fosol-fosoler-boicitryo-fosoler-utpadon
WB-Class-8

ফসল, ফসলের বৈচিত্র্য ও ফসলের উৎপাদন

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – মানুষের খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদন (প্রথম পর্ব)

এই পর্বে আমরা ফসল, ফসলের বৈচিত্র্য ও ফসলের উৎপাদন সম্পর্কে আলোচনা করবো।

আমরা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত খাবার প্রত্যহ গ্রহণ করি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন উন্নত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। বিজ্ঞানের যে শাখায় বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উৎপাদন এবং সেই সংক্রান্ত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে কৃষিবিজ্ঞান বা Agriculture বলা হয়।

বিভিন্ন রকমের শস্য বা ফসল চাষ, ডিম, দুধ বা মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য পাখি বা পশুপালন প্রভৃতি কৃষিবিজ্ঞান শাখার অন্তর্গত। কৃষিবিজ্ঞানের যে শাখায় ফুল, শাকসবজি ও ফল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে উদ্যানবিজ্ঞান বা Horticulture বলা হয়।
অনেক স্থান জুড়ে একসাথে একজাতীয় উদ্ভিদ চাষ করা হলে সেই উদ্ভিদগুলিকে একত্রে শস্য বা ফসল (Crop) বলা হয়।

শস্যকে তাদের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। কয়েকটি প্রধান ভাগ হল-
(ক) তন্তুল জাতীয় শস্য- ধান, গম, যব প্রভৃতি এই জাতীয়।
(খ) ডাল জাতীয় শস্য- ছোলা, মটর, অরহর প্রভৃতি
(গ) তন্তু জাতীয়- পাট, তুলো প্রভৃতি
(ঘ) ঔষধি বৃক্ষ- তুলসী, কালমেঘ, চিরতো প্রভৃতি এর অন্তর্গত।
ফসল উৎপাদনের ঋতুর উপর নির্ভর করে ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। খারিফ শস্য ও রবি শস্য।

খারিফ শস্য কাকে বলে?

সাধারণভাবে বর্ষার শুরুতে জুন-জুলাই মাসে এই চাষ আরম্ভ হয় আর সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে অর্থাৎ বর্ষার শেষে এই ফসল তোলা হয়। খারিফ শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় এবং এই চাষ বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। ধান, তুলো, পাট, সয়াবিন প্রভৃতি খারিফ শস্য।

রবি শস্য কাকে বলে?

এই শস্য শীতের শুরুতে অর্থাৎ অক্টোবর- নভেম্বর মাসে চাষ করা হয় এবং মার্চ- এপিল মাসে ফসল কাটা হয়। রবি শস্য চাষ বর্ষার উপর নির্ভর করে না এবং এই চাষে খারিফ শস্য অপেক্ষা জল অনেক কিমি. লাগে। গম, ছোলা, মটর, বার্লি প্রভৃতি রবি শস্য।

কৃষিকাজ কাকে বলে?

ফসল উৎপাদনের জন্য কোন কৃষককে যে সব বিভিন্ন প্রকার কাজ করত হয় তাদের কৃষিকাজ বলা হয়।

কৃষিকার্যের অন্তগর্ত কাজগুলি হল-

  • চাষের জমির মাটি প্রস্তুত করা
  • বীজ বপন করা
  • জমিতে সার প্রয়োগ
  • জলসেচন
  • আগাছা দমন
  • ফসলের জন্য হানিকর এমন কীটপতঙ্গ থেকে ফসল রক্ষা করা
  • ফসল তোলা
  • ফসল সঞ্চয়

আমরা প্রতিটি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করে নেব।

চাষের জমির মাটি প্রস্তুত করা

বীজের অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে উদ্ভিদের বেড়ে ওঠা সব ক্ষেত্রেই মাটি হল প্রধান মাধ্যম। উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে মাটি থেকে জল ও বিভিন্ন খনিজ লবণ শোষণ করে, যা উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেহেতু উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং উপযুক্ত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাটির গুরুত্ব অপরিসীম, তাই কৃষিকার্য শুরুর সময় মাটিকে চাষের উপযোগী করে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন।

