বিধান দশম শ্রেণীর ছাত্র, আগামি বছর সে মাধ্যমিক দেবে। বর্ষাকালের এক রবিবার সকাল বেলায়, বিধানের মা বিধানকে পাড়ার দোকান থেকে গরম-মশলা আনতে দিয়েছেন।
বিধানের ক্লাস ফোরে পড়া ছোট বোন টুসকি সামনেই বসেছিল। সে বায়না ধরল যে সেও দাদার সাথে বেরোবে। মায়ের অনুমতি নিয়ে, বিধান ও টুসকি বাড়ি থেকে বের হল। ওরা দুজন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো।
তা দেখে বোন বিধানকে জিগ্যেস করল, “আচ্ছা দাদা, বিদ্যুৎ চমকায় কেন রে?” বিধান একটু ভেবে বলল বাড়ি চল, তোকে বাড়ি গিয়ে বলছি।
মুখে কিছু না বললেও সত্যিটা বিধানের অজানা নয়। বিদ্যুৎ কেন চমকায়, এই সাধারণ বৈজ্ঞানিক তথ্য বিধান জানে না। অথচ অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্য বিজ্ঞান বইয়ে এই ব্যাপারটা খুব ভালো করে লেখা ছিল। তাহলে ও পারছে না কেন!
কারণটা একটু অন্যরকম, ‘বিদ্যুৎ কেন চমকায়?’ এই প্রশ্ন তার পরীক্ষার সাজেশনে ছিল না।
[আরো পড়ুন – জ্ঞানের ভিত]
তাই ঐ চ্যাপ্টারটা বিধান সযত্নে এড়িয়ে গেছে। পরীক্ষায় ঝুড়ি-ঝুড়ি নম্বর সে পেয়েছে বটে, কিন্তু তার জ্ঞানের ভান্ডার অসম্পূর্ণ।
ভাবতে অদ্ভুত লাগবে, আজকের সময়ে শুধু একা বিধান নয়, বহু ছাত্রছাত্রী এই সাজেশনবাদের শিকার। তারা পুরো বই না পড়ে, শুধুমাত্র নির্বাচিত কিছু প্রশ্নাবলী পড়ে (বা মুখস্থ করে) পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করছে।
কিন্তু তারা সম্পূর্ণটা শিখতে পারছে কি?
সারা বছর প্রতিটা অধ্যায় খুঁটিয়ে পড়ে, পরীক্ষার সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলীর উপর জোর দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে পড়াশোনার প্রথমদিন থেকে শুধু সাজেশনভিত্তিক পড়া শুরু হবে।
অভিভাবকেরা মনে করুন, ৮০-৯০ এর দশকে মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিসান পাওয়াটা সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ছিল, সেই সময় পরীক্ষার কয়েকমাস আগে থেকে পাতলা পাতলা সাজেশনের বই বাজারে পাওয়া যেত। ক্রেতা ছিল সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা যারা সারা বছর ফাঁকি মেরেছে কিন্তু মাধ্যমিকের গন্ডি কোনরকমে পেরোতে চায়।
[আরো পড়ুন – বই পড়া কীভাবে পড়াশোনায় সাহায্য করে]
এখন সময় পরিবর্তিত হয়েছে, সাজেশনবাদ আরো বিস্তারলাভ করেছে।
এখনকার বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা প্রায় বছরের শুরু থেকেই সাজেশন ভিত্তিক পড়া শুরু করে। অথচ ভাবলে অবাক লাগে, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে পুরো পরীক্ষার প্রায় 50% প্রশ্ন অবজেক্টিভ।
অর্থাৎ খুঁটিয়ে না পড়লে অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি CBSE বোর্ডের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মুখস্তবিদ্যা ও সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বোর্ড পরীক্ষায় প্রচুর পরিবর্তন আনছেন। যার ফলে সমগ্র বই খুঁটিয়ে তথা বুঝে না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর পাওয়া হবে অসম্ভব। আশার আলো এটাই যে হয়ত সেইদিন আর বেশি দূরে নয় যেখানে সাজেশনবাদের বদলে সাজেশন বাদ দেওয়া হবে।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি ভালো লাগলে সকলের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
Editorial-24-01-19