ইতিহাস – দশম শ্রেণি – উত্তর – ঔপনিবেশিক ভারতঃ বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (পর্ব – ৩)
ভারত বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার নিজেদের রাজ্য পরিচালনার স্বার্থে ভারতের প্রশাসনিক বিভাগগুলি গঠন করেছিল। তাই কোনো প্রদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ দেখা যেত, যার দরুন সামাজিক জীবনে বহু জটিলটা সৃষ্টি হত। তাই স্বাধীনতার আগে থেকেই ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবী উঠেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দাবী জোরালো হয়।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
1948 সালে ভারত সরকার বিচারপতি এস.কে. দারের নেতৃত্বে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেখানেও এই ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়টি নাকচ হয়ে যায়।
এরপরে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে একটি রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। সেখানেও ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিটি বাতিল হয়ে যায়।
দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা
প্রথম ভাষার ভিত্তিতে পৃথক অন্ধ্র রাজ্য গঠনের দাবী জানান শ্রীরামুলু, 1952 খ্রিস্টাব্দে তিনি অনশন শুরু করেন। বেশ কিছুদিন অনশন চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়।
ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন পর্বটির আলোচনা শুনে নাও এই ভিডিও থেকে↓
এরপর অন্ধ্রের জনতারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন, শুরু হয় দাঙ্গা। এরম চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়ে অন্ধ্রের দাবী মেনে নেয়। 1953 খ্রিস্টাব্দে তেলেগু ভাষার অঞ্চলগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় অন্ধ্র ও তামিল ভাষাকে ভিত্তি করে পৃথক তামিলনাড়ু রাজ্য গড়ে ওঠে।
দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
এই ঘটনার পর থেকে সারা ভারত জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয় ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের জন্য। বাধ্য হয়ে নেহেরু সরকার 1956 সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস করে চোদ্দটি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করেন।
এই আইনের বিরোধিতা করে মহারাষ্ট্রে শুর হয় তীব্র দাঙ্গা। সরকার শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্র ভেঙে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট গঠন করেন। মারাঠি ভাষাভাষীদের জন্য মহারাষ্ট্র ও গুজরাটি ভাষাভাষীদের জন্য গুজরাট নির্মিত হয়। পাঞ্জাবও ভাষার ভিত্তিতে তিনভাগে ভাগ হয়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠিত হয়।
তাই শেষে বলা যায়, জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে বাধ্য হয়ে সরকার রাজ্য পুনর্গঠনে ভাষাকেই স্বীকৃতি দেয়। জয় হয় গণতন্ত্রের। ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বিঘ্নিত না করেই সমগ্র দেশের সংহতিকে রক্ষা করে, দেশের আভ্যন্তরীণ ঐক্যকে পুনরুজ্জীবিত করে।
অধ্যায় সমাপ্ত।
লেখিকা পরিচিতি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_hist_8c