পদার্থবিদ্যা – একাদশ শ্রেণি – কণাগোষ্ঠী ও দৃঢ় বস্তুর গতি
কৌণিক ভরবেগ কাকে বলে?
কোনো নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে জড়তা ভ্রামক ও কৌণিক বেগ একত্রে কোনো ঘূর্ণনশীল বস্তুতে যে গতীয় ধর্মের সৃষ্টি হয়, তাকে ঐ সাপেক্ষে কৌণিক ভরবেগ বলা হয়ে থাকে।
কৌণিক ভরবেগের মান = জড়তা ভ্রামক (I) ও তার কৌণিক বেগের (w) গুণফল
কোনো বস্তুর ভর m এবং তার রৈখিক বেগের ঘূর্ণন প্রতিরূপের কথা বিবেচনা করলে যথাক্রমে বস্তুর জড়তা ভ্রামক (I) এবং কৌণিক বেগ (w) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রৈখিক ভরবেগ বা mv র ঘূর্ণন প্রতিরূপ হল কৌণিক ভরবেগ যা Iw এই রাশিমালার দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কৌণিক ভরবেগ (L) একটি অক্ষীয় ভেক্টর রাশি যার অভিমুখ ঘূর্ণন অক্ষ বরাবর অর্থাৎ wর অভিমুখ বরাবর হয়ে থাকে। w একটি অক্ষীয় ভেক্টর রাশি। জড়তা ভ্রামক (I) কে একটি স্কেলার রাশি হিসাবেই ধরা হয়ে থাকে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি টেন্সর (Tensor)।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
কৌণিক ভরবেগের মাত্রা = জড়তা ভ্রামকের মাত্রা × wর মাত্রা
কৌণিক ভরবেগের একক
CGS পদ্ধতিতে: গ্রাম সেমি2 সেকেন্ড-1
FPS পদ্ধতি: পাউন্ড ফুট2 সেকেন্ড-1
SI পদ্ধতি: কিগ্রা মি2 সেকেন্ড-1
দ্বন্দ্ব বা যুগ্ম বল কাকে বলে?
একসাথে দুটি ভিন্ন ক্রিয়ারেখা বরাবর ক্রিয়াশীল দুটি সমান, সমান্তরাল ও বিপরীতমুখী বলকে দ্বন্দ্ব বা যুগ্ম বল বলা হয়। দ্বন্দ্ব বস্তুর মধ্যে ঘূর্ণন প্রবণতার সৃষ্টি করে অর্থাৎ একটি ভ্রামকের সৃষ্টি হয়।
উপরের চিত্রে A ও B বিন্দুতে সমান, সমান্তরাল ও বিপরীতমুখী বল P ক্রিয়া করে, যা বস্তুর উপর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। এখানে বল দুটির ক্রিয়ারেখার মধ্যে লম্ব দূরত্ব হল দ্বন্দ্বের বাহু। BC হল দ্বন্দ্বের বাহু।
টর্ক কাকে বলে?
কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত দ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বের বাহু এই দুইয়ের সমন্বয়ে উদ্ভুত যে ভেক্টর রাশি ঐ বস্তুর মধ্যে ঘূর্ণন প্রবণতার সৃষ্টি করে তাকে দ্বন্দ্বের ভ্রামক বা টর্ক বলা হয়।
টর্কের মান নির্দেশ করার জন্য দ্বন্দ্বের যে কোনো একটি বলের মান এবং দ্বন্দ্বের বাহুর গুণফলের মানকেই নেওয়া হয়।
টর্কের ফলে বস্তুর মধ্যে যে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়, সেই ঘূর্ণনের দিক বরাবর ডান পাশের স্ক্রুকে ঘোরালে স্ক্রু এর অগ্রভাগ যেদিকে যায় সেইদিকেই দ্বন্দ্বের ভ্রামক বা টর্কের অভিমুখ হয়।
দৈনন্দিন জীবনে টর্কের ব্যবহার
দৈনন্দিন জীবনে টর্কের বহু ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন, জলের কল খোলার সময়, বোতলের ঢাকনা খোলা বা বন্ধের সময় হাতের আঙুলের সাহায্যে দ্বন্দ্ব প্রয়োগ করে আবর্তন সৃষ্টি করা হয়।
উল্লেখ্য যে, টর্ক কেবলমাত্রা ঘূর্ণনই সৃষ্টি করতে পারে। 1 নং চিত্রানুযায়ী, লব্ধি বলের মান ।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
সুতরাং, লব্ধি শূন্য হওয়ার জন্য বস্তুর মধ্যে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ এটি একটি বিশুদ্ধ ঘূর্ণন।
টর্কের মাত্রা = দৈর্ঘ্যের মাত্রা × বলের মাত্রা
= L × MLT-2 = ML2T-1
টর্কের একক: CGS: dyn. cm
SI: N. m
FPS: poundal. ft.
