ovijojon_1
Madhyamik

অভিযোজন

জীবন বিজ্ঞানদশম শ্রেণি – অভিযোজন [Ovijojon]

অভিব্যক্তির পরে এবার আমরা আচরণ ও অভিযোজন (Adaptation) সম্পর্কে জানবো।

পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে এবং বংশবৃদ্ধি করার জন্য পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবের অঙ্গসংস্থানগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে অভিযোজন (Adaptation) বলে। আমরা বলতে পারি যে অভিযোজন হল অভিব্যক্তির অন্যতম কারণ।


jump magazine plus


অভিযোজনের গুরুত্ব কি?

ক) প্রথমত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া হলো অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য।

খ) প্রতিকূলতাকে জয় করে আত্মরক্ষা করা।

গ) পরিবেশের জীব-বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা।

ঘ) সঠিকভাবে অভিযোজিত হবার ফলে জীব বিবর্তন ঘটে।

অভিসারী অভিযোজন

যখন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীভূক্ত প্রাণীরা বিভিন্ন বাসস্থান থেকে এসে একটি সাধারণ বাসস্থানে কেন্দ্রীভূত হয় এবং তার ফলে তাদের মধ্যে একই রূপ অভিযোজন দেখা যায়, তখন তাকে অভিসারী অভিযোজন বলে।

যেমন – মাছ মৎস্য শ্রেণী, কচ্ছপ সরীসৃপ শ্রেণি এবং তিমি স্তন্যপায়ী শ্রেণীভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও জলে বসবাস করার জন্য তাদের একই ধরনের অভিযোজন দেখা যায় অর্থাৎ অভিসারী অভিযোজন দেখা যায়।

অপসারী অভিযোজন

যখন একই শ্রেণীভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও কিছু প্রাণীর বিভিন্ন পরিবেশে বসবাস করার জন্য আলাদা আলাদা অভিযোজন দেখা যায়, একে অপসারী অভিযোজন বলে।

যেমন – মানুষ এবং বাদুড় উভয়ই স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়া সত্ত্বে ও স্থলে বসবাসের জন্য মানুষের হাত থাকে এবং গাছে থাকার জন্য বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম থাকে। দুটি সমসংস্থ অঙ্গ হলেও এদের কাজ ভিন্ন, তাই এদের  অপসারী অভিযোজন দেখা যায়।


দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান

অভিযোজনের প্রকারভেদ

অভিযোজন মূলত তিন প্রকার –

  • অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন (Morphological Adaptation)
  • শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন (Physiological Adaptation)
  • আচরণগত অভিযোজন (Behavioural Adaptation)

jump magazine plus


অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন

অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন কাকে বলে?

পরিবর্তনশীল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য জীবের অঙ্গসংস্থানগত অর্থাৎ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ গঠনের যে সুবিধাজনক পরিবর্তন প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয়, তাকে অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন বলে।

ক) ক্যাকটাসের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন

ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। মরুভূমি অর্থাৎ অতি শুষ্ক আবহাওয়া সম্পন্ন অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অতিরিক্ত কম (25 সেমি) এবং উষ্ণতা দিনের বেলায় অত্যাধিক। অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এখানকার মাটি অত্যন্ত শুষ্ক এবং বালি যুক্ত এবং বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম।

এইরূপ কঠিন পরিবেশে (কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু এবং শুষ্ক মাটি) বসবাসের জন্য যে সকল উদ্ভিদ অভিযোজিত হয়, তাদের জেরোফাইট বা জাঙ্গল উদ্ভিদ বলে। যেমন: ক্যাকটাস বা ফণিমনসা।

খ) রুই মাছের পটকার অভিযোজন

তোমরা আগে মাছের গমন পড়েছো এবং গমনে পাখনা, মায়াটোম পেশির ভূমিকা দেখেছো। এবার আমরা জানবো যে মাছ জলের মধ্যে ভেসে ওঠে কীভাবে। আমরা কখনও দেখি মাছ জলের ওপর ভেসে উঠছে এবং তখন জলে বুদবুদ সৃষ্টি হয়। আবার পরক্ষনেই মাছ জলের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। এরকম জলের ওপর ভেসে ওঠা ও ডুবে যাওয়ার জন্য মাছের পটকার অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পটকা হল মাছের দেহের অভ্যন্তরীণ গ্যাসপূর্ণ দুই প্রকোষ্ঠ যুক্ত একটি অঙ্গ।

শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন

শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন কাকে বলে?

