somodruti-somponno-konar-beg
Class-11

সমদ্রুতিসম্পন্ন কণার বেগ

পদার্থবিদ্যা একাদশ শ্রেণি – সৃতিবিজ্ঞান (Kinematics)


আগের পর্বে আমরা ভৌত রাশির মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে দ্রুতি ও বেগ সম্পর্কে জেনে নেব।

সমদ্রুতিসম্পন্ন কণার বেগ কী অসম হতে পারে?

সমদ্রুতিসম্পন্ন কণার বেগ সম বা অসম উভয়ই হতে পারে।
দ্রুতি একটি স্কেলার রাশি, এর শুধুমাত্র মান আছে, দ্রুতির মান সবসময় এক থাকলে বলা হয় কণাটি সমদ্রুতিসম্পন্ন।

কিন্তু গতিবেগ বা বেগ হল একটি ভেক্টর রাশি, যার মানের সাথে দিকও আছে। গতিবেগের মান অপরিবর্তিত থেকে অভিমুখ পরিবর্তিত হলে, সেক্ষেত্রে বেগ অসম হবে। কিন্তু অভিমুখ যদি পরিবর্তিত না হয় তবে বেগ সম হবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, সমদ্রুতিসম্পন্ন কোনো কণা যদি বৃত্তাকার পথে আবর্তন করে বৃত্তের প্রতিটি বিন্দুতে তার বেগের অভিমুখ বৃত্তের স্পর্শক বরাবর হয়।

বিভিন্ন বিন্দুতে স্পর্শকের অভিমুখ ভিন্ন বলে গতিবেগ প্রতি বিন্দুতে অসম হয়। কণাটি যদি একই সরলরেখা বরাবর চলে সমদ্রুতিতে, তার ক্ষেত্রে বেগ সম হয়।

এই বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের পদার্থবিদ্যার আরো কিছু ধারণা বুঝে নিতে হবে।

দ্রুতি কাকে বলে?

সংজ্ঞা সময়ের সাপেক্ষে কোনো গতিশীল বস্তু যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই অবস্থান পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে।

দ্রুতি সর্বদা বস্তু দ্বারা অতিক্রম করা, পথের দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

ধরি, বস্তুতে t সময়ে মোট d দূরত্ব অতিক্রম করে।

বস্তুর দ্রুতি (v) = (মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব (d) )/(মোট সময় (t))

বস্তু দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব ও সময় দুটির স্কেলার রাশি অর্থাৎ এদের শুধুমাত্র মান আছে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই। যেমন, ধরি আমি গাড়ি করে বর্ধমান থেকে দার্জিলিং যাব, কিন্তু আমি যেই পথ দিয়ে যাব সেটা কখনও সোজা বা কখনো আঁকাবাঁকা। এখানে কিন্তু বলব গাড়িটা t সময়ে d দূরত্ব (বর্ধমান থেকে দার্জিলিং এর দূরত্ব) অতিক্রম করেছে। গাড়িটির দ্রুতি (v) = d/t।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

সুতরাং, দ্রুতি যা দুটি স্কেলার রাশি থেকে প্রাপ্ত মান, সেটিও একটি স্কেলার রাশি।

⇒ দ্রুতির মাত্রা [v] = (দূরত্বের মাত্রা [L])/(সময়ের মাত্রা [T]) = [LT-1]
⇒ দ্রুতির একক = (দূরত্বের একক )/(সময়ের একক)
বিভিন্ন একক পদ্ধতিতে দ্রুতির এককগুলি হল:-
CGS- cm/s
SI- m/s
FPS- ft/s
আমরা মাত্রা বিশ্লেষণের সাহায্যে সহজেই এক একক পদ্ধতির রাশি, অন্য একক পদ্ধতিতে প্রকাশ করতে পারি, সেইভাবেই বিভিন্ন এককের মধ্যে সম্পর্ক নীচে দেওয়া হল,
1 m/s = 3.28 ft/s = 100 cm/s

দ্রুতি বোঝাবার ক্ষেত্রে দুটি বহুল প্রচলিত একক হল,
mi/hr এবং km/hr

1 mi/hr = \frac {1760 \times 3}{60 \times 60} = 1\frac {7}{15} ft/s
বা, 15 mi/hr = 22 ft/s
1 km/hr = \frac {1000 m}{60 \times 60 m} = \frac {5}{18} m/s
বা, 18 km/hr = 5 m/s

সমদ্রুতি ও অসমদ্রুতি

কোনো গতিশীল বস্তু যদি যে কোনো দুটি সমান সময়ের ব্যবধানে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে, তবে তাকে সমদ্রুতি বলা হয়ে থাকে। তবে সমদ্রুতির ক্ষেত্রে পথটি সরল বা বক্র যা খুশি হতে পারে কিন্তু দ্রুতি সমান হবে।

