বাংলা – দ্বাদশ শ্রেণি – শিকার (বিশদে আলোচনা)
এর আগে শিকার সারসংক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা শিকার কবিতার বিশদে আলোচনা করবো।
শিকার কবিতার বিশদে আলোচনা
‘শিকার’ কবিতাটি গভীরভাবে পড়লে দেখা যাবে অনেকগুলি বিষয় (Theme) ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিক কবিদের লেখার মধ্যে অনেক বেশি চিত্রকল্প, ব্যাঞ্জনা, উপমা ইত্যাদির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। জীবনানন্দও তার ব্যতিক্রম নন। ফলে তাঁর কবিতা পাঠ করার আগে একটা দীর্ঘ অভিনিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে।
‘শিকার’ কবিতাটি শুরু হয়েছে একটি ভোরের দৃশ্য বর্ণনার মধ্য দিয়ে।
কবিতাটি ভালোভাবে পড়লে দেখা যায় কবি এখানে দুবার ‘ভোর’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই দুটি ভোরের দুরকম তাৎপর্য রয়েছে কবিতায়। আবার দেখা যাবে এই কবিতায় এক মিশরের মানুষীর কথা আছে, আছে দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুনের কথাও। সর্বোপরি একটি হরিণ-শিকারের বর্ণনা দিয়েছেন কবি এই ‘শিকার’ কবিতায়।
কিন্তু তারপরেও between the lines অনেক ব্যঞ্জনা লুকিয়ে রয়েছে এই কবিতায়। আমাদের কাজ সমগ্র কবিতাটিকে একটি রহস্যের জাল হিসেবে মনে করে একেকটি সূত্র ধরে ধরে গন্তব্যে পৌঁছানো। আসলে যে কোনো উৎকৃষ্ট আধুনিক কবিতাই আমাদের একটি যাত্রাপথের দিকে ঠেলে দেয়। এই পথ অনুভবের পথ। জীবনানন্দের কবিতার মধ্যে সবথেকে বিস্ময়কর হল তাঁর রূপক ও প্রতীকের প্রয়োগ। ‘শিকার’ কবিতাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
অধ্যাপিকা দীপ্তি ত্রিপাঠী বলছেন, ‘জীবনানন্দের কবিতা পড়তে পড়তে ইম্প্রেশনিস্টদের ছবির কথাই মনে হয়। যে দৃশ্য শিল্পী আঁকছেন, তা যেন ঝলকে দেখে নিয়ে রং-আলো-ছায়া যেমনটি দেখেছেন ঠিক তেমনটি এঁকে বসিয়ে দিতে চান। এই জন্যেই এই ছবিগুলির খণ্ডাংশের কোনো অর্থ হয়না। সব মিলিয়ে একটা সামগ্রিক আবেদন সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য।’
‘শিকার’ কবিতাটি সম্পূর্ণ হয়েছে পাঁচটি স্তবকে। কবিতার একেবারে শুরুতে শুধুমাত্র ‘ভোর’ শব্দের মাধ্যমে কবি গ্রাম্য-পল্লী প্রকৃতির এক নিবিড় স্নিগ্ধ কোমল ভোরের সূচনার কথা বলেছেন তিনি। তার মনশ্চক্ষু যেন সেই ভোরের ছবিটিকে আঁকতে শব্দের রঙে ভরিয়ে তোলে কবিতার শরীর। কবিতায় রয়েছে এক হরিণ শিকারের কথা আর তার অন্তরালে রয়েছে পুঁজিবাদী সমাজের হাতের লাঞ্ছিত দরিদ্র শ্রেণির ছবি।
কবিতার চরিত্র বলতে দুটি – প্রথম পক্ষ সুন্দর বাদামী হরিণ আর দ্বিতীয় পক্ষ কিছু সিগারেটবিলাসী টেরিকাটা মানুষ। কবি বর্ণনা দিচ্ছেন ভোরের সময় মাথার উপরে আকাশ ঘাসফড়িঙের ডানার মত নীলাভ আর চারপাশের বন পেয়ারা-নোনার গাছ টিয়াপাখির পালকের মত গাঢ় সবুজ।
শিকার কবিতার বিশদে আলোচনা↓
এটাই যেন প্রকৃতির স্বাভাবিক ছবি।
জীবনানন্দ এই বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখছেন ‘ঘাসফড়িঙের দেহের মত কোমল নীল’। এখানেই তিনি স্বতন্ত্র। নীল রঙের যে অনুভব যা দৃষ্টিগ্রাহ্য, কিন্তু তার যে বিশেষণ কবি লিখলেন তা স্পর্শগ্রাহ্য – কোমল। ইন্দ্রিয়ের অনুভবগুলির মধ্যে অভিলেপন (Overlapping) ঘটিয়ে দেওয়ার এই প্রয়াস পরাবাস্তবতার (Surrealism) উদাহরণ।
