best-place-for-living
Article (প্রবন্ধ)

পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত বাসস্থান কোনটি?



বলুন তো পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত বাসস্থান কোথায়?

না, অর্থনৈতিক ভাবে বলছি না। কারণ অর্থনীতি পরিবর্তিত হয়। যেমন ধরুন আপনি যদি আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে জন্মাতেন তাহলে আপনি পাটলিপুত্র বা মগধ (বর্তমানের বিহারে), বা তার আশেপাশে থাকা পছন্দ করতেন। কারণ সেটি ছিল ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্র।

৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের হিরণ্যক বংশের শাসন (বিম্বিসার, অজাতশত্রু যার রাজা, যিনি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন) থেকে দশম ও একাদশ শতকের পাল রাজাদের সময় অবধি মোট ১৬০০ বছর সেটিই ছিল ভারতের সমৃদ্ধতম স্থান (মাঝের ২০০ বছর ভারতের অর্থনৈতিক কেন্দ্র কুষাণদের পুরুষপুরে ও ১৫০ বছর হর্ষবর্ধনের কান্যকুব্জে স্থানান্তরিত হয়)। সেই সময় কোঙ্কন উপকুলে থাকা বা আজকে যেখানে ব্যাঙ্গালোর আছে সেখানে বসবাস করাটা আপনাকে মোটেও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি দিতো না।

অতঃপর কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয় দিল্লিতে, ১৭০৭ সাল অবধি। তারপর পাঞ্জাব, মহীশূর প্রভৃতি অঞ্চলে অর্থনীতির কেন্দ্র বিস্তার লাভ করে। ১৭৭২ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী হয় কলকাতা। বর্তমানে মুম্বাই বা ব্যাঙ্গালোর সেই কাজের কেন্দ্র। সুতরাং এ পরিবর্তন চলতেই থাকে।

তবে থাকবেন কোথায়? কিভাবে বাছবেন বাসের উপযুক্ত স্থান?

আমিও আপনার মতোই ভাবতে বসলাম, আর তারপর আন্তর্জাল (Internet) ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমি নিচের এই ম্যাপটির মুখোমুখি হই। ব্যাস, চক্ষু একেবারে চড়কগাছ, এ যে অকল্পনীয় কিন্তু কত স্বাভাবিক!

map-reddit-cr
এই বৃত্তের মধ্যে সমগ্র পৃথিবীর ৫০ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন। [চিত্র সৌজন্য – cntraveler.com]
পৃথিবীর সবথেকে জনবহুল দুটি দেশ ও জনঘনত্ত্বে শীর্ষস্থানে থাকা ২০ টা দেশের মধ্যে ১১টি দেশ (১ কোটির থেকে বেশি জনসংখ্যা), ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানাধিকারী সমেত, এই বৃত্তে অবস্থিত। দক্ষিণ চীন সাগরে কেন্দ্রস্থ ৪০০০ কিলোমিটারের ব্যাসার্ধযুক্ত এই বৃত্তের মধ্যে পৃথিবীর ৫০% এরও বেশি লোক থাকে।

জানলাম যে একে ভ্যালেরিপিরেস সার্কেল (কেন ম্যায়ার্সের ছদ্মনামের জন্য) বলা হয়।

কেন ম্যায়ার্সের তৈরী ২০১৩-এর এই ম্যাপটি আমাকে প্রশ্ন করে এইখানেই কেন এতো লোক? এর ভৌগোলিক কারণ কি? কারণ স্পষ্টতই এই স্থান পৃথিবীর সবথেকে ধনী স্থান তো নয়, বরঞ্চ গরিব-ই।

তা সত্ত্বেও এখানে কি কারণে এতো জনপ্লাবন?

খুবই জটিল একটা প্রশ্ন। এই প্রশ্নটিকে আরো জটিল করে তুললো ২০১৬ সালে ড্যানি কোয়াহের (Danny Quah) এই সূক্ষ্মতর ম্যাপটি।

2016.05.25-LKYSPP-Danny.Quah-Worlds-Tightest-Cluster-shimmering-jump
[সৌজন্যে Lee Kuan Yew School of Public Policy, NUS]
তিনি কেন ম্যায়ার্সের ম্যাপটিকে সংশোধন করলেন। কেন ম্যায়ার্স সমগ্র দেশের জনসংখ্যা ধরে ম্যাপটি বানিয়েছিলেন। আর তার ম্যাপটি ছিল 2-D Map Projection।ড্যানি সেটিকে 3-D Globe Projection এ নিয়ে গেলেন। সমগ্র দেশের জনসংখ্যা না ধরে ৩ বর্গমাইল  অঞ্চলের জনঘনত্ব হিসাব করে তিনি যে ম্যাপটি পেলেন, সেটি ছিল পৃথিবীর উপর আঁকা সর্বাপেক্ষা ছোট বৃত্ত; যার মধ্যে ৫০.০১% পৃথিবীর মানুষ বাস করেন। মায়ানমার চীন সীমান্তের মং খেট শহরে তার কেন্দ্র ও ৩৩০০ কিলোমিটার তার ব্যাসার্ধ। এই উপরের ম্যাপে যে বৃত্তের ভেতরে বিন্দুগুলি জ্বলজ্বল করছে, এটি সেই বৃত্ত।


