commarce-in-hs
পরীক্ষা প্রস্তুতি

মাধ্যমিকের পর বাণিজ্য বিভাগ

মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা সীমিত। কিন্তু একটা বিশেষ ব্যাপার এখানে লক্ষ্যণীয়, বাণিজ্য বিভাগের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বললে দেখা যাবে এরা প্রত্যেকেই তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে একবারে অবিচল। সায়েন্স অথবা আর্টস (Humanities) নিয়ে অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা থাকলেও, বাণিজ্য বা কমার্স বিভাগ সম্পর্কে অধিকাংশেরই প্রায় কোনো  ধারণা থাকে না। এই প্রবন্ধে আমরা উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগ এবং তা থেকে ভবিষ্যৎ দিশা সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা দেবার চেষ্টা করবো। 


[আরো পড়ুন – উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগ]


বাণিজ্য কেন পড়বো?

কথায় আছে বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী।

বাংলার সমৃদ্ধিকালে প্রধানত নদীপথে প্রচুর বাণিজ্য হতো।  আমাদের লোককথায় চাঁদ ও ধনপতি সওদাগর এর কথা রয়েছে গত ৪০০ বছর ধরে, আমাদের ধীরগামী কিন্তু সুবিশাল বাণিজ্যতরীর গন্তব্য ছিল সুমাত্রা থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ অবধি। ইউরোপীয়ান লেখায় সেই বাণিজ্যতরীর বিবরণ পড়ে বৈদেশিক বণিকদের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়।

বাণিজ্য ব্যাপারটি যেকোনো দেশের সমৃদ্ধির পেছনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দেশের সীমিত পরিসরে সকল সম্পদ সৃষ্টি হয় না। কিছু উদ্বৃত্ত তৈরী হয়, কিছুর অভাব থেকে যায়। বাণিজ্য পথে এই উদ্বৃত্তের সাথে অভাবের দেয়ানেয়া সম্ভব হয়।

বাণিজ্য পঠন পাঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই বন্টন ব্যবস্থা ও বিনিময় পদ্ধতির সম্পর্কে সম্যক ধারণা গ্রহণ।


[আরো পড়ুন – মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকে কিভাবে বিষয় নির্বাচন করবেন]

বাণিজ্য কোন ছাত্রছাত্রীরা পড়বে?

যে সকল ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতে ফিনান্সিয়াল সেক্টরে (যেমন ব্যাঙ্কিং, মানি মার্কেট, অ্যাকাউন্টেন্সি ইত্যাদি) যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য বাণিজ্য বিভাগ একেবারে যথাযথ। এছাড়া যারা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (MBA) নিয়ে কেরিয়ার করার কথা ভাবছো, তাদের জন্যও বাণিজ্য বিভাগ সঠিক বিকল্প। আর ভবিষ্যতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বা কস্ট অ্যাকাউন্টেন্ট হবার স্বপ্ন যারা দেখে তাদের জন্য যে বাণিজ্য বিভাগই সঠিক রাস্তা, তা সর্বজন বিদিত।

popular-commarce-combination
উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগের বিভিন্ন জনপ্রিয় কম্বিনেশন [কৃতজ্ঞতা – EDULEARN EDUCATION]

বাণিজ্য বিভাগে কি কি আছে?

বাণিজ্য একটি প্রয়োগমূলক বিদ্যা। তাই বাণিজ্যের বিষয়গুলিকে বহু ভাগে ভাগ করা যায়. মূলতঃ চারটি ভাগ কে সামনে রেখে আমরা এগোবো।

  1. ম্যানেজমেন্ট (Management)
  2. অর্থনীতি (Economics)
  3. অ্যাকাউন্টেন্সি (Accountancy)
  4. প্রচার (Publicity)

ম্যানেজমেন্টের বিভাগে যে যে বিষয়গুলির কথা মাথায় আসে তা হলো বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (Business Management)।  এর মধ্যে আছে  সেলস (Sales), মার্কেটিং (Marketing), মানব সম্পদ উন্নয়ন (Human Resource), যোগাযোগ (Transport), ইন্স্যুরেন্স (Insurance), সেক্রেটারীশীপ (Secretary), ক্লার্কশিপ (Clerkship), লজিস্টিক (Logistic Management) – এই বিষয় গুলি ।

অর্থনীতি হলো বাণিজ্য বিষয়ের গভীর অধ্যয়ন। এই অংশে অর্থনীতি (Economics), ব্যাঙ্কিং (Banking), ট্যাক্সেশন (Taxation), কমার্শিয়াল ল (আইন) (Commercial Law), সফটওয়্যার ডিজাইনিং (Software designing), শেয়ার ট্রেডিং (Trading) ইত্যাদি বিষয়ের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।

অ্যাকাউন্টেন্সি (Accountancy) নিজেই একটি বিশাল ক্ষেত্র। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (Chartered Accountancy) এই ক্ষেত্রে সবথেকে সম্ভাবনাময় বিষয়।

প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমে আন্তর্বৈষয়িক বিষয়ে দক্ষতা লাগে। গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design), পাবলিক ওপিনিয়ন (Public Opinion), সার্ভে (Survey), কম্যুনিকেশন (Communication) প্রত্যেকটিই প্রচারের অংশ।

popular-job-options-after-commerce
বাণিজ্য বিভাগ থেকে ভবিষ্যতের কিছু জনপ্রিয় পেশা

বাণিজ্য পড়তে কি লাগে?

সবথেকে প্রথম যে বিষয়টি গুরুত্ত্বপূর্ণ সেটি হলো গণিত, বিশেষত পাটিগণিত । বাণিজ্যের প্রধান উদ্দেশ্য দুটি – ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বর্তমানে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ যাতে ফলাফল আশানুরূপ হয়। আর সম্পদের বিন্যাস ও বন্টন যাতে optimal হয়, সম্পদের অপচয় হ্রাস করে। এই দুটি বিষয়কে চোখে রেখে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্যনির্ভরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং তথ্য বিশ্লেষণের দক্ষতা অর্জন এই ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে সাথে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বর্জন, তথ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনো অসঙ্গতি বা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো উল্লেখ খুঁজতে গেলে যুক্তিবোধ ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রবল হওয়া দরকার।

বন্টনের ক্ষেত্রে লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Stock, cash reserve, credit এই ধরণের বিষয় গুলির সম্যক ধারণা দরকার। সফটওয়্যার তৈরী করে সেখান থেকে লজিস্টিকের ট্র্যাকিং আজকের দিনে খুব সহজ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আবহাওয়া, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বন্টনে প্রভাব বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা ও সেই ফ্যাক্টরগুলিকে অনুমোদন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বাণিজ্যের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং স্কিলসেট হিসেবে এইগুলিকে মাথায় রাখলে বন্টন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দক্ষতা লাভ সম্ভব।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –