krondonrota-jononi
Class-12

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে সারসংক্ষেপ

বাংলাদ্বাদশ শ্রেণি – ক্রন্দনরতা জননীর পাশে (সারসংক্ষেপ)

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার কবি পরিচিতি

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে কবির জন্ম। বাবা জ্যোৎস্নাকুমার দাশগুপ্ত আর মা ছিলেন সান্ত্বনা দাশগুপ্ত। তাঁর বাল্যজীবন কাটে শ্রীরামপুরেই। শ্রীরামপুরের পূর্ণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম পাঠ শুরু হয়। এরপর শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। স্নাতকস্তরে ভরতি হয়েছিলেন উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজে।

এখান থেকেই তিনি জীববিদ্যায় স্নাতক হন। শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশনে থাকাকালীনই তার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘বেলাভূমি’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘এবং’ পত্রিকায় গুচ্ছ কবিতা লিখেছেন। ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকায় তাঁর রচিত ছড়া বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জলপাইকাঠের এস্রাজ’ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘এভাবে কাঁদে না’। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—‘গোপনে হিংসার কথা বলি’, ‘সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ’, ‘সোনার বুদবুদ’, ‘ধানখেত থেকে’ ইত্যাদি। দরকার। তাঁর রচিত ছড়াগ্রন্থ ‘ঝিকিমিকি ঝিরিঝিরি’, ‘ছড়া ৫০’, ‘আমপাতা শরীর জামপাতা’ এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কবিতা সহায়’, ‘সাত-পাঁচ’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।


দ্বাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশনে যোগদান করেন। পরে সাংবাদিকতাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রথমে ‘পরিবর্তন’ পত্রিকা এবং পরে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘আজকাল’ পত্রিকার সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে মৃদুল দাশগুপ্তকে ন্যাশনাল রাইটার্স অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়। সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ‘সোনার বুদবুদ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার উৎস

২০০৬ সালের সিঙ্গুর আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে কবির ‘ধানখেত থেকে’ নামক কবিতা-পুস্তিকা থেকে।

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার সারসংক্ষেপ

সকলেই জানে, শাসকের ভুল নীতি এবং স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র দেশকে বিপর্যস্ত করে। মানুষের নিশ্চিন্ত জীবন আর জীবনের শান্তি এর ফলে হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। তৈরি হয় সামাজিক বিপন্নতা। আর সেই অস্থির সময়েই কবিকে দায়বদ্ধ হতে হয়। ক্রন্দনরতা জননীর পাশে দাঁড়াতে হয়। না হলে সাহিত্য-সংগীত কিংবা চিত্রকলার সৃষ্টি মূল্যহীন হয়ে যেতে বাধ্য।

কবি দেখেছেন তাঁর নিহত ভাইয়ের মৃতদেহ। কবির মূল্যবোধ এই হত্যার প্রতিবাদে ক্রোধের জন্ম দেয়, কারণ তিনি ভালোবাসেন তাঁর সমাজকে, সমাজভুক্ত মানুষদের। শোষকের চক্রান্তে নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ পাওয়া যায় জঙ্গলে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে দায়বদ্ধ কবির পক্ষে সম্ভব ছিল না বিধির বিচার চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। তাই কবিতায় তিনি জাগিয়ে রাখেন তাঁর বিবেক। বারুদের মতোই সেই বিবেক জেগে থাকে বিস্ফোরণের অপেক্ষায়।

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার মূল বক্তব্য

কবির চেতনা জুড়ে রয়েছে সেই স্বদেশ যেখানে নিপীড়নের চিহ্ন প্রতি পদক্ষেপে। চোখের সামনে তিনি দেখেন ভাইয়ের মৃতদেহ, জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ। এই অবস্থায় কবির বিবেক জাগ্রত হয়ে ওঠে। তার মনে হয় তার লেখা, গাওয়া গান কিংবা আঁকা ছবি সবই হয়ে উঠুক প্রতিবাদমুখর।

মৃত্যুর বিভীষিকাতেও যদি ক্রোধ না জাগে তাহলে সামাজিকতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সামাজিক মূল্যবোধ—সবই অর্থহীন হয়ে যায়।

এই বিশ্বাস থেকেই নিজের কবিতাকে কবি করে তুলেছেন প্রতিবাদী বিবেকের জাগ্রত কণ্ঠস্বর, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হাতিয়ার। শাসকের অন্যায় আর মানুষের বিপন্নতা দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়া কবির পছন্দ নয়। পরিবর্তে তিনি চেয়েছেন বারুদের বিস্ফোরণ। নিজের ক্রোধ আর প্রতিবাদ দিয়ে এই কবিতায় কবি নিপীড়িতা জন্মভূমির পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন।

সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ক্রন্দনরতা জননীর পাশে বিশদে আলোচনা

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখক পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।

JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

XII_Beng_Krondonrota_jononir_pashe_1