[আরো পড়ুন – অদ্ভুত একটি প্রাণীর কথা]

পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে ফিলিপাইনস দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর চীন রাশিয়া সীমান্ত থেকে সুমাত্রা দ্বীপের দক্ষিণ ভাগ অবধি এর বিস্তার। আর এই বিস্তারের মধ্যমণি হয়ে বসে রয়েছে আমাদের বাংলা।

2016.01.04-World-population-in-half-Metrocosm

পৃথিবীর সবথেকে বেশি ঘন জনবহুল (সবথেকে জনবহুল নয়, ঘনজনবহুল) দেশগুলির যে তালিকা রয়েছে, ১০০০০০ বর্গকিলোমিটারের থেকে বেশি আয়তনের দেশগুলির মধ্যে প্রথম দশে ৭টি নাম ই এই বৃত্তের অংশ।

সবথেকে আগে রয়েছে বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমান বাংলাদেশ), তারপর দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতের উত্তর – পূর্বাংশ, ফিলিপাইনস, জাপান, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান। ব্রিটেন, জার্মানি ও নাইজেরিয়া খালি এই বৃত্তের মধ্যে নেই। এমনকি ড্যানির বৃত্তের ফর্মুলা (৩ বর্গমাইলের মধ্যে ৮০০০ লোক রেখে) ধরে সমগ্র পৃথিবীর অঞ্চলগুলিকে হলুদ ডট দিয়ে প্রকাশ করলে ছবিটা হয় উপরের ছবিটার মতন, যার বেশির ভাগই উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি, সমগ্র বাংলাদেশ, উত্তর চীন এবং কোরিয়া উপদ্বীপ এবং সুমাত্রা তথা ফিলিপাইন্সের দ্বীপে অবস্থিত। সবকটি-ই ড্যানির বৃত্তস্থিত। কিন্তু যে অঞ্চলটিতে এই ডটগুলি সবথেকে বেশি ঘন, সেটি আমাদের বাংলা, অবিভক্ত বাংলা।

subscribe-jump-magazine-india

বাংলাই কেন?

পৃথিবীর সবথেকে বেশি ঘনত্বের (১ লক্ষ বর্গকিমি ক্ষেত্রফল ও ১ কোটি জনসংখ্যার বেশি) দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনঘনসংখ্যা বহুল রাজ্য বাংলা। মোট ১৪৮০০০+৮৯০০০=২৩৭০০০ বর্গকিমি জুড়ে ১৬.৪৭+৯.০৩=২৫.৫ কোটি লোকেদের বাসস্থান এই বাংলার জনঘনত্ব ১০৮০ জন প্রতি বর্গকিমিতে।

Population_density_countries_2018_world_map,_people_per_sq_km.svg
পৃথিবীর জনঘনত্ব [তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া]

সে তো বোঝা গেল, কিন্তু এতো লোক এখানে কেন বাস করতে এল?

এই প্রশ্নটা ভাবতে বসে, আমি কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পেলাম –

