angsik-paton
WB-Class-9

আংশিক পাতন

ভৌতবিজ্ঞাননবম শ্রেনি – অধ্যায়: মিশ্রণ (দ্বিতীয় পর্ব)

আমরা আগের পর্বে, মিশ্রণের পৃথকীকরণ সম্পর্কে এবং পাতন প্রক্রিয়া বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আংশিক পাতন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আংশিক পাতনের সংজ্ঞা

যে পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক তরল -উদ্বায়ী পদার্থ বা তাতে দ্রবীভূত থাকা গ্যাসকে সমসত্ত্ব মিশ্রণ থেকে তাদের স্ফুটনাঙ্কের ভিত্তিতে পৃথক করা হয়, তাকে আংশিক পাতন বলে।

আংশিক পাতনের সাথে সাধারণ পাতনের প্রভেদ হলো দ্রাবেসাধারণ পাতনে দ্রাবটি অপেক্ষাকৃত অনুদ্বায়ী হয়। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দ্রাবককে (সাধারণতঃ তরল) বাষ্পীভূত করলেও দ্রাবটি বাষ্পীভূত হয় না। ফলে দ্রাবকটি দ্রবণ থেকে বাষ্পীভূত হয়ে পৃথক হয়ে যায়। তখন আবার দ্রাবক বাষ্পকে ঠান্ডা করলে আমরা  দ্রাবকটি ফিরে পাই।

কিন্তু আংশিক পাতনে দ্রবণের প্রত্যেকটি উপাদানের প্রায় প্রত্যেকটিই খুব কাছাকাছি উষ্ণতায় ফুটতে থাকে। অর্থাৎ এরা প্রায় সমান উদ্বায়ী। তাই এদের পৃথক করতে fractionating column বা পাতন স্তম্ভের সাহায্য নেওয়া হয়।

আংশিক পাতন পদ্ধতি

angsik-paton-process

  1. Laboratory পদ্ধতিতে কাঁচের টিউবের মধ্যে কাঁচের নল রেখে স্ফুটন পাত্রে উৎপন্ন বাষ্পের চলার পথ বাড়ানো হয়।
  2. এই দীর্ঘ পথে যেতে যেতে বাষ্প তাপ হারিয়ে ঘনীভূত হয়।
  3. ঘনীভূত হবার পর দ্রবণের উপাদানটি পুনরায় স্ফুটন পাত্রে জমা পড়ে।
  4. একাধিক উপাদান ওই স্ফুটন পাত্রে রাখা থাকলে, যেটি বেশি উদ্বায়ী সেটি ওই কাঁচের পথ দ্রুত অতিক্রম করে শীতক যন্ত্রে প্রবেশ করবে এবং ঘনীভূত হয়ে পৃথক সংগ্রহ পাত্রে লব্ধ হবে।
  5. এইভাবে ওই উপাদান মিশ্রণ থেকে সম্পূর্ণ  নিষ্কাশিত হলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দ্বিতীয় উপাদানকে একইভাবে পৃথক সংগ্রহ পাত্রে সংগৃহীত করা হবে।
  6. এই প্রক্রিয়া যতক্ষণ পর্য্যন্ত সকল উপাদান পৃথক না হয় ততক্ষণ চলতে থাকবে।

নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

আংশিক পাতনের প্রয়োগ

পরীক্ষাগার ছাড়াও শিল্পক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে।

crude-oil-distillation
খনিজ তেল পরিশোধন প্রক্রিয়া [চিত্র সৌজন্য – edublogs.org]
যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায় – মাটির তলা থেকে যখন কাঁচা তেল তোলা হয় তখন তাতে স্বল্প থেকে বেশি উদ্বায়ী অনেক রাসায়নিক দ্রবীভূত থাকে। ফলে একে দেখতে অনেকটা থকথকে নরম কঠিন জেলির মতো হয়। এদের উদ্বায়ীতার পৃথক হওয়ার কারণ এদের আণবিক গুরুত্ব।

মনে রাখতে হবে – “যে যৌগ বা মৌল যত ভারী হয়, অর্থাৎ যার আণবিক গুরুত্ব যত বেশি হয়, সাধারণভাবে তারা তত বেশী অনুদ্বায়ী হয়।”

এই প্রায় তরল প্রায় কঠিন মিশ্রণটিকে 350o সেলসিয়াস উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে সর্বোচ্চ স্থানে 20-30o সেলসিয়াসে CNG আর LPG , তারপর ঠিক তার নিচে 70o সেলসিয়াসে পেট্রল নিষ্কাশিত ও সংগৃহীত হয়।

তারপর ক্রমশ, 120o সেলসিয়াসে ন্যাপথা, 180o সেলসিয়াসে কেরোসিন, 260o সেলসিয়াসে ডিজেল, 300o সেলসিয়াসে লুব্রিকেটিং তেল ও সবথেকে নিচে 350o সেলসিয়াসে ফুয়েল তেল সংগৃহীত ও নিষ্কাশিত হয়। তারপরেও যে অনুদ্বায়ী পদার্থ পড়ে থাকে সেটা residue হিসেবে পড়ে থাকে। এরকম একটি বিখ্যাত বহুলব্যবহৃত residue হলো বিটুমিন যা দিয়ে রাস্তা তৈরী হয়।

আগামী পর্ব → বিয়োজী ফানেল ও দ্বিস্তরীয় আস্রাবণ প্রক্রিয়া ।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-PS-4.4_B