Madhyamik

রাসায়নিক গণনা – গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র

শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায়: রাসায়নিক গণনা

রাসায়নিক গণনা অধ্যায়ের আগের পর্বে আমরা দেখেছিলাম ভরের নিত্যতা সূত্র।

এই পর্বে আমরা দেখবো গে লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র ও রাসায়নিক গণনায় তার প্রয়োগ।

Gaylussac
বিজ্ঞানী গে-লুসাক

গে লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র কি?

ডালটনের পরমাণুবাদের একটি তত্ত্ব হল, পরমাণুগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, এবং তারা রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পরমাণু সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়। গে লুসাক লক্ষ্য করেন যে এই বিষয়টি গ্যাসের আয়তনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাঁর মত অনুযায়ী-

“যখন দুই বা ততোধিক গ্যাস পরষ্পরের সাথে বিক্রিয়া করে, তখন সেই বিক্রিয়া তাদের আয়তনের সরল অনুপাতে সংঘটিত হয়। সেক্ষেত্রে যদি উৎপন্ন পদার্থটি গ্যাসীয় হয় তবে তা বিক্রিয়কের সাথে সরল অনুপাতে থাকবে।”


একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো সহজ ভাবে বোঝা যাবে।

N2+ H= NH3

এই বিক্রিয়াটিকে সমীভবন করলে পাই

N2+3H2 = 2NH3

এখন এখানে বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ সকলেই গ্যাস। ডালটনের মতে 1 পরমাণু N ও 3 পরমাণু H পরষ্পর বিক্রিয়া করে 3 পরমাণু NH3 প্রস্তুত করে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীব বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

কিন্তু গে লুসাক পরীক্ষা করে দেখলেন যে 1 আয়তন N ও 3 আয়তন H পরষ্পর বিক্রিয়া করে 2 আয়তন NH3 প্রস্তুত করে। অর্থাৎ গ্যাসগুলি সরল অনুপাতে বিক্রিয়া করছে। এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির আয়তনও বিক্রিয়কের সাথে সরল অনুপাতে থাকে।

অনুসিদ্ধান্ত: একই চাপ ও উষ্ণতায় রাখা একই আয়তনের সকল গ্যাসের মধ্যে সমসংখ্যক পরমাণু বর্তমান। (বার্জেলিয়াস প্রকল্প)

গে লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র কেন ব্যবহার করবো?

প্রথমত, গ্যাস প্রচন্ড হালকা, ফলে তার ওজন মাপার জন্য অত্যন্ত সুসংবেদী তুলাযন্ত্র লাগবে।

দ্বিতীয়ত, পৃথিবীতে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের জন্য, প্লবতা বর্তমান। গ্যাসের ওজন মাপতে গেলে বিপরীতমুখী বলের কারণে গ্যাসের আপাত ওজনই আমাদের যন্ত্রে ধরা পড়বে, প্রকৃত ওজন নয়। সেই কারণেই গ্যাসের ক্ষেত্রে রাসায়নিক গণনায় গে লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্রের সাহায্য নেওয়া হয়।

গে লুসাকের সূত্রের প্রয়োগ করবো কিভাবে?

প্রথমে শমিত সমীকরণটিকে লক্ষ্য করো। দেখো যে এক আয়তনের কোনো গ্যাসের সাথে ওপর গ্যাসের কত আয়তন বিক্রিয়া করছে। যেমন প্রদত্ত উদাহরণে, 1 আয়তনের N ও 3 আয়তন H পরষ্পর বিক্রিয়া করে।

এবার দেখো কোন গ্যাস কতটা আছে। ধরা যাক N আছে 2 লিটার ও H আছে 5 লিটার। H ও N এর অনুপাত 5:2, যা শমিত সমীকরণের H ও N এর অনুপাতের (3:1) থেকে কম। অর্থাৎ 2 লিটার N এর সাথে বিক্রিয়া করার আগেই 5 লিটার হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে। (2 লিটার N এর চাই 6 লিটার H)। H এখানে লিমিটিং বিক্রিয়ক।


[আরো পড়ুন – জীবনের প্রবাহমানতা (কোশ বিভাজন)]

লিমিটিং বিক্রিয়কের ভূমিকা কি?

লিমিটিং বিক্রিয়কের (limiting reagent) সাপেক্ষেই সকল রাসায়নিক গণনা করা হয়। কারণ যদি যেটি অতিরিক্ত পরিমানে আছে সেটার সাপেক্ষে গণনা করতে চাই, তবে তার সাথে বিক্রিয়া করার মতো যথেষ্ট বিক্রিয়ক উপস্থিত নেই।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

যেমন আগের উদাহরণে 2 লিটার N এর থেকে 4 লিটার NH3 পাওয়া যায়।  কিন্তু তার সাথে 6 লিটার H দরকার। কিন্তু আছে 5 লিটার। যার সাথে N বিক্রিয়া করে (2/6)× 5 = 1.66 লিটার। বাকি 0.33 লিটার বিক্রিয়া করবে না। এখন 6 লিটার H থেকে 4 লিটার NH3 পাওয়া যায়।

সুতরাং 5 H লিটার থেকে NH3 পাওয়া যাবে (4/6) × 5 = 3.33 লিটার।

মনে রাখতে হবে, গে লুসাকের সূত্র কেবল গ্যাসীয় বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

পরবর্তী পর্ব → মোলের ধারণা

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X_Psc_3b