  1. এখানে ৬টি ঋতুর সবকটি ঋতুই বর্তমান, আজও; এই উষ্ণায়নের যুগেও।
  2. উত্তরে হিমালয় তিব্বতের ওপর দিয়ে বয়ে আসা শীতের উত্তুরে হাওয়াকে অনেকাংশেই প্রতিহত করে। তার ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাংলার অধিকাংশ অঞ্চলেই ১০ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। আবার কোনো মরু অঞ্চল সন্নিকটস্থ না হওয়ার কারণে বা ক্রান্তীয় রেখার থেকে বেশি উত্তরে অবস্থিত না হওয়ার কারণে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ও লু-এর হার থেকে বাংলার অধিকাংশ স্থান সুরক্ষিত থাকে।
  3. কোনো মহাদেশীয় পাতের সংযোগস্থলে (একটি বাদে) বা আগ্নেয়গিরির সন্নিকটে উপস্থিত না হওয়ার কারণে ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কা কম। যদিও হিমালয়ের পাদদেশে দার্জিলিং জলপাইগুড়ি অংশে এর আশঙ্কা থেকেই যায় (ইউরেশিয়ান ও ভারতীয় পাতের সংযোগস্থল)।
  4. ৮ ধরণের ভূমিরূপ (পাললিক শিলার পর্বত, আগ্নেয় শিলার মালভুমি, পলিবিধৌত নবীন সমভূমি, প্রাচীন সমভূমি, তরাইয়ের ও ডুয়ার্সের মাটি, বালিয়াড়ি, ম্যানগ্রোভের লবণাক্ত মাটি আর লাল রাঢ় মাটি) সবরকম ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। পলিবিধৌত মাটির আধিক্য দানাশস্যের পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগান দেয়। বিভিন্ন ফসল, বিভিন্ন ঋতুতে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে (ঋতু পরিবর্তনে ফসল পরিবর্তন হলেই মরশুমি ফসলের চাহিদা বাড়বে কিন্তু যোগান থাকায় দাম কমবে)।
  5. বরফগলা জলে ও বৃষ্টির জলে পুষ্ট একাধিক নদী বাংলাকে স্বাভাবিক সেচের সুবিধা দিয়ে এসেছে বছরের পর বছর।
  6. সময়ে সময়ে বন্যা ও খরা জমির মাটিকে পুনরুজ্জীবিত করে। মাটির গুণাগুণ ধরে রাখে। খরাপ্রবণ এলাকায় শুষ্ক ফসলও বাংলায় ভালো হয়।
  7. বার্ষিক মাঝারি ভারী বৃষ্টিপাত ভৌমজল হিসেবে সঞ্চিত হয় এবং পুকুর বা ডোবা কেটে সেগুলি মুক্তভাবে ধরেও রাখা যায়। ফলে গ্রামীণ জনজীবন অপেক্ষাকৃত সহজ।
  8. পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বদ্বীপ, সবথেকে বেশি উর্বরও বটে। ফলে খাদ্যের উদ্বৃত্ত তৈরী হয়েছে যা আমাদের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিকে সহায়তা করেছিল। 
  9. পশ্চিমে মালভূমি খনিজ সম্পদে বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে, জনবসতি লঘু হওয়ায় ধাতুশিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। গাঙ্গেয় সমভূমির শিল্পাঞ্চলের জন্য কাঁচামালের জোগানে বাংলা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ।
  10. নদীবন্দরের উপস্থিতি (সপ্তগ্রাম, আলীনগর (কলকাতা), হালিশহর, ত্রিবেণী, ডায়মন্ড হারবার ও হলদিয়া) গণপরিবহণ ও Cargo মানে মাল পরিবহণ উভয়কেই শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। এই পরিবহণ ব্যবস্থার কারণেই বাংলায় (আধুনিক ও প্রাচীন) শিল্পায়ন হয়ে এসেছে ১০০০ বছর ধরে। গাঙ্গেয় তীরবর্তী অঞ্চলে জলের যথেষ্ট যোগান ও যদি পরিবহণের সুবিধার কারণে শিল্পসমৃদ্ধিও সুবিধাজনক। মুর্শিদাবাদ ও বরেন্দ্রভূমির কার্পাস ও রেশম চাষ বস্ত্রবয়ণ শিল্পকে বিশ্বের দরবারে ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়া জেলাভেদে মাটি ও ধাতুর শিল্প ছিল বিশ্বে সমাদৃত। পরে গাঙ্গেয় অববাহিকায় ভারী ও মাঝারি শিল্প কলকাতার শ্রীবৃদ্ধি-র কারণ হয়. ফলে শিল্পায়নের অর্থনৈতিক সুফল বাংলা ভোগ করেছে।
  11. দক্ষিণে উপসাগরের উপস্থিতি মহাসাগরীয় ঝঞ্ঝার হাত থেকেও বাঁচায় আবার বৈদেশিক বাণিজ্যেও সহায়তা করে। তাম্রলিপ্ত সমুদ্রবন্দর ছিল অশোকের সময় থেকেই বহির্দেশের সাথে মগধের যোগাযোগের সদর দরজা। বাংলার লোক সাহিত্যে চাঁদ সওদাগর বা ধনপতি সওদাগরের কাহিনী, বাংলার বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিকে ঐতিহাসিকভাবে উজ্জ্বল ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির আশ্বাস দেয়।
  12. উত্তরে হিমালয় থাকার কারণে যেমন তুষারপাত-ও হয়, দক্ষিণে সমুদ্রের কারণে সমুদ্রতটের উপস্থিতিও বর্তমান। জঙ্গলে ঘুরতে বা পাহাড়ে চড়তে যারা ভালোবাসেন তারাও যেমন এখানে ভ্রমণ করতে পারেন, নদীতে, ম্যানগ্রোভ বা সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্যেও এখানে ব্যবস্থা আছে. ফলে যেকোনো ঋতুতে পর্যটনের উপযুক্ত ব্যবস্থা বর্তমান।
  13. পৃথিবীর সবথেকে বড়ো ম্যানগ্রোভ অরণ্য (যদিও মানুষের কারণে ক্ষয়িষ্ণু। যে কারণে এই জায়গা জনবহুল হয়েছে, সেই জনপ্লাবনই এই কারণটিকে বিনষ্ট করছে) বাংলায় অবস্থিত।
  14. তরাই ও ডুয়ার্সের বনভূমি, পশ্চিমের মালভূমির জঙ্গলমহল, পূর্বে ময়মনসিংহের যমুনা নদীর অববাহিকায় জঙ্গল, দক্ষিণ পূর্বের আরাকান পর্বতের ওপরে চট্টগ্রামের বনভূমি বাংলার বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে স্থান দিয়েছে। আর নদীর ও পুকুরের বাস্তুতন্ত্র বাংলাকে বহু বিরল প্রজাতির ঘরবাড়ি বানিয়েছে। জীববৈচিত্রের জন্য জঙ্গলের ও জলের সহাবস্থানের থেকে বেশি কোনোকিছু আদর্শ নয়।
  15. পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভুমি ও বনভূমির উপস্থিতি, পূর্বে মেঘালয়ের পর্বত ও মায়ানমারের বনাঞ্চল, দক্ষিণ পূর্বে আরাকান পর্বত ও মায়ানমারের বনভূমি, উত্তরে ডুয়ার্সের বনভূমি ও হিমালয় আমাদের বহিরাগত আক্রমণ থেকে স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা করেছে। যদিও উপসাগরীয় বাণিজ্যের কারণে আমরা বিদেশী যোগাযোগে এসেছি, রাজনৈতিক অনৈক্য, কারিগরী ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনা ও উন্নতি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষাকে উপেক্ষা করে আমাদেরকে আক্রান্ত করেছে, তবুও আর্য্যাবর্তের কালে আর্য্যাবর্তের পূর্ব সীমানা ছিল এই বঙ্গদেশ। এর ফলে আমাদের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষার অর্ধপরিবাহী প্রকৃতি তৈরী হয়েছে, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন-ও নয়, সম্পূর্ণ উন্মুক্তও নয়। বড়ো কোনো গণহত্যাকারী আক্রমণও প্রতিহত হয়েছে, আবার বিভিন্ন জাতির ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এ বাংলা হয়ে উঠেছে অনন্য।

