stir_torit_adhan
WB-Class-8

স্থির তড়িৎ আধান

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – স্পর্শ ছাড়া ক্রিয়াশীল বল (চতুর্থ পর্ব)

আমরা জানি যে ঘর্ষণের ফলে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। স্থির তড়িৎ সম্পর্কে জানতে তোমরা আগের পর্বটি এই লিঙ্ক থেকে – স্থির তড়িৎ বল ও আধানের ধারণা দেখে নিতে পারো।

ধরা যাক একটি বেলুনকে পশমের চাদর দিয়ে ঘর্ষণ করা হল। দেখা যাবে যে পশমের চাদর ও বেলুন একে অন্যকে আকর্ষণ করছে। এবার একই ভাবে দুটি বেলুন নিয়ে দুটিকেই ওই পশমের চাদর দিয়ে ঘর্ষণ করা হল। দেখা যাবে যে উভয় বেলুনই আকর্ষণের কারণে পশমের চাদরের গায়ে লেগে আছে।
বলতো কেন এমন হয়?

হ্যাঁ একদম ঠিক বুঝেছ, এর কারন হল স্থির তড়িৎ।
এখন ওই বেলুন দুটিকে দুটি সুতো দিয়ে পাশাপাশি ঝুলিয়ে দিলে দেখা যাবে যে বেলুন দুটি একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, অর্থাৎ বিকর্ষণ হচ্ছে।

এই পরীক্ষা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তড়িৎ আধান দুই প্রকার।

ঘর্ষণের ফলে পশম চাদরে যে আধান সৃষ্টি হয় বেলুনে অন্য আধান সৃষ্টি হয় এবং তারা একে অন্যকে আকর্ষণ করে। আবার উভয় বেলুনকে পশম দিয়ে ঘর্ষণের ফলে বেলুনগুলিতে এক জাতীয় আধান সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা একে অন্যকে বিকর্ষণ করছে।এর থেকে আমরা স্থির তড়িৎ বিজ্ঞানের যে মূল সূত্রটি পাই সেটি হল —

সম জাতীয় তড়িৎ আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত জাতীয় তড়িৎ আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে।

বিজ্ঞানের কচকচানি ছাড়ো। চলে এসো স্কুল থেকে ফেরার পথে টুকটাক পেটপুজোয়। মনে পরছে নিশ্চয়ই কি সুন্দর বাবা মাকে লুকিয়ে ফুচকা, ভেলপুরি, চুরমুর, আইসক্রিম এসব খাও! আচ্ছা বলতো ঝাল ঝাল ফুচকা খাবার পড়ে মনটা কি চায়? হুম বুঝেছি বুঝেছি। মন তখন মিষ্টি মিষ্টি আইসক্রিমকে আকর্ষণ করে, তাই না! ফুচকার ঝালের কারণে তখন ঝাল ঝাল ভেলপুরি (সমজাতীয় হওয়ায়) নৈব নৈব চ!

অর্থাৎ চলার পথের এই সব হালকা ঘটনাগুলির মধ্যেও কিন্তু তুমি খুঁজলে বিজ্ঞানকে পাবে। আর পড়ার সময় পড়ার কঠিন কঠিন বিষয় বস্তুগুলিকে এই সকল দৈনন্দিনকার ছোট্ট ছোট্ট ঘটনার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়লে আর দেখবে কখনই ‘গুলিয়ে’ যাবেনা। [তবে পরীক্ষার খাতাতে আবার এসব লিখে এসোনা। তাহলে কিন্তু পিঠে কিছু ‘ঝাল’ ‘ঝাল’ খাবার পরতে পারে।]

বিখ্যাত আমেরিকান বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের নাম তোমরা শুনেছ? তিনি এই দুই জাতীয় তড়িৎ আধানকে পজেটিভ বা ধনাত্মক তড়িৎ এবং নেগেটিভ বা ঋণাত্মক তড়িৎ নামকরণ করেছিলেন।

পজেটিভ তড়িৎ + এবং নেগেটিভ তড়িৎকে – চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রতি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত যাদের পরমাণু বলা হয়। হাইড্রোজেন ব্যতীত প্রত্যেক পদার্থের পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। প্রোটন ও নিউট্রন কেন্দ্রে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে, আর ইলেকট্রন তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে পাক খায়। অনেকটা আমাদের সৌরজগতের মতন। এইক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কেবলমাত্র হাইড্রোজেন পরমাণু, যেখানে একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রন থাকে, কিন্তু কোন নিউট্রন থাকে না।

প্রোটনগুলি ধনাত্মক তড়িৎযুক্ত, ইলেকট্রন ঋণাত্মক তড়িৎযুক্ত আর নিউট্রন নিস্তড়িৎ।

আচ্ছা বলতো পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় কেন?

