sokti
WB-Class-9

শক্তি | স্থিতিশক্তি | গতিশক্তি

ভৌত বিজ্ঞাননবম শ্রেণি – কার্য, ক্ষমতা ও শক্তি (দ্বিতীয় পর্ব)

মুল আলোচনায় আসার আগে আমাদের প্রথমে বুঝে নিতে হবে যে শক্তি কাকে বলে?

সাধারণ ভাবে কোন বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকেই বলে শক্তি।

এখন কাজ করা বা কৃতকার্য কোন বস্তুর দ্বারা করা হতে পারে বা বস্তুর উপরেও করা হতে পারে। যদি বস্তুর উপরে কাজ করা হয় তবে তা বস্তুর মধ্যে স্থিতিশক্তি হিসাবে সঞ্চিত থাকে বা বস্তুকে পরে কাজ করতে সাহায্য করে।

যাই হোক, এক্ষেত্রে একটা কথা পরিষ্কার যে কার্য আর শক্তি আসলে সমতুল্য, এই কারণে কৃতকার্যের C.G.S একক আর্গ ও S.I একক জুল দ্বারাই শক্তির পরিমাপ করা হয়

সাধারণ ভাবে শক্তি দুই প্রকার, স্থিতিশক্তি এবং গতিশক্তি।

স্থিতিশক্তি (Potential energy)

স্থির অবস্থায় থাকা কোন বস্তু তার অবস্থার জন্য যে শক্তি নিজের মধ্যে সঞ্চিত রাকে যার দ্বারা ঐ বস্তু পরবর্তীকালে কোন কাজ করতে পারে তাকে স্থিতি শক্তি বলা হয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে যদি ‘h’ উচ্চতায় তোলা হয় তবে তার এই উচ্চতায় ওঠার জন্য যে পরিমাণ কার্য করতে হয় সেটাই বস্তুর মধ্যে সঞ্চিত তাকে।

সুতরাং, এক্ষেত্রে বস্তুর স্থিতিশক্তির পরিমাণ = (mg) × h = m.g.h

[এক্ষেত্রে mg = অভিকর্ষ বল, যেখানে m বস্তুর ভর ভর ও g = অভিকর্ষজ ত্বরণ]

গতিশক্তি (Kinetic energy)

কোন বস্তুর গতির কারনে বস্তুটির মধ্যে যে কাজ করার সামর্থ্য জন্মায় তাকে ঐ বস্তুর গতিশক্তি বলে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমরা ধাক্কা মারার আগে যদি কিছুটা দৌড়ে আসি তবে ধাক্কার কারণে প্রযুক্ত বল অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় বা যে বস্তুর উপরে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে তার সরণ ও বৃদ্ধি পায়।

সাধারণভাবে বস্তুর গতিশক্তি পরিমাণ করা হয়, নিম্নলিখিত সুত্রের সাহয্যে

গতিশক্তি = ½ বস্তুর ভর × (বস্তুর গতিবেগ)2

= ½ mv2

সাধারণভাবে কোন বস্তুর মধ্যে থাকা শক্তি যা মোট যান্ত্রিক শক্তি নামে পরিচিত তা এই স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির মিশ্রণ হয়ে থাকে।

অর্থাৎ মোট যান্ত্রিক যান্ত্রিক = স্থিতিশক্তি + গতিশক্তি

বা, মোট যান্ত্রিক শক্তি = mgh + ½ mv2

এখন কোন বস্তু যদি গতিশীল অবস্থায় থাকে তবে mgh = 0

সুতরাং, সেক্ষেত্রে মোট যান্ত্রিক শক্তি = mgh + ½ mv2

আবার কোন কারণে বস্তু যদি স্থির অবস্থায় থাকে তবে v = 0 ফলে ½ mv2 = 0

সুতরাং, গতিশক্তি = mgh

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে অবাধে অর্থাৎ বাধাহীন ভাবে কোন বস্তু যদি অভিকর্ষের প্রভাবে নিচে পড়ে তবে যে কোন অবস্থায়েই তার মোট যান্ত্রিক শক্তি ধ্রুবক এবং এর মান = mgh।

যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা – প্রমান

যান্ত্রিক-শক্তির-নিত্যতা-প্রমান

ধরে নেওয়া যাক একটি বস্তু, যার ভর = m, বস্তুটিকে A অবস্থান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং A অবস্থানে বস্তুটির বেগ v = 0

সুতরাং গতিশক্তি = mgh + ½ mv2 = 0

এখন A অবস্থান থেকে ভুমির উচ্চতা = h

সুতরাং A অবস্থানে স্থিতিশক্তি = mgh

A অবস্থানে মোট যান্ত্রিক শক্তি = mgh + 0 = mgh —– (i)

এরপর ধরি, বস্তুটি A অবস্থান থেকে B অবস্থানে নেমে এসেছে। AB = x

সুতরাং এই অবস্থায় বস্তুটি ভূমি থেকে (h -x) উচ্চতায় আছে, সুতরাং স্থিতিশক্তি = mg (h – x)

আবার ধরা যাক বস্তুটি B অবস্থানে এসে V1 গতিবেগ লাভ করে।

সুতরাং, গতিয় সমীকরণ

V2 = u2  + 2as থেকে পাই

V = V1, u = 0, s = x এবং a = g

V12 = 2gx

সুতরাং B অবস্থানে বস্তুর গতিশক্তি = ½ mV12

= ½ × m × 2gx

= mgx

সুতরাং ‘B’ অবস্থানে মোট যান্ত্রিক শক্তি = mg (h – x) + mgx = mgh – mgx + mgx

= mgh —– (ii)