কিন্তু বস্তুটি যদি সমান সময়ের ব্যবধানে ভিন্ন দূরত্ব অতিক্রম করে, তবে তাকে অসমদ্রুতি বলা হয়। তবে বস্তুর যদি অসমদ্রুতি থাকে, তখন বস্তুর গড় দ্রুতি নিয়েই আলোচনা করা হয়। এখন গড় দ্রুতির ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া যাক।

গড় দ্রুতি

যদি কোনো বস্তু t1 সময়ে s1 দূরত্ব, t2 সময়ে s2 দূরত্ব এবং t3 সময়ে s3 দূরত্ব অতিক্রম করে, বলা বাহুল্য যে বস্তুকণার দ্রুতি অসম।

মোট সময় = t_1 + t_2 + t_3
মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব = s_1 + s_2 + s_3
∴ গড় দ্রুতি = (মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব)/(মোট সময়)

= \frac { s_1 + s_2 + s_3}{ t_1 + t_2 + t_3} = \frac {\sum_{i=1}^{3} S_{i}}{\sum_{i=1}^{3} t_{i}}

অর্থাৎ সংজ্ঞানুসারে বলতে পারি, কোনো সময়ের অবকাশে মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ও সময়ের অনুপাতকে গড় দ্রুতি বলা হয়।

প্রাত্যহিক জীবনে একটি ব্যবহার উল্লেখ করা যাক। যেমন, টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচে যখন আমরা স্কোর দেখি তার পাশেই গড় রানের হার (average run rate) দেখায়, যা মোট রানের ও মোট ওভারের অনুপাত। সেক্ষেত্রে প্রতি ওভারে কিন্তু সবসময় সমান রান হয় না, তবুও আমরা বোঝার ক্ষেত্রে গড় রানের হার ব্যবহার করে থাকি।

সেকরমভাবেই একটি গাড়ি যখন খুব সরু জনবহুল রাস্তা দিয়ে যায়, গাড়ির দ্রুতি কম থাকে, আবার গাড়িটি একই যাত্রাপথে যদি highway দিয়ে যায়, তার দ্রুতি অনেকটাই বেশি থাকে। সুতরাং, তার মোট যাত্রাপথে যদি আমরা গড় দ্রুতির মাত্রা নির্ণয় করি তবে সেই গড় মান, প্রথম বারের দ্রুতির (সরু রাস্তায় দ্রুতি) থেকে বেশি কিন্তু highway তে দ্রুতির থেকে কম হয়।
তবে গড় দ্রুতির ক্ষেত্রে কিছু সময়ের ব্যবধান কি কি দ্রুতি ছিল সেখান থেকে গড় দ্রুতির মান বের করে থাকি।


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট মুহূর্তে কোনো বস্তুর দ্রুতির মান কী সেটা জানার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কী গড় দ্রুতি ব্যবহার করতে পারব? না। বস্তুর কোনো একটি মুহূর্তের দ্রুতিকে বস্তুর তাৎক্ষণিক দ্রুতি বলা হয়।

তাৎক্ষণিক দ্রুতি কাকে বলে?

কোনো কিছু থেকে খুব কম সময় (ক্রমশ শূন্যের দিকে যাওয়া) সম অবকাশে কোনো কণা যতটা পথ অতিক্রম করে, সেই অতিক্রান্ত পথ ও সময় অবকাশের অনুপাতের সীমাস্থ মানকে ঐ বিন্দুতে কণাটির তাৎক্ষণিক দ্রুতি বলা হয়।

যদি কোনো কণা t থেকে t + ∆t সময়ে, ∆s দূরত্ব অতিক্রম করে,
গড় দ্রুতি; v = \frac {\Delta s}{\Delta t}
এবার এই ∆t র মান খুব কম হয় বা বলা যায় ∆t →0। সেক্ষেত্রে কিন্তু \frac {\Delta s}{\Delta t} র একটা মান পাওয়া যায়।

অবকল গণিতের নিয়মনুযায়ী বললে, তাৎক্ষণিক দ্রুতি
v = \lim_{\Delta t\to 0} \frac {\Delta s}{\Delta t} =\frac {ds}{dt}
যেখানে ∆s হল, সময়ের ব্যবধান অতিক্রান্ত দূরত্ব। তবে এটা বলে রাখি, ∆x বা ∆s বা ∆t এই দ্বারা আমরা কোনো রাশির অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণ বুঝিয়ে থাকি।

কোনো বস্তু যদি সমদ্রুতিতে চলে, তবে তার যে কোনো মুহূর্তের দ্রুতি অর্থাৎ তাৎক্ষণিক দ্রুতি, সমদ্রুতির মানের সাথে সমান হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, একজন অ্যাথলেট যখন দৌড়ানো শুরু করে তার দ্রুতি অনেক কম থাকে, ধীরে ধীরে তার দ্রুতি বাড়তে থাকে, এক্ষেত্রে আমরা অ্যাথলেটের দ্রুতি বলতে তাৎক্ষণিক দ্রুতি নিয়েই কথা বলা হয়।

