শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – দেহের গঠন (প্রথম পর্ব)
আগের পর্বে আমরা জেনেছি জীবদেহের গঠনের ধারণা সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ ও কোষীয় বিশেষত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো।
প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন কোষের ভিতর বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। প্রাণীদের ক্ষেত্রে চলন, গমন, পুষ্টি, শ্বসন, রেচন, জনন প্রভৃতি প্রক্রিয়াগুলি দেখা যায়।
চলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন ঘটে।
গমনের মাধ্যমে প্রাণী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে।
খাদ্যগ্রহণ, পরিপাক, পাচিত খাদ্য শোষণ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে প্রাণীদের পুষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপাচ্য খাদ্যাংশ এবং শরীরে উৎপন্ন ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে নির্গত হয়।
একইভাবে উদ্ভিদ দেহেও বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া কলাপ সংঘটিত হয়। তবে এই প্রক্রিয়ার সাথে প্রাণীদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার পার্থক্য আছে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মূল, কাণ্ড, পাতা প্রভৃতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হয়। মূলের মাধ্যমে গাছ মাটি থেকে জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে এবং তা কাণ্ডের মাধ্যমে পাতায় প্রেরণ করে।
পাতা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য উৎপন্ন করে, যা উদ্ভিদ শরীরে সর্বত্র পরিবাহিত হয়। এছাড়া মূল দ্বারা শোষিত অতিরিক্ত জল পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে নির্গত হয়।
কলা (Tissue) কাকে বলে?
একই উৎস থেকে উৎপন্ন এবং একই বা ভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট কোষগুচ্ছ যখন কোন নির্দিষ্ট জৈবনিক কার্য সম্পন্ন করে, তখন ওই কোষগুচ্ছকে কলা বা Tissue বলা হয়।
প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন কোষগুলি তাদের কাজের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ও গঠনের হয়। যেমন- প্রাণী দেহে শোষণের কার্যের সাথে যুক্ত কোষগুলির স্তম্ভের ন্যায় আকার বিশিষ্ট হয়। অন্যদিকে উদ্ভিদ দেহে যে কোষগুলির মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত জল পাতায় পৌঁছায় সেগুলি নলাকৃতির হয়ে থাকে।
উদ্ভিদ দেহে প্রধানত দুই ধরণের কলা দেখা যায়—ভাজক কলা ও স্থায়ী কলা।
ভাজক কলা
ভাজক কলা হল উদ্ভিদ দেহে বর্তমান এক বিশেষ প্রকার কলা বা Tissue যা কোষ বিভাজনে সক্ষম এবং এরা উদ্ভিদ দেহের অন্য কোন অঙ্গে পরিণত হতে পারে।
ভাজক কলার বৈশিষ্ট্য
i) ভাজক কলা কোষ বিভাজনে সক্ষম।
ii) ভাজক কলার কোষগুলি সজীব ও অপরিণত হয়। এদের সাধারণভাবে কোন নির্দিষ্ট আকার থাকে না।
iii) ভাজক কলা সাধারণত কাণ্ড ও মূলে বর্ধনশীল অঞ্চল অর্থাৎ শীর্ষে দেখা যায়।
iv) এই কলার কোষ প্রাচীর পাতলা ও সেলুলোজ দ্বারা তৈরি হয়।
v) এই কলার কোষে কোনো কোষগহ্বর থাকে না।
ভাজক কলার কাজ
উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো হল ভাজক কলার মূল কাজ। উদ্ভিদের আগায় থাকা ভাজক কলার বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। পার্শ্বস্থ ভাজক কলার বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ভাজক কলার বিভাজন উদ্ভিদ দেহের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
স্থায়ী কলা
স্থায়ী কলা হল এক বিশেষ ধরণের উদ্ভিদ কলা যা ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন হয় এবং যা কোষ বিভাজনে সক্ষম নয়।
স্থায়ী কলা তিন প্রকার হয়- সরল কলা, জটিল কলা এবং ক্ষরণকারী বা নিঃস্রাবী কলা।