এরপর ধরি, বস্তুটি ‘C’ অবস্থানে অর্থাৎ মাটি স্পর্শ করার মুহুর্তে আসে। এই অবস্থানে বস্তু ও মাটির মধ্যে দূরত্ব = ০

এখন ধরি বস্তুটি এই অবস্থায় এসে V2 বেগ লাভ করে। সুতরাং আবার V2 = u2 + 2ag

গতিয় সমীকরণটি আবার বসিয়ে পাই –

এক্ষেত্রে v = v2, u = 0 (অবস্থানে বেগ)

a = g, s= h (বস্তুটি মোট যে উচ্চতা অতিক্রম করে)

v22 = 2. g. h

সুতরাং গতিশক্তি = ½ × m × 2 . gh = mgh

সুতরাং বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি = 0 + mgh = mgh —– (iii)

সুতরাং (i), (ii) এবং (iii) সকল সমীকরণ থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, যে কোন অবস্থানেই অবাধে পতনশীল কোন বস্তুর মোট যান্ত্রিক শক্তি ধ্রুবক যার মান mgh।

এখন বস্তু যদি কোন আনত তল বরাবর একইভাবে বাধাহীন ভাবে পড়ে সেক্ষেত্রেও একই গাণিতিক বিশ্লেষনের দ্বারা প্রমান করা যাবে যে মোট যান্ত্রিক শক্তি সেক্ষেত্রেও ধ্রুবক থাকবে এবং সেক্ষেত্রেও মান হবে mgh।

তবে চিত্রটি কেবল নিচের চিত্রটির মত কিছুটা পরিবর্তন করে নিতে হবে।

আনত-তলে-বস্তুর-পতন


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

ভরবেগ ও গতিশক্তির সম্পর্ক

আমরা জানি গতিশক্তি = E_{k} = \frac{1}{2}m v^{2}

বা, E_{k} = \frac{1}{2} \frac{m v^{2}\times m}{m}

বা, E_{k} = \frac{1}{2m} m^{2} v^{2} = \frac{m^{2} v^{2}}{2m}

এখন আমরা জানি কোন বস্তুর ভরবেগ = ভর × বেগ = m v = p

\therefore E_{k} = \frac{P^{2}}{2m}

এখন উপরোক্ত সম্পর্কটি থেকে আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি, যেমন –

১। যদি সম্পর্কটিতে ভর ধ্রুবক হয়, তবে গতিশক্তি ∝ ভরবেগ

বা, গতিশক্তি ∝ (বেগ)2

অর্থাৎ বস্তুর বেগ যত বৃদ্ধি পাবে গতিশক্তিও তত বৃদ্ধি পাবে।

২। সম্পর্কটিতে যদি বেগ ধ্রুবক হয়

অর্থাৎ একই বেগ বিশিষ্ট ভারি বস্তুর গতিশক্তি হাল্কা বস্তু অপেক্ষা বেশি। একই কারনেই গতিশীল ভারি বস্তুকে হাল্কা বস্তু অপেক্ষা থামানো কঠিন।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

যন্ত্র

যন্ত্র হল এমন একটি সংস্থা যার মাধ্যমে কৃতকার্য স্মপাদনের দ্বারা আমরা যান্ত্রিক সুবিধা লাভ করে থাকি; তবে সর্বক্ষেত্রেই যে যান্ত্রিক সুবিধা লাভ করা সম্ভব এমনটা বলা যায় না।

এবার আমরা যান্ত্রিক সুবিধা ব্যাপারটা বুঝে নেব।

যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা

যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা বলতে বোঝায় যন্ত্রের দ্বারা কৃত কার্য ও যন্ত্রের উপর কৃতকার্য এই দুইয়ের অনুপাতকে।

সাধারণ ভাবে এই অনুপাতটি η (ইটা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে η একটি এককহীন রাশি। কারণ এটি দুটি একই রাশির অনুপাত।

energy-3

এখন যন্ত্রের কয়েকটি অংশ থাকে।

বলবাহু

এই অংশে বল প্রযুক্ত করে যন্ত্রের উপর কার্য করা হয়।

সুতরাং, যন্ত্রের উপরে কার্য = প্রযুক্ত বল × বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ

তবে বলবাহুর সংজ্ঞা বলতে গেলে প্রথমে জানা প্রয়োজন আলম্ব কাকে বলে।

আসলে কোন একটি যন্ত্রের একটি বাহুরই কোন অংশে আলম্ব স্থাপনের মাধ্যমে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। বলের প্রয়োগ বিন্দু ও আলম্বের মধ্যে দূরত্বকেই বলবাহু বলা হয়। (উপরের চিত্রে যা AB)

আলম্ব

আলম্ব হল যন্ত্রের এমন একটি বিন্দু যার সাপেক্ষে বল বাহু বা ভারবাহু প্রযুক্ত বল বা ভার সাপেক্ষে ঘুরতে পারে (উপরের চিত্রে যা B)।

ভারবাহু

আলম্ব ও যন্ত্রের যে অংশে ভার বা ওজন চাপানো হয়েছে তার মধ্যবর্তী দূরত্ব (উপরের চিত্রে যা BC)।

পরবর্তী পর্ব → ক্যালোরিমিতি কাকে বলে?


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-PSc-5-b

Dr. Mrinal Seal
ডঃ মৃণাল শীল সাঁতরাগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার একজন জনপ্রিয় শিক্ষক। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘুরে বেড়াতে ও নানান ধরণের নতুন নতুন খাবার খেতেও পছন্দ করেন ডঃ শীল।