এর কারণ, একটি প্রোটনে যে পরিমাণ ধনাত্মক তড়িৎ থাকে, ইলেকট্রনেও ঠিক একই পরিমাণ ঋণাত্মক তড়িৎ থাকে। কোন পরমাণুতে সমসংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। এর ফলে পরমাণুতে কোন তড়িৎ ধর্ম প্রকাশ পায় না, তাই সেটি নিস্তড়িৎ।

সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেক পরমাণুর প্রোটনের ধনাত্মক তড়িৎকে প্রশমিত করার জন্য যে কটি ইলেকট্রন প্রয়োজন তা ওই পরমাণুতে বর্তমান থাকে। আকর্ষণ বল দ্বারা ইলেকট্রনগুলি আবদ্ধ থাকে। কিন্তু প্রত্যেকটি পরমাণুর ঐ নির্দিষ্ট ইলেকট্রনগুলির চেয়ে অতিরিক্ত ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ থাকে। অতিরিক্ত ইলেকট্রনের প্রতি এই আকর্ষণ সব পরমাণুতে সমান নয়।

এই কারণে যখন একটি বস্তুকে অন্য বস্তু দ্বারা ঘর্ষণ করা হয় তখন যে বস্তুর এই আকর্ষণ বল অধিক সেটি অন্য বস্তুর ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনের কারণে নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে অন্য বস্তুটিতে ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কমে যায় ফলে সেটি পজেটিভ তড়িৎগ্রস্ত হয়ে যায়।

এই কারণের জন্য কাঁচদন্ডকে সিল্কের কাপড় দিয়ে ঘর্ষণ করলে সিল্কের ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি বা আকর্ষণ বেশী হওয়ার কারণে কিছু ইলেকট্রন কাঁচদন্ড থেকে বিচ্যুত হয়ে সিল্কের সাথে যুক্ত হয়। ফলে সিল্ক কাপড়টি ঋণাত্মক তড়িৎ ও কাঁচদন্ডটি ধনাত্মক তড়িৎ দ্বারা আহিত হয়।

অর্থাৎ এখন বলা যায় যে সমতড়িৎ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে আর বিপরীত জাতীয় তড়িৎ পরস্পরকে আকর্ষণ করে।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

1785 খ্রী বিখ্যাত ফরাসী বিজ্ঞানী চার্লস অগাস্টিন দি কুলম্ব প্রথম তড়িতের এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের পরিমাণ নির্ণয় করেন। এই সম্পর্কিত সূত্রটি কুলম্বের সূত্র নামে পরিচিত।

কুলম্বের সূত্র

দুইটি বিন্দু তড়িতাধানের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধান দুটির গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

কেমন চেনা চেনা লাগছে না? হুম ঠিক ধরেছ একেবারে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের মত। যাদের মনে পড়ছে না  তারা এই লিঙ্কে ক্লিক করে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারো – অভিকর্ষ ও মহাকর্ষ

ধরা যাক, q1 এবং q2 দুটি বিন্দু তড়িতাধান দূরত্বে রাখা আছে। তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল হলে কুলম্বের সূত্রানুসারে আমরা পাই;

F = K\frac{q_1.q_2}{r^2}

বলতো কুলম্বের সুত্রে K এর মান কিসের ওপর নির্ভরশীল?

K এর মান নির্ভর করে –

বস্তু দুটির মাধ্যমের উপর অর্থাৎ বস্তু দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে কি পদার্থ আছে তার উপর K এর মান নির্ভর করে।

CGS পদ্ধতিতে শূন্য মাধ্যমে K এর মান 1।

এই K কুলম্ব কনস্‌ট্যান্ট বা কুলম্ব ধ্রুবক নামে পরিচিত।

অধ্যায় সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখাটি, অডিও, ভিডিও বা অন্য কোন ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

Ch-2-d