জীবনানন্দ আদপেই একজন পরাবাস্তববাদী কবি। এখন পরাবাস্তবতা কী তা নিয়ে আলোচনা করতে বসলে ক্লাস শেষ হবে না। আপাতত কবিতার গণ্ডিতে নিজেদের আটকে রাখি। ঠিক এর পরেই কবি বলেন সেই ভোরের আকাশে তখনও একটি নক্ষত্র জ্বলছিল আর এই ঘটনার উপমা হিসেবে তিনি লেখেন –
‘একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে
পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গোধূলি-মদির মেয়েটির মত;
কিংবা মিশরের মানুষী তার বুকের থেকে যে মুক্তো
আমার নীল মদের গেলাসে রেখেছিল
হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে – তেমনি
একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনও।’
উপমার প্রতোগে কবি সুদূর আকাশ থেকে নেমে এলেন পাড়াগাঁর গৃহস্থ পরিবেশে। সদ্য বিবাহিতা মেয়েটি অনুগ্র, তার লজ্জা যেন গোধূলিবেলার মত নম্র-মধুর যাতে কিছু মদির বিহ্বলতাও মিশে থাকে। এই দূর আকাশ এভাবেই যেমন কাছে এসেছিল, ঠিক তার পরেই মিশরের মানুষীর বর্ণনায় আবার কবি আমাদের নিয়ে চলে যান হাজার হাজার বছর আগের কোনো এক রাতে।
জীবনানন্দের কবিতায় সময়ের এই ব্যাপ্ত স্থানান্তর প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।
মিশরের মানুষীর বুকের মুক্তো আসলে হৃদয়ের ভালোবাসার প্রতীক আর নীল মদ সম্ভবত বিষ বা মৃত্যুর দ্যোতনা আনে। কবির ভালোবাসার দুই নারী এই পংক্তিতে যেন মুখোমুখি বসে পড়ে। কবির প্রণয়কাহিনি লেখা হয় যেন ভোরের বনে ঐ নক্ষত্রের নিচে। ভোরের বনের যে রূপ কবি যেন নিজের কামনা-মথিত স্মৃতি নিয়ে, মনন-ঋদ্ধ বিশ্বচারণা নিয়ে সেই রূপ উপভোগ করেন আর কবিতার প্রথম স্তবকে সেই উপভোগ সম্পূর্ণ হয়।
এই হল কবিতার প্রথম ‘ভোর’-এর তাৎপর্য যা স্নিগ্ধ, কোমল।
এরপরে কবি জীবনানন্দ রচনা করেন অন্য এক দৃশ্য – বনের মধ্যে দেশোয়ালিদের আগুন জ্বালিয়ে হিমের রাতে শরীর গরম রাখার এক ছবি এঁকেছেন তিনি। বনের শুকনো অশ্বত্থপাতা দুমড়ে সেই আগুন তাদের জ্বলেছে ভোর হওয়া পর্যন্ত। একদিকে আগুনের উষ্ণ লাল রঙ আর শুকনো অশ্বত্থপাতার দুমড়ে যাওয়া অন্য এক দ্যোতনা নিয়ে আসে কবিতার মধ্যে। দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুনকে কবি বলছেন উপমার সাহায্যে ‘মোরগফুলের মত লাল আগুন’।
আদপে প্রকৃতিতে এই মোরগফুলের অস্তিত্ব আছে কিনা তা বড় কথা নয়। লক্ষণীয় হল এই অসাধারণ উপমার কবিত্বটুকু। মোরগের মাথার লাল ঝুঁটির যে বর্ণদ্যুতি, তার সঙ্গে কবি এখানে আগুনের আভাকে মিলিয়ে দিলেন। এই আগুনের রঙটাই আবার বদলে যায় ভোরবেলায়, তখন
কবির উপমা আমাদের গভীর অনুভবকে ছুঁয়ে যায় –
‘সূর্যের আলোয় তার রঙ কুঙ্কুমের মত নেই আর
হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।’
‘কুঙ্কুম’ কথার অর্থ হল সোনার আভরণ বা গহনা। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, সারারাত আগুন জ্বলার পরে তা নিভু-নিভু হয়ে এসেছে, আগুনের ঔজ্জ্বল্য কমেছে। আর তখন সেই আগুনের ছটা রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছার মত ম্লান। এই উপমাটা ভোলার নয়। রোগা শালিক আসলে এক হতাশাগ্রস্ত, অক্ষম, অসফল ব্যক্তিত্বের প্রতীক যার হৃদয়ের সব আশা, সব সাধ অপূর্ণতার অন্ধকারে ঢাকা। এই সমাজ-সংসারে যেন এই রোগা শালিকের ইচ্ছার কোনো মূল্যই নেই, তাই সেই ইচ্ছা বিবর্ণ।