প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত জীবের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতির সুবিধাজনক, উন্নত ও স্থায়ী পরিবর্তনকে শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলে।

আমরা এবারে শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনের কিছু উদাহরণ জেনে নেব।

ক) লবণাক্ত মাটিতে সুন্দরী গাছের অভিযোজন

সমুদ্র তীরবর্তী মাটিতে জলের পরিমাণ বেশি থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক গাছ জল শোষণ করতে পারে না। কারণ এই মাটিতে বিভিন্ন ধরনের লবণ যেমন – ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে থাকে। তাই এই ধরনের মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি বলে।

উপকূলবর্তী, এরূপ শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটিতে যে সকল উদ্ভিদ জন্মায় তাদের লবণাম্বু বা হ্যালোফাইট উদ্ভিদ বলে। যেমন – সুন্দরী, গরান ইত্যাদি।

সুন্দরী গাছ হ্যালোফাইট উদ্ভিদ হওয়ায় এই গাছের লবণ নির্গমনের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতির বেশ কিছু অভিযোজন দেখা যায়। যেমন –

খ) মূলের অভিযোজন

মূলের গভীরতা: লবণাক্ত মাটিতে জন্মানো সুন্দরী গাছের মূল কখনো মাটির গভীরে প্রবেশ করে না।

শ্বাসমূল: লবণাক্ত মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় শ্বাসকার্যের সুবিধার্থে সুন্দরী গাছের এক বিশেষ রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই গাছের কিছু শাখা-প্রশাখা মূল অভিকর্ষের বিপরীতে মাটির উপরে উঠে আসে একে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর বলে।

শ্বাসরন্ধ্র: শ্বাসমূল অসংখ্য শ্বাসরন্ধ্র যুক্ত হয়। এর ফলে গাছের বায়ু থেকে অক্সিজেন শোষণ করতে সুবিধা হয়। ফলে দেহের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের চাহিদা পূর্ণ হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

গ) মরু অঞ্চলে উটের অভিযোজন

উট হল ‘মরুভূমির জাহাজ’। মরুভূমিতে জলের অভাবের সঙ্গে সঙ্গে মরু অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দিন প্রচন্ড উষ্ণ (প্রায় 45º সেন্টিগ্রেড) এবং রাত অতিশীতল হয় (রাতের বেলা উষ্ণতা প্রায় 0° সেন্টিগ্রেডের নীচে)। এরূপ প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উটের বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন দেখা যায়।

উটের অতিরিক্ত জল সঞ্চয়ের অভিযোজন 

দেহত্বক: উটের দেহত্বক খুব পুরু এবং ঘন রোম যুক্ত। ফলে ঘামের মাধ্যমে জলের বাষ্পীভবন কম হয়।

দেহের তাপমাত্রা পরিবর্তন: পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে সাথে উট নিজের দেহের তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে সক্ষম।

নিঃশ্বাস ত্যাগের বিশেষ কৌশল: উটের নাসারন্ধ্রে মিউকাসেরর স্তর ঘনভাবে সজ্জিত থাকে।

মলমূত্র নিষ্কাশনঃ দেহের জল যাতে বাইরে নিষ্কাশিত না হয় সেই জন্য উটের মূত্র তরল হয় না। এরা অর্ধ কঠিন মূত্র ত্যাগ করে। এদের মূত্রে ইউরিয়ার বদলে ইউরিক অ্যাসিড থাকে।

ফ্যাটের বিপাক ক্রিয়া: উটের কাঁধের কাছে একটি স্ফীত মাংসল অংশ থাকে যা কুঁজ নামে পরিচিত। এতে সাধারণত স্নেহ পদার্থ অর্থাৎ ফ্যাট সঞ্চিত থাকে।

ওয়াটার স্যাক: উটের পাকস্থলীতে ওয়াটার স্যাক অবস্থিত। জলাভাবের সময় যখন দেহে জলের প্রয়োজন অনুভব হয় তখন এই ওয়াটার স্যাক থেকে দেহের জল সরবরাহ হয়।

জল গ্রহণ: যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল থাকে তখন উট তার দেহের ওজনের প্রায় তিনগুণ বেশি জল পান করতে পারে। এই অপরিসীম জল পানের ক্ষমতার জন্য মরুভূমিতে অনেক লম্বা সফরের আগে উট পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেয়ে তা সঞ্চয় করতে পারে।


jump magazine plus


আচরণগত অভিযোজন

আচরণগত অভিযোজন কাকে বলে?

এবার আমরা দেখব আচরণগত অভিযোজন অর্থাৎ আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বংশ বৃদ্ধি করার সম্ভবনা ত্বরান্বিত করা হল আচরণগত অভিযোজন। এটি জিনগত হতে পারে বা জন্মের পর দেখে শেখাও হতে পারে।

বার আমরা একটি আচরণগত অভিযোজনের উদাহরণ সম্পর্কে জেনে নেব।

শিম্পাঞ্জির আচরণগত  অভিযোজন

তোমরা জানো যে শিম্পাঞ্জি খুব উন্নত ও বুদ্ধিমান প্রাণী। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। প্রতি দলের সদস্য সংখ্যা 6-7। দলের সব থেকে প্রবীণ পুরুষ সদস্য সেই দলের কর্তা হয়ে থাকে। মানুষের মতো এরাও তাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। যেমন –

i) খাদ্য রূপে উইপোকার শিকার

ii) বাদামের খোলা ভাঙা

iii) গাছগাছালি থেকে ঔষধির ব্যবহার

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → নাইট্রোজেন চক্র

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X-Lsc-4c