jolocokrer-dharona
Madhyamik

জলচক্রের ধারণা

ভূগোলদশম শ্রেণি – বায়ুমণ্ডল (একাদশ পর্ব)

আগের পর্বে আমরা জেট বায়ু সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের পর্বে আমরা জলচক্রের ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

জল কঠিন গ্যাসীয় তরল এই তিন রকম স্থিতিতে অবস্থান করে। পৃথিবীতে জল কঠিন অবস্থায় মেরু ও পার্বত্য অঞ্চলে বরফ রূপে, গ্যাসীয় অবস্থায় জলীয়বাষ্প রূপে এবং তরল রূপে নদ-নদী সমুদ্র এবং হৃদে অবস্থান করে। জল বারিমন্ডল, বায়ুমণ্ডল ও শিলামন্ডলের মধ্যে দিয়ে কঠিন তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার যে নিরবিচ্ছিন্ন আবর্তন করে থাকে এবং পৃথিবীতে জলের মোট পরিমাণের সমতা রক্ষা করে, তাকেই জলচক্র বলা হয়। জলচক্র একটি বিরামহীন নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া এবং এটি বাষ্পীভবন ঘনীভবন অধঃক্ষেপনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

জলচক্রের বৈশিষ্ট্য

• পৃথিবীতে একাধিক জলচক্র নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিয়মিত ঘটে চলেছে। স্থান সময় ও জলের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীতে জলচক্রের পরিবর্তন হয়।
• সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল, অক্ষাংশ, মাটির জল ধারণ ক্ষমতা, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি জলচক্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
• কোনো অঞ্চলের জলের ব্যবহার অপচয় এবং ভবিষ্যতের জলের প্রাপ্যতা বুঝতে অঞ্চলের জলচক্র মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।

জলচক্রের গুরুত্ব

• জলভাগ এবং স্থলভাগের মধ্যে জলীয়বাষ্প এবং শক্তির আদান-প্রদান জলচক্রের মাধ্যমে হতে থাকে।
• বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলে প্রবাহিত হয়, যার ফলে লীনতাপ শক্তির আকারে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবাহিত হয়।
• জলচক্রের প্রভাবেই জীবকুলের জন্য প্রয়োজনীয় জলের যোগান অব্যাহত থাকে।

জলচক্র

বাষ্পীভবন ও বায়ুর আর্দ্রতা

যে প্রক্রিয়ায় জল তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলের ছড়িয়ে পড়ে, তাকে বাষ্পীভবন বলা হয়। এই প্রক্রিয়াকে উর্ধ্বপাতন (Sublimation) বলে। সূর্য রশ্মি যখন জলের উপর পড়ে তখন জলের অণুগুলি উত্তপ্ত হয়ে গতিশীল হয়ে পড়ে। অণুগুলি খুব অস্থির পড়ায় জল পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের মুক্তি লাভ করে। এভাবেই জল বাষ্পীভূত হয়।

বাষ্পীভবনের পরিমানের নিয়ন্ত্রকগুলি হল – বাতাসের শুষ্কতা, তাপমাত্রা, বায়ু প্রবাহ। বাষ্পীভবন মাপার যন্ত্র হল অ্যাটমোমিটার, এভাপরিমিটার বা এভাপোরেশন প্যান।

আর্দ্রতা

নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে বায়ুর আর্দ্রতা বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে তার মোট ভরের 0.5- 2% জলীয়বাষ্প উপস্থিত থাকে।

বায়ুর আর্দ্রতাকে তিনভাবে প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল- নিরপেক্ষ আর্দ্রতা , বিশেষ আর্দ্রতা বা নির্দিষ্ট আর্দ্রতা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা।

নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বা চরম আর্দ্রতা

একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বা বায়ুর চরম আর্দ্রতা বলা হয়। একে গ্রাম/ ঘন মিটারে প্রকাশ করা হয়।

বিশেষ আর্দ্রতা বা নির্দিষ্ট আর্দ্রতা

বিশেষ আর্দ্রতা জলীয় বাষ্পের ভর( গ্রাম) এর সাথে বায়ুর ভরের (কিগ্রা) সম্পর্ক নির্দেশ করে। নির্দিষ্ট ভরের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত উপস্থিতির ভরকে বিশেষ আর্দ্রতা বা নির্দিষ্ট আর্দ্রতা বলে। যেমন – এক কিলোগ্রাম বায়ুতে যদি 12 গ্রাম জলীয়বাষ্প থাকে তবে ওই বায়ুর নির্দিষ্ট আর্দ্রতা হলো 12 গ্রাম/ কিলোগ্রাম।

আপেক্ষিক আর্দ্রতা

কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঐ আয়তনের বায়ুর সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করে বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে পারে, তাদের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলা হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরাতে প্রকাশ করা হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ভোরবেলা সর্বাধিক ও দুপুরে সর্বনিম্ন হয়ে থাকে।

আপেক্ষিক আর্দ্রতা = (নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর / ঐ উষ্ণতায় ঐ আয়তনের সম্পৃক্ত বায়ুতে জলীয় বাষ্পের ভর) X 100 %


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

উষ্ণতা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক

• উষ্ণতা বাড়লে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়।
• উষ্ণতা কমলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায় অর্থাৎ উষ্ণতার সাথে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্পর্ক হল ব্যস্তানুপাতিক।
• আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যখন 100% হয় তখন বায়ু সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় 0%।

চরম ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার পার্থক্য

• চরম আর্দ্রতা বলতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত শুধুমাত্র জলীয়বাষ্পের পরিমাণকেই বোঝায়।
• আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলতে বায়ুর সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধরে রাখার ক্ষমতা এবং বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণের অনুপাতকে বোঝায়।
• একটি দিনে চরম আর্দ্রতা সারাদিন একই থাকে, কিন্তু আপেক্ষিক আর্দ্রতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বায়ু

বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ নির্ভর করে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার উপর। যখন কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করে এবং নতুন করে জলীয় বাষ্প ধারণ করার আর জায়গা থাকে না, তখন তাকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে। সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% হয়।

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুর যখন সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা থেকে কম পরিমাণ জলীয়বাষ্প ধারণ করে থাকে, তখন তাকে অসম্পৃক্ত বায়ু বলা হয়।

শিশিরাঙ্ক

যে উষ্ণতায় সম্পৃক্ত বায়ুর মধ্যে উপস্থিত জলীয়বাষ্প জলে পরিণত হয়, তাকে শিশিরাঙ্ক বলা হয়। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলে বায়ু মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা বা বরফ কনায় পরিণত হয়।

আর্দ্রতা পরিমাপ

হাইগ্রোমিটার দ্বারা আর্দ্রতার পরিমাণ পরিমাপ করা হয়। হাইগ্রোমিটারের আর্দ্রকুণ্ড ও শুষ্ককুণ্ড থার্মোমিটারের উষ্ণতার পার্থক্য পরিমাপ করে আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাপক সারণীর দ্বারা আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়। এই আর্দ্রকুণ্ড ও শুষ্ককুণ্ড থার্মোমিটার সাইক্রোমিটারও বলা হয়।

আর্দ্রতা পরিমাপক
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণ


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-geo-2-k