স্থায়ী কলার বৈশিষ্ট্য
i) স্থায়ী কলা কোষ বিভাজনে অক্ষম।
ii) স্থায়ী কলার কোষগুলি মৃত ও পরিণত হয় এবং এদের নির্দিষ্ট আকার আছে।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান
iii) এই কলার কোষে কোষগহ্বর থাকে।
iv) স্থায়ী কলা সাধারণত কাণ্ড ও মূলের বহিঃস্তরে দেখা যায়।
v) স্থায়ী কলার কোষ প্রাচীর অপেক্ষাকৃত পুরু হয় এবং এতে সেলুলোজ ছাড়াও অন্য উপাদান থাকে।
স্থায়ী কলার কাজ
খাদ্য তৈরি, সংবহন ও সঞ্চয় করা এই কলার প্রধান কাজ। এছাড়া এই কলা উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে।
প্রাণীদেহে মূলত চার প্রকার কলা দেখা যায়- আবরণী কলা, যোজক কলা বা যোগ কলা, পেশী কলা ও স্নায়ু কলা।
আবরণী কলা (Epithetial tissue)
যে বিশেষ প্রাণী কলা প্রাণীদেহের ভিতর ও বাইরের বিভিন্ন অঙ্গকে আবরিত করে রাখে, তাকে আবরণী কলা বলা হয়।
আবরণী কলার বৈশিষ্ট্য
আবরণী কলায় নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়—
i) আবরণী কলার কোষগুলি ঘনভাবে বিন্যস্ত থাকে।
ii) এটি শরীরের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন অঙ্গের আবরণ সৃষ্টি করে।
iii) আবরণী কলার কোষে আন্তঃকোষী পদার্থের পরিমাণ কম থাকে এবং এতে কোন রক্তবাহিকা থাকে না।
iv) দেহের অন্যান্য কলাকে সুরক্ষা প্রদান করা এই কলার কাজ।
v) এই কলা অনেক সময় শোষণ, রেচন ও ক্ষরণে সাহায্য করে। এছাড়া এই কলা অনেক সময় উদ্দীপনা গ্রহণের কাজ করে থাকে।
যোজক কলা বা যোগ কলা (Connective tissue)
যোজক কলা হল এক বিশেষ প্রকার প্রাণী কলা যা প্রাণী দেহের বিভিন্ন অঙ্গ অথবা একই অঙ্গের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করে।
যোজক কলার বৈশিষ্ট্য
যোজক কলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
i) যোজক কলার কোষগুলি ঘন সন্নিবেশ যুক্ত হয় না।
ii) যোজক কলার কোষগুলি কোন নির্দিষ্ট স্তরে বিন্যস্ত থাকে না।
iii) এই কলা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সংযোগ সাধন করে।
iv) যোজক কলা দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনে সাহায্য করে।
v) দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ, ক্ষত নিরাময় প্রভৃতি যোজক কলার মাধ্যমে ঘটে।
পেশী কলা (Muscular tissue)
সংকোচন ও প্রসারণের উপযুক্ত অজস্র তন্তু নিয়ে গঠিত বিশেষ প্রাণীকলাকে পেশী কলা বলা হয়।
পেশী কলার বৈশিষ্ট্য
পেশী কলায় নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়—
i) পেশী কলার কোষগুলি সুতোর মতো লম্বা হয়।
ii) এই কলার কোষগুলিতে প্রায় 75% জল ও 25% কঠিন পদার্থ থাকে।
iii) পেশী কলা তিন প্রকার হয়- ঐচ্ছিক পেশী, অনৈচ্ছিক পেশী ও হৃদপেশী।
iv) শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন পেশী কলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
স্নায়ু কলা (Nervous tissue)– প্রাণীদেহের যে বিশেষ কলার মাধ্যমে উদ্দীপনা বাহিত হয়, তাকে স্নায়ু কলা বলা হয়। এই কলার প্রধান কোষীয় উপকরণ স্নায়ুকোষ বা নিউরোন নামে পরিচিত।
স্নায়ু কলার বৈশিষ্ট্য
স্নায়ু কলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
i) শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে স্নায়ু কলা উদ্দীপনা গ্রহণ করে।
ii) এই কলা দেহের বিভিন্ন পেশীর সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে।
iii) শরীরে বিভিন্ন গ্রন্থির ক্ষরণ স্নায়ু কলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
iv) স্নায়ু কলা প্রাণী দেহের বিভিন্ন ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কাজের মধ্যের সমন্বয় সাধন করে।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ও কোষীয় অঙ্গাণু
লেখিকা পরিচিতিঃ
বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_science_12b