাবে? উত্তর হল লড়াই।

এখানেই মনে পড়বে বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী ডারউইনের অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম বা জীবনসংগ্রামের তত্ত্বের কথা। খুব সুন্দর একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন ডারউইন। বলেছিলেন যে, পৃথিবীতে দেখা যায় একটা হাতির বছরে দুই থেকে তিনটি শিশু জন্মায়। এখন আনুমানিকভাবে হাতির আবির্ভাব ঘটেছে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে আর একটা হাতি মোটামুটিভাবে একটা হাতি ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ফলে জটিল অঙ্কের হিসাব করলে আশা করি আন্দাজ পাবে হাতির আবির্ভাবের কাল থেকে এখন পর্যন্ত আনুপাতিক হারে বংশবৃদ্ধি ঘটলে কত সংখ্যক হাতি থাকতো আজকের পৃথিবীতে। কিন্তু তা তো নেই। তা থাকবেও না। প্রকৃতির মতো এক কড়া মাস্টার সব ছাত্রকে পাশ করান না, যার যোগ্যতা আছে সেই কেবল পাশ করে, সেই কেবল এই সংগ্রামে ‘টিকে’ যায়। হ্যাঁ টিকে যায়, বেঁচে থাকা আর টিকে থাকার মধ্যে যাপনগত একটা বিস্তর পার্থক্য আছে। আর এখানেই আমাদের আলোচ্য ‘নুন’ কবিতার প্রসঙ্গে এসে পড়বে।


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

এতক্ষণ জীববিজ্ঞানের কথা বলে তোমাদের বোধহয় ঘাবড়ে দিয়েছি। আসলে এই কবিতা এক বৃহত্তর অর্থ আমাদের সামনে তুলে ধরে যার মূলে রয়েছে আমাদের জৈবিক চাহিদাগুলো। ‘নুন’ কবিতায় আছে এক নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এক পুরুষের কথা। তার পরিবারে সেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার এক ছেলেও আছে। সেই পরিবারেরই নিত্যদিনের জীবন কীভাবে চলে তারই আখ্যান এই কবিতা।

পুরো কবিতাটিই সেই পুরুষের বয়ানে লেখা। যে প্রাথমিক চাহিদার কথা বলছিলাম তার সংজ্ঞা তো একেক মানুষের কাছে একেকরকম হয়, তার মাত্রাও একেকরকম হয়। সেই অনুযায়ী তারা তাদের জীবনকে সাজিয়ে নেয়। কবিতার প্রথমেই সেই নিম্নবিত্ত পুরুষের কথা শুনি আমরা –

‘আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে?
আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাত-কাপড়ে।’

এখন এই অল্পে খুশি থাকার তাৎপর্যটা ঠিক কী?

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘bloody game’। বাংলা করলে দাঁড়ায় রক্তাক্ত খেলা। এই অল্পে খুশির থাকার পিছনে রয়েছে হাজার হাজার বছরের রক্তাক্ত খেলা। পৃথিবীর রণ-রক্ত-সফলতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় প্রাণের আবির্ভাবের সময় থেকেই প্রাণীদের মধ্যে যুদ্ধ ছিল, মানুষের মধ্যে যুদ্ধ ছিল। যুদ্ধের কারণ মূলত একটাই আধিপত্য বিস্তার।

কেন এই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা?

কারণ প্রাণের আবির্ভাবের শুরু থেকেই প্রকৃতি আমাদের জিনের মধ্যে লিখে রেখেছে যে এই প্রকৃতির সম্পদ সীমিত। তাই যে সবথেকে বেশি যোগ্য, সেই পাবে এই প্রকৃতির সম্পদের অধিকার। এই সম্পদের মধ্যে খাদ্যও রয়েছে। বেঁচে থাকতে হলে খাদ্য দরকার, খাদ্যের ভাণ্ডার তাই নিজের দখলে রাখার এক রক্তাক্ত খেলার ইতিহাস আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি। যে মানুষ খেতে পায়নি, সে অনাহারে মারা গেছে। খাদ্যের ভাণ্ডারও সীমিত, আর তাই কোথাও কোথাও অভাব ঘটে।