টর্ক একটি ভেক্টর রাশি।
ভেক্টর রূপে টর্কের রাশিমালাকে প্রকাশ করে পাই
টর্ক
: দ্বন্দ্বের বাহু
: দ্বন্দ্বের যে কোনো একটি বল
কৌণিক ভরবেগ এবং টর্কের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়
সৃতিবিজ্ঞানের আলোচনার সময় দেখেছি যে, বাইরে থেকে কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হলে বস্তুটির রৈখিক ত্বরণ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে, বলের ঘূর্ণন প্রতিরূপই হল এই টর্ক। টর্কের সাথে কৌণিক ভরবেগের সম্পর্কে নির্ণয়ের আগে টর্কের সাথে কৌণিক ত্বরণ কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা দেখে নেওয়া যাক।
ধরলাম, আমরা কাছে ABCD একটি দৃঢ়বস্তু (Rigid Body) আছে, যা m1, m2, m3……. ইত্যাদি বাহু সংখ্যক কণার সমষ্টি নিয়ে তৈরি বলে ধরে নিতে পারি। বস্তুটি MN অক্ষের চারদিকে ∝ সমকৌণিক ত্বরণ নিয়ে আবর্তন করছে। MN অক্ষটি স্থির আছে কারণ আমরা এখানে বিশুদ্ধ ত্বরণ নিয়ে কথা বলছি। তাহলে এক্ষেত্রে m1, m2….. ইত্যাদি বস্তুকণাগুলিও সমত্বরণে চলছে বলতে পারি।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
কিন্তু বস্তুকণাগুলির দূরত্ব ঘূর্ণন অক্ষ থেকে সমান হয় না, বস্তুকণাগুলির রৈখিক ত্বরণের মান আলাদা হয়। ধরি m1 কণার রৈখিক ত্বরণ f1।
F1 = r1 ∝ যেখানে r1 হল ঘূর্ণন অক্ষ থেকে m1 বস্তু কণার দূরত্ব। m1 ভরের বস্তুকণার উপর ক্রিয়াশীল বল P1 = m1 f1
= m1 r1 ∝
ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে P1 বলের ভ্রামক = টর্ক = G1 = P1 × r1 = m1 r12 ∝
এভাবেই সমগ্র জড় বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল দ্বন্দ্বের ভ্রামক বা টর্ক হল বস্তুর প্রতিটি কণার উপর ক্রিয়াশীল বলের ভ্রামকের বীজগাণিতিক সমষ্টির সমান।
টর্ক (G) = G1 + G2 + ………
= m1 r12 ∝ + m2 r22 ∝ + ……….