চাষের জন্য মাটি প্রস্তুতি

মাটি প্রস্তুত করার জন্য জমির মাটি খুঁড়ে উপর নীচ করতে হয়। এই কাজের জন্য লাঙল বা ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয়। জমিতে আগাছা থাকলে প্রথমে নিড়ানি ব্যবহার করে আগাছা তুলে ফেলে তারপর জমি কর্ষণ করা হয়।
এই কর্ষণের ফলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং গাছের মূল সহজে তাঁর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া আলগা মাটিতে বায়ু চলাচল ভালো হয়, যা কেঁচো এবং মাটিতে বসবাসকারী অন্যান্য জীবাণুদের থাকার সহায়ক হয়। এদের উপস্থিতির ফলে মাটি আলগা হয় ও মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। এছাড়া মাটি বাসকারী বিভিন্ন জীবাণু মাটির মধ্যে বর্তমান বিভিন্ন মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহের পচন ঘটিয়ে মাটিতে মিশতে সাহায্য করে এর ফলে মাটির হিউমাস বা জৈব অংশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ভিদের পুষ্টির সহায়ক হয়।

 

 

কৃষিকার্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বীজ বপন। এর জন্য প্রথমে সুস্থ ও সংক্রমণ মুক্ত পুষ্ট বীজ বেছে নেওয়া হয়। অনেক সময় জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য বীজগুলিকে বিশেষ রাসায়নিকে ভিজিয়ে নেওয়া হয়। এরপর বীজগুলিকে নির্দিস্ট দূরত্বে মাটির মধ্যে বপন করা হয়।

বীজরোপণ

ধান এবং পেয়াজ, টমেটো প্রভৃতি কিছু সব্জির বীজ প্রথমে বীজতলায় বপন করা হয়। এবার বীজ থেকে চারাগাছ বের হলে তাদের মধ্যে থেকে সুস্থ ও নীরোগ চারাগুলিকে বেছে নিয়ে জমিতে পোঁতা হয়।

  • জমিতে সারপ্রয়োগ

উদ্ভিদের সঠিকভাবে বৃদ্ধি হবার জন্য যে সব মৌল গুলির প্রয়োজন হয় তাদের উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বলা হয়। উদ্ভিদের এই পুষ্টি বা খাদ্য উপাদান দুই প্রকার হয়। N, P, S, Mg, C প্রভৃতি হল মুখ্য খাদ্য উপাদান এবং Mn, Fc, Zn, Cu প্রভৃতি হল উদ্ভিদের গৌণ খাদ্য উপাদান।
একই জমিতে বারবার চাষ করার ফলে জমিতে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান কমে যায়। ফলে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পায়। মাটিতে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য যে বিশেষ পদার্থ যোগ করা হয় তাকে সার বলে। সার জৈব ও অজৈব এই দুই প্রকার হয়।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং তাদের বর্জ্য পরিচয়ে জৈব বা Organic সার তৈরী করা হয়। এই ক্ষেত্রে জৈব বর্জ্য গুলিতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিয়োজন ক্রিয়ার ফলে জৈব সার উৎপন্ন হয়।
কারখানায় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা তৈরী হয় অজৈব সার বা Inorganic Fertilizer যা মূলত নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P ) এবং পটাশিয়াম (K) এই তিনটি মৌলের ঘাটতি পূরণ করে। অজৈব সার বিভিন্ন শস্যের ভালো ফলনের জন্য সাহায্য করে, কিন্তু অজৈব সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট করে। অতিরিক্ত অজৈব সারের প্রয়োগ জলের দূষণ বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।

সারের প্রয়োগ

সার ব্যবহার না করেও জমির উর্বরাশক্তি প্রাকৃতিক ভাবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। জমিকে চাষ না করে মাঝে কিছু সময় ফেলে রাখলে জমির উর্বরা শক্তি ধীরে ধীরে ফিরে আসে।
প্রাকৃতিক ভাবে উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনার একটি পদ্ধতি হল শস্য আবর্তন।

এই পদ্ধতিতে কোন জমিতে একই ফসল প্রতিবার চাষ না করে মাঝে অন্য জাতীয় ফসল যেমণ শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ চাষ করা হয়।

মটর, ছোলা প্রভৃতি শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে রাইজোবিয়াম নামক এক প্রকার মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বাস করে। উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু উদ্ভিদ তা বাতাস থেকে সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। রাইজোবিয়ামগুলি বায়ু থেকে নাইট্রোজেন শোষণ করে উদ্ভিদের ব্যবহারযোগ্য যৌগ উৎপন্ন করে, যা উদ্ভিদ গ্রহণ করে নিজের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য। উদ্ভিদের ব্যবহারের পরেও মাটিতে প্রচুর নাইট্রোজেন যৌগ থেকে যায়। ফলে মাটির নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে জমিতে একই ফসল বারবার চাষ না করে মাঝখানে অন্য ফসল চাষ করা ভাল।

একই ফসল বারবার চাষের পরিবর্তে মাঝে অন্য প্রকার বিশেষ করে শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদ চাষ করাকে শস্য আবর্তন বলা হয়। শস্য আবর্তন দ্বারা জৈব পদ্ধতিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়।

  • জলসেচন

জল ছাড়া কোন জীব বেঁচে থাকতে পারে না। উদ্ভিদ দেহে প্রায় 90% জল থাকে। বীজের অঙ্কুরোদ্গম থেকে শুরু করে উদ্ভিদের পুষ্টি বৃদ্ধি, ফুল বা ফল সৃষ্টি সব ক্ষেত্রেই জলের গুরুত্ব অপরিসীম। জলের উপস্থিতি ব্যতীত বীজের অঙ্কুরোদ্গম সম্ভব নয়। যে সব পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণ মূল দ্বারা শোষিত হয় সেগুলি জল দ্বারা বাহিত হয়ে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গে পৌছায়। মাটির উপযুক্ত আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর কৃষিক্ষেত্রে জল সরবরাহ করা হয়, যা জলসেচ নামে পরিচিত।

চাষের জমিতে জলসেচন

সাধারণভাবে পুকুর, নদী, খাল- বিল, কুয়ো, নলকূপ প্রভৃতি উৎস থেকে জল সরবরাহ করে জলসেচ করা হয়। ইলেক্ট্রিক বা ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে বা বিভিন্ন চিরাচরিত পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়। কোন কোন স্থানে জলসেচ করতে সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তিও ব্যবহার করা হয়। এই চিরাচরিত পদ্ধতি গুলিতে খরচ কম হয়। কিন্তু এতে জলের অপচয় ঘটে। বর্তমানে জলসেচের জন্য অনেক আধুনিক পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। যেমন ব্যবহার করে চাষের জমিতে ফোয়ারার আকারে জল দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে পদ্ধতি ব্যবহার করে ঠিক গাছের গোড়াতে বিন্দু বিন্দু জল দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি গুলি চিরাচরিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশী কার্যকর হয় এবং এতে জলের অপচয়ও অনেক কম হয়।

  • আগাছা দমন

আগাছা হল চাষের জমিতে জন্মানো অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ। এই আগাছাগুলি কৃষিজমির স্থান দখল করে এবং মাটি থেকে জল ও পুষ্টি পদার্থ শোষণ করে। ফলে যে উদ্ভিদের চাষ ওই জমিতে করা হচ্ছে, তাদের বৃদ্ধি ও পুষ্টি ব্যবহৃত হয়।

আগাছা দমন

আগাছা নির্মূল করার জন্য অনেক সময় কৃষিকাজ শুরুর আগে আগাছাগুলি মাটি থেকে মূল সহ তুলে দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় আগাছাগুলো জোড়া থেকে কেটেও দেওয়া হয়। এছাড়া আগাছা দমন করার জন্য অনেক সময় জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয় না ফসলের কোন ক্ষতি করে না, কিন্তু আগাছাগুলিকে দমন করে।

  • ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ থেকে ফসল রক্ষা

যেসব কীটপতঙ্গ ফসল ধবংস করে বা খেয়ে নেয় তাদের Pest বা ফসল- ধ্বংসকারী প্রানী বলে। উই, পঙ্গপাল, ইঁদুর প্রভৃতি বিভিন্ন ভাবে ফসলের ক্ষতি করে। যেমন- উইপোকা উদ্ভিদের মূল খেয়ে নেয়। আবার পঙ্গপালরা ঝাঁক বেঁধে কৃষিক্ষেত্রে উড়ে আসে এবং গম, আখ প্রভৃতি উদ্ভিদ খেয়ে বিপুল ক্ষতি সাধন করে। আবার ইঁদুর ফলস খেয়ে ও কৃষি জমিতে গর্ত করে কৃষিকাজে ক্ষতি করে।

কীটনাশক প্রয়োগ

কীট পতঙ্গ ছাড়াও ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণে উদ্ভিদের নানা রকম রোগ দেখা যায়। যেমন ছত্রাক আক্রমণের ফলে আলুতে ধসা রোগ এবং গম গাছে মরিচা রোগ দেখা যায়। আবার উইল্ট রোগ, ধানের হোয়াইট স্পষ্ট ব্লাইট প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট রোগ। ক্ষতিকর প্রাণিদের থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য রাসায়নিক ও জৈবিক দুই প্রকার পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

i. রাসায়নিক পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি এবং অন্য ক্ষতিকর প্রাণী দ্রুত নাশ হয়। ক্ষতিকর প্রাণীর দ্রুত বিকাশ ঘটলেও রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও দেখা যায়।


রাসায়নিক দমন পদ্ধতি ব্যবহারের অসুবিধা

(ক) বারবার ব্যবহারের ফলে ওই রাসায়নিকের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর প্রাণীর শরীরে প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে বাঞ্ছিত সুফল পাওয়া যাবে না।
(খ) রাসায়নিকে প্রভাব প্রজাপতি বা মৌমাছির মত উপকারী পতঙ্গদের মৃত্যু হতে পারে।
(গ) রাসায়নিকগুলি সব্জি, ফল প্রভৃতির মাধ্যমে মানবদেহের প্রবেশ করে ক্ষতি সাধন করতে পারে।
(ঘ) রাসায়নিকগুলি কৃষিজমি থেকে জল দ্বারা বাহিত হয়ে পুকুর, নদী বা অন্যান্য জলাশয়ে পড়ে জলকে দূষিত করতে পারে, যা জলের বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দূষিত জল ব্যবহারের ফলে মানুষ ও অন্য প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে।

ii. জৈবিক দমন পদ্ধতি

কোন এক প্রকার জীব দ্বারা অন্য জীবের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিকে জৈবিক দমন পদ্ধতি বলা হয়। যেমন- বিশেষ কিছু প্রকার মাকড়সা ও পাখীরা ফসলের ক্ষতি সাধনকারী পতঙ্গ, পঙ্গপাল প্রভৃতি খেয়ে নেয়। ফলে তাদের সংখ্যা হ্রাস পায় এবং নিয়ন্ত্রণ থাকে।

  • ফসল তোলা

ফসল পুষ্ট হলে সঠিক সময়ে সেই ফসল তুলে নেওয়া হয়। ফসলের উপর নির্ভর করে কখনও তাদের হাতে করে তুলে নেওয়া হয়, আবার কখনও ভূমির উপর থেকে কাস্তে ব্যবহার করে কেটে নেওয়া হয়।
ধান, গম, যব প্রভৃতি দানা জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে ফসল কাটার পরে তার থেকে ভোজ্য দানাগুলি পৃথক করতে হয়। এই পৃথক করাকে বলা হয় মাড়াই। মাড়াই এর জন্য উদ্ভিদ গুলিকে সজোড়ে, মাটির উপর আছাড় দেওয়া হয়।

ফসল তোলা চলছে

আবার কখনও উদ্ভিদগুলি মাটিতে রেখে তাঁর উপর দিয়ে গরু, ষাঁড় প্রভৃতি গবাদি পশুদের হাঁটানো হয়। এর ফলে শস্য দানাগুলি পৃথক হয়ে ঝরে পড়ে।
মাড়াই-এর পরে শস্যদানা গুলিকে ভুষি থেকে পৃথক করা হয়। এই কাজকে ঝাড়াই বলা হয়।
এছাড়া বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে ফসল তোলা, মাড়াই, ঝাড়াই সকল কাজই করা সম্ভব হয় এবং এতে সময়ও অনেক কম লাগে।

  • ফসল সঞ্চয় বা মজুত করা

ফসল তোলার পর তা দীর্ঘ সময় ধরে মজুত করার প্রয়োজন হয়। দানা জাতীয় শস্য প্রথমে রোদে শুকিয়ে তার আর্দ্রতা কমানো হয়। কারণ আর্দ্রতা কম হলে পোকা, ছত্রাক প্রভৃতির আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

ধানের গোলা

মজুত শস্যের পরিমাণ অনেক বেশী হলে তা উন্নত মানের শস্যাগারে সঞ্চয় করা হয়। এই শস্যাগারগুলিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রের ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া এগুলি বায়ুহীন হয়, বা এখানে নাইট্রোজেন গ্যাস পাঠানো হয়, যাতে কীট পতঙ্গ এখানে না জীবিত থাকতে পারে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → উদ্ভিদজাত খাদ্য চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_science_14a