কিন্তু সমাজে কর্তৃত্ব করে যারা তারা সম্পদের ভান্ডারও নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখে। তাই সম্পদের অসম বণ্টনের ফলে দারিদ্র্য দেখা দেয়। এই দারিদ্র্যের মধ্যে বড়ো হয়ে ওঠা একটা মানুষ যখন অল্পে খুশি থাকতে চায়, তখন বুঝে নিতে হয় সেটা তার বাধ্য-বাধকতা। তাকে সেভাবেই থাকতে হবে, নচেৎ নিজের সামর্থ্যের সঙ্গে সাধ্যের সঙ্গে সাধের ইচ্ছার মিল ঘটবে না। নিম্নবিত্ত মানুষেরা জন্ম থেকেই দেখে আসে সমাজের মানী-গুণী লোকেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং অর্থের গুমোর। তারা জানে কোনো ম্যাজিক না ঘটলে সেই উচ্চতায় তারা কোনোদিনই পৌঁছাতে পারবে না।

তাই কবিতার ঐ পুরুষটির বয়ানে বলা কথা ‘আমরা তো অল্পে খুশি’ আসলে অল্পে খুশি থাকার চেষ্টা।

স্বতঃস্ফূর্তভাবে অল্পে খুশি থাকে না তারা। জীবনের প্রাথমিক চাহিদাগুলিই যেখানে পূরণ হয় না, সেখানে অল্পে খুশি থাকা সম্ভব নয়। তবে তারা মনে করে এর জন্য দুঃখ করে লাভ নেই। এই জীবনকেই তারা সকলে নিয়তির অমোঘ নিয়মের মতো মেনে নিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে তারা এইভাবেই সমাজের উচ্চবিত্তের আধিপত্য এবং নিম্নবিত্তের হতাশাকে নিয়ম বলেই জেনে এসেছে। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় না তাদের মুখে। সাধারণ ভাত-কাপড়েই তাদের দিন চলে যায়, আর দিন চলে যায় বলেই অতিরিক্ত কিছু পাবার আশা করে না তারা।

সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে জীবন চালানোর জন্য তাদের জন্য বরাদ্দ নেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বরাদ্দ নেই শিক্ষা, নেই সামান্য খাবারের নিশ্চয়তাও। তারপরেও সুখী থাকার মিথ্যে অভিনয় করে তারা নিজের মনকে প্রবোধ দেয়। এখানে কবিতার সেই পুরুষটি সমগ্র নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। দরিদ্র হয়ে জন্মানোটাই তাদের কাছে এক অপরাধ।

আজও ভারতের বুকে বহু শিশু মাথায় হাজার হাজার ঋণের বোঝা নিয়ে নতুন পৃথিবীর আলো দেখে, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র তাদের না দেবে সুরক্ষা, নিরাপত্তা, না খাদ্যের নিশ্চয়তা, না বাসস্থানের নিশ্চয়তা।

তবু খাতায় কলমে তারা নাগরিক সেই রাষ্ট্রেরই। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও ভারতের বুকে আজও ৬ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ প্রবল দারিদ্র্যপীড়িত এবং বাকি লোকসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষের কোনোক্রমে দিন গুজরান হয় ‘সাধারণ ভাত-কাপড়ে’। অসুখ হলে চিকিৎসার জন্য তাদের মাথার উপর বেড়ে চলে ঋণের বোঝা। একটা ঋণ মেটাতে, আরেকটা ঋণ, তারপর আরেকটা; এমন করতে করতে আত্মহনন ছাড়া আর কোনো রাস্তা থাকে না তার। বাঁচার ইচ্ছা তো আছে সকলের, আর এই বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছেটাই বিপদ হয়ে ধরা দেয় যেন নিম্নবিত্ত মানুষের রোজনামচায়।

যেন তাদের মরে যাওয়াই উচিত। কোনোক্রমে টিকে আছে তারা। জীবনের সমস্ত শখ-আহ্লাদ-বিলাসিতাকে বিসর্জন দিয়ে কোনোক্রমে অন্নসংস্থানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে চায় তারা। তবু এতে তাদের কোনো দুঃখ নেই, দুঃখ পাওয়াতে লাভ নেই কোনো। তাতে পৃথিবী বদলে যায় না।একপ্রকার এই অসহ্য জীবনেই মানিয়ে নিয়ে অভ্যাস করে ফেলেছে সেই নিম্নবিত্ত মানুষের দল।


