orthonoitik-prosar-orthonoitik-unnoyon
Class-11

অর্থনৈতিক প্রসার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

Economicsএকাদশ শ্রেণি – সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন


কোন দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য দুটি দিক বিচার করতে হয়।
প্রথম পরিমাণগত
দ্বিতীয় গুণগত দিক।

পরিমাণগত দিকটিকেই অর্থনৈতিক সম্প্রসার বলা হয় এবং দেশের উপাদানগুলির মান অথবা দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রসারের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারণাটি আলোচনা করা হয়।

অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের সংজ্ঞা এবং উভয়ের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হল।

অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ (Economic Growth)

কোন দেশের অর্থনৈতিক প্রসার বলতে ওই দেশের অর্থনৈতিক প্রসারকেই বোঝানো হয়। জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয় বা জাতীয় উৎপাদনকেই অর্থনৈতিক প্রসারের নির্দেশক হিসাবে সুচিত করা হয়।

অর্থাৎ কোন দেশের জাতীয় আয় বাড়লে সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রসার হয়েছে বলা হবে।

অর্থনৈতিক প্রসারের উৎসগুলি হল শ্রম, মূলধন, মানব মূলধন, বস্তুগত মূলধন, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।

উন্নত দেশগুলির জাতীয় আয় খুব বেশি হওয়ায় সেই দেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ বেশি, অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে জাতীয় আয় বা জাতীয় উৎপাদন কম তাই অর্থনৈতিক প্রসারও কম।

এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ যেমন সাইমন কুজনেটস, থারওয়াল প্রমুখ অনেকে অর্থনৈতিক প্রসারের নানান সংজ্ঞা দিয়েছেন।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

অর্থনৈতিক প্রসারের নির্দেশক

জাতীয় আয় হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

এছাড়া জাতীয় আয়কে কেন্দ্র করে আরও নির্দেশকগুলি হল-

(ক) দেশের স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) বার্ষিক বৃদ্ধির হার।
(খ) নিট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (NDP) বার্ষিক বৃদ্ধির হার।
(গ) স্থুল জাতীয় উৎপাদন (GNP) বার্ষিক বৃদ্ধির হার।
(ঘ) নিট জাতীয় উৎপাদন (NNP) বার্ষিক বৃদ্ধির হার।
(ঙ) বাস্তব জাতীয় আয় ( Real National Income) (জাতীয় আয়কে মূল্যসূচক দিয়ে ভাগ করলে বাস্তব আয় পাওয়া যায়।)
(চ) মাথাপিছু বাস্তব জাতীয় আয় (Per Capita Real National Income) (বাস্তব জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায়)

এই নির্দেশকগুলির বার্ষিক বৃদ্ধিই অর্থনৈতিক প্রসারকে নির্দেশ করে।

আবার, কোন দেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ হচ্ছে বলেই যে সেই দেশটি উন্নত এই ধারণাটিও ভুল। কারণ কোন দেশ উন্নত কিনা তা দেশের বাকি বিষয় যেমন শিক্ষা, বেকারত্ব, দারিদ্র, জনসংখ্যার চাপ, আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য ইত্যাদির ওপরও নির্ভর করে।

অর্থাৎ, কোন দেশ উন্নত মানেই সেই দেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ বেশি।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development)

কোন দেশের জাতীয় আয়, মাথপিছু আয়, বাস্তব আয় এগুলির বৃদ্ধির সাথে সাথে দারিদ্র, বেকারত্ব, কুসংস্কার, আয় বৈষম্য ইত্যাদি যদি হ্রাস পায় এবং শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিকাঠামো ইত্যাদির যদি বৃদ্ধি ঘটে তাহলে আমরা বলব সেই দেশটিতে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

যেকোনো দেশের গুনগত দিকটি বোঝাতে অর্থনৈতিক প্রসারের সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকটিরও ব্যাখ্যা করতে হবে। কোন দেশের উন্নয়ন হলে সেই দেশের মানুষের জীবনধারণের মান উন্নত হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসাবে আমরা শুধু জাতীয় আয়কে বা মাথাপিছু আয়কে নির্ধারণ করতে পারি না কারন স্বল্পোন্নত দেশ বা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কোন সময় হতে পারে খুব কম সংখ্যক ধনী ব্যাক্তির আয় এত বেশি হয় যা জাতীয় আয় বা মাথপিছু আয়কে বাড়িয়ে দেয় কিন্তু সেই আয়ের সমবণ্টন কখনই দেখা যায় না, যার ফলে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আয়ের বণ্টনে বৈষম্য দেখা যায়।

উন্নতশীল দেশগুলির কিছু বৈশিষ্ট্য

(ক) বেশি মাথাপিছু আয়
(খ) বেশির ভাগ মানুসের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য ভাল
(গ) আয় বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য কিংবা লিঙ্গ বৈষম্য প্রায় অনুপস্থিত।
(ঘ) মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা আনেক বেশি, যার ফলে জাতীয় আয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বেশি সম্ভব ইত্যাদি।

অনুন্নত দেশগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

(ক) মাথাপিছু আয় স্বল্প।
(খ) এই দেশগুলির কর্মক্ষম ব্যাক্তির বেশিরভাগ ক্রিসির অপ্র নির্ভরশীল।
(গ) জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি যার ফলে বেকার সমস্যাও খুব দেখা যায়।
(ঘ) এই দেশগুলিতে আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যায়
(ঙ) মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কম, যার ফলে জাতীয় আয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ খুবই কম।

অর্থনৈতিক প্রসার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পার্থক্য

1. প্রসার অর্থনৈতিক প্রগতির পরিমাণগত দিকটিকে নির্দেশ করে।
কিন্তু উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রগতির গুনগত দিকটিকেও নির্দেশ করে।

2. অর্থনৈতিক প্রসারের নির্দেশক বলতে আমরা জাতীয় আয় বা মাথাপিছু আয়কেই বুঝে থাকি।
কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধুমাত্র জাতীয় আয় না তার সাথে সাথে বেকারত্ব ও দারিদ্র হ্রাস, শিক্ষার বৃদ্ধি, আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি ইত্যাদিকেও নির্দেশ করে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

3. স্বল্পোন্নত দেশে সাধারণত জাতীয় আয়, বিনিয়োগ সঞ্চয় ইত্যাদি এসব বৃদ্ধি পেলেই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটেছে বলা হবে।
কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশে মানুষের জীবনধারণের মান অথবা সরকারের বিভিন্ন নীতির উপর এইসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে।

4. কোন দেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নাও ঘটতে পারে।
কিন্তু কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলে সেই দেশের সম্প্রসারণ ঘটবেই।
পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

শ্রীরামপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী শুভ্রা পাল। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি গান শুনতে এবং বাগান পরিচর্যা করতে ভালবাসেন শুভ্রা।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –