dhatu-o-odhatur-byabohar
WB-Class-8

ধাতু ও অধাতুর ব্যবহার | পদার্থের প্রকৃতি

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – পদার্থের প্রকৃতি (তৃতীয় পর্ব)

আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধাতব ও অধাতব মৌলগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের পৃথিবীতে নানা ধাতু ও অধাতু এবং তাদের মিশ্রণে তৈরি বিভিন্ন সংকর পদার্থের ব্যবহার সবসময় হয়ে চলেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ধাতু ও অধাতু দিয়ে তৈরি নানা উপকরণ আমরা সর্বদাই ব্যবহার করে চলেছি।

ধাতুর ব্যবহার

আমরা জানি যে ধাতুগুলি নমনীয়, উজ্জ্বল, তাপ ও বিদ্যুতের সুপরিবাহী এবং এদের কাঠিন্য সাধারণত বেশী হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাতু ব্যবহার করে থাকি। যেমন-
• লোহা এবং স্টীল ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্রিজ, বাড়ি, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, পাইপ প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
লোহা, কার্বন, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতির নির্দিষ্ট অনুপাতের মিশ্রণে তৈরি হয় Stainless steal বা কলঙ্কহীন ইস্পাত। অত্যন্ত কঠিন এই সংকর ধাতুতে মরচে ধরে না বলে এর দ্বারা বাসনপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম, যানবাহন ও মেশিনের যন্ত্রাংশ প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।
• অ্যালুমিনিয়ামের সংকর ধাতু হালকা হওয়ার কারণে এরোপ্লেন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়।

• তামা ব্যবহার করে বিদ্যুৎবাহী তার, ইলেকট্রিক মোটর ও যন্ত্রাংশ, বাসনপত্র প্রভৃতি তৈরি করা হয়। এছাড়া ইলেকট্রিক তার ও বাসনপত্র তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুও ব্যবহার করা হয়।
• সোনা, রুপা, তামা প্রভৃতি ব্যবহার করে বিভিন্ন অলঙ্কার তৈরি করা হয়।
লোহার জিনিস মরচে থেকে বাঁচানোর জন্য তার উপর জিঙ্কের প্রলেপ দেওয়া হয়। একে গ্যালভানাইজেশন বলা হয়।


লোহায় কিভাবে মরচে ধরে তা আরো একবার বুঝে নিতে পারো এই লিঙ্কে থেকে – রাসায়নিক পরিবর্তনের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ


• তরল ধাতু পারদ ব্যবহার করে থার্মোমিটার তৈরি করা হয়।
• গাড়ির ব্যাটারিতে লেড বা সীসা ব্যবহার করা হয়।
• মুদ্রা তৈরি করতে নিকেল ব্যবহার করা হয়।

অধাতুর ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ধাতুর পাশাপাশি অধাতুরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বস্তুত ধাতু বা অধাতু কোনটিকেই বাদ দিয়ে আমরা জীবন ধারণ করতে পারিনা। প্রাত্যহিক জীবনে অধাতুর ব্যবহার আমরা সর্বদা করে থাকি। যেমন-

• আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে প্রয়োজন অক্সিজেন, যা একটি অধাতু।
• নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম ও ফসফরাস দ্বারা তৈরি হয় সার, যা কৃষিকার্যে ব্যবহৃত হয়।
• সালফার, ফসফরাস প্রভৃতি আতসবাজী তৈরিতে কাজে লাগে।
• নদী, পুকুর বা কোন জলাশয়ের জল বিশুদ্ধ করে পানের উপযোগী করে তুলতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়।
• কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতি কার্বনঘটিত যৌগগুলি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কার্বনের একটি বিশেষ রূপভেদ হল হীরক, যা অলঙ্কার শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হীরক প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া সবচেয়ে কঠিন পদার্থ হওয়ার কারণে কাঁচ কাটার জন্য হীরক ব্যবহার করা হয়।

• সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, কার্বন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি ঔষধ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
• নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত ইট, সিমেন্ট প্রভৃতি তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
• আজকের দিনে প্লাস্টিক নির্মিত বস্তু আমরা সর্বদাই ব্যবহার করি। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন প্রভৃতি দ্বারা তৈরি হয় প্লাস্টিক।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

শুধুমাত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী নয়, যেকোন জীবদেহ গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ হল এই ধাতু ও অধাতুগুলি।

16 টি ধাতব ও অধাতব মৌল এবং তাদের যৌগ মানবদেহ গঠন ও বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবদেহ গঠনে সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg) প্রভৃতি বিভিন্ন ধাতু এবং অক্সিজেন (O), কার্বন (C) হাইড্রোজেন (H), নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), সালফার (S) ও আরও বিভিন্ন ধাতু ও অধাতু বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব – শারীরবৃত্তিয় কাজে ধাতব ও অধাতব মৌলের ভূমিকা

লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা। তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_Science_5C