একাদশ শ্রেনি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

‘নিম্নবিত্ত’ মানে কম বিত্ত আছে যার। ‘বিত্ত’ মানে সম্পদ, এক অর্থে টাকা। টাকার পরিমাণ বা অর্থসম্পদের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আমরা এক সম্প্রদায়কে বিভাজিত করে দিই। কিন্তু প্রশ্ন করি না যে কেন তার কাছে টাকা নেই? কেন সে বিত্তহীন? বিত্ত না থাকলেই যে সে দুর্বৃত্ত হবে, এমন ধারণাও অত্যন্ত কুরুচিকর। অথচ আমাদের সমাজে এটাই হয়ে আসছে বহু বহুকাল ধরে। রিক্সাওয়ালাদের আমরা ‘তুই’ বলি, জমাদার-মেথরদের সঙ্গে গা বাঁচিয়ে চলি, গরীব মানেই সে চোর বা চুরি করতে পারে এমন একটা বাঁধাধরা সিদ্ধান্ত আমাদের সকলের মধ্যে আছে। এটাই দারিদ্র্যের ধর্ম।

গান্ধীজি বলেছিলেন একবার, দারিদ্র্যের অপর নাম হল হিংসা। আসলে এই হিংসা তৈরি হয় অপ্রাপ্তি থেকে। আর এই হিংসার ফলে আমরাও ঐ সম্প্রদায়ের মানুষদের সমাজ থেকে আলাদা করে দেখি। সমাজে থেকেও তারা যেন সমাজ-বহির্ভূত। ফলে বেঁচে থাকার মধ্যে এত কষ্ট, এত দুঃখ, এত অপমান সব মিশে যায় তাদের নেশায়। বাস্তব জগতকে ভুলে থাকতে, বাস্তব থেকে পালিয়ে থাকতে তারা নেশার অন্ধকারে ডুবে যায়। কবিতায় সেই পুরুষটি বলে ওঠে –

‘রাত্তিরে দু ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে।’

নেশার ঘোরে তখন সমস্ত সম্পর্ক ওলটপালট হয়ে যায়। বাবা আর ছেলে তখন দুজনেই মাদকের মত্ততায় ডুবে দুই ভাইয়ের মতো আচরণ করে। বাবা-ছেলের মধ্যেকার সম্পর্কের যে স্বাভাবিক দূরত্ব তা ঘুচে যায়। আসলে উভয়ের কষ্ট, দুঃখ, যন্ত্রণাগুলো যে সব এক। তাই যে বাস্তব দুনিয়ায় তারা কখনো পরস্পরের মানসিক নৈকট্যকে অনুভব করতে পারেনি, নেশার ঘোরে সেই নৈকট্য অনুভব করে। নিম্নবিত্ত পরিবারের পুরুষ আজও কেবল অর্থ উৎপাদনের যন্ত্রমাত্র। অর্থ উপার্জন করতে না পারলে তার পৌরুষত্বের কোনো অস্তিত্বই থাকে না। অথচ হাজারো কষ্টের বোঝা মাথায় নিয়ে এরাই ইটভাটায় গান গায়, এরাই কৃষক আন্দোলনে স্লোগান তোলে।

যে জীবন রুদ্ধ, স্তব্ধ সে জীবনেও গান ওঠে, সে জীবনও স্বপ্ন দেখে। নেশার মধ্যে সেই সমস্ত অপূর্ণ স্বপ্ন সাময়িক যন্ত্রণার মলম হয়ে আসে, কিন্তু নেশা কেটে গেলে আবার বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে আছড়ে পড়তে হয় তাদের। অভাব তাদের পিছু ছাড়ে না, কিন্তু এই অভাবের মধ্যেও একটু বেশি অর্থ উপার্জন করলে পেট ভরে আনন্দ করে দুটো খাবার আশায় প্রচুর বাজার করে আনে তারা। সঙ্গে নিয়ে আসে সাধের গোলাপচারাও। সেই আসলে তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের প্রতীক, সেই গোলাপ আসলে তাদের বিলাসিতা। অপরিকল্পিত জীবনে সেই গোলাপচারা থেকে আদৌ ফুল ফুটবে কিনা কেউ জানে না। কোথায়ই বা সেই গোলাপচারা লাগাবে তারা তাও ঠিক নেই। তবু স্বপ্নপূরণের এক ব্যর্থ চেষ্টায় তারা সেই গোলাপচারা কিনে আনে। গোলাপ সৌন্দর্যের প্রতীক। বাস্তবের কঠোরতায় যে তাদের মনের সুকুমার বৃত্তিগুলি মরে যায়নি, সৌন্দর্যবোধ এখনও জাগ্রত আছে, হৃদয়ে প্রেম-প্রীতির অনুভূতি আছে তারই প্রমাণ এই ঘটনা। কিন্তু তারপর নিত্যদিনের ক্লান্তি, নিত্যদিনের গ্লানি আবার ঢেকে ফেলে তাদের মন। কবিতায় আমরা পড়ি –

‘কিন্তু পুঁতবো কোথায়?
ফুল কি হবেই তাতে?
সে অনেক পরের কথা।
টান দিই গঞ্জিকাতে।’

দারিদ্র্য এমন এক বিষম বস্তু যা মানুষকে অধৈর্য করে তোলে। তাই গোলাপচারা কিনে আনার পরে তা থেকে ফুল ফোটানোর যে দীর্ঘ প্রয়াস তাতে কেউ ধৈর্য রাখতে আস্থাশীল নয়। জীবনের রুক্ষতায় আবার নেশাই তাদের পরমসঙ্গী হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে আমরা বুঝতে পারি, কবিতার সেই পুরুষটির অল্পে খুশি থাকা আসলে বাধ্যত নিয়তি ছাড়া আর কিছুই নয়। অল্পে খুশি সে থাকতে চায়নি কখনো।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

একদিকে অল্পে খুশি না হওয়া দামোদর শেঠদের মতো ‘আরো চাই’ মনোভাবের মানুষ, আর অন্যদিকে কিছুই না পাওয়া অভাবী মানুষ দুই গোষ্ঠীই একই সমাজে থাকে। অজান্তে, অগোচরে কখন যে সমাজের সেইসব রাজাদের হাতে ‘উপেন’দের দুই বিধা জমি চুরি হয়ে যায় কেউ জানে না। আর সেইসব নিরন্ন উপেনরা তখন ‘নুন’ কবিতার এই লোকটির মতোই ভাগ্যকে দোষারোপ করে সব দুঃখ ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে তাঁদের মুখের সামনে যখন গরম ভাতে নুনটুকুও থাকে না, তখনই ক্রোধ চেপে যায় তাঁদের মাথায়। বাবা-ছেলে দুজনে মিলেই একে অন্যের উপর রাগ বর্ষণ করতে থাকে। জীবনের সব হারানো কষ্টের মধ্যে সামান্য অবলম্বন নুনটাও না পাওয়ায় মানিয়ে নেওয়া জীবনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে তাঁরা তখন প্রতিবাদে চিৎকার করে।

এই অপ্রাপ্তির জীবন থেকে বেরিয়ে সোচ্চার দাবিতে তাঁরা জানায় ঠাণ্ডা ভাতে অন্তত নুনটুকু তাঁদের চাই। এই নুন লুকিয়ে থাকে মানুষের ঘামে, মানুষের রক্তে – সে রক্ত, সে ঘাম শ্রমিকের, কৃষকের। পুঁজিবাদী সভ্যতা সেই ঘামের মূল্য দেয় না। ভাতের অভাবে মনোবিকৃতির কথা আমরা মন্বন্তরকালীন সাহিত্যে দেখেছি, কিন্তু এখানে কবি তার পুনরাবৃত্তি করেননি। বরং চিরন্তন অভাবের প্রতিবাদে নুনটুকু চাওয়ার সোচ্চার দাবি তুলে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন এইসব নিম্নবিত্ত মানুষেরা দেশের-দশের ‘নিমক’ খেয়ে খেটে যায় প্রাণান্ত, কিন্তু ‘নিমকহারামি’ তাদের রক্তে নেই। তাদের দাবি একটাই –

‘আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।’

আসলে এখানে কবি প্রথমে ‘নুন’ এবং পরে ‘লবণ’ এই দুই ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে এক বিশেষ ইঙ্গিত দিতে চাইলেন। নুনের সাধুরূপ লবণ। আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটির থেকে বাস্তব দূরত্বকে বোঝাতেই হয়তো কবি জ্ঞানত এই প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। যে নুন তারা হয়তো বা পাবেও না কোনোদিন, সেই অপূর্ন স্বপ্নের জায়গা থেকে কবির কলমে এভাবেই এই ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে বলে মনে হয়।
ফলে আদ্যন্ত একটি ভুখা মানুষের কবিতা হয়ে ওঠে জয় গোস্বামীর ‘নুন’।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → দ্বীপান্তরের বন্দিনী


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

XI_Beng_Nun_2