uttor-america
WB-Class-8

উত্তর আমেরিকা । অষ্টম শ্রেণির ভূগোল নবম অধ্যায়

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – উত্তর আমেরিকা

আগের পর্বে আমরা জেনেছি ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা উত্তর আমেরিকা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ত্রিভুজাকৃতির মহাদেশ হল উত্তর আমেরিকা। আয়তনে এটি তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ এবং ভারতের প্রায় ছয়গুণ বড়। 1501 খ্রিষ্টাব্দে আমেরিগো ভেসপুচি নামে এক পর্তুগিজ নাবিক এই মহাদেশটি আবিষ্কার করেন। মহাদেশটি দক্ষিণে 7° উত্তর অক্ষাংশ থেকে 84° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এবং পূর্বদিকে 20° পশ্চিম দ্রাঘিমা তগেকে পশ্চিমে 173° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।


উত্তর আমেরিকা অধ্যায়টি খুব সহজে বুঝে নাও এই ভিডিও থেকে↓


উত্তর আমেরিকা মহাদেশটি চারদিকেই জলভাগ দিয়ে ঘেরা। যেমন – উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর রয়েছে। উত্তরে অবস্থিত বেরিং প্রণালী এশিয়া মহাদেশ থেকে উত্তর আমেরিকাকে পৃথক করে রেখেছে। আর দক্ষিণে অবস্থিত পানামা খাল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে।

এই মহাদেশের মোট দেশের সংখ্যা 23 টি। প্রধান নদী মিসিসিপি মিসৌরি যার দৈর্ঘ্য 6270 কিমি। উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ হল ম্যাককিনলে, 6195 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই পর্বতশৃঙ্গটি আলাস্কা রেঞ্জে অবস্থিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বিখ্যাত শহরগুলি হল – ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, শিকাগো, টরেন্টো।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

উত্তর আমেরিকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য

ক) ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য – ভূপ্রাকৃতিক তারতম্যের ভিত্তিতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

• পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল বা কর্ডিলেরা

এই অঞ্চলটির উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর উত্তরে বেরিং প্রণালী থেকে শুরু করে দক্ষিণে পানামা খাল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশীয় পাতের অভিসারী সীমানা বরাবর এই সংঘর্ষের ফলে এই নবীন ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার প্রধান প্রধান পর্বতশ্রেণীগুলি হল – কোস্ট রেঞ্জ, আলাস্কা রেঞ্জ ও ব্রুক্স রেঞ্জ। পশ্চিমের এই পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান নদীগুলি হল – ইউকন, কলোরাডো, কলম্বিয়া, ফ্রেজার। এই নদীগুলির প্রবাহপথে অনেক উপত্যকা, অবনমিত অঞ্চল ও গিরিখাত সৃষ্টি করে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে মিলিত হয়েছে।

• মধ্যভাগের সমভূমি অঞ্চল

পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল ও পূর্বভাগের উচ্চভূমি অঞ্চলের মাঝে উত্তরে সুমেরু থেকে দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে এই সমভূমি অবস্থান করছে। এই বৃহৎ সমভূমি অঞ্চল প্রধানত ম্যাকেঞ্জি, সেন্ট লরেন্স, মিসিসিপি মিসৌরি প্রভৃতি নদীগুলোর অববাহিকার অন্তর্গত, নিম্ন মালভূমি ও টিলা থাকার জন্য এই অঞ্চলটি সামান্য তরঙ্গায়িত। এই সমভূমির উত্তরে রয়েছে ক্যানাডিয়ান শিল্ড, যেটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখণ্ডের অংশবিশেষ।

দীর্ঘদিন ধরে হিমবাহ ক্ষয়কাজের ফলে এই অঞ্চলটি একটি সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ক্ষয়কাজের ফলে অবনমন ঘটে সমপ্রায় ভূমিতে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে গ্রেট বিয়ার, গ্রেট স্লেভ ইত্যাদি হ্রদ বিখ্যাত। দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে পাঁচটি বৃহৎ হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে, যথা – সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি ও অন্টারিও। এই পাঁচটি হ্রদকে একত্রে পঞ্চহ্রদ বলা হয়। এই বিশাল সমপ্রায় ভূমিকে আবার চারটি ভূপ্রাকৃতিক ভাগে ভাগ করা হয় –

1. সেন্ট লরেন্স নদীর অববাহিকার সমভূমি – এটি পূর্ব উচ্চভূমি অঞ্চল ও ক্যানাডিয়ান শিল্ড অঞ্চল।
2. হ্রদ অঞ্চলের সমভূমি – পঞ্চহ্রদের দক্ষিণ তীরের এলাকা এর অন্তর্গত।
3. প্রেইরি সমভূমি – মধ্যভগের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই তৃণভূমি রয়েছে, তাই একে তৃণ বা প্রেইরি সমভূমি বলে।
4. মিসিসিপি-মিসৌরি অববাহিকার সমভূমি – পূর্বদিকের উচ্চভূমি ও পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যবর্তী অংশ। এই সমভূমির দক্ষিণে নদীর মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে।

• পূর্বদিকের উচ্চভূমি –

উত্তরে ল্যাব্রাডর থেকে দক্ষিণে আলাবামা পর্যন্ত মহাদেশের সমগ্র পূর্বভাগ জুড়ে এই উচ্চভূমি অবস্থিত। তিনটি প্রধান উচ্চভূমি নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত, যথা – উত্তরের ল্যাব্রাডর মালভূমি, মধ্যভাগের নিউ ইংল্যান্ড উচ্চভূমি, এবং দক্ষিণে অ্যাপালেশিয়ান পার্বত্য অঞ্চল।

প্রধান নদনদী

সেন্ট লরেন্স নদীর দৈর্ঘ্য 1120 কিমি। অন্টারিও হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী আটলান্টিক মহাসাগরে পরেছে।
• উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি-মিসৌরি যার দৈর্ঘ্য 6270 কিমি। সুপিরিয়র হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী মেক্সিকো সাগরে পরেছে।
• কলোরাডো নদী রকি পার্বত্য অঞ্চল থেকে ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে পরেছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য 2300 কিমি।
• ম্যাকেঞ্জি নদী আথাবাস্কা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর সাগরে পরেছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য 4200 কিমি।
কলম্বিয়া নদী সেলকিরক পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পরেছে।

জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ

মহাদেশের মধ্যভাগের অঞ্চলগুলো সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ার জন্য এখানকার জলবায়ু মহাদেশীয় বা চরম প্রকৃতির। দক্ষিণে সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু সামুদ্রিক বা সমভাবাপন্ন প্রকৃতির। জলবায়ুগত বৈচিত্র্য খুব বেশি করে এই মহাদেশে থাকায় স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রজাতিতেও নানান বৈচিত্র্য দেখা যায়।



অর্থনৈতিক অবস্থা

কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রে বহুমূখী এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এই তিনটি দেশ, এমনকি সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। 2014 সালের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু বার্ষিক আয় 54980 ডলার এবং বাকি তিনদেশের তুলনায় অর্থনীতিতে প্রযুক্তিগতভাবেও উন্নত। 2010 সালের অথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির 76.7% অবদান সেবাখাতের, 22.2% অবদান বিভিন্ন শিল্পকারখানার এবং 1.2% অবদান কৃষিখাতের।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব →দক্ষিণ আমেরিকা

লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী শ্রীপর্ণা পাল। পড়াশোনার পাশাপাশি, গান গাইতে এবং ভ্রমণে শ্রীপর্ণা সমান উৎসাহী।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_Geo_9a