= (m1 r12 + m2 r22 + ……) ∝
∝ = I ∝
হল ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুর জড়তা ভ্রামক বা জাড্য ভ্রামক।
∴ টর্ক (G) = জড়তা ভ্রামক (I) × কৌণিক ত্বরণ (∝)
অর্থাৎ আবর্ত গতির থেকে টর্কের প্রয়োগ কোনো ঘূর্ণায়মান বস্তুতে কৌণিক ত্বরণের সৃষ্টি হয়।
ধরি, বস্তুর প্রাথমিক কৌণিক বেগ w1 এবং t সময় পরে কৌণিক বেগ w2 হলে বস্তুর কৌণিক ত্বরণ ∝
টর্ক (G) = I ∝
∴ G × t = Iw2 – Iw1
এটিই হল টর্ক এবং কৌণিক ভরবেগের মধ্যে সম্পর্ক।
G × t হল টর্কের ঘাত বা কৌণিক ঘাত।
রৈখিক গতির ক্ষেত্রে, বলের ঘাত Pt = mv – mu; যার ঘূর্ণন প্রতিরূপ হল Gt = Iw2 – Iw1। এই সমীকরণটি।
এই সম্পর্ক থেকে বোঝা যায় যে, টর্ক যে অক্ষের সাপেক্ষে ক্রিয়া করে, কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তনও সেই অক্ষের সাপেক্ষেই হয়।
কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
আমরা জানি, Gt = Iw2 – Iw1
বাইরে থেকে কোনো টর্ক প্রযুক্ত না হলে G = 0
∴ Iw2 – Iw1 = 0
∴ Iw2 = Iw1
অর্থাৎ বাইরে থেকে টর্ক প্রয়োগ না করলে বস্তুর প্রাথমিক কৌণিক ভরবেগ তার চূড়ান্ত কৌণিক ভরবেগের সাথে সমান হয় বা বলা যায় যে কৌণিক ভরবেগ অপরিবর্তিত থাকে।
অর্থাৎ Iw = ধ্রুবক।
সূত্র- বাইরে থেকে কোনো টর্ক প্রযুক্ত না হলে কোনো নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান কোনো বস্তুর কৌণিক ভরবেগ সর্বদা সংরক্ষিত থাকে।
এটি আসলে রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষণ সূত্রের ঘূর্ণন প্রতিরূপ।
উদাহরণ সহযোগে কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষণ সূত্রের ব্যাখ্যা
1) ডাইভিং ইভেন্টে উপর থেকে জলে ঝাঁপ দেওয়ার সময় প্রতিযোগী হাত পা প্রসারিত কার ঝাঁপ দেয়, অর্থাৎ অল্প পরিমাণ কৌণিক বেগ নিয়ে পড়তে শুরু করে, আবার যখন সে হাত পা গোটাতে শুরু করে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রানুযায়ী, কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকায় কৌণিক বেগ বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ প্রতিযোগী অনেক দ্রুত ঘুরতে থাকে জলে পড়ার আগে তাই অনেকগুলো ডিগবাজি খেতে পারে। এই সংরক্ষণ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বরফের উপর স্ক্রেটিং করা বা অ্যাক্রোব্যাটিক (acrobatic) খেলা দেখানো যায়।
2) একজন লোক দুহাতে ডাম্বেল নিয়ে হাত প্রসারিত করে ঘূর্ণায়মান চেয়ারের উপর বসে একটি নির্দিষ্ট কৌণিক বেগ (w) নিয়ে ঘুরছে। এবার এই অবস্থায় সে তার হাত দুটি নিজের কাছে নিয়ে এলে ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে তার জড়তা ভ্রামক কমে যায় অর্থাৎ সংরক্ষণ সূত্র বজায় রাখতে হলে তার কৌণিক বেগ বেড়ে যায় (w̕ ) এখানে w̕ > w এভাবেই ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে লোকটি তার ঘূর্ণন বেগকে নিয়ন্ত্রিত করে চেয়ারের উপর অনায়াসে ঘুরতে পারে।
ভেক্টরের সাহায্যে প্রমাণ
কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়ারত টর্ক বস্তুটির কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমান:-
কৌণিক ভরবেগ
আমরা জানি,
সুতরাং
টর্ক
অতএব, ভেক্টর রাশির আকারে প্রকাশ করে দেখা যায় যে, কোনো বস্তুর কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তনের হাত বস্তুর উপর প্রযুক্ত টর্কের সমান হয়।
সমাপ্ত।
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XI_P_5a