এত রঙের আয়োজন করেছেন কবি এই স্তবকের আগে, তার মাঝে এই ইচ্ছা ধূসর, রঙহীন। রোগা শালিক মানুষের ব্যর্থ কামনার Phallic Symbol। অন্যদিকে অশ্বত্থপাতার দুমড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কবি প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করার ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। এরপরেই আবার এক সুন্দর ভোরের বর্ণনা – সকালের শিশিরভেজা আলোয় বনের চারিদিক ঝিলমিল করে উঠছে। আকাশ যেন ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মত বর্ণময় হয়ে উঠেছে। এই বর্ণনার মধ্যে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আছে – শিশিরের আলোর মধ্যে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণ আর তার ফলে সাত রঙে ভেঙে যাওয়ার যে বস্তুবাদী চিত্র তা উপমায় তুলে ধরেন জীবনানন্দ। অরণ্য প্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য যেন কোনো এক ধ্বংসের অপেক্ষা করে আছে। কবিতাটির এতদূরে এসেও কবি ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছাননি, একটা চাপা আশঙ্কা এই বনেরই বাতাসে যেন ঘুরে চলেছে যা পাঠককেও উদ্গ্রীব করে রাখে।
এরপরে কবিতার তৃতীয় স্তবক সূচিত হয় দ্বিতীয়বার ‘ভোর’ শব্দটি দিয়ে।
আগেই বলা হয়েছে দ্বিতীয় এই ভোরের তাৎপর্য একেবারেই আলাদা। এখানেই আসে সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো ক্লান্ত হরিণের কাহিনি। সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে সেই ‘সুন্দর বাদামি হরিণ’ এইরকম একটা সোনা-ঝিলমিল ভোরের অপেক্ষা করছিল। এই ভোর যেন হরিণের কাছে এক প্রশান্তি, এক স্বস্তির প্রতীক। সবুজ সুগন্ধি ঘাস খেতে খেতে সারা রাতের ছুটে বেড়ানোর ক্লান্তি ঘোচাতে হরিণটি নদীর জলে নামে। কবি হরিণের মনস্তত্ত্বের আঁধারে আলো ফেলে অনুভব করেন –
‘ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে স্রোতের মত একটা আবেগ দেওয়ার জন্য;
অন্ধকারের হিম কুঞ্চিত জরায় ছিঁড়ে ভোরের রৌদ্রের মতো একটা বিস্তীর্ণ
উল্লাস পাবার জন্য;
এই নীল আকাশের নীচে সূর্যের সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে
সাহসে সাধে সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমক লাগিয়ে দেবার জন্য।’
এই অংশটি কবিতার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংক্ষিপ্ত পরিসরে জীবনানন্দ পরপর অনেকগুলি প্রতীক ব্যবহার করেছেন এখানে। শিশুর প্রসবের সময় মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে আলোর পৃথিবীতে যেমনভাবে শিশু অবতীর্ণ হয়, এখানেও শীতের কুয়াশা মাখা পরিবেশে সেই ‘হিম’-এর জরায়ুর মত অন্ধকার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাটিয়ে দিচ্ছে তীক্ষ্ণ সূর্যরশ্মি। অন্ধকার থেকে আলোয় আসা হরিণের কাছে এক আশার ব্যঞ্জনা। জীবনানন্দ এরপর বলেন ‘সূর্যের সোনার বর্শা’র কথা। এ এক অভূতপূর্ব উপমা যেখানে সূর্যরশ্মির তীক্ষ্ণতাকে রূপায়িত করা হচ্ছে আর একইসঙ্গে এই ‘বর্শা’ সম্ভবত একটা ধ্বংসের একটা সর্বনাশের ইঙ্গিত দেয়। সুন্দর বাদামি হরিণ চেয়েছিল নদীর জলে স্নান সেরে উদ্যমী তেজোদীপ্ত শরীরে হরিণীদের চমক লাগিয়ে দিতে।
কিন্তু তার পরের স্তবকেই হরিণের এই আশা, এই কামনামথিত চেতনার মৃত্যু হয়। জীবনানন্দ লেখেন –
‘একটা অদ্ভুত শব্দ
নদীর জল মচকাফুলের পাঁপড়ির মতো লাল।
আগুন জ্বললো আবার – উষ্ণ লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে এল।’