তবে কি জানেন, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এখানে বিভেদের রেখাও ফুটে উঠেছে।

বিদেশী বাণিজ্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যগুলিকে চুম্বকের মতো বাংলাতে আকর্ষণ করেছিল; কলকাতা, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া-হুগলী ও ব্যান্ডেল সপ্তগ্রামে ব্রিটিশ, ফরাসী, ওলন্দাজ ও পর্তুগীজরা উপনিবেশ স্থাপন করে. এই ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ (১৭৭৬, ১৯৪২-৪৩), ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ ও বাংলার বিভাজন (১৯০৫, ১৯৪৭) সম্ভবপর হয়েছে।


বিজ্ঞাপন



মহামারী ও দুর্ভিক্ষে জনসংখ্যা হ্রাস জন্মহারকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে, এবং তার ফলে দুই বাংলাকে এর ফলাফল ভুগতে হয়েছে। বঙ্গভঙ্গে কৃষিক্ষেত্র ও শিল্প বাণিজ্যক্ষেত্রের মধ্যে বিভাজিকা সৃষ্টি হয়েছে। ফল: অর্থনৈতিক সুবিধার অন্ত ও দারিদ্র। সময়ের সাথে বাণিজ্যের উৎপাদনের চাহিদাও পরিবর্তন হয়েছে, বিভাজিত বঙ্গ যার সাথে অভিযোজনে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও, বাংলার প্রাচীন শিল্প বস্ত্রবয়ণ আজ বাংলাকে চরমতম দারিদ্রের হাত থেকে তুলে এনেছে, পশ্চিমবঙ্গ-ও তথ্যপ্রযুক্তি ও গণপরিষেবা শিল্পে অবদান রেখে নিজেদের হৃত অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। 

তবে আজ যাই হোক না কেন, আপনি যদি ধৈর্য ধরে এতক্ষণ এই প্রবন্ধটা পড়ে থাকেন আর আমার মতো আপনিও যদি বঙ্গদেশে বাস করেন, তাহলে একটা ব্যাপারে আপনি নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন, যে আমি ও আপনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা স্থানে বাস করি। সব শেষে জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতার কথা বলতেই হয়।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর

[পুরো কবিতাটি না পড়া থাকলে, এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন]

তথ্য সহায়তা

  • https://en.wikipedia.org/wiki/Valeriepieris_circle
  • https://science.howstuffworks.com/environmental/earth/geophysics/small-circle-asia-more-half-worlds-population.htm
  • https://www.cntraveler.com/story/more-than-half-the-worlds-population-lives-inside-this-circle

[প্রবন্ধটি লেখক দ্বারা সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।]

এই লেখাটি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।

lekha-pora-shona-facebook-group