বাংলা – নবম শ্রেণি – কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি (পদ্য)
‘কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতাটির প্রেক্ষাপট
দেবীচণ্ডী মর্তে নিজের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য ইন্দ্রের পুত্র শিবভক্ত নীলাম্বরকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। নীলাম্বর ধর্মকেতু ব্যাধের পুত্র কালকেতু রূপে জন্মগ্রহণ করেন, যথাসময়ে তার বিবাহ হয় ফুল্লরার সঙ্গে। কালকেতু ছিলেন ব্যাধ। ব্যাধ অর্থাৎ যারা বনে বন্য প্রাণী শিকার করে, সেই প্রাণীর মাংস, চামড়া, শিং ইত্যাদি বিক্রি করে সেই টাকায় ক্ষুন্নিবৃত্তি করেন।
কালকেতু ছিলেন নিপুণ শিকারি, তাঁর পশু শিকারে বনের পশুরা ভয় পেয়ে দেবী চণ্ডীর আরাধনা করলে, দেবী পশুদের অভয় দান করে তাদের মায়াবলে অদৃশ্য করে দিয়ে নিজে স্বর্ণগোধিকার রূপ ধারণ করেন। সেদিন কালকেতু কোন পশুশিকার করতে না পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে বাড়ী ফেরার সময়, পথে পড়ে থাকা স্বর্ণগোধিকাকে ক্ষুন্নিবৃত্তি করার জন্য বাড়ী নিয়ে যান। এরপর তাঁর স্ত্রী ফুল্লরার সামনে অপূর্ব নারীর রূপ ধারণ করেন দেবী।
পরে ফুল্লরার কাছে দেবী নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের বারোমাসের সুখ দুঃখের কথা শোনেন এবং তা দূর করার জন্য ধনরাশি প্রদান করেন। তারা ঐ ধনে ঐস্থানে গুজরাট নগরী গড়ে তোলেন। কিন্তু কোনো প্রজা না থাকায় তারা দেবীর আরাধনা শুরু করেন প্রজার আনয়ন এর জন্য। গুজরাটের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ছিল কলিঙ্গ, সেই রাজ্য থেকে প্রজা আনার জন্য দেবী চণ্ডী দেবী গঙ্গাকে নদনদীতে অতিপ্লাবন (কলিঙ্গ রাজ্যে বিপর্যয় ঘটানোর জন্য) ঘটানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু গঙ্গাদেবী তাঁর অনুরোধ অস্বীকার করলে দেবী দেবরাজ ইন্দ্রকে অতিবৃষ্টির অনুরোধ করেন। ইন্দ্রদেব তাঁর অনুরোধ রেখে কলিঙ্গের আকাশে ঘন কালো মেঘের সৃষ্টি করেন এবং প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত ঘটান। ফলে নদনদী জলস্ফীত হয়ে ওঠে। এই কবিতায় কলিঙ্গ দেশের সেই ঝড় বৃষ্টির বর্ণনা করা হয়েছে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
‘কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি’ কবিতাটির সারাংশ
দেবি-চন্ডীর অনুরোধে দেব ইন্দ্র কলিঙ্গ দেশের আকাশে কালো মেঘের সঞ্চার করেছেন। সেই গাঢ় কালো মেঘে আকাশ ভরে থাকায় চারিদিক কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। এই অন্ধকার এত গাঢ় যে কোন ব্যক্তি তাদের নিজেদের অঙ্গ – প্রত্যঙ্গই চিনতে পারছে না। ঈশান অর্থাৎ উত্তর পূর্ব কোণে বিদ্যুৎ পূর্ণ মেঘের সঞ্চার হয়েছে। উত্তর দিক থেকে মেঘ ছড়িয়ে পড়েছে সারা আকাশ জুড়ে। চার মেঘ সংবর্ত, আবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোন আকাশের চারিদিক থেকে অবিরাম জলবর্ষণ করছে।
প্রচণ্ড জোরে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। বিধ্বংসী ঝড় বৃষ্টি সৃষ্ট প্লাবনে কলিঙ্গের প্রজাসকল অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে । প্রচণ্ড জোরে ‘হুড় হুড় দুড় দুড়’ শব্দে ভারী ঝড় বইছে, এই অবস্থায় কলিঙ্গদেশের প্রজাসকল সমূহ বিপদের আশঙ্কায় নিজেদের বসতগৃহ বা ‘ভবন’ ছেড়ে পালাচ্ছে। ঝড়ের দাপটে সবুজ মাঠ ও গাছপালা ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে শস্য মাটিতে পড়ে গেলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আটটি দিক-হস্তী যেন তাদের জলধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাঙ যেমন লাফায়, ঠিক তেমন আকাশের বাজ কলিঙ্গ দেশের বুকে এসে পড়ছে (কবির ভাষায় ‘বেঙ্গ তড়কাবাজ’)। চার মেঘের উচ্চ গর্জনে কলিঙ্গবাসী নিজেদের কথা নিজেরাই শুনতে পাচ্ছে না। সাতদিন ধরে নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টি হয়ে চলেছে, এর মধ্যে একদিনও ‘রবির কিরণ’ অর্থাৎ সূর্যের আলো দেখা যায়নি। দিন ও রাত্রির মধ্যে আলাদা করে আর কোনো পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে না, শুধু মেঘের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। বজ্রপাত বন্ধ হবার আশায় প্রজারা বাকসিদ্ধ ঋষি জৈমিনির নাম স্মরণ করছে। চাষের কাজ বৃষ্টির জন্য বন্ধ (কবির ভাষায় ‘অছুক শস্যের কার্য’) ও বৃষ্টিতে ভিজে মাটির ঘরগুলি কমজোরি হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত বৃষ্টিতে ‘ভুজঙ্গ’ অর্থাৎ সাপও নিজের বাসস্থান হারিয়ে জলে ভাসমান। শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব চলছে, ঘরের চাল ভেদ করে ঠিক যেন ভাদ্র মাসের তাল পড়ছে।
[আরো পড়ুন – Fable কবিতার আলোচনা]
মা চণ্ডীর আদেশে পবনপুত্র বীর হনুমান ঝড়রূপে কলিঙ্গ দেশে ধ্বংসলীলা চালান, তিনি বড় বড় বাড়ি, মন্দির, গাছপালা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেন। নদনদীগুলি পর্বত প্রমাণ ঢেউ তুলে বাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন বাড়িঘর ঢেউয়ের মাথায় টলমল করে ভাসছে। শ্রী কবিকঙ্কণ তাঁর অম্বিকামঙ্গলে এই বিধ্বংসের কথা কাহিনী গান আকারে শোনান।
‘কলিঙ্গ দেশে ঝড়-বৃষ্টি’ কবিতার আলোচনার পাঠ?
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – উত্তর
1. কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতাটি কোন কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে?
কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতাটি কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে।
2. জৈমিনি কে?
জৈমিনি একজন বাকসিদ্ধ ঋষি, পূর্বমীমাংসা দর্শনের রচয়িতা, বেদের কর্মকাণ্ডের সূত্রগুলিকে সুসংবদ্ধ ও সংশোধন করা এনার প্রধান কৃতিত্ব। কথিত আছে যে এনার নাম স্মরণ করলে, বজ্রপাত বন্ধ হয়।
3. “কলিঙে সোঙরে সকল লোক” — ‘সোঙরে’ শব্দটির অর্থ কি?
সোঙর কথাটির অর্থ স্মরণ করা।
4. ঘন মেঘ থেকে কি রকম বাজ পড়ছিল?
ব্যাঙ যেমন লাফায়, ঠিক তেমন আকাশের বাজ কলিঙ্গ দেশের বুকে এসে পড়ছিল। কবির এটিকে ‘বেঙ্গ তড়কাবাজ’ বলেছেন।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
5. ‘চিকুর শব্দের অর্থ কি?
চিকুরের অর্থ হল চুল, এখানে চিকুর বলতে বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে।
6. কোন কোণকে ঈশান কোণ বলা হয়েছে?
উত্তর পূর্ব কোণকে ঈশান কোণ বলা হয়।
[আরো পড়ুন – কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতার প্রতিটি লাইনের সারমর্ম ।]
7. কটি মেঘ থেকে ‘গজরাজ’ জল দেয়?
চারিমেঘ অর্থাৎ চারটি মেঘ থেকে অষ্ট গজরাজ জল দেন।
8. ‘চারিমেঘ’ কি?
এখানে ইন্দ্র দেবের চার মেঘের কথা বলা হয়েছে। এরা হলেন – সম্বর্ত, আবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ।
9. এখানে চার মেঘের বৈশিষ্ট কি?
পুষ্কর – প্রচণ্ড গতিতে প্রলয় সৃষ্টি করতে পারে
আবর্ত – ঝনঝন শব্দে শিলাবৃষ্টি আনতে পারে
সম্বর্ত – প্রলয়ের মিতা (বন্ধু)
দ্রোণ – ভয়ংকর প্রলয় ঘটাতে সক্ষম একটি মেঘ
10. ‘অষ্টগজরাজ’ কি?
অষ্ট কথার অর্থ হল আট ও গজ কথার অর্থ হাতি। ভারতীয় পুরাণ অনুযায়ী, এই আট গজরাজ আট দিকের (যথা উত্তর, উত্তর পূর্ব, পূর্ব, দক্ষিণ পূর্ব, দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিম, পশ্চিম, উত্তর পশ্চিম) রক্ষাকর্তা। এনাদের নাম হল কুমুদ, ঐরাবত, পুন্ডরীক্ষ, পুস্পদন্ড, অঞ্জন, বামন, সুপ্রতীক ও সার্বভৌম।
পরবর্তী পর্ব – কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতার প্রতিটি লাইনের সারমর্ম
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX_Beng_Kalinga_Deshe_jhorbristi
দয়া করে কলিঙ্গদেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতাটির কিছু উদ্ধৃতির ব্যাখা লিখলে ভালো হতো।
প্রিয় পাঠক, এই পাতাটি দেখুন – কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি কবিতার সরলার্থ।