বোঝাই যায় কোনো এক শিকারীর বন্দুকের গুলিতে হরিণটি মারা গেল আর তার রক্তে নদীর জল লাল হয়ে উঠলো। কিন্তু যে চিত্রকল্প আর প্রতীক এখানে কবি রচনা করলেন তা ভোলার নয়। মচকাফুল-এর সঙ্গে মৃত হরিণের ঘাড় মচকে যাওয়া বা একদিকে কাত হয়ে শরীর এলিয়ে পড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। বাস্তবিক মচকাফুলের লাল পাঁপড়ি এই কবিতায় রক্তের দ্যোতনা আনলো। তারপর আবার আগুন জ্বলে উঠলো, কিন্তু এই আগুন শিকারিদের জ্বালানো আর তাতে রান্না হয়ে এল মৃত হরিণের সুস্বাদু মাংস।
শেষ স্তবকে কয়েকটি অগোছালো শব্দের মধ্য দিয়ে কবি বোঝাতে চাইলেন সেই শিকারি মানুষদের আরাম-আয়াসে কাটানো এক বনভোজনের ছবি, সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়া সেই সব মানুষের টেরিকাটা মাথা নাগরিক সভ্যতার এক ভয়াবহ ক্লিন্ন রূপকে তুলে ধরে। এভাবেই হরিণ শিকার সমাপ্ত হল আর এই শিকারের মধ্য দিয়ে হরিণের মৃত্যুর রূপকে কবি বোঝাতে চাইলেন প্রকৃতির নিবিড় নৈকট্যে মানুষের হাতে প্রেম ও সৌন্দর্যের ধ্বংসলীলা।
সস্তা, ভোগবিলাসী অত্যাচারী এই শিকারির আড়ালে ইঙ্গিতে সমাজের পুঁজিবাদী সম্প্রদায়ের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন জীবনানন্দ। এই বনের সৌন্দর্য ধ্বংস করেছে মানুষ, ধ্বংস করেছে নাগরিক লালসা।
হরিণ এখানে প্রেম, বিশ্বাস, সহানুভূতি, স্বাভাবিকতার প্রতীক যা কেড়েছে নগর।
দ্বাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
এই বনের এই সৌন্দর্য যেন হরিণ শিকারের টোপ, শিকারিরা অপেক্ষায় ছিল সেই হরিণের। একদিকে চিতাবাঘিনী আর একদিকে এই মানব-শিকারি। খাদ্য-খাদক বাস্তুতন্ত্রে কোথাও নিস্তার নেই হরিণের। হরিণ চিতাবাঘিনীর হাত থেকেও রক্ষা পেয়েছিল, কিন্তু মানুষের হাতে তার মৃত্যু হল।
নাগরিক সভ্যতার বিলাসের উপকরণ হওয়ার ভবিতব্য নিয়েই যেন হরিণ এতদিন বেঁচে ছিল। অথচ এই হরিণ শিকারের পরেও শিকারিদের মনে এক ‘নিস্পন্দ, নিরপরাধ ঘুম’ বাসা বাধে। কবি বোঝাতে চান, এই হত্যালীলার ফলে কোনো প্রকার অপরাধবোধ জাগে না শিকারির মনে, যেন এটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক।
‘শিকার’ কবিতায় প্রথম ভোরে জীবনের স্বাভাবিকতা, প্রাণের জয়গান আর দ্বিতীয় ভোরে মৃত্যু, ধ্বংসের রক্তাক্ত পরিণতি।
এরই মাঝে অসংখ্য রূপক-প্রতীক আর চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে কবি দুটি বৈপরীত্য তৈরি করে দেন আমাদের চোখে –
একদিকে থাকে নিবিড় বনভূমির অরণ্য প্রকৃতির এক স্বাভাবিক রূপ আর অন্যদিকে থাকে অরণ্যের মধ্যেই অরণ্য-প্রাণের হত্যা।
এই শিকারি এখানে যেন ক্ষমতায় মদমত্ত ‘রাষ্ট্রশক্তি’, পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক সভ্যতার রূপক। সাধারণ হতদরিদ্র প্রোলেতারিয়েত ঐ সুন্দর বাদামী হরিণের জীবনের লক্ষ্যই যেন ঐ চিতাবাঘিনীর মত শত্রুর হাত থেকে আজীবন পালিয়ে পালিয়ে ছুটে বেড়ানো। এভাবেই ‘শিকার’ কবিতাটি এক সামগ্রিক বোধের জন্ম দেয় পাঠকের মনে যার মধ্যে অসংখ্য রূপক-প্রতীক স্মরণীয় হয়ে থাকে যা কবিতার শিল্পরূপকে অন্যমাত্রার একটা ব্যঞ্জনা এনে দেয়।
সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → মহুয়ার দেশ কবিতার সারাংশ
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XII_Beng_Shikar_2