WB-Class-8

চন্দ্রগুপ্ত – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বাংলা । অধ্যায় – চন্দ্রগুপ্ত (chandragupta)


অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য নাটক চন্দ্রগুপ্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

প্রথমেই চন্দ্রগুপ্ত  নাট্যাংশের চরিত্রগুলির পরিচয়

সেকেন্দার – মহান গ্রিক সম্রাট এবং যোদ্ধা আলেকজান্ডার, যাকে এই নাট্যাংশে সেকেন্দার বলা হয়েছে। তিনি তাঁর ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে প্রায় সমগ্র এশিয়া জয় করেছিলেন। তিনি ভারতের একটি বিরাট অংশ অধিকার করেছিলেন এবং প্রায় ১৯ মাস ভারতীয় ভূখণ্ডে অতিবাহিত করেন।

রাজা পুরু – একজন কিংবদন্তী হিন্দু রাজা। আলেকজান্ডার তাঁর ভারত অভিযানের সময় রাজা পুরুর কাছে প্রবল প্রতিরোধ পেয়েছিলেন।

চন্দ্রগুপ্ত – মগধের রাজপুত্র ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। পরবর্তী সময়ে তিনি মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ (কলিঙ্গ এবং তামিল বাদ দিয়ে) নিজের শাসনের অধিকারে আনেন।

সেলুকস – গ্রিক সেনাপতি সেলুকস।

হেলেন – সেকেন্দার কন্যা হেলেন।

আন্টিগোনস – গ্রিক সৈন্যাধ্যক্ষ।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – গণিত | বিজ্ঞান | ইতিহাস

চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের বিষয়সংক্ষেপ

নাট্যাংশের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই যে সিন্ধু নদীর তীরে, সেনাপতি সেলুকস এবং কন্যা হেলেনকে নিয়ে সেকেন্দার সূর্যাস্তের শোভা উপভোগ করছেন। সেকেন্দার ভারতবর্ষের অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি সেলুকাসকে বলে ওঠেন –

সত্য সেলুকস, কি বিচিত্র এই দেশ।

শুধু প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যেই নয়, সেকেন্দার মুগ্ধ হয়েছেন এখানকার জাতির শৌর্যে। তিনি বলেন যে পরাজিত রাজা পুরুকে বন্দী করার পরে, সেকেন্দার যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন – ‘আমার কাছে কিরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো’ তাঁর উত্তরে রাজা পুরু তাঁকে বলেন –

‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ’।

সেকেন্দার চমকিত হন এই উত্তরে; একজন পরাজিত বন্দীর কণ্ঠে এই সাহস তিনি প্রত্যাশা করেননি। পুরুর সাহসে অভিভূত হয়ে সেকেন্দার তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন।

সেকেন্দার এবং সেলুকাসের মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকে। এই সময় সেখানে গ্রিক সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগোনস উপস্থিত হন, গুপ্তচর সন্দেহে এক বন্দীকে নিয়ে। জানা যায় ঐ ধৃত যুবক শিবিরের পাশে বসে শুষ্ক তালপত্রে কিছু লিখছিলেন।

সেকেন্দার জানতে চাইলে, যুবকটি বলেন যে তিনি

‘সম্রাটের বাহিনী – চালনা, ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম এই সব মাসাবধি কাল ধরে শিখছিলাম’।

সেকেন্দার এই অবৈধ আচরণে অবাক হলে, অপরিচিত যুবক জানান যে তাঁর নাম চন্দ্রগুপ্ত, তিনি মগধের রাজপুত্র, কিন্তু তাঁর বৈমাত্রেও ভাই বর্তমান সিংহাসন অধিকার করে চন্দ্রগুপ্তকে নির্বাসিত করেছেন। সেকেন্দারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতি তাঁর কোন ইচ্ছা নেই, চন্দ্রগুপ্ত কেবলমাত্র তাঁর হৃত রাজ্য অধিকার করার জন্য গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে যুদ্ধের পাঠ নিচ্ছিলেন।

সেলুকস জানান যে চন্দ্রগুপ্তের এই অভিপ্রায় তাঁর অজানা ছিল, সেলুকস কেবলমাত্র যুবকের আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সাথে কিছু যুদ্ধনীতি আলোচনা করতেন।

গ্রিক সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগোনস এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুজনকেই বিশ্বাসঘাতক বলেন। সেলুকসের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে, আন্টিগোনস সেলুকসের গলা লক্ষ্য করে তরবারি চালায় কিন্তু চন্দ্রগুপ্তের ক্ষিপ্রতায় সেলুকসের প্রাণ রক্ষা হয়।

সেকেন্দার আন্টিগোনস-এর আচরণে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে সৈন্যবাহিনী থেকে নির্বাসন দেন। সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তকে বন্দী করার আদেশ দিলে, চন্দ্রগুপ্ত রুখে দাঁড়ায় এবং বলেন –

‘সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দী করতে পারবেন না’।

সম্রাট সেকেন্দার, চন্দ্রগুপ্তের এই বীর আচরণে খুশি হন এবং চন্দ্রগুপ্তকে ছেড়ে দেন। সেকেন্দার এও ভবিষ্যৎবাণী করেন যে –

‘তুমি হৃত রাজ্য উদ্ধার করবে। তুমি দুর্জয় দিগ্‌বিজয়ী হবে।’


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | ভূগোল

চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের সারমর্ম

চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশে উপজীব্য বিষয় দুটি।

প্রথমত, সম্রাট সেকেন্দারের ভারতবর্ষের প্রতি মুগ্ধতা। সেকেন্দার বিশ্বজয়ের উদ্দেশ্যে সুদুর গ্রিস থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন এশিয়া মহাদেশে। তাঁর যুদ্ধরথ প্রথমবারের মত অবরুদ্ধ হয় ভারতবর্ষে, রাজা পুরুর সাথে যুদ্ধে সেকেন্দার জয়লাভ করলেও, রাজা পুরুর শৌর্যে তিনি বিস্মিত হন। শুধু ভারতবর্ষের মানুষজন নয়, ভারতবর্ষের মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য তাঁকে অবাক করে। সকালের তীব্র সূর্যালোক, রাত্রের শুভ্র চন্দ্রমা, অন্ধকার রাত্রের ঝলমলে জ্যোতিঃপুঞ্জ তাঁকে বিস্মিত করে। এইভাবে মহান যোদ্ধার, একঅজানা দেশের প্রতি অন্তরের মুগ্ধতা ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।

দ্বিতীয়ত, চন্দ্রগুপ্তের সাহসিকতা এবং অদম্য মনোভাব। নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র চন্দ্রগুপ্ত, তাই নামেই এই নাট্যাংশের নামকরণ। নাট্যাংশের চন্দ্রগুপ্ত ভাগ্যের ফেরে একজন রাজ্যহীন যুবক। কিন্তু ভাগ্যের হাতে সে নিজেকে সমর্পণ করে না। বিশ্বজয়ী সেকেন্দারের শিবিরে, তারই সেনাপতির কাছে যুদ্ধবিদ্যার পাঠ নিতে আসে। এমনকি আন্টিগোনস যখন তাঁকে গুপ্তচর অনুমান করে সেকেন্দারের কাছে নিয়ে যায়, সেখানেও চন্দ্রগুপ্ত মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে, সত্য ঘটনা বলে এবং সেলুকাসের নিশ্চিত মৃত্যু আটকায়। সেকেন্দার যখন তাকে বন্দী করার কথা বলেন, চন্দ্রগুপ্ত তা মেনে না নিয়ে লড়াই করার কথা বলে। চন্দ্রগুপ্তের এই অসম সাহসিকতা এবং অদম্য মনোভাব বিশ্বজয়ী গ্রিক সম্রাটের প্রশংসা আদায় করে নেয় এবং তাঁকে ইতিহাসের অমরত্বের দিকে এগিয়ে দেয়।

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_Beng_chandragupta