আর একটি উদাহরণ বলা যাক, যেমন কোনো গাড়ি স্পিডোমিটার তার তাৎক্ষণিক দ্রুতিকে নির্দেশ করে। গাড়িটি সমদ্রুতিতে চললে স্পিডোমিটারের কাঁটা একই জায়গায় স্থির থাকে, অর্থাৎ তাৎক্ষণিক দ্রুতি ও সমদ্রুতির মান একই হয়, আবার গাড়িটি যদি অসম দ্রুতিতে চলে তবে স্পিডোমিটারের কাঁটাটি এক জায়গায় স্থির না থেকে নড়াচড়া করে, যে কোনো মুহূর্তে কাঁটাটির অবস্থায় তার সেই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক দ্রুতি পরিমাপ করে থাকে।

চিত্রের সাহায্যে ব্যাপারটি আন্দ্রাজ বুঝে নেওয়া যাক। যদি অতিক্রান্ত দূরত্ব (s) এর সাথে সময়ের (t) গ্রাফ আঁকি তবে t সময়ে দ্রুতি, ঐ বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের নতিকে বোঝায়।

t থেকে t + ∆t সময়ের ব্যবধানে গড় দ্রুতি, AB জ্যা এর নতিকে বোঝায় যেখানে A ও B বিন্দুদ্বয় যথাক্রমে S vs t লেখচিত্রের t ও t + ∆t সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্বের মান নির্দেশ করে।

∆t যদি ক্রমশ শূন্যের দিকে এগোতে থাকে, তবে গড় দ্রুতি \frac {\Delta s}{\Delta t} ক্রমশ A বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের নতিকে নির্দেশ করবে, অর্থাৎ তাৎক্ষণিক দ্রুতি \frac {ds}{dt} কে বোঝাবো।

বেগ কাকে বলে?

সময়ের সাপেক্ষে বস্তুকণার সরণের হারকে বেগ বলা হয়। সরণ যেহেতু একটি ভেক্টর রাশি, (যেহেতু মান ও দিক দুইই আছে) তাই বেগেরও মান ও দিক আছে, অর্থাৎ বেগ হল ভেক্টর রাশি।
বেগ = সরণ/সময়।

বেগের মাত্রা ও একক দুটিই দ্রুতির অনুরূপ যদি কণার দ্রুতি বলি 5 cm/s, এই উক্তিটি সম্পূর্ণ হয় কিন্তু কণার বেগ বলতে গেলে: 5 cm/s পূর্বদিকে বা উত্তরদিকে বললে উক্তি সম্পূর্ণ হয়, অর্থাৎ বেগের ক্ষেত্রে দিক বা অভিমুখ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

দ্রুতির আলোচনায় গড় দ্রুতি, তাৎক্ষণিক দ্রুতির কথা বলা হয়েছিল। বেগের ক্ষেত্রেও গড় বেগ ও তাৎক্ষণিক বেগের কথা বলা হয়।

গড় বেগ কাকে বলে?

কোনো সময়ের অবকাশে সরণ ও সময়ের অনুপাতকে গড় বেগ বলা হয়।

একটি ঢিল উপর থেকে ফেলে দিলে 2 সেঃ এ 10 মিঃ দূরত্ব আসে, এক্ষেত্রে ঢিলটি উল্লম্বভাবে নীচের দিকে পড়ে।
গড় বেগ = \frac {10 m }{2 s} = 5 m/s

লেখচিত্রে t_1t_2 সময়ে কণার অবস্থান ভেক্টর r_1, r_2 অর্থাৎ AB.
সরণ; \overrightarrow {AB} = \overrightarrow {r_2} - \overrightarrow {r_1}
গড় বেগ = \frac {\overrightarrow {r_2} - \overrightarrow {r_1}}{t_2 - t_1} = \overrightarrow {v_{av}} = \frac {\Delta \overrightarrow r}{\Delta t}
উলেখ্য, গড় দ্রুতির মান গড় বেগ অপেক্ষা বেশি বা সমান হতে পারে। কারণ A থেকে B বিন্দুতে যাওয়ার দূরত্ব সর্বদা [\overrightarrow {AB}] র সমান বা তার থেকে বেশি হবে।

বস্তুর কোনো মুহূর্তের বেগই হল তাৎক্ষণিক বেগ।

অর্থাৎ তাৎক্ষণিক বেগ (\overrightarrow v) = \lim_{\Delta t \to 0} \frac {\Delta \overrightarrow r}{\Delta t}
= \lim_{\Delta t \to 0} \overrightarrow {v_{av}} \frac {d \overrightarrow {r}}{dt}
\overrightarrow r হল কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে কণাটির সরণ বা ঐ বিন্দু সাপেক্ষে কণাটির অবস্থান।

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।