obosthar-poriborton
Class-11

অবস্থার পরিবর্তন

পদার্থবিদ্যা একাদশ শ্রেণি – অবস্থার পরিবর্তন (অধ্যায়- পদার্থের ধর্মসমূহ)


স্ফুটনের সংজ্ঞা

খুব দ্রুত তরল অবস্থা থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে স্ফুটন বলা হয়। স্ফুটন তরলের সমস্ত অংশ থেকে হয়ে থাকে এবং পারিপার্শ্বিক চাপের ওপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুরু হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত তরল বাস্পে পরিণত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ তাপমাত্রা স্থির থাকে।

স্ফুটন সম্পর্কিত কিছু তথ্য সূত্রের আকারে লেখা যেতে পারে। এই সূত্রগুলিকেই সাধারণত স্ফুটনের সূত্র বলা হয়।

১। প্রত্যেক তরলের একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক আছে। প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় তরলের স্ফুটন হয় তাকে ঐ তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বলা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত তরল বাষ্পে পরিণত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে।
২। যে চাপের অধীনে তরলকে ফুটতে দেওয়া হয় তার হ্রাসবৃদ্ধিতে তরলের স্ফুটনাঙ্কের হ্রাসবৃদ্ধি হয়।
৩। তরলের স্ফুটনের সময় তার বাষ্পচাপ পারিপার্শ্বিক বায়ুচাপের সমান হয়।
৪। দ্রবণের স্ফুটনাঙ্ক সর্বদা বিশুদ্ধ দ্রাবকের স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়।
৫। স্ফুটনের সময় তরলের আয়তন বৃদ্ধি পায়। যেমন, একটু উদাহরণ দিয়ে বলি, 100°C উষ্ণতায় 1 কেজি জলের আয়তন প্রায় 1 লিটার হয় কিন্তু 1 কেজি জলের বাষ্পের এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে আয়তন হয় প্রায় 1671 লিটার।

গলনের সংজ্ঞা

নির্দিষ্ট চাপে তাপ শোষণ করে কোন কঠিন পদার্থ যে তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে তাকে সেই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত পদার্থ গলে যায় ততক্ষণ ঐ তাপমাত্রায় স্থির থাকে।
গলন সম্পর্কিত কিছু তথ্য সূত্রের আকারে লেখা যেতে পারে। এগুলিকে সাধারণভাবে গলনের সূত্র বলা হয়।
১। কোনো নির্দিষ্ট চাপে প্রত্যেক পদার্থ একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গলতে শুরু করে। যতক্ষণ না সমস্ত পদার্থ গলে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত এই উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে। এই উষ্ণতাকে ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক বলা হয়।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

২। গলনের ফলে যে সকল পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, যেমন ঢালাই লোহা, বরফ ইত্যাদি, চাপ বৃদ্ধি করলে ওই সকল পদার্থের গলনাঙ্ক কমে যায়। গলনের ফলে যে সকল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়, চাপ বাড়ালে তাদের গলনাঙ্কও বৃদ্ধি পায়।
৩। দ্রবণের হিমাঙ্ক দ্রাবকের হিমাঙ্ক অপেক্ষা কম।
৪। প্রত্যেক পদার্থের গলনের বা কঠিনীভবনের লীনতাপ ধ্রুবক কিন্তু বিভিন্ন পদার্থের বেলায় বিভিন্ন।
৫। দুই বা ততোধিক ধাতুর মিশ্রণে তৈরী কোনো সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক তার উপাদান ধাতুগুলির গলনাঙ্ক অপেক্ষা কম হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঝালাই করার রাংঝাল, সীসা ও টিনের সংমিশ্রণে তৈরী।
তার গলনাঙ্ক 180°C, কিন্তু সীসা ও টিনের গলনাঙ্ক যথাক্রমে 327°C এবং 232°C, টিন, সীসা ও বিসমাথের সংকর ধাতু ‘রোজ মেটাল’ এর গলনাঙ্ক 94.5°C, কিন্তু সীসা, টিন বা বিসমাথের কোনটিরই গলনাঙ্ক 210°C এর কম হয় না। তবে সংকর ধাতুর গলনাঙ্ক কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক ফিউজ, অগ্নিনির্বাপক এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় কাজে লাগানো হয়।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

তরলের স্ফুটনের উপর প্রভাবকারী উপাদান

১। তরলের উপরিস্থ চাপ

যে চাপের অধীনে তরলকে ফুটতে দেওয়া হয় সেই চাপের ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। চাপ বাড়ালে স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় আবার চাপ কমলে স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। প্রতি 27 মিমি বায়ুচাপ হ্রাসবৃদ্ধির ফলে জলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক (100°C) থেকে 1°C হ্রাসবৃদ্ধি পায়।

যেমন, সমুদ্রতল থেকে দার্জিলিং-এর উচ্চতা দীঘার চেয়ে বেশী। তাই দীঘার চেয়ে দার্জিলিং-এ বায়ুর চাপও অনেকটা কম। সেই কারণে দীঘার জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C হলে দার্জিলিং-এ হতে 100°C অপেক্ষা কম।

২। তরলের প্রকৃতি
প্রমাণ বায়ু মণ্ডলীয় চাপে কোনো বিশুদ্ধ তরল কত তাপমাত্রায় ফুটবে তা তরলের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

৩। তরলে দ্রবীভূত অবস্থায়- অপদ্রব্যের উপস্থিতি
তরলের অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে ঐ তরলের স্ফুটনাঙ্ক বিশুদ্ধ তরল অপেক্ষা বেশী হয়ে থাকে। যেমন, বিশুদ্ধ জলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক 100°C কিন্তু জলে সাধারণ খাদ্য লবণ দ্রবীভূত থাকলে ঐ জলের স্ফুটনাঙ্ক 9°C বৃদ্ধি পায়।


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

এই কারণে কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয় করার সময়ে থার্মোমিটারের কুণ্ড কখনও তরলে নিমজ্জিত রাখা উচিত নয়। তরল থেকে উদ্ভূত বাস্পের সংস্পর্শে রাখতে হয়। বাষ্পের তাপমাত্রা তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্কের সমান থাকে।

বাস্পায়ন এবং স্ফুটনের পার্থক্য


পